শিক্ষকেরা শাস্তি না দিলে পোলাপান পড়াশুনা করবো না। এই ধারনা নতুন কিছু না। পুরাতন। পোলাপান শয়তানি করবো। ক্লাসে হুদাই হাসবো, গল্প করবো, হোম-ওয়ার্ক করবো না, পরীক্ষায় ফেল করবো। আর শিক্ষকরা চাইয়া চাইয়া এই বিষয়গুলা দেখবো। মোটেও তা হইতে দেয়া যায় না। স্যারগো হাতে বেত ছাড়া মানায়? বেত লাগবো। একদম জালি বেত।
আমার স্কুলের প্রিন্সিপাল স্যার তার কলিগ-দের কইত, বেত দিয়া পাছায় মারবা। যাতে বাসায় যাইয়া দেখাইতে না পারে।
বাংলায় "পাছা" অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লজ্জাকর বিষয়। লজ্জাকর জায়গায় মারলে বেয়াদব পোলাপান মনে মনে কানবো। অপমানে হিমশিম খাইবো। কিন্তু বাসায় কইতে পারবো না। পুলিশের কাছেও যাইতে পারবো না। যদি যায়, তাইলে পাছা প্রদর্শন হইবো বহুবার। যেমুন: বাসায় বাপ-মা কইবো, দেখি বাবা কই মারছে?
তারপর ধরেন গেলো স্কুলে। কইবো, আপনেরা আমার পোলারে মারছেন। স্যার কইবো, প্রমাণ কই? তখন আবার পাছা দেখাও। এরপর ব্যাপারটা যদি মিমাংশা হয় তাইলে তো হইল-ই। আর যদি না হয়, তা হইলে পুলিশের কাছে যাইয়া জিডি। পুলিশ পাছার একটা ছবি তুলবো। আর মিডিয়ায় জানাজানি হইলে তো, ক্যামেরা লইয়া টিভির পর্দায় ভাইসা উঠবো পাছা।
তাই বুঝেন কি অবস্থাটা দাঁড়াইবো?
১১ ধরনের শাস্তি নিষিদ্ধ কইরা কি লাভটা হইবো জানি না। আপনেগো নিম্নবর্ণিতভাবে শাস্তির নামগুলা কই।
"হাত-পা বা কোনো কিছু দিয়ে আঘাত বা বেত্রাঘাত, শিক্ষার্থীর দিকে চক বা ডাস্টারজাতীয় বস্তু ছুড়ে মারা, আছাড় দেওয়া ও চিমটি কাটা, কামড় দেওয়া, চুল টানা বা চুল কেটে দেওয়া, হাতের আঙুলের ফাঁকে পেনসিল চাপা দিয়ে মোচড় দেওয়া, ঘাড় ধাক্কা, কান টানা বা ওঠবস করানো, চেয়ার, টেবিল বা কোনো কিছুর নিচে মাথা দিয়ে দাঁড় করানো বা হাটু গেড়ে দাঁড় করে রাখা, রোদে দাঁড় করে বা শুইয়ে রাখা কিংবা সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড় করানো এবং ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে এমন কোনো কাজ করানো, যা শ্রম আইনে নিষিদ্ধ।"
এইখানে এক অদ্ভুদ শাস্তি আছে। যা জীবনকালের এই মুহূর্ত পর্যন্ত শুনি নাই। তা হইল, কামড় দেয়া।
বাপরে বাপ। আমাগো স্যারেরা তাইলে মাঝে মইধ্যে কুত্তার কামটাও কইরা ফালায়। বড়ই লজ্জিত হইলাম এই জাতির অংশ হইয়া। যেই জাতির শিক্ষকেরা তার ছাত্ররে কামড় মারে।
এই শিক্ষানীতিতে বহু আইনের কাহিনী হইতাছে। ওমুক আইন, তমুক আইন। আমার একখান লেখা ছিল। যার শিরোনাম ছিল: শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের নীতির প্রসঙ্গ এসেছে কি?
শিক্ষকগো নীতির প্রসঙ্গ নিয়া বহু কথা চলে।
শিক্ষকগো কু-নজর বড় ভয়ানক। যার দিকে একবার কু-নজর দিয়া চাইবো সেই ছাত্রের খাতাতেও কু-নজর পড়বো। এই কু-নজর সামলানোর ব্যবস্থা কেমনে হইবো?
তবে কু-নজর ছাত্রের জন্য খারাপ। কিন্তু ছাত্রীর জন্য অইত্যন্ত ভালো। ছাত্রী যদি কু-নজরে মিষ্টি হাসে। তাইলে সেই হাসির প্রতিফলন পড়বো খাতার উপর। পরীক্ষার খাতাডা হাইসা উঠবো।
আমার লেখা কোন সমালোচনা না। কোন প্রশ্ন না। কোন উত্তরও না। একটু কনফিউশন মুলক লেখা। শিক্ষকগো নিয়া আমার অনেক ক্ষ্যাপা মনোভাব আছে। আমি এককালে ভাবতাম এনারা জাতির উন্নয়নের কারিগর। মানুষ তৈরী তাগো কাম। শুধু ক্লাসে পড়াইবো। আর চইলা যাইবো। এই বিষয়ে আমি বিশ্বাসী না। একজন ছাত্রের মনেও যদি কল্পনার রেখা টানতে ব্যর্থ হয় কোন শিক্ষক তাইলে বুঝতে হইবো শিক্ষকগো জীবনটাই বৃথা।
আজকে প্রথমআলোতে আনিসুল হক সাহেবের একটা লেখা ছাপছে। তিনি কইতে চাইছেন, মঙ্গলবারও হাসো। আনিসুল হকের লেখা পড়ার আগেই আমি প্রথমআলোর "শ্রেণীকক্ষে ১১ ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে না" নিউজটা পইড়া ফালাইছি। তাই মঙ্গলবার চা-য়ে চুমুক দিতে দিতেই হাইসা উঠলাম। আর কইলাম, আহারে আমার দেশ।