somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে জওহরলাল, বীরত্ব বা আধিপত্যের গল্প।

১৭ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ সিরিজ লেখার আগে জওহরলাল নেহেরুকে নিয়ে ছোট একটা বিশ্লেষণ সামনে আনা উচিত ছিলো। ধারাবাহিকতা ভঙ্গ হলেও, চলুন জেনে আসি জওহরলাল নেহেরুর মনের গল্প।

স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু দেশকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করতে রেখেছিলেন অবদান। বর্তমান ভারতের প্রতিষ্ঠায় এই আধুনিক ভারতের জনক পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর রয়েছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। । ইতিহাস বলে, ব্রিটিশ রাজশক্তির অত্যাচার তাকে দমাতে পারেনি। স্বাধীনতা সংগ্রামে নয়বার কারাবরণ করেন তিনি।এরপর সাতচল্লিশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গান্ধীজী সরদার প্যাটেলের পরিবর্তে যখন নেহেরুকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন ঠিক তখন থেকেই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

তবে, বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ একই সাথে বলেন, তিনি ছিলেন ভারতের সামন্তবাদ জমিদার শ্রেণীর মিত্র, হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িকতার ঝান্ডাধারী, কৃষক ও শ্রমিকের হত্যাকারী। কিন্তু নেহেরুর রাজনৈতিক সফলতা বা ব্যর্থতা আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় নয়। বরং আমরা আজ আলোচনা করব, ইতিহাসের এই মহা চরিত্রের মনস্তত্ত্ব নিয়ে।

জওহরলালের ছোটবেলার দিকে তাকিয়ে আমরা দেখতে পাই তার আধুনিক মনস্ক পিতাকে। মতিলাল নেহেরু শুরুতে ওকালতি পেশার সাথে জড়িত ছিলেন।পরবর্তীতে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। মতিলাল খুব জাঁকালো পরিবেশে বড় হয়েছিলেন, ছেলে জওহরলাল যেন সর্বোচ্চ পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়, তা মতিলাল খুব করে চাইতেন। নিজের ব্যর্থতার জন্যই হয়তোবা তিনি ছেলের সাফল্য নিয়ে উদগ্রীব ছিলেন। একারনেই ছোটবেলায় গৃহশিক্ষক এবং একটু বড় হওয়ার পর ইংল্যান্ডে পড়তে যাওয়া জওহরলালের একটি শক্ত ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল।

ফ্রয়েডীয় ইডিপাস কমপ্লেক্সের একটি প্রয়োগ আমরা এখানে দেখতে পারি। পিতা মতিলালের চেয়ে মাতা স্বরূপ রানীর প্রতি নেহেরুর ভালোবাসা দৃঢ় ছিল। এর কারণেই বোধহয় নেহেরু স্বাধীন ভারতকে মায়ের সাথে তুলনা করেছিলেন। পিতা-মাতার স্নেহ ভালবাসার কেন্দ্রবিন্দু জওহরলাল একদিকে পিতার কড়া শাসন এবং নিয়ম-কানুনকে খুব একটা অবজ্ঞা করতে পারেননি। অন্যদিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পিতার আত্মত্যাগও জওহরলালকে অনুপ্রাণিত করত, কারণ ভেতরে ভেতরে জওহরলাল ছিলেন ঠিকই স্বাধীনচেতা।তাই ইডিপাস কমপ্লেক্স অনুযায়ী পিতার প্রতি যে ক্ষোভ তৈরি হওয়ার কথা তা বরং পিতার প্রতি সম্মানে পরিণত হয়। জওহরলাল চাইতেন তিনি সেই ভূমিকাটি অর্জন করেন যেটি তার পিতা মতিলাল পারেননি।
অবশ্য ব্যক্তিগত জীবনে পরবর্তীতে মায়ের ছেলে হতে না পারার দুঃখই যেন জহরলালকে পোড়ায়। এজন্য তার জীবনে আমরা লেডি মাউন্টব্যাটেন ও পদ্মজা নাইডুকে দেখতে পাই।

মাসলোর নীতি অনুযায়ী যদি আমরা নেহেরুর ব্যক্তিত্বের বিশ্লেষণ করতে চাই, আমরা দেখতে পাই, তিনি ছিলেন বাস্তববাদী।মাসলো এই গুনে গুনবান মানুষদের নাম দিয়েছেন সেলফ একচুয়ালাইজার। এই মানুষেরা সমাধানের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পছন্দ করেন।তাদের জীবনের একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে, যেমন জহরলালের জীবনের উদ্দেশ্য ছিল শুধুই ভারত বর্ষ। এই ধরণের মানুষরা গণতান্ত্রিক চরিত্র ধারণ করেন যেমনটি আমরা নেহেরুর মধ্যে কিছুটা দেখতে পাই। জীবনের একটা পর্যায়ে তিনি জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র সবাইকে আপন করে নিতে পেরেছিলেন। অবশ্য পরবর্তীতে স্বাধীন ভারতে নেহেরুর আধিপত্যবাদ তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। নতুন ভারতবর্ষ ভ্রমণের সময় পাবলো নেরুদা সেসময়ের জওহরলালকে শারীরিক, মানসিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত কোন ব্যক্তি বলে দাবি করেছিলেন।

পিতা হিসেবে নেহেরু কেমন ছিলেন ? আমরা যেমন দেখেছি মতিলাল তার পুত্রের শিক্ষার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন, ঠিক তেমনভাবে কন্যা ইন্দিরার শিক্ষার বিষয়ে জওহরলালকে সচেষ্ট দেখা যায়। নিজের কন্যাকে কিশোরী অবস্থায় বিলেতে পড়তে পাঠিয়ে ছিলেন তিনি। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মাঝের সময়টায় বিভিন্ন বার কারাবরণ করার পরেও পত্রযোগে মেয়ের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন তিনি। কিশোরী মেয়েকে লেখা এই নয়শো চিঠি ছিল বিশ্ব ইতিহাসের নানা আলোচনা। যা পরবর্তীতে বিশ্ববিখ্যাত সংকলন আকারে প্রকাশিত হয়। পিতা- কন্যার বিভিন্ন মতবিরোধও আমরা পরবর্তীতে দেখতে পাই। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাঝের সময়ে আমরা নেহেরু কে বৌদ্ধ মতাদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখি। তবে মেয়েকে ধর্মের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন তিনি।

জওহরলাল নেহেরুর পুরো ছবিটি আমরা দেখতে পারি এভাবে, গান্ধীর দর্শন ও নেতৃত্ব যে জওহরলালকে গভীর ভাবে আকৃষ্ট করেছিল, ছাত্রাবস্থায় যিনি সমাজতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন, ভারতের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সেই নেহেরুকেই দেখা যায় সাম্রাজ্যবাদের উপর নির্ভর হতে। কি হওয়া উচিত ছিল বা কি হতে পারত, এসব হিসেব বাদ দিয়ে আমরা যদি ব্যক্তি নেহেরুর দিকে তাকাই, তবে আমরা পাই, একটি শক্তিশালী চরিত্রকে, যিনি রচনা করেছেন ইতিহাস, নিজ হাতে।

প্রিয়দর্শনীকে নেহেরুর চিঠি সিরিজটি চলবে।

পুরো লেখাটি ফোনে বর্ণ এপ্লিকেশনে ভয়েস টাইপিং- এ লেখা। কোডপত্রকে ধন্যবাদ। ব্লগে আর্কিওপটেরিক্স ভাইয়াকে ধন্যবাদ, বর্ণের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:২২
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×