পিশাচ ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ এ পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্রগ্রাম সহ সমগ্র দেশের বড় জেলা শহরগুলোর ডিষ্ট্রিক বোর্ডে এক আতঙ্ক ছড়িয়ে দেন তার নাম মিলিটারি কার্ফিউ!
কার্ফিউতে ১০ চাকার ভারী ট্রাকে খাকি পোষাক বুট হেলমেট কালো চকচকে বরফ শীতল অস্ত্র হাতে থমথমে মুখে পাকিস্তান মিলিটারি - এতোটুকুই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য যথ্ষ্টে ছিলো। ভয়ে আতঙ্কে মানুষের মুখের পানি শুকিয়ে জিব্বা কাঠ। ১৯৭১ - ২৬ শে মার্চ পর্যন্ত সময়টি ঢাকা ও চট্টগ্রাম থাকা মানুষজন বাসাবাড়ি থেকে বার হবেন দুরে থাকুক বাসাবাড়িতে কথাও বলতেন খুব নিচুস্বরে পাছে পাকিস্তান মিলিটারি যদি শুনে। ২৬ শে মার্চ রাত থেকে শুরু হয় সমগ্র বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর এক আতঙ্কগ্রস্থ জীবন।
দুঃখজনক হলেও সত্য এই ধারা আমাদের প্রাণ প্রিয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান ও ধরে রাখেন। যথারিতি একই নিয়ম এ্কই অবস্থা। পার্থক্য শুধু ১৯৭১ এ ট্রাকে ছিলো পাকিস্তান মিলিটারি আর স্বাধীন বাংলাদেশে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান সাহেবের সরকার আমলে বাংলাদেশের সড়কে ভয়ঙ্কর সেই ভারী ট্রাকে বাংলাদেশ মিলিটারি! - উভয় সময়েই ভয় আমাদের কার্যকর ছিলো। জিব্বা শুকিয়ে কাঠ। ভয়ে নিচুস্বরে কথা বলতে হতো। কখনো সন্ধ্যা ০৬:০০ থেকে কার্ফিউ, কখনোবা সন্ধ্যা ০৭:০০ থেকে। চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী মানুষ এই সময়ের মধ্যে কর্মস্থল হতে ফিরতি পথে বাসার জন্য বাজার সদাই যার যা করার করে নিতেন। কতো নিরহ পরিবারের নিরহ মানুষ গায়েব হয়ে গেছেন যার হিসাব না সরকার রেখেছে না দেশ! যেমনটি ১৯৭০-১৯৭১ এ হয়েছে। পার্থক্য ছিলো শুধু সময়ের। পূর্ব পাকিস্তান আর স্বাধীন বাংলাদেশ। বাকি পরিস্থিতি সব একই ছিলো।
আজ বাংলাদেশে ১৫০সিসি - ১৫৫সিসি মটর সাইকেল বাইক চালকরা সাচ্ছন্দে ৮০ - ১০০ কি:মি গতিতে ছুটে চলেন পেছন থেকে হয়তো জড়িয়ে ধরেন বান্ধবী বা স্ত্রী। কিন্তু আমাদের প্রাণ প্রিয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান সাহেবের আমলে তেমনটি ছিলো না। ৫০ সিসি আর ৮০ সিসি (হোন্ডা, ইয়ামাহা, সুজুকি, ভেসপা) মটর সাইকেলের বেশী সিসি কোনো মটর সাইকেল সিভিলিয়ানের কাছে ছিলো কিনা কখনো চোখে পরেনি। প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা ৫০ সিসি সাদা লাল রঙা হোন্ডা চালককে সারা দিনের জন্য রোদে দাড় করে রাখেতেন জঙ্গল থেকে দড়ি ছিড়ে ছুটে আসা আদিম যুগের পাকি+জামাতি+বাংলাদেশী নন মেট্রিক মিলিটারি! আরো ভয়ঙ্কর দৃশ্য হচ্ছে শাড়ী পরা তরুণী ও নারীদের পেটে রঙের ব্রাশ দিয়ে লেপ্টে দিতেন উড়োজাহাজ মার্কা ১ নম্বর আলকাতরা। (নজরুল ইসলাম এন্ড ব্রাদার্সের বর্তমান এরোপ্লেন মার্কা আলকাতরা)।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর সরকার আমলে ঢাকা চট্রগ্রাম সহ ক্যান্টনমেন্ট বিখ্যাত জেলা গুলোতে শুধুমাত্র তরুণী ও নারীদের উপর যে অত্যাচার হয়েছে তা কল্পনার অতীত। তৎকালীন মিলিটারি রিক্রুট ছিলো সম্ভবত পাক বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে নোংরা জঘন্যতম রিক্রুটমেন্ট। সৈনিক থেকে শুরু করে অফিসার পর্যন্ত (হয়তো) সবগুলো ছিলো বিকৃত মস্তিস্ক উম্মাদ। আজো বিকৃত মনের মানুষের পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে আছে জিয়া সরকারের আমলে মিলিটারি দ্বারা তরুণী ও নারীদের পেটে - পিঠে আলকাতরা মেখে দেওয়ার নজির!
তখন হিপ্পি কাট চুল আর বেল বটম পেন্টের উত্তপ্ত সময় ! - নন মেট্রিক এইট পাশ (বাস্তবে সিক্স সেভেন পাশ) সৈনিকরা যেমন তেমন ঘরের ছেলেদের ধরে ধরে চর থাপ্পড় দিয়ে নেড়া মাথা করে দিয়ে আনন্দ পেতো। এই ধরনের বিকৃত উল্লাসে সৈনিকদের সাথে সব সময় মিলিটারি টোপাজ (নাপিত) রাখতো যাতে যখন-তখন বাবরি মাথার চুল, হিপ্পি চুল ধরে নেড়া করে দেওয়া যায়। - ***উল্লেখ্য পপ সম্রাট শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা আজম খান ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম উল্কা ট্রেনে যাত্রার সময় কুমিল্লা রেল স্টেশন ক্রস কালীন সময়ে টিকেট থাকা সত্তেও কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের বিকৃত অভিযানে বিকৃত মস্তিস্কের সৈনিক দ্বারা মাথা নেড়া হোন। সে সময়ে আজম খান নেড়া মাথায় কমলা কাপড়ে সাদা টেনিস বল প্রিন্ট রুমাল মাথায় বেঁধে গান করে মাথায় সেই রুমাল বাঁধাকে ফ্যাশনে রূপ দেন। (উল্কা ট্রেনেরও আগে গ্রীন অ্যারো ট্রেন ছিলো - আমি গ্রীন অ্যারো ট্রেনের যাত্রী)
উপসংহার: জিয়া সানগ্লাস জিন্দাবাদ ! জিয়ার ভালো কাজ আছে তবে মন্দ কাজও কম নয়। সেই মন্দ কাজের মাসুল হয়তো তিনি দিয়েছেন - হয়তো বা দেননি। কি আসে যায়। সানগ্লসের গল্প আজ না হয় থাক অন্য কোনো দিন - কোনো এক দিন। লেফট্যানেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) নিয়ে সুন্দর একটি পোষ্ট দিয়ে ব্লগে অসুস্থ ব্যক্তি আক্রমনে আক্রান্ত হয়ে একটি ব্যাপার ভাবতে বাধ্য হয়েছি “সম্ভবত ব্লগারদের সত্য হজম করার মন মানসিকতা আজো তৈরি হয়নি (হয়তোবা)” এই দেশের অতি অতি অসাধারণ মানুষ না জিয়ার ভালো কাজগুলো সহ্য করতে পারেন! না সহ্য করতে পারেন জিয়ার মন্দ কাজগুলো!
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পোষ্টে উল্লেখিত বিকৃত মস্তিস্কের মিলিটারি তৎকালীন জিয়া সরকারের আদেশ অমান্য (বিদ্রোহী সেনা ও সেনা অফিসার) ছিলো। তৎকালীন মিলিটারির বড় একটি অংশ জাতির পিতার হত্যার সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলো। যে কারণে লেফট্যানেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জিয়া সরকার মিলিটারিদের/বিদ্রাহী সেনা ও সেনা অফিসারদের বিচারকার্য শুরু করেন ও বিচারকার্য করতে গিয়ে তিনি নিজেও প্রাণ হারান ও সেই সাথে নিভে যায় বাংলার আকাশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট আরো একটি নক্ষত্রের আলো।
ছবি:
১। জিয়া সানগ্লাস। ব্রান্ড: জিয়া জেল (আউট অব ষ্টক)
২। ৫০ সিসি সিইউবি হোন্ডা/ ইয়ামাহা/সুজুকি
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০২০ সকাল ১০:৪৩