জুনাইদ বাবুনগরী। বিভিন্ন জনের কাছে তাঁর বিভিন্ন পরিচয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিরাট একটা অংশ তাকে খুবই শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আবার ধর্মে বিশ্বাসী নয় এমন সম্প্রদায়ের কাছে উনার পরিচয় আলাদা। ভিন্ন ধর্মালম্বীদের কাছে অবিশ্বাসীদের মত পরিচিত নন তিনি। এইসবার থেকে আলাদা একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে যারা মরহুম বাবুনগরীকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেন তাদের জায়গায় আমি নিজেকে দাঁড় করাতে চেষ্টা করি। এতে করে একজন মানুষকে মানুষ হিসেবে বিশ্লেষণের সুযোগ মিলে। আর এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে মরহুম বাবুনগরীর সঠিক সময়ে নেওয়া সঠিক সিদ্ধান্তগুলো তার জীবনের ক্ষুদ্র ভুলের তুলনায় ব্যাপক প্রশংসার দাবী রাখে। তাকে পরম বিশ্বাসের সাথে সমীহ করা বিশাল গুষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। উনার জায়গায় থেকে উনি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন মানুষকে ধর্মপালনে উৎসাহী করে তুলতে। পেছনে থাকা কিছু স্বার্থান্ধরা তাঁর কাজের গতিপথে বিভিন্ন ভাবে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কেউ সেটা না পেরে সাহায্য নেয় তাঁর সাহচর্যের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে অনেকে সফল হলেও একসময় তিনি সেই স্বার্থান্ধ মহলের দোসরদের থেকে নিজেকে এবং তাকে বিশ্বাস করা বিরাট সম্প্রদায়কে বাঁচিয়ে নেন।
আমি মধ্যপিঠের মানুষ। এই যায়গায় এসে আমি সাধারণত যে বিশ্বাসটা লালন করি তা পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে এরকম দাঁড়ায় যে, আমরা যারা অবিশ্বাসীদের নিয়ে চলি/চলতে হয়, আবার নিজ ধর্মকে, স্রষ্টাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হয়। তাদের জন্য উচিত নয় অবিশ্বাসীদের (কেবলই বস্তুবাদী) কথা মেনে নেওয়া আবার এটাও উচিত নয় ধর্মপ্রাণ বিশাল গুষ্টির আবেগ তাড়িত কথাকে বিশ্বাস করা। এই যায়গায় এসে আমাদের উচিত হক্কানি আলেমদের সাহচর্য লাভ ও হক্কানি আলেমদের কথাকে নিজের মত করে রিসার্চ করার মাধ্যমে প্রকৃত অর্থ উদঘাটন করে তাদের কথা মানা। আমি নিজের জায়গা থেকে রিসার্চ করে দেখেছি, জুনাইদ বাবুনগরী (রাহ) কেবলই একজন ধর্মপ্রচারক নন। ধর্মপ্রচারকের পাশাপাশি একই সাথে তিনি একজন হেকমতি পন্থা অবলম্বনকারী রাজনীতিবিদ। যা বর্তমান সময়ে ইসলামি রাজনীতিতে ব্যাপক অভাব।
আমার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে কথা হচ্ছে, আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টার সাথে রিসার্চ করে কাউকে তার যথার্থ মূল্যায়ন করবো। এখানে সে যদি সত্যিকার অর্থে সৃষ্টিকর্তার কাছে গ্রহণযোগ্য দাঈ (ধর্মপ্রচারক) হয়ে থাকে আর আমরা যদি নিজেদের রিসার্চ ব্যাতিরেকে তাকে অবমূল্যায়ন করে তাঁর বিপরীতে কথা বলতে চেষ্টা করি, তবে আমরাও নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার কাছে জিজ্ঞাসিত হব। সুতরাং আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, কারো ব্যাপারে সঠিক তথ্য না জেনে তাকে নিয়ে প্রশ্ন উত্তাপনের মাধ্যমে আমরা যেন অবিশ্বাসীদের সমান না হয়ে যাই৷ যেহেতু আমরা সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করি সেহেতু আমরা এটাও পরিস্কার ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর পছন্দের মানুষটির মূল্য সাধারণের চেয়ে বেশি। আসুন, সকলে মিলে চেষ্টা করি সৃষ্টিকর্তার আপন হতে।
৫-২-২২
আলেজান্দ্রিয়া, মিলান
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩০