somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'বেহেশতে শেখ হাসিনার হক আছে'

২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাহেব বলেছিলেন, 'প্রধানমন্ত্রী এত পূণ্য অর্জন করেছেন যে, তার বেহেশতে যাওয়ার অধিকার আছে, হক আছে।' বস্তুত তাই যদি হয়, তবে আওয়ামী সরকার উন্নয়নের নামে যত দূর্নীতি করছে সেগুলোও কি শুদ্ধতার কাতারে সামিল হবে?

স্রোতের সাথে ভেসে চলা খড়কুটোর গতিকে যদি আমরা উন্নয়ন বলি, তবে আমাদের বর্তমান সময়ের উন্নয়নের কর্তাবাবুদের জন্য অবশ্যই বারংবার নোবেল চাহিয়া কর্তৃপক্ষ (সুইডিশ একাডেমি, সুইডিশ বিজ্ঞান একাডেমি, নোবেল কমিটি অফ কারোলিন্সকা ইনষ্টি্টিউট, নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি) বরাবর ডায়্রেট কল দিতে পারি। অনেকে এই কথাকে হাস্যরসে ডুবাই দিবেন। এটা কিন্তু মোটেও ঠিক না। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে আওয়ামী সরকার দলীয়ভাবে বিশ্বাসযোগ্যদের হাতে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-বানিজ্যের প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বীমা ইত্যাদির দায়িত্ব অর্পণ করে যে ভুলটি করেছিল এখনো সেটাই করছে। যদিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু পরবর্তীতে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-বাণিজ্য, ব্যাংক বীমা ইত্যাদির অবশিষ্ট লুণ্ঠাংশ জিয়াউর রহমান, এরশাদ এবং খালেদাদের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে তা ব্যক্তি মালিকানায় চলে যাওয়ায় সেরকম প্রতিষ্ঠান এখন হাতেগোনা। তথাপি এই হাতেগোনা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের লুণ্ঠনকার্য পরিচালনায় মোটেও তারা পিছিয়ে নয়। তাদের গতি বরং দিনদিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে।

হাতেগোনা রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-বাণিজ্য, ব্যাংক বীমা ইত্যাদি লুণ্ঠনের পাশাপাশি উন্নয়ন খাতে চলতে থাকা আওয়ামিলীগ সরকারের লুণ্ঠনকার্যের পরিমাণ কিছুটা হলেও তারা কমিয়ে আনতে পারতো। কিন্তু তারা বরং সেগুলো কিভাবে নিজেদের সুবিধানুযায়ী ব্যবহার করা যায় তা নিয়েই ব্যস্ত। তাদের অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, দেশটা তাদের পৈতৃক সম্পদের উচ্ছিষ্টাংশ। যা তারা চাইলেই নষ্ট করতে পারে নিজেদের ইচ্ছে মতো। তাদের যথেচ্ছাচারের কারণে রাষ্ট্রের নাগরিকদের পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় যন্ত্রণা ও নির্যাতন। আওয়ামী সরকার নিজেদের অবস্থানকে এতোই পাকাপোক্ত করে রেখেছে যে, গণতান্ত্রিক পন্থায় আপনি আমি আমরা যে বা যারা তাদের বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনা করার চেষ্টা করি তারাই শিকার হই রাষ্ট্রদ্রোহিতার খেতাবে। রাষ্ট্রের উন্নয়নে কথা বলায় আপনাকে রাষ্ট্রদ্রোহি হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হারাতে হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো জিহবা কর্তনে আওয়ামী সরকারের একটি উপকারী কৌশল। যা তাদের দূর্নীতিকে এগিয়ে নিতে বড়ই সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

পোস্টে যে ছবিটি দেখা যাচ্ছে সেটা জগন্নাথপুর টু সিলেটের মেইন রোড। এক যুগের অধিক সময় ধরে এম এ মান্নান সাহেবের আওতাধীন এই রাস্তাটি ভাঙা ছিল। সে সময়টায় যারা রোগিদের নিয়ে বিভাগীয় হাসপাতালে যেতে চেয়েছেন হয় তারা সুনামগঞ্জ হয়ে ঘুরে গেছেন। নতুবা তাদেরকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ হয়ে সুদীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হয়েছে। আর যাদের সেই সামর্থ্য নেই তাদেরকে ধুঁকেধুঁকে এ পথেই যেতে হয়েছে। মৃত্যুকে আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে। অত:পর রাস্তার কাজ শুরু হলে আগমন ঘটে নতুন দূর্যোগের। রাস্তার কাজের নামে শুরু হয় নতুন দুর্নীতির। এক বছরেরও অধিক সময় ধরে চলতে থাকে সংস্কারের নামে জনগণের টাকা আত্মসাতের প্রতিযোগিতা। এবং যাতায়াতে অকল্পনীয় জটিলতা। অবশেষে সূর্য দেখা দেয় জগন্নাথপুরের (২০১১ সালের আদমশুমারী মতে) ২,৫৯,৪৯০ জন নাগরিকের ললাটে। কিন্তু এই সূর্য যে ক্ষণস্থায়ী সেটা তাদের বিশ্বাসে কখনো ছিল না। তারা এভাবে প্রতারিত হবে সেটা তারা কখনো কল্পনাও করেনি। এম এ মান্নান সাহেব ও উনার চামচারা নাগরিকের এই বিরাট অংশকে আবারো ফেলে দেয় কালো অধ্যায়ের আন্ধকার গৃহে।

ছবিতে লক্ষ্য করলে দেখবেন, গ্রামের উঠোনের মত যেন লেপা হয়েছে লাখ-লাখ মানুষের প্রত্যহ চলাচলের এই মোস্ট ইম্পর্টেন্ট রাস্তাটি। অথচ রাস্তাটির কাজ শেষ হওয়ার শুরু হয়ে গেলো ভাঙন। শুরুতেই যদি শেষ ঘটে তবে প্রাপ্তিটুকু কি থাকলো নাগরিকের ভাগ্যে?



খুব বেশি দিন হয় নি, উদ্ভোদনের আগেই এম এ মান্নান সাহেবের এলাকার ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার কথা ভুলে যায় নি জনগণ। জগন্নাথপুর সুনামগঞ্জ জেলার আওতাধীন একটি বৃহৎ উপজেলা। যেখানকার মানুষগুলোকে সূর্য উদয়ের সাথে সাথেই পথ ধরতে হয় সুনামগঞ্জ পানে। জেলা শহরের দিকে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তার ব্রিজ নির্মানে এমন গুরুত্বহীনতার দায় কে নিবে? এম এ মান্নান সাহেবের মত অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী-আমলারা নিত্যদিন জনগণের অধিকার হরণ করছেন। উন্নয়নের নামে কিছুটা উন্নতি ঘটছে যা আমরা অস্বীকার করতে পারবো না, তবে উন্নয়নের খোলসে দূর্নীতি খেয়ে নিচ্ছে আমাদের আগামীর স্বপ্ন। ধ্বংস করছে আমাদের অধিকার৷ প্রতিষ্ঠা লাভ করছে স্বৈরতন্ত্র। এই সব কৃতিত্ব মান্নান সাহেবরা নিতে চান না কখনো! তারা সকল উন্নয়নের গর্ব উনার নেত্রিকে দিতে চান।

চলতে থাকা এতো দূর্নীতির পরও আমাদের কিছু সহযোদ্ধা ব্লগার দাবী করেন, 'দেশটা পুরোদমে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে।' হ্যা, উন্নয়নের অর্থ যদি হয় জনগণকে লুণ্ঠন করে আত্মসাৎ করা। উন্নয়নের নামে মধ্যবিত্ত—নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে ধ্বংস করে দারিদ্রতার কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া। ধনাঢ্যদের ধনের পাহাড় তৈরি হওয়া। কোটিপতিদের সংখ্যা বৃদ্ধি। ধনাঢ্য–কোটিপতিদের জন্য সকল সুবিধা উন্মুক্ত করাই যদি হয় উন্নয়নের অর্থ তবে তো তাই আমাদের উন্নয়ন। তাই আমাদের বাংলাদেশের উন্নয়ন। সে কারণে শেখ হাসিনা বেহেশত পেতেই পারেন।



ছবি: ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৮:৫৯
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×