তখন আমি ছটফট করতাম। মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য আকুল হয়ে থাকতাম। অথচ আমার চতুঃপার্শ্ব ছিল বাঙালিতে ভরপুর। পুরো প্রকৃতি জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো বাঙালি মায়ের আঁচলের সুঘ্রাণ। তবু যেন মনে হত এ আমি অন্য জগতে আছি। অফিস–বাসা সর্বত্র আমায় কথা বলতে হত এই ভাষায়। প্রমিত ভাষায়। এখন আমি যে ভাষায় আপনাদের সামনে লিখে চলেছি সে ভাষায়। ভাড়াটিয়া এক ভাষায়।
মাঝেমধ্যে আমি আমার মায়ের সাথে কথা বলতাম। মাটির সাথে। তখন আমার আশপাশে থাকা লোকগুলোকে আমার দিকে কৌতুহল ভরা দৃষ্টির তীর নিক্ষেপ করতে দেখতাম। আমি আঁচ করতে পারতাম ওদের এমন কৌতুহলের কারণ। কিন্তু আমার মা, আমার মাটি যে এদের ভাষা বুঝে না। মায়ের সাথে সে ভাষাতেই কথা বলতে হয়। যে ভাষায় কাঁদতে কাঁদতে আমার জন্মের সাথে নিয়ে আসা রক্ত মুছে দিয়েছিল আমার মা। রক্ত মাখা কপাল-দেহে চুম্বন করেছিল যে মাটির ভাষায়। সেই ভাষা কখনো ভুলতে পারবো না। যেমন পারবো না দেহ থেকে মাটি বের করে মাটির উপর হাঁটতে।
আমি আমার আশপাশের সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। যা ফুটে উঠতো ওদের সাথে ওদের ভাষায় কথা বলার ভঙ্গিমায়। কিন্তু আমি ধীরেধীরে হেরে গেলাম। আমার মাটির প্রতি ওদের প্রেম জাগিয়ে তুলতে পারলাম না। হাসিঠাট্টার যোগান হয়েই থাকলাম। হ্যা, আমি ওদের কৌতুহল দূর করতে পারলাম না। উল্টো নিজেকে ওদের কৌতুহলী দৃষ্টি থেকে আড়ালে নিয়ে মায়ের সাথে কথা বলতাম। মায়ের ভাষায়। মাতৃভাষায়।
মাতৃভাষার এমন টানাপোড়েনের দিনে আমি আমার বাবাকে হারাই। আমার সংকীর্ণ পৃথিবী আরো সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। এই সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে গিয়ে আমি রাজধানীর চাকরি ফেলে আসতে বাধ্য হই। আপনারা নিশ্চিত এসবের জন্য আমাকে দায়ী করে বলবেন, এইসব কিছুর জন্য আমার সংকীর্ণ মানসিকতা দায়ী।
ভাষার মাসে অকৃত্রিম পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে স্মরণ করছি সকল শহীদ-গাজী ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও পাষণ্ড পাকিস্তানের হাতে ধর্ষিতা আমার মায়েদেরকে। ব্লগারদের নিকট অনুরোধ থাকবে, ইতালির মিলানে যদি কোন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করে থাকেন তবে যেন দয়া করে আমায় ([email protected]) ইনফর্ম করা হয়। সবাইকে ভাষার মাসের পবিত্রতম শুভেচ্ছা।
ভিডিও দেখা না গেলে এখানে ক্লিক করুন!
এই ভিডিও-ও যদি দেখা না যায় তবে এখানে ক্লিক করুন।
০১-০২-২০২২
আলেজান্দ্রিয়া, মিলান।
ছবিঃ গুগল
ভিডিওঃ ইউটিউব
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:২০