লেজার টিউবটা কিট বক্সে রেখে টি-৩২৮৪ উঠে দাঁড়ালো। শরীরের গঠনটা নিঁখুত। সিলঝিনিয়ানের ঝকঝকে দেহ। চৌম্বক এবং তড়িৎ অপরিবাহী হাত। যে কোন মেয়ে রোবটের ইমোশনাল সার্কিটে ব্রেকডাউন ঘটানোর জন্য যথেষ্ট। ফটোসেলের চোখে পুরো গ্যারজটাতে কিছু একটা খুঁজছিলো সে। এমন সময় বিকট শব্দ করে গ্যারেজে ঢুকলো একটা কিউ-৩ মডেলের ঝরঝরা গাড়ি। দড়জাটা শব্দ করে খুলে একটি পঞ্চম প্রজন্মের রোবট বের হয়ে এলো। টি-৩২৪ এর দিকে তাকিয়ে ধমকের সুরে বললো, কাল সকালের মধ্যে আমি আমার গাড়িটা ঠিক দেখতে চাই। বিকটা শব্দ যেন পুরোপুরি দূর হয়ে যায়। মনে থাকে যেন, কালকে সকালের মধ্যে।‘ বলেই ধুপ ধাপ করে গ্যারেজ থেকে বের হয়ে গেলো সে।
কিউ-৩ গাড়িটা দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো টি-৩২৮৪ । কেন যে তাকে একটা মোটরমেকানিক রোবট হিসেবে তৈরী করা হলো।
তারপরও সে মন দিয়ে কাজ কর যায়। কারন তাকে তৈরী্ই করা হয়েছে গাড়ি মেরামত করার জন্য। যেমন ইঞ্জিনিয়ার রোবটদের তৈরী করা হয়েছে হাইওয়ে আর এয়ারওয়ে টিউবগুলো ঠিক করার জন্য, মেডিক রোবটগুলোকে তৈরী করা হয়েছে নষ্ট রোবটগুলোকে ঠিক করার জন্য। নববিংশ শতাব্দীর এই পৃথিবীতে পুরো পৃথিবী জুড়ে যে সত্তর মিলিয়ন রোবট রয়েছে সবাইকেই কোন না কোন কাজে তৈরী করা হয়েছে । যাকে যে কারনে তৈরী করা হয়েছে তাকে তো সে কাজ করতেই হবে।
বিকেল বেলা কাজ শেষে যখন টি-৩২৮৪ যখন তার গ্যারেজ বন্ধ করতে যাবে তখনই গ্যারেজের সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো। চতুর্থ প্রজন্মের একটা রোবট গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পেছনের গেটটা খুলে দিলো। সেখান থেকে এক অদ্ভুত জিনিস নামলো। পুরো দেহ ফিনফিনে একটা জিনিস দিয়ে মোড়ানো। চতুর্থ প্রজন্মের রোবটটা টি-৩২৮৪ কে এসে বললো, ‘এই গাড়ির পাওয়ার সেল এ কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। দেখে দাও তো।'
টি-৩২৮৪ তখনো অদ্ভুত বস্তুটটার দিতে তাকিয়ে আছে। সে অদ্ভুত জিনিসটার দিকে এগিয়ে গেলো।
-তুমি কোন প্রজাতীর রোবট?
প্রশ্ন শুনে মনে হয় সেটা অবাক হলো।
-আমি রোবট নই।আমি মানুষ।
কি আশ্চর্য! মানুষ।টি-৩২৮৪ আগে কখনো মানুষ দেখেনি। শুনেছে মানুষ বলে এক জাতীয় প্রাণী আছে। তাদের নাকি বেচেঁ থাকার জন্য পাওয়ার সেল কিনতে হয় না। আগে পৃথিবীতে নাকি অনেক অনেক মানুষ ছিলো। এখন বেশীর ভাগই সাইবর্গে পরিনত হয়েছে যারা নানা রকম কাজের সুবিধার জন্য নিজেদেরকে সাইবার্গে পরিবর্তন করেছে।অল্প কিছু মানুষ এখনো আছে। টি-৩২৮৪ আগে অনেক সাইবর্গ দেখেছে। কিন্তু সত্যিকারের মানুষ দেখেনি।
টি-৩২৮৪ অবাক হয়ে মানুষটা কে দেখতে থাকে। হঠাৎ করে একটা প্রশ্ন জাগে তার মাথায়।
-তোমাকে কোন কাজের জন্য তৈরী করা হয়েছে?
মানুষটা অবাক হয়ে তার প্রশ্নে।
-মানে?
-মানে হলো আমাকে যেমন মোটরগাড়ি মেরামতের জন্য তৈরী করা হয়েছে। তেমনি তোমাকে কেন তৈরী করা হয়েছে।
মানুষটা এবার বিরক্ত হলো মনে হয়। আমাকে তো কোন কিছুর জন্য তৈরী করা হয় নি। আমি মানুষ । আমরা আছি বলেই তোমরা রোবটরা তৈরী হয়েছো। আমরাই জ্ঞান বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটিয়েছি।
-কিন্তু জ্ঞান বিজ্ঞানের গবেষনার জন্য তো গবেষক রোবট আছে।
-আমরা আছি বলেই শিল্প আছে, গান আছে, কবিতা আছে।
-কিন্তু সাহিত্য তৈরীর জন্যও তো ক্রিয়েটিভ রোবট তৈরী করা হয়েছে। তাহলে তোমাদের কেন তৈরী করা হয়েছে? তোমাদের কাজ কী?
মানুষটা বুঝতে পারে না কি উত্তর দিবে।মানুষটা অবাক হয়ে ভাবতে থাকে আসলেই তো তাকে ঠিক কি কাজের জন্য তৈরী করা হয়েছে। নববিংশ শতাব্ব্দী এই রোবট ময় পৃথিবীতে সে তার কোন প্রয়োজন খুঁজে বের করতে পারে না অনেক ভেবেও।তাই তৃতীয় প্রজন্মের এই সামান্য রোবটের এই অত্যন্ত যৌক্তিক প্রশ্নটার কোন উত্তর সে খুঁজে পায় না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:১২