somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন রহিমুদ্দিন

১৬ ই মে, ২০১১ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘ রপ্ত পথ প্রতিদিনকার অভ্যাসের বলয় ভেঙ্গে অনেকটা অপ্রয়োজনীয় সৌখীনতার বশে বাড়ির পথে
হাঁটছিল রহিমুদ্দিন, যিনি স্বনামধন্য প্রফিট অরিয়েন্টেড মাল্টিন্যাশনাল কম্পানির মোটা মাইনের কর্মকর্তা
বছর দশেকের ব্যাপার। ইলেকট্রিক ট্রেনের গতিময়তায় রহিমুদ্দিনের জীবন খুব দ্রুত বদলে গেছে

রহিমুদ্দিন হাঁটতে হাঁটতে পেছনে তাকাল অকষ্মাৎ। প্রায় মাঝ রাতের মৌনতা সমস্ত পৃথিবী জুড়ে
সমস্ত নির্জীব গাছগুলো মিশরীয় ভৃত্যের মতন দাঁড়িয়ে সময়ের নগ্নতার উন্মত্ত স্বাক্ষীর স্বরূপ
গমগম অন্ধকারের ভীড়ের ভেতর একজোড়া জ্বলজ্বলে চোখ আর এক চিলতে আগুণ ছাড়া কিছুই জেগে নেই
মিউনিসিপ্যালিটির স্টৃট লাইটগুলো বেহায়ার মতন নিত্যদিনের অভ্যাসবশত অনির্দিষ্ট বিশ্রামে।
এক তৃতীয়াংশ পথ পেছনে ফেলে আসলেও সামনে অনেক পথ পড়ে আছে, দেখে শিউরে উঠল রহিমুদ্দিন
বুর্জোয়াতন্ত্রের খাঁচায় আটকানো ক্ষুধার্ত বাঘের মতন অবদমিত সমস্ত মৌন স্মৃতিরা জড়ো হয়ে উগ্রবাদী মিছিল তুলছে মুক্তির
রহিমুদ্দিন গত দেড় যুগের অনেক উৎকট স্মৃতি তাড়িত।
এই শহরে প্রথম যখন রহিমুদ্দিন আসে;
খুব ছোট্ট চাকরি ছোট্ট সংসার এরমধ্যেই ছোট্ট একটা সেভিংস। মনে পড়ে চোখের সামনেই কলেরায়
ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটার চিকিৎসাহীন অসহায় অপমৃত্যুর করুণ চাহনি। এখন ধনুষ্টংকার টাইফয়েড
ম্যালেরিয়ায়ও ছেলেটা বেঁচে আছে দিব্যি। বৃদ্ধ বাবাটা যক্ষায় কাশতে কাশতে একসময় নিথর হয়ে পড়ল
আজকাল বউটার ক্যান্সারও ব্যাপার না। প্রথম ধরা পড়াতে সব ঠিক। রহিমুদ্দিনের জীবন খুব দ্রুত পাল্টালো।
ড্রয়িংরুমে রাখা ঢাউস সাইজের টিভি পর্দা যেখানে একটা রেডিও ছিল। হারিকেনের জায়গা দখল করেছে
বৈদ্যুতিক বাল্ব ঘর আলোকিত করে। অবস্থানিক সুবিধা হেতু হেঁটে হেঁটে আপিস করার দিন শেষ
এখন আপিসের গাড়িতে যাওয়া আসা করা যায়, এয়ারকন্ডিশন্ড গাড়ী। সাত দিনের সময় নিয়ে যে চিঠির
জবাব আসত এখন তা সাত সেকেন্ডের ব্যাপার। ছোট্ট বেলায় রহিমুদ্দিন ঘুম পাড়ানিয়া ভূতের গল্প
শুনে ঘুমিয়ে পড়তো । তার ছেলে এখন মিষ্টার রোবট নামের একটা মেশিনারি ভূতের সাথে খেলা করে
গল্প করে এক সাথে ঘুমিয়ে পড়ে। সদর দরজার কপালে পীর বাবার অমূল্য বাণীসহ লেমিনেটিং করা ছবি,
ঘর থেকে বেরোবার আগে ঘরে ফিরে এসে যে ছবিটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বিনয়াবনত ভক্তিসহকারে
কৃতঙ্গতা জানাতো ফরিয়াদ জানাতো জীবন বদলাবার, সেখানে এখন আইনষ্টাইনের মোটা গোঁফের ঠোঁটের ফাঁকে
পাইপ চেপে ধরা বাঁধাই করা ছবি । রহিমুদ্দিনকে আপিসের কলিগরা মাঝে মাঝে রবার্ট বলেই ডাকে
শুনে রহিমুদ্দিনের ভেতর এক ধরনের অভিলাষী আনন্দ খেলে যায়, চোখে মুখে তৃপ্তির ছায়া পড়ে
অভাব আর ধর্মীয় তৎসহ অভিন্ন বংশ মর্যাদার খেসারতে যুবক জীবনের যে প্রথম প্রেম ধূপে টিকেনি তার দগদগে
ক্ষতে হাত বোলালে বরং সুখের ব্যথাই তীব্র হয়ে উঠে। স্টৃটে পার্কে রেস্তঁরার ক্যান্ডল লাইট ডিনারের শেষাংশে
যত্রতত্র হাত ধরাধরি চুম্মাচাটি শয়ান ঘরের আটপৌরে ফিসফিসানির করাত ভেঙ্গে ফ্রয়েডিয়ান ভালবাসার দিন।
রহিমুদ্দিনের জীবন ও জগৎ খুব দ্রুত পাল্টেছে
তবুও রহিমুদ্দিনের পথ ও পথের চক্র সে একই চক্রে আবর্তিত। এখনও রহিমুদ্দিন ছোট ছোট সেভিংস নিয়েই ভাবে,
যে সেভিংস রহিমুদ্দিনের নিস্তরঙ্গ জীবনে ছোট হতে হতে ক্রমশ অস্তিত্বহীনতার দিকে অগ্রসরমান
রাত রত্রির প্রতি ধাবমান। রহিমুদ্দিন স্রোতস্বিনী নদীর মত বয়েই চলেছে
একবিংশ শতকে এসেও রহিমুদ্দিন সেভিংস নিয়েই ভাবছে . . .
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×