(আমার এই পোস্টটার পরপরই 'ব্লগার তানভির জুমারে'র এই সংক্রান্ত একটা পোস্ট এসেছে, সেজন্য পোস্টটা ড্রাফটে নিয়েছিলাম। তার মতামতকে শ্রদ্ধা ও এই আন্দোলনে উঁনাদের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেই করেই বলছি, 'মাস্টারমাইন্ড' বিষয়টা সম্ভবত উনি ঠিকঠাক উপলব্ধি করতে পারেন নি- তাকে অনুরোধ করব এই লেখাটা পড়ার জন্য।)
ওর কথায় একটা নিজ মাটির ভাষার স্পষ্ট টান আছে। আগে বিষয়টা খুব বিরক্তিকর মনে হত। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমাপ করতাম তার চোস্ত বা শুদ্ধ বাংলা বলার দক্ষতা ও ইংরেজী জ্ঞানের উপর। কিন্তু এখন সে ভাবনা পাল্টে গেছে; এখন বড় ভাল লাগে এই টানটা; মানুষকে মনে হয় সৎ ও সলিড। কথায় মাটির ভাষার টান মোহনীয় অনেক বেশী মিষ্টি মনে হয়।
~ মাহফুজ আলম ২১ আগষ্ট ২০২৪ (*মঞ্চে উপবিষ্ট আছেন আমাদের 'মামো' )
ওর বক্তৃতার কিছু সার সংক্ষেপঃ
ক) ৭১রে মুক্তিযুদ্ধের গনচেতনা নিয়েই কি সামনের দিনের রাজনীতি টেনে নিতে পারবেন- এখনো কি সেই চেতনা নিয়েই পড়ে থাকতে হবে নাকি সেই চেতনাগুলো পুনঃসংস্কার করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে?
খ) সভ্যতাগত রূপান্তরঃ
গ) বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ অন্যদিকে ইসলাম ও ইসলাম ফোবিয়ার লড়াই এবং এই লড়াইগুলোর সামনের ভবিষ্যতগুলোর কি হবে?
ঘ) রাস্ট্র মানেই রাস্ট্রের আরেকটা শত্রু থাকবে- রাস্ট্রের কোন বন্ধু নেই। বন্ধু রাস্ট্র নামে অদ্ভুত একটা আইডিয়া আবিস্কার করা হয়েছে। প্রতিটা রাস্ট্র তার নিজের স্বার্থে সবকিছু করবে- এখানে বন্ধু রাস্ট্রের ধারনাটাই ভুল।
ঙ) দুইপাশে দুই সভ্য রাস্ট্র রেখে বাঙ্গালী জাতীয়তবাদ ভুলে বাংলাদেশ নামে এক রাষ্ট্র গড়ে আমরা আসল সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি কি না? যদি পেরে থাকি তবে স্বৈরাতন্ত্র কিভাবে সৃষ্টি হল?
চ) আমরা এই রাস্ট্রটাকে কি সেক্যুলার করব নাকি সেক্যুলারিস্ট করব?
সেক্যুলার ল্যাঙ্গুয়েজ কি আমাদের মহাজ্ঞানী গুরুরা এদের কাছ থেকে শিখুন। দেখুন আপনাদের ভাবনায় কত ভুল ছিল। এরা বলেছে এদের ডাকে কেন গ্রামের হুজুরটাও নির্দ্বীধায় আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কি ছিল সেই ব্যতিক্রম ভাবনা?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুল আন্দোলন যদি শুধু কোটা সংস্কার বলে ভেবে থাকি তবে আমরা বোকার স্বর্গে বাস করছি।
*** এবার আসুন নীচের লেখাটা পড়ি***
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর নাহিদ, আসিফ, সার্জিস, হাসনাত সহ অনেকেই বর্তমানে বাংলাদেশের ন্যাশনাল হিরো, প্রায় সবাই উনাদের চিনি। তবে আজকে কথা বলতে চাই পর্দার পেছনের অন্যতম একজনকে নিয়ে, যার সম্পর্কে সম্ভবত অনেকেই জানেন না।
ছবির এই ছেলেটা মাহফুজ আলম (মাহফুজ আবদুল্লাহ নামেও পরিচিত), ছাত্র বিপ্লবের অন্যতম প্রধান মাস্টার মাইন্ড। বিশ্ব রাজনীতি, সমাজ গঠন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশ আন্দোলন, ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের পর থেকে হওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক চুক্তি, সমঝোতা ও রাজনৈতিক মুভমেন্টগুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞ্যান রাখেন। ধারনা রাখেন দেশের প্রধান রাজনৈতিক নেতাদের মানসিক গঠন সম্পর্কেও, রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর এনসাইক্লোপেডিক জ্ঞান যেমন তার রয়েছে, কেন সেগুলো সফল বা ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলোও তার অজানা নয়।
মাহফুজকে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চেনা শফিকুল আলম বলেছেন কথাগুলো। লক্ষীপুরের রামগঞ্জের ছেলে মাহফুজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়াকালীন করেছেন সাংবাদিকতাও, লিখেছেন "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও সমকালীন জনমত, ১৯১১-১৯২১" নামক গবেষনাধর্মী বই, জড়িত ছিলেন আরও কিছু প্রকাশনার সাথেও।
২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন মাহফুজ, তবে কখনোই কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলেন না। আক্তার ও নাহিদ যখন "গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি" (GCS) গঠন করে তখন মাহফুজ আগ্রহী হয়ে উঠে এবং তথাকতিত রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে একটি আন্দোলনের রূপরেখা দিতে চান।
যখন উচ্চ আদালত কোটা পুনর্বহাল করেছিলো, মাহফুজ, আখতার, নাহিদ, আসিফ এবং বাকের মজুমদার আন্দোলন নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলো। ব্যক্তিগত কারণে আখতার ও তার আইনি পেশার জন্য পেছনে সরে আসেন আর মাহফুজ তখন প্রধান কৌশলবিদ । নাহিদ ও আসিফ আন্দোলনের ফ্রন্টিয়ার, বাকের প্রধান সংগঠক। মাহফুজ এবং এই তিনজন সিদ্ধান্ত নেয় GCS এর মাধ্যমে আন্দোলন পরিচালনা না করে নতুন নামে শুরু করার। জন্ম নেয় "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন" (SAD) এর। মাহফুজ ছিলেন লিয়াজো কমিটির সমন্বয়ক।
পুরো আন্দোলন জুড়েই খুব আশবাদী ছিলো মাহফুজ, চেয়েছিলেন যথাসম্ভব নারীদের অংশগ্রহণ। পুরো আন্দোলন জুড়েই আমরা তা দেখেছি, দেশের প্রতিটি কোণায় নারীদের অংশগ্রহণ ছিলো অবাধ ও চোখে পড়ার মতন। শাহবাগের এক সমাবেশে মাহফুজ বলেছিলেন "আজকে আমরা শাহবাগে এসেছি, আগামী মাসে আমরা থাকবো গণভবন"। তিনি তার কথা রেখেছিলেন, ৫ই আগস্ট (৩৬শে জুলাই) গণভবন দখল নেয় ছাত্র-জনতা। পতন ঘটে আওয়ামী সাম্রাজ্যের, পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
এই আন্দোলনের বিভিন্ন নামকরণ, আন্দোলনের ভাষা, কর্মসূচী খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো সর্বস্তরের মানুষকে এক করতে। সহজবোধ্য এবং মিনিংফুল এই নামগুলো; যেমন বাংলা ব্লকেড, মার্চ ফর জাস্টিস, কমপ্লিট শাটডাউন, রিমেম্বারিং দ্যা হিরোজ, মার্চ টু ঢাকা, এগুলোর পেছনেও অন্যতম কারিগর ছিলেন মাহফুজ।
আন্দোলনের বিভিন্ন গ্রুপকেও একত্রিত করতে কাজ করেছেন তিনি, সাহায্য করেছেন ৫৫ জন সমন্বয়ককে নির্বাচনেও। নাহিদ, আসিফ, সার্জিস বা হাসনাতরা যদি গ্রেপ্তার হন, তাহলে আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত লোক থাকবে এই পরিকল্পনা থেকেই এতোজনের সমন্বয়ক দল করা। ১০জন আটক হলে আরও ১০জন দাড়ায়ে যাবে, তারা আটকালেও সামনে আসবে আরও ১০জন।
এই সমন্বয়ক দলে রাখা হয়নাই কোন রাজনৈতিক দলের কাউকে। উদ্দেশ্য ছিলো আন্দোলন এবং সমন্বয়করা যেনো গ্রহণযোগ্য হয়, কোনভাবেই যেনো আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় এবং সরকার যেনো আন্দোলন নস্যাৎ করতে না পারে।
যদিও আন্দোলনের শেষভাগে এসে ভিন্ন ভিন্ন ছাত্র সংঘঠন যোগ দেয় তবে তারও অনেক আগে যোগ দেয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরা, স্কুল, কলেজের ছেলে মেয়ে এবং সর্বস্তরের জনগণ।
পর্দার অন্তরালে থাকলেও শেষ রক্ষা হয়নাই, আগস্টের ১/২ তারিখে বিগত সরকারের গোয়েন্দাদের একাধিক তালিকায় নাম আসে মাহফুজ আলমের। আত্মগোপণে থাকতে হতো তার, প্রায় প্রতিদিন করেছেন বাসা পরিবর্তন। তবে ধরা পড়লেও আন্দোলনের খবর এবং প্রতিটি কর্মপরিকল্পনা যেনো ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মিডিয়া এবং স্থানীয় মিডিয়ায় সেই ব্যবস্থা তারা করে রেখেছিলেন। একদম মানি হাইস্ট এর প্রফেসরের মতোন!
হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন মাহফুজ। অন্যদের সাথে আলোচনায় ছিলেন সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। আলোচনা চালিয়েছেন সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যেনো গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা যায়।
আমি আশাবাদী মাহফুজ আলমকে নিয়ে, আশাবাদী এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং সর্বোপরি নতুন জেনারেশন কে নিয়ে।
দিন কয়েক আগে অবাক হয়ে উনার এক আলোচনা শুনি। শেষ কবে কাউকে বাংলাদেশ, সমাজ নিয়ে এইভাবে বলতে শুনেছি মনে পড়ে না। কি সাধারণ ভাষায় কি অসাধারণ সব কথা।
*মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি জনাব শফিকুল আলম এর একটি ইংরেজি পোস্ট এবং বিভিন্ন সোর্সের সাহায্য নিয়ে তার সম্পর্কে লেখার দুঃসাহস টা করলাম। ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
লেখার মাঝের এই অংশটুকু- Fuad Ahasan Chowdhury
* হাসিনার পালিয়ে যাবার ভিডিওটা যিনি করেছিলেন তিনিও তাহলে 'মাস্টারমাইন্ড'। এই একটাই মাত্র অথেনটিক ভিডিও সারাবিশ্বব্যাপী প্রচার হয়েছে। এই ভিডিওটা না থাকলে এখনো আমরা সন্দিহান থাকতাম- আসলেই হাসিনা পালিয়েছে নাকি দেশেই আছে!
আওয়ামীলীগের চোখে এই আন্দোলন ছিল কিছু উচ্ছন্নে যাওয়া উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র, জঙ্গী, বিদেশী অপশক্তি, রাজাকার ও তাদের দোসর ও বিরোধী দলের কারসাজী।
আর বি এন পি কোন না কোনভাবে এই আন্দোলনে যে পুরোপুরি তাদের কৃতিত্ব ছিল-তারা না থাকলে যে কোনভাবেই এই আন্দোলন সফলতার মুখ দেখত না এবং আন্দোলন সফল হবার জন্য পুরো প্রিভিলেজটা তাদের পাওয়া উচিৎ এই নিয়ে ন্যাক্কারজনকভাবে গলাবাজী করছে।
এজন্যই আমি চাই ১৯৭২ সাল থকে ২০২৪ পর্যন্ত সব দুর্নীতি, দুরাচার, স্বৈরাতন্ত্র ও হত্যার বিচার হউক।
ওদিকে জমায়াত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সাপ লুডুর গেইম খেলছে।
ইসলামিক সংগঠনগুলোর দাবি, মাদ্রাসার ছাত্ররা ছাড়া এই আন্দোলন হালে পানিই পাইত না।
সবার কথা শুনে মনে হচ্ছে সাধারন ছাত্র-জনতা শুধু দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে।
অথচ এই মাহফুজ আলম সব রাজনৈতিক দলের সকলের সামনে দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে বলেছেন; এই আন্দোলনের শুরুতে যে, দুইশ'র উপরে মানুষ মারা গিয়েছিল তাদের ৮৫ জন ছিল খেটে খাওয়া দিনমুজুর শ্রেনীর!!!!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:১২