somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মীন রাশির মেয়ে, জাহেদা

২২ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জাহেদা আমাদের পশ্চিম পাড়ার মেয়ে, মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারে জন্মেছিলো; বাবার বেকুবীর জন্য পরিবারটি অনেকটা অস্বচ্ছলতার মাঝে চলে যায়; জাহেদা ৪র্থ শ্রেণীতে উঠার পর, জাহেদার বাবা তাকে আর পড়তে দেয়নি; ইহা মেয়েটাকে কষ্ট দিতো সব সময়। যাক, মেয়েটা বড়শী, মাছ ধরার চাঈ, ইত্যাদি দিয়ে মাছ ধরে পরিবারের জন্য মাছ যোগাড় করতো; সে বড়শী নিয়ে বসলেই মাছ পেতো।

আমাদের গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় আমাদের একটা বড় ছাড়া-বাড়ী (বসত বাড়ী নয়) ছিলো; ইহার চারিপাশে গাছ, কলাগাছ, পাটি পাতা, বেতবন, আগাছার ঝোপ ও লতা ইত্যাদির কারণে ভেতরের কিছু দেখা যেতো না, অনেকটা ভুতুড়ে বাড়ীর মতো। বাড়ীর পুকুরটি মাঠের সাথে যুক্ত থাকতো, অনেক বাংলা মাছ আসতো মাঠ থেকে। জাহেদা সেই ভুতুড়ে বাড়ীর ঘাটে বসে ছোট ছিপ দিয়ে মাছ ধর‌তো। জাহেদার বয়স ১০ বছর হওয়ার পর, তার বাবা, সিদ্দিক পন্ডিত, মেয়েকে স্কুলে যেতে বারণ করলো, মেয়ে বড় হয়ে গেছে, আর পড়ালেখার দরকার নেই।

আমরা সেই বাড়ীতে সবজি করতাম; আমি গেলে তার সাথে দেখা হতো। তার বাবার সামান্য চাষের জমি ছিলো, অন্যদর জমি বর্গা নিয়ে ভালো চাষ করতো। ভালো থাকা তার ভালো লাগলো না, সে মাইজভান্ডারের সাগরেদ হলো, মাসে মাসে ওখানে যাওয়া আসার শুরু করলো, গেলে সহজে ফিরতো না; বছরে ২/৩ বার ওরসে যাচ্ছে, সাথে আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন নিয়ে যাচ্ছে। সে আজগুবি ধরণের পোশাক পরা শুরু করলো, মাথায় লম্বাচুল; গ্রামে রটনা হয়ে গেলো, সে মাইজভান্ডারে গাঁজা খায় ও সেখানে রাতে ঢোল বাজায়ে নাচে।

জাহেদার মা বেশ স্বচ্ছল চাষী পরিবারের মেয়ে, কিন্তু তার নিজ পরিবারের অবস্হা খারাপ; করার কিছু নেই; মা-বাবার বাড়ী গিয়ে তাদেরকে সাহায্য করতে লাগলো। তার মা-বাবা বছরের চালডাল দিচ্ছে, খেয়েদেয়ে চলছে, পরিবারের অবস্হা ভালো নয়। জাহেদার মা স্বামীকে কিছুতেই কন্ট্রোলে আনতে পারলো না। ২/৩ বছর পর, মসজিদের ইমাম পন্ডিতের পেছনে লাগলো, এক সালিশ বসলো ইমামের নেতৃত্বে, পন্ডিত গাঁজা খায়। পন্ডিত ছিলো খুবই অমায়িক; ইমাম সাহেব সুবিধা করতে পারলেন না, প্রমাণ নেই।

এর পরের ওরসে পাশের গ্রামের ২ লোক গিয়েছিলো পন্ডিতের সাথে, তাদরকে সাক্ষী হিসেবে এনে ইমাম সাহেব আবার সালিশ বসালো; প্রমাণ পাওয়া গেলেো; বিচারের ১ম রায়, পন্ডিতের পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হলো; ২য় রায়ে পন্তিতকে বলা হলো সমাজীদের কাছে মাফ চাইতে; কিন্তু পন্ডিত মাফ চাইবে না। এবার এলো বিকল্প রায়, জুতা দিয়ে ১০ ঘা। জাহেদা অদুরে খড়ের গাদার পেছনে বসে বাবার বিচার শুনছিলো। হঠাৎ সে রুদ্রমুর্তি ধারণা করে, সালিশের সামনে এসে ঘোষণা করলো:
-যদি কেহ আমার বাবার গায়ে হাত দেয়, তার ঘাঁড়ে মাথা থাকবে না। আমার বাবাকে যেতে দাও, তোমাদের সমাজে নিয়ে তোমরা থাক।

লোকজন অবাক, কিশোরী কি বলে! সালিশে হট্টগোল লেগে গেলো; অনেকেই জুতার আঘাতের বিপক্ষে কথা বলতে লাগলো; অবশেষে সালিশের সিদ্ধান্ত হলো, জুতার দিয়ে আঘাত বাদ; তবে, সমাজচ্যুত। মাস'খানেক জাহেদারা কেহ বাড়ীতে নেই, জাহেদা মায়ের সাথে নানার বাড়ী চলে গেছে। আমি ছাড়া-বাড়ীত গেলে ঘাটে গিয়ে দেখতাম, জাহেদা নেই, বাড়ীটাকে কেমন মৃত মনে হতো।

এক শুক্রবার বিকলে রান্নার জন্য বেগুন আনতে গেছি ছাড়া-বাড়ীতে; দেখি, জাহেদা বেগুন খেতের আলের উপর চুপ করে বসে আছে।
-জাহেদা, কবে ফিরলি?
-কালরাতে।
-মাছ ধরিসনি?
-না।
কেন?
-আমরা তো সমাজচ্যুত, আপনি বিপদে পড়বেন।
-আমার বিপদে পড়ার সম্ভাবনা নেই! তোর ছিপ কোথায়? দেখ, কিছু লাগে কিনা।


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২২ সকাল ১০:৩৬
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×