শেখ সাহেবের সকল রাজনৈতিক ভাবনাকে শেখ সাহেব ২টি রাজনৈতিক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে কার্যকরী করার চেষ্টা করেছিলেন: (১) ৬ দফা (২) বাকশাল। ৬ দফা কাজ করেছে, বাকশালের কারণে উনার প্রাণ গেছে, নতুন স্বাধীন দেশে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে আমাদেরকে পাকিস্তান ও মিয়ানমারের লেভেলের 'গণতন্ত্র' উপহার দেয়।
বাকশাল বিরোধীতা বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে আসেনি, গণরোষের ফলে শেখ সাহেব প্রাণ হারাননি; বাকশাল বিরোধীতা এসেছিলো আমেরিকার সিআইএ থেকে, তারাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে, শেখ সাহেবকে থামাতে হবে, শেখ সোভিয়েত ব্লকে চলে যাচ্ছে। তারা পাকিস্তানের মিলিটারীর সাহায্য নিয়ে অতি সহজেই আমাদের সেনাবাহিনীর জেনারেলদের কিনে নিয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের কারণে বাংলাদেশ বাহিনীর 'জেনারেলরা' খুব অল্প সময়ের মাঝে 'জেনারেল' হয়ে গিয়েছিলো, তারা জেনারেল হওয়ার জন্য যেসব গুণাবলীর দরকার হয়, সেটা অর্জন করার সময় পায়নি, তেমন পরিপক্ক ছিলো না।
তখন দেশের মানুষের শতকরা ৮০ ভাগই নিরক্ষর ছিলেন, তাঁদের সঠিক রাজনৈতিক জ্ঞান ছিলো না; অশিক্ষিত হলেও মানুষের মাঝে জাতীয়তাবাদী একটা ভরসা ছিলো: আমরা নিজেরা ভালো থাকতে পারবো। শেখ সাহেব সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিলো, তিনি সব জানেন, তিনি আমাদের ভালোর জন্য সব করছেন। কিন্তু ১৯৭৪ সালের মন্দা ও সীমিত আকারের দুর্ভিক্ষ অনেক মানুষের আস্হায় ফাটল ধরিয়ে দেয়। সেই সুযোগটাই সিআইএ কাজে লাগায়; এবং তারা সমস্ত মিডিয়াকে কিনে নেয়, মিডিয়ার অনেক লোকজন নিজের থেকেই এগিয়ে গিয়ে সিআইএ ও মিলিটারীকে প্রচারণায় সাহায্য করে।
মিডিয়া, মিলিটারী ও ১৯৭১ সালের 'দেশ-বিরোধীরা' সবাই মিলে শেখকে দোষারোপ করতে থাকে ও উনার বাকশালকে সবকিছুর জন্য দায়ী করতে থাকে। এদিকে আওয়ামী লীগের মাঠ থেকে পলায়ন মানুষকে বিশাল বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। সিরাজ শিকদারসহ নক্সালীদের কর্মকান্ড, জাসদের গণবাহিনীর "বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র" মানুষকে সমাজতন্ত্র সম্পর্কে ভীত করে তুলেছিলো সেই সময়। ফলে, তারা বুঝতে পারছিলো না, শেখ সাহেব কেন আবার সমাজতন্ত্রের কথা বলছে! সবদিক থেকে রাজনৈতিক পরিবেশ ছিলো সিআইএর জন্য সুবিধাজনক; এভাবেই সিআইএ ও মিলিটারী মিলে শেখ সাহেবের রাজনৈতিক ভাবনাকে উনার সাথেই কবরে পাঠিয়ে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:৩১