একটি শিশুর জন্য পিতা হচ্ছেন সবচেয়ে বড় শক্তি। পরিবারে একটি শিশু তার নিষ্পাপ চোখে পিতাকে দেখে পরিবারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর, জ্ঞানী, স্নেহশীল এবং পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে। মেয়ে শিশুরা জীবনের শুরুতেই আদর্শ পুরুষ হিসেবে পিতাকেই বিবেচনা করে। অন্যদিকে ছেলে শিশুরা জীবনের শুরুতে পিতাকে দেখে শক্তির উৎস হিসেবে। তাই ছেলে শিশুরা চায় পিতার মতোই শক্তি অর্জন করতে তথা পরিবারের সর্বময় কর্তা হতে। এছাড়া শিশু যখন বাড়ন্ত অবস্থায় থাকে, তখন পিতা তার মূল্যবান উপদেশ দিয়ে সন্তানদের জীবনের পথ বাতলে দেন।
জার্মান ভাষায় পিতা শব্দটি হচ্ছে "ফ্যাট্যা" আর ড্যানিশ ভাষায় "ফার"। আফ্রিকান ভাষায় ‘ভাদের’ হচ্ছেন পিতা! চীনে ভাষায় চীনারা আবার ‘বাবা’ কেটে ‘বা’ বানিয়ে নিয়েছে! ক্রী (কানাডিয়ান) ভাষায় পিতা হচ্ছেন ‘পাপা’ তেমনি ক্রোয়েশিয়ান এ ‘ওটেক’ ।ভাগ্যিশ! ক্রোয়েশিয়ায় জন্মাই নি! কারণ ওরা পিতাকে ‘ওটেক’ ওটেক বলে! দাঁড়ান আরো আছে, ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজ ভাষায় পিতা ডাক হচ্ছে ‘পাই’। ডাচ ভাষায় পাপা, ভাডের আর পাপাই এই তিনটি হচ্ছে পিতা ডাক। সবচাইতে বেশী প্রতিশব্দ বোধহয় ইংরেজি ভাষাতেই! ইংরেজরা পিতাকে ডাকেন, ফাদার, ড্যাড, ড্যাডি, পপ, পপা বা পাপা! ফিলিপিনো ভাষাও কম যায় না, এই ভাষায় পিতা হচ্ছেন তাতেই, ইতেই, তেয় আর আমা। আমরা কিন্তু পিতাকে আদর করে হিব্রু ভাষাতেও ডাকি! হিব্রু ভাষায় পিতা হচ্ছে ’আব্বাহ্’। হিন্দি ভাষার পিতা ডাকটি পিতাজী! আবার ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় অর্থাৎ সেই ‘বাহাসা ইন্দোনেশিয়া’য় যদি পিতা ডাকি তাহলে সেটা হবে- বাপা কিংবা আইয়্যাহ! জাপানিরা তাদের ভাষায় পিতাকে ডাকেন- ওতোসান, পাপা। পুর্ব আফ্রিকায় অবশ্য পিতাকে ‘বাবা’ ডাকা হয়! হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় পাপা ছাড়াও পিতা শব্দের অনেকগুলো প্রতিশব্দ আছে, যেমন- আপা, আপু, এদেসাপা। বাংলা ভাষায় বাবা বা আব্বা।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে থেকে বাবা দিবস পালন শুরু হয়। আসলে মায়েদের পাশাপাশি পিতারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দ্বায়িত্বশীল- এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।পৃথিবীর সব পিতাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু। ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ই জুলাই, আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়। আবার, সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের আইডিয়া আসে। যদিও তিনি ১৯০৯ সালে, ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত আবার মা’কে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। তার মনে হয়, তাহলে পিতাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার। ডড আবার তার পিতাকে খুব ভালবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর, অর্থ্যাৎ ১৯শে জুন, ১৯১০ সালের থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন।
বাবা দিবস বেশ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই পালিত হতো! আসলে মা দিবস নিয়ে মানুষ যতটা উৎসাহ দেখাতো, বাবা দিবসে মোটেও তেমনটা দেখাতো না, বরং বাবা দিবসের বিষয়টি তাদের কাছে বেশ হাস্যকরই ছিল। ধীরে ধীরে অবস্থা পাল্টায়, ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস হিসেবে পালিত হয়।পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য দিনটি বিশেষভাবে উৎসর্গ করা হয়ে থাকে। যদিও পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না, তবুও মা দিবসের অনুকরণে দিনটি পালিত হয় বাবা দিবস।
আপাত দৃষ্টিতে অনেকের কাছেই মা দিবস বা বাবা দিবস পালনের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব পায় না। তাই বলে এ ধরনের দিবসগুলো একেবারেই যে অপ্রয়োজনীয়, তেমনটা কিন্তু মোটেও বলা যাবে না। সন্তানের জন্য পিতার ভালোবাসা অসীম। মুঘল সাম্রাজ্যরের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর সন্তানের প্রতি পিতার ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছেন। তিনি সন্তান হুমায়ুনের জীবনের বিনিময়ে নিজের জীবন ত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। এমন স্বার্থহীন যার ভালোবাসা, সেই পিতাকে সন্তানের খুশির জন্য জীবনের অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়। বাবা দিবসে সন্তানদের সামনে সুযোগ আসে পিতাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানানোর। তাছাড়া বাবা দিবস পালনের ফলে সমাজে এবং পরিবারে পিতাদের যে অবদান তা যে সমাজ এবং নিজের সন্তানরা মূল্যায়ন করছে, এ বিষয়টিও পিতাদের বেশ আনন্দ দেয়। তাছাড়া অনেক সন্তানই আছে, যারা পিতা-মাতার দেখাশোনার প্রতি খুব একটা মনোযোগী নয়। মা দিবস বা বাবা দিবস তাদের চোখের সামনের পর্দাটি খুলে ফেলে পিতা-মাতার প্রতি তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে তাই বলা যায়, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে মা দিবস বা বাবা দিবসের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। মোটকথা আমাদের পরিবার তথা সমাজে পিতার যে গুরুত্ব তা আলাদাভাবে তুলে ধরাই বাবা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।
বাব দিবস! পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের অতি সামান্য এক সুযোগ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ
মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!
বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন