সারাবিশ্বে প্রযুক্তি ও আধুনিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়েছে বাংলাদেশও। বর্তমান বাংলাদেশে প্রযুক্তি ও তথ্য প্রবাহের অবাধ ব্যবহারে একদিকে যেমন উৎকর্ষ বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি এর খারাপ দিকটিও মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলছে সমাজে।
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারী নথুল্লাবাদ থেকে অপহৃত হন ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল আজাদ। তাকে অপহরণ করেন বরিশাল ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অটোমোবাইল বিভাগের ৭ম বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান। অপহরণের দেড়মাস পরে মেহেদী আটক হলে ঘটনার নতুন মোড় নেয়। সহকারী পুলিশ কমিশনার (এয়ারপোর্ট) মো. রকিব সংবাদ সম্মেলনে জানান, ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল আজাদ অপহরণ ও হত্যার নেপথ্যে কাজ করেছে সমাজ ও রাষ্ট্র নিষিদ্ধ একটি সর্ম্পক।
অভিযুক্ত ঘাতক মেহেদীর বরাত দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, আজাদের হাত থেকে রেহাই পেতে মেহেদী বিয়েও করেছিলেন। তারপরও রেহাই পাননি তিনি। বিভিন্ন সময় পূর্বের ঘটনা জানিয়ে দেওয়ার কথা বলে ব্লাকমেইল করে আজাদ তাকে বলাৎকার করে আসছিলেন। বলাৎকার থেকে রেহাই পেতে আজাদকে হত্যার দাবি করেছেন ঘটনার দেড়মাস পড়ে আটক মেহেদী।
ঘটনার অনুসন্ধানে পরে বেড়িয়ে এসেছে আজাদ হত্যার নেপথ্যে কাজ করেছে, Gay বা সমকামিতা। আজাদ হত্যার মধ্য দিয়ে বরিশালে সমকামিতা আলোচনায় এলেও প্রশাসনের হাতে নগরীতে বা এর আশেপাশে এই সর্ম্পকে লিপ্তদের বিষয়ে কোন তৎপরতা বা তথ্য নেই।
বরিশাল মেট্রাপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেছেন, বিষয়টি অতিসম্প্রতি বরিশালে আলোচনায় এসেছে। সুর্নিদিষ্ট তথ্য পেলে এই কর্মকান্ডে লিপ্তদের সনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই কর্মকর্তা বলেন, সমকামিতা বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবেই মারাত্মক অপরাধ। আর প্যানাল কোড ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী সমকামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে।
বিজ্ঞানে এটিকে মনোবৈকল্য বলা হলেও বর্হিবিশ্বের কয়েকটি দেশের অনুসরণ করে বাংলাদেশ তথা বরিশালে যথারীতি ‘কমিউনিটি’ গড়ে উঠেছে।
বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক পরিচালক ও বিশ্লেষক ডা: খান মোশতাক আল মেহেদী মনে করেন, সমকামিতায় মূলত নানাবিধ কারনে আসক্ত হয়ে থাকে একজন মানুষ। পরিবেশের বৈপরিত্য, শিশুকে যদি সঠিকভাবে গড়ে তোলা না যায় এবং অসম বন্ধুদের সাথে ঘনিষ্ঠতা থেকে প্রলুব্ধ হতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বরাত দিয়ে সরকারের সাবেক এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটিকে জিনগত সমস্যা হিসেবে প্রমাণিত। এখানে যিনি সমকামিতায় লিপ্ত হন তার চেয়ে পারিপাশ্বিক পরিবেশ বেশি দায়ী। ওদিকে বরিশালে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে সমকামিদের সংখ্যা। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ, পেজ ও আইডি খুলে সংঘবদ্ধভাবে রাষ্ট্রনিষিদ্ধ কাজ করে যাচ্ছে একটি শ্রেণী।
এ নিয়ে গ্রুপে গ্রুপে বিরোধ, উত্তেজনা ও মারধরের ঘটনাও ঘটে থাকে। এমনকি হত্যাকান্ডের উদাহরণও রয়েছে নগরীতে। ফলে বরিশাল নগরীর প্রেক্ষাপটে সমকামিদের তৎপরতা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কর্মতৎপরতা এখনই রোধ করা না গেলে বরিশালে সামাজিক অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন সচেতনরা। তবে এই আসক্তিতে যারা জড়িয়ে পরেছেন তাদের ভাষ্য, ‘সাময়িক ফ্যান্টাসি’র মাধ্যমে আসক্তি চলে এসেছে।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার নাম, বিএম কলেজ, কয়েকটি উপজেলা, ও বিখ্যাত স্থাপনার নাম ব্যবহার করে ‘গে কমউিনিট’ গ্রুপ/পেজ/আইডি চালু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় সমকামিরা। পুরো বরিশাল বিভাগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক সক্রিয় রয়েছে প্রায় ৭ হাজারের অধিক। বয়স শ্রেনী পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই আসক্তিতে ১৯ থেকে ৩৫ বছরের পুরুষরা সম্পৃক্ত। এরা সামগ্রিকভাবে এর সাথে যুক্ত না থাকলেও সময় ও ক্ষেত্র বিশেষে দৈহিক সর্ম্পকে জড়িয়ে থাকেন। আবার নির্ধারিত বয়সের অধিক হলে, এই অভ্রাস কিছু মানুষ ত্যাগ করতে পারলেও অদিকাংশরা পারেন না। আর বর্তমানে যোগাযোগের জন্য ছদ্মবেশী পরিচয়ে এরা আইডি পরিচালনা করে থাকেন।
ঘনিষ্ঠতার ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথমে পরিচয়; পরে প্রকৃত ছবি আদান প্রদানের মাধ্যমে সনাক্ত এবং শেষে মুঠোফোনে কথা বলে নির্ধারিত স্থানে মিলিত হন। অনেক সময়ে এই সর্ম্পকে লিপ্ত হতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পরে বিচারের সম্মুখিন হয়েছেন অনেকেই। খোঁজ নিয়ে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। আবার অনেকে টাকা দিয়ে মুচলেকায় মুক্তি পেয়েছেন। সর্ম্পকটি যেহেতু রাষ্ট্র নিষিদ্ধ সেহেতু সামাজিক বিবেচনায় ঘটনার পরে আলোচনায় থাকে না।
এদিকে কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তাদের প্রাথমিক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, প্রথম অবস্থায় ফাঁদে পরে সর্ম্পকে লিপ্ত হয়েছেন। সানি খান (ছদ্মনাম) জনৈক সমকামি জানিয়েছেন, এই সর্ম্পকে যারা জড়িত তারা স্বাভাবিক সম্পর্কের তুলনায় ‘ঘটনার শিকার’ হয়ে থাকেন বেশি। এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকারও হন অনেকে।
অপর একজন জানান, ফেসবুকে পরিচয়ের সময়ে অনেকে প্রকৃত তথ্য প্রদান করেন না। পরে তার গন্ডিতে গেলে জিম্মি করে সর্ম্পকে লিপ্ত করেন। আবার অনেকে সেই চিত্র মোবাইলে ধারণ করে পরবর্তীতে সর্ম্পক স্থাপনের জন্য ব্লাকমেইল করে থাকেন।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল সমকামীদের মৃত্যুদন্ড বিলোপের যে প্রস্তাব তুলেছে, তার বিপক্ষে ভোট দেয় বাংলাদেশ। অর্থাৎ বাংলাদেশ সমকামীদের মৃত্যুদন্ডের পক্ষে।