সমস্যা আছে, এবং বেশ বড় ধরণের সমস্যা আছে; ভুত, পেত্নী, জ্বীনে বিশ্বাস করলে যেই সমস্যাটা আছে, উহা হলো, যিনি এগুলোতে বিশ্বাস করেন, তাঁর ভাবনায় লজিক নেই; লজিক-বিহীন ভাবনাচিন্তা হচ্ছে মানুষের অদক্ষতার মুল ভরকেন্দ্র, এরা লজিক-বিহীন সিদ্ধান্ত নেবেন, লজিকহীনভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারেন; এরা সমাজে, পরিবারে ও কর্মক্ষেত্রে তালগাছ নিয়ে বসে থাকতে পারেন, ভুল প্ল্যানিং করতে পারেন; এদের হাতে সমাজের বড় দায়িত্ব থাকলে এরা সঠিকভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালন করার সম্ভাবনা নেই।
আমার জীবনে গ্রামের পরিচিত এলাকায় শতশত মানুষকে মানসিক রোগে ভোগে অশান্তিতে বাস করতে দেখেছি, এদের সঠিক চিকিৎসা হয়নি; ভুল বিশ্বাসের কারণে, এদের জ্বীন, ভুতের চিকিৎসা করা হয়েছে, জীবনটা বিফলে গেছে। আমার ফুফাতো বোন মানসিক অবসাদে ভুগতেন, কিন্তু বিশ্বাস করতেন যে, জ্বীন উনাকে তাড়া করে; চাষী পরিবারে বিয়ে হয়েছিলো, নিজের ছোট বাচ্চাটারও দেখাশোনা করতেন না, সংসার চলতো না, স্বামী আরেক বিয়ে করে; কিন্তু ফুফাতো বোনকে বিদায় করে দেয়নি; ফুফাতো বোন মা-বাবার সংসারে থাকতে পছন্দ করতেন, আজীবন সেখানেই ছিলেন পরে।
আফ্রিকার 'মেডিসিন ম্যান'দের কথা শুনেছেন নিশ্চয়, একখানা মহাদেশের মানুষের চিকিৎসা ছিলো এদের হাতে, এখনো শতকরা ৩০ ভাগের চিকিৎসা এদের হাতে; এরা ক্যান্সার থেকে শুরু করে ভুতে ধরা, সবকিছুর চিকিৎসা করে। গত ২০০ বছরের কয়েককোটী মানুষের মৃত্যু হয়েছে এদের হাতে; গত ১০০ বছর ইউরোপের ডাক্তারেরা আফ্রিকাকে সাহায্য করছে, এখন মেডিসিন ম্যানদের দৌরাত্য কিছুটা কমেছে!
মেডিসিন ম্যানরা জোর করে চিকিৎসা করেনি, সমাজে তাদের চাহিদা ছিলো; অশিক্ষা ও দারিদ্রতাই হয়তো ইহার জন্য বেশী দায়ী ছিলো; মানুষ লজিক্যালী ভাবতে পারেনি যে, তার শিশু সন্তান অসুস্হ, একজন অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষ কি করে সেই অসুস্হ শিশুর চিকিৎসা করবে? আফ্রিকার মানুষ ভাইরাস, জীবাণু, ইত্যাদি বুঝতো না; তারা বুঝতো যে, বাচ্চার উপর কিছুর আছর হয়েছে; কারণ, তাদের ভাবনায় ছিলো অশরীরি আত্মাই অসুস্হতার কারণ। এই ভুল বিশ্বাসের কারণে শতশত বছর মানুষ সঠিক চিকিৎসা পায়নি।
আপনি যদি ভাবেন, কিছু মানুষ যদি ভুত, পেত্নী বা জ্বীনে বিশ্বাস করে, সমস্যা কোথায়? আসলে, ইহা বড় ধরণের সমস্যা, ইহা লজিক-বিহীন সমাজের জন্ম দিয়েছে ও উহাকে টিকে থাকতে সাহায্য করছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২২ রাত ১০:৪৪