তাহের সাহেব গভীর মনযোগ দিয়ে শীলার কোমরের দিকে চেয়ে আছেন। তার মোটা দুই ভুরুর মাঝখানে চিকন ভাঁজ । সিগারেটে পোড়া পুরু ঠোঁটের কোণে ঝুলে আছে কাম তৃষ্ণা। তিনি জীভ দিয়ে চেটে শুষ্ক ঠোঁট ভেজানোর চেষ্টা করেন।
দুই মাস আগে শীলা যখন জয়েন করেছিল তখন তাঁর কোমর বেশ ছিপছিপেই ছিলো। কামিজের নীচে সরু কোমরের ছন্দ তুলে সে যখন তার রুম থেকে বের হয়ে যেতো নিজের চেয়ারে বসে পিছন থেকে শীলার কোমরের ঢেউ তোলা দুলুনী তিনি কামাতুর দৃষ্টি দিয়ে উপভোগ করতেন।
তিনি বেশ কয়েকবার আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন যে তার সাথে তিনি অন্তরঙ্গ সময় কাটাতে চান কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারনে মেয়েটি তাকে এড়িয়ে চলছে।
তবে কোমরে মেদ জমলেও লাবন্য যেন চুইয়ে পরছে মেয়েটির শরীর বেয়ে।
তাহের সাহেবের লোভাতুর চকচকে দৃষ্টি শীলার শরীরজুড়ে ঘুরে বেড়ায়। তিনি অশ্লীল আত্মতৃপ্ত লাভ করেন।
ছিপছিপে গড়নের আটাশ বছর বয়সী শীলা তাহের সাহেবের নতুন অফিস এডমিনিস্ট্রেশন অফিসার।
শীলার আগে ওই পোস্টে ছিলো দীপা। উচ্চাভিলাষী দীপা তাহের সাহেবের প্রথম ইশারায় শয্যা সংগীনি হয়েছিলো। অবশ্য এতে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দুই বছরেই সে ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট গাড়ীর মালিক হয়েছিল । যদিও সে আজ তাহের সাহেবের নাগালের বাইরে। কিন্তু নিশুতি রাতে দীপার পেলব শরীর তাহের সাহেবকে জাগিয়ে রাখে। দীপাকে ভূলে যাওয়ার জন্য তিনি নিজে সিভি বাছাই করে দীপার চেয়ে সুন্দরী যোগ্যতা সম্পন্ন মেয়েকে নিয়োগ দিয়েছেন।
অফিসের সব রকম কাজে শীলা যথেষ্ট পারদর্শী হলেও কি এক অজানা কারনে তার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। তাহের সাহেব হিসেব মেলানোর চেষ্টা করেন। তবে মেয়েটি খুব আন্তরিক।
গাজিপুরে তিনি দুই বিঘা জমি কিনেছেন একটি মোটেল বানিয়ে ভাড়া দিবেন বলে। আজকে তিনি ইচ্ছে করেই শীলাকে তার সাথে গাজীপুর নিয়ে এসেছেন । কন্সট্রাকশনের কাজ দেখার বাহানায় শীলাকে যদি কিছুটা কাছে পাওয়া যায় সেটাই আসল উদ্দেশ্য। তার উত্তরা অফিস থেকে গাজীপুর যেতে সময় খুব কম লাগে। রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম পার হয়ে প্রায় দুই ঘন্টা। গাড়ীতে ওই সময়ে ড্রাইভারের সামনে তিনি শীলার সাথে খুব ফরমাল কথাই বলেছেন।
শহরের কোলাহল মুক্ত চারিদিকে বাউন্ডারি দেওয়াল দিয়ে ঘেরা জায়গাটি খুব মনোরম। এই জমিটি কেনার পর তাহের সাহেব শাল ও মেহগনি গাছের চারা লাগিয়েছিলেন সীমানা প্রাচির ধরে। গাছগুলো কয়েক বছরে বড় হয়েছে অনেকটা। প্রতিটি গাছে পাতার সমাহারে এই জায়গাটিতে মায়াবী পরিবেশ বিরাজ করছে যেন।
মোটেলের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ছাদ ঢালাই হয়ে গেছে। মোটেলের পাশে কিছুটা জায়গা জুড়ে কর্মচারীদের থাকার জন্য অস্থায়ী টিনশেড একটি ঘর। তাহের সাহেব আর শীলা যখন এখানে এসে পৌঁছান তখন প্রায় দুপুর। অবশ্য শীলা আগের দিন কেয়ারটেকার কে বলে রেখেছিল দুপুরের খাবারের কথা। তাজা সব্জী , টাটকা মাছ এসব কিছুই তাহের সাহেবের পছন্দ ।
তাহের সাহেব গাড়ি থেকে মোটেলের কাজের অগ্রগতি দেখে সন্তুষ্ট চিত্তে শীলার দিকে চেয়ে বলেন " দুপুরের খাবারের কি আয়োজন ?"
"স্যার, আমি গতকাল কেয়ারটেকারকে বলে রেখেছিলাম আপনার পছন্দের খাবারের কথা। নিশ্চয় সে সবই রান্না করিয়ে রাখবে তারপরেও আমি একবার দেখে আসি" ---এই বলে শীলা গাড়ী থেকে নেমে অস্থায়ী টিনশেড ঘরটির দিকে এগিয়ে যায়।
তাহের সাহেব আবারও বিরক্ত বোধ করেন শীলার উপর। তিনি ঠিক ধরতে পারেন না এই মেয়েটি কেন তার আশে পাশে বেশীক্ষণ থাকতে পছন্দ করেনা। তবে কি তিনি বুড়িয়ে গেছেন! ৫২ বছর বয়সেও তিনি যথেষ্ট পেটানো শরীরের অধিকারী। বাইশ বছরের তার জমজ কন্যা আছে তাকে দেখলে কেউ বুঝতে পারেনা। বয়সের তুলনায় অনেক বেশী তারুন্য ধরে রেখেছেন। তাঁর মোটা মোটা জোরা ভ্রু আবার কুঁচকে যায়।
তাহের সাহেব পকেট থেকে লাইটার হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলেন । সিগারেটের প্যাকেট খুলতে ইচ্ছে করছেনা। দূর থেকে শীলার খিলখিল হাসি দেখে মেজাজ বিগড়ে গেছে তার। কার সাথে এত হাসাহাসি তিনি ঠিক ধরতে পারছেন না। শীলা দাঁড়িয়ে আছে বারান্দার মত খোলা জায়গাতে। যার সাথে কথা বলছে সে ঘরের ভেতর। তিনি হাত ইশারায় ইদ্রিস আলীকে ডাকলেন। ইদ্রিস আলী এই জায়গার কেয়ারটেকার। আজ সকাল থেকেই তাঁর ছোটাছুটি বেড়ে গেছে বড় সাহেব ঢাকা থেকে আসবে বলে। আশেপাশের খোলা জায়গায় হাল্কা ঠান্ডায় শীতের আমেজ এনে দেয়। কিন্তু বড় সাহেবের ইশারায় তাঁর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠে । সে ত্রস্ত পায়ে ছুটে সামনে এসে দাঁড়িয়ে বিনয়ের সাথে বলল " জী স্যার"
তাহের সাহেব শীতল গলায় জানতে চাইলেন --- " ঘরের ভেতর কে"?
ইদ্রিস আলীর ত্বরিত উত্তর --- " ইঞ্জিনিয়ার শামস স্যার, আপনি আজ আসবেন তাই তিনিও এসেছেন কাজের তদারকি দেখতে"
তিনি হাত ইশারায় ইদ্রিস আলীকে চলে যেতে বললেন।
দূর থেকে তাঁদের হাসি দেখে তাহের সাহেবের বেশ রাগ লাগছে। মোটেলের কাজ শেষ হলেই তিনি শামস ছেলেটিকে বরখাস্ত করবেন এই কঠিন প্রতিজ্ঞায় তাঁর চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।
দুপুরের খাবার পর্যন্ত তাহের সাহেবের মেজাজ যথেষ্ট পরিমাণ খারাপ থাকে। দুপুরের খাবারের সময় শীলা তাকে নিজ হাতে বেড়ে খাইয়েছে। তিনি এই সময় অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন মেয়েটি খুব মায়াবতী। তার অশান্ত মেজাজ এ কারনে এখন কিছুটা শান্ত । ফরসা সুডৌল কবজির উপর কালো বেল্টের গোল ডায়ালের ঘড়ি পরা হাতে শিলা পানির গ্লাস তার দিকে এগিয়ে দেয়। তিনি আবারও শিলার প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করছেন।
খাবার শেষ করে ইঞ্জিনিয়ার শামস চলে যেতেই তাহের সাহেব সিগারেটে আগুন ধরিয়ে একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, ‘শীলা , তোমার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে’। শীলা ততক্ষণে শামস এর গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে গেছে । কিছুটা দূর থেকে সে তাহের সাহেবের দিকে পেছন ফিরে তাকিয়েই বললো, ‘জ্বি, বলুন স্যার’।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:০২