somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদির মানুষকে কারা 'প্রগতিশীল' বানাচ্ছে..?

০৩ রা জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ন্যারেটিভস তৈরির মাধ্যমে প্রজন্মকে প্রগতিশীল বানানোর জন্য কামলা খাটুনির প্রয়োজনীয়তা এখন অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে। পুঁজিবাদ একটা স্বয়ংক্রিয় প্রসেস। এটা তার নিজস্ব শক্তিতে সমাজকে বদলে দেয়।
প্রগতিশীলদের তাই বলবো, অযথা রক্ষণশীলদের সাথে মাত্রাতিরিক্ত আদর্শিক মারপিট না করে চুপ করে বসে থেকে পুঁজির খেলা দেখুন। পূঁজি দিনশেষে গোটা পৃথিবীকে পশ্চিমের রঙে রাঙ্গিয়ে দেয়। পূঁজির রং আফ্রিকা মরুর বেদুইন হোক, কিংবা আমাজনের আদিবাসী, সবাইকে দিনশেষে কোট-টাই পরুয়া ম্যাকডোনাল্ড প্রিয় ভদ্রলোক বানিয়ে দেয়। পুঁজির পথ শেষে পশ্চিম ছাড়া ভিন্ন কোন গন্তব্য নেই।
পূঁজিকে আরো ফ্লারিশ করতে দিন। আর্থিক স্বনির্ভরতা মানুষের ব্যাক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধ বাড়ায়, আর ব্যাক্তি স্বাতন্ত্র্য মানুষের আত্মকেন্দ্রিক ও ভোগবাদী স্বাধীন চেতনাকে শক্তিশালী করবে। আর মানুষ যখন স্বাধীনচেতা হবে, তখন ট্র্যাডিশনাল মূল্যবোধ কাঠামো নিজ থকেই ভেঙে পড়বে। এটাকেই ভদ্র ভাষায় লিবারেলিজম/ উদারনীতি বলে। মূলত লিবারেলিজম হচ্ছে মুক্তবাজার অর্থনীতির একটি বাইপ্রোডাক্ট আদর্শ।
এজন্যই প্রখ্যাত মার্কিন ইকোনমিস্ট হেনরি রাওয়েনের প্রেডিকশন ছিল বাজার অর্থনীতির অপরিহার্য পরিনতি হিসেবে চায়না একসময় পশ্চিমা গনতন্ত্রে রূপ নেবে।
সৌদি আরবের কথাই চিন্তা করুন। সৌদিতে এখন মধ্যরাতের মদ্যশালা আছে, ওখানে মেডোনার কনসার্টের টিকেট ৩ মাস আগে বিক্রি হয়ে যায়। অভ্যন্তরের সৌদি বিরাট অংশ আমাদের চেয়ে ওয়েস্টার্ন হয়ে গেছে।
প্রশ্ন হলো সৌদির মানুষকে কারা 'প্রগতিশীল' বানাচ্ছে...? ওখানের মানুষকে ওয়েস্টার্নাইজ করার জন্য কি প্রগতিশীল বাম আছে..?
ওখানে মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তাসলিমা কিংবা হুমায়ুন আযাদ মোটাদাগে লাগেনি৷ বরং পূঁজি আর ভোগবিলাসী বাজার তার নিজস্ব শক্তিতে সৌদি মৌলবাদকে পরাজিত করেছে। এমনকি মৌলবাদীরা নিজেরাও ফেরারি মার্সিডিজ লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত হয়ে আধো পশ্চিমা বনে গেছে।
এসবের জন্য কোন মুভমেন্ট বা এক্টিভিজমের প্রয়োজন লাগেনি।
সৌদি প্রজন্ম যেকোন পরিবর্তনকে আলিঙ্গণ করছে অনায়াসে, কারণ পূঁজি তাদের মনস্তত্ত্বকে প্রস্তুত করে নিয়েছে।
২০ বছর আগেও বাংলাদেশে ছেলেমেয়েরা প্রেম করতে লজ্জা পেতো, এখন অসংখ্য ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেপেলে অনেকটা প্রকাশ্যে লিভ টুগেদার করে৷ এই ফ্রিডম যতোটা না কারো এক্টিভিজমের ফলাফল, তারচেয়ে বরং আর্বান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপিটালিজম তাদেরকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ওয়েস্টার্নাইজ করছে। একজনের রোজগারে শহুরে মধ্যবিত্ত সংসারের চাকা যখন আর চলবে না, ঘরণীরা বাধ্য হয়েই রোজগারে নামবে। মহিলাদের বাইরে যাবার জন্য ফতোয়া বিরোধী ন্যারেটিভ লাগবে না। বরং পুঁজি নিজেই বাইরে টেনে আনবে। এটাই পূঁজির স্বয়ংক্রিয় শক্তি। তারপর মধ্যবিত্তের যখন আর্থিক স্বনির্ভরতা হবে, তখন কালেক্টেভিস্ট ট্রাডিশনাল ভ্যালু নিজ থেকেই দূর্বল হবে। কেএফসিতে যাবার টাকা হলে কেউ গার্লফ্রেন্ড ছাড়া যেতে চাইবে না।
গার্লফ্রেন্ডকে ঘরে আনতে দিলে স্বনির্ভর তরুণরা নিজেই আলাদা বাসা ভাড়া নিবে। মধ্যবিত্ত মাসে দুয়েকবার সিনেপ্লেক্সে যাবে।
এটুকু প্রগতিশীলতার জন্য রিচার্ড ডকিংসের 'গড ডেলিউশন' পড়ার দরকার নেই। বিশ্বাস করুন, লাগবে না। পূজিবাদ নিজেই একটা স্বয়ংক্রিয় কালচারাল লিবারালিজমের জন্ম দেয়।
আমি এজন্যই বলি সাকিব বিন রাশিদ কিংবা শামির মুন্তাজিরদের ঠুনকো এক্টিভিজম করে লিবারেল হিরো হবার দরকার নেই। আমি জানি এসব ওদের রেবেলিয়াস আনন্দ দেয়, প্রথা ভাঙার সাহসী আনন্দ দেয়। ওরা হুদাই মৌচাকে ঢিল মারে।
নতুন কোন ন্যারেটিভ সৃষ্টির মৌলিক প্রয়োজন নেই। সম্ভব হলে পশ্চিমে যেসব ন্যারেটিভ অলরেডি তৈরি হয়ে আছে সেগুলোর এক্সেস করে দিন। হলিউড ভলিউডের সিনেমাই এদেশে ন্যারেটিভ বদলের জন্য যথেষ্ট। ডিজিটাল গ্লোবালাইজেশনের দুনিয়া আইডিয়া তৈরির চেয়ে সহজ।
এক্টিভিজম যদি করতেই হয়, সেটা করা দরকার আমাদের মতো মৌলবাদীদের। এই পূঁজির স্রোতের বিরুদ্ধে করে নিজেদের মূল্যবোধ রক্ষা করবো সে চিন্তা আমাদের করতে হবে

Naeem Hasan
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:২১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×