somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভয়ংকর-সুন্দরী শুঁয়োপোকা

২৯ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সেডেল্-ব্যাক শুঁয়োপোকা
এই শুঁয়োপোকা খুবই অলস, গদাই লস্করি চালে চলাফেরা করে। এর শরীর সবুজ ও বাদামী রঙের শরীরের মাঝখানে বেগুনী ও বাদামী ফোঁটা ফোঁটা থাকায় এটিকে দেখতে দেখায় ঘোড়ার পিঠে থাকা জিনের মতো। যখন এই পোকাটি সম্পূর্ণ বেড়ে ওঠে তখন এটি এক ইঞ্চি লম্বা আর ৩-৪ ইঞ্চি চওড়া হয়। এর কিন্তু শিংও আছে! বিশ্বাস হচ্ছে না? এর শরীরের দুই পাশে দু’টি লোমে ঢাকা মাংসের শিং থাকে। লোম দিয়ে ঢাকা থাকায় শিংগুলোকে অবশ্য দেখা যায় না। এই শিং দুটি কিন্তু খুবই বিষাক্ত, আর যেখানে খুশি সে তার এই দুটি শিং বাইরে লম্বা করে বের করতে পারে। যদি কোনোভাবে এটি কারো শরীরে লাগে তবে তো কথাই নাই। শরীরের যেখানে লাগবে সেখানে ফুলে উঠবে, বমি বমি ভাব হবে আর চামড়ায় ফুসকুঁড়ি উঠবে। আর একবার তোমাকে যদি ঢুঁস দিয়েই বসে, তবে পুরো একদিন তোমাকে ভোগাবে এই সুন্দর শুঁয়োপোকার শিংয়ের গুঁতো। এই বিষাক্ত শুঁয়োপোকাটি আমাদের ঘরের ফুলের টবে, বাগানে, মাঠে কি জঙ্গলে, সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। এটি গাছে, ঝোপে ঝাড়ে থাকে আর ওখানে থেকেই যা পায় তা-ই খায়।


ছিনাবার মথ শুঁয়োপোকা
এই প্রজাতির শুঁয়োপোকাটি প্রথম প্রথম ফ্যাকাশে হলুদ রঙের থাকে। পরে যখন পুরোপুরি বেড়ে ওঠে তখন এর রঙ হয় গাঢ় হলুদ অথবা কমলা আর কালো কালো ডোরাকাটা। এরা থাকে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আর উত্তর আমেরিকার কিছু বিষাক্ত গাছে। আর জানো, এদের কিন্তু ক্ষুধা খুব বেশি। যাকে বলে একদম রাক্ষুসে ক্ষুধা। একসাথে পুরো এলাকার আগাছা খেয়ে ফেলতে পারে এরা! শিকারীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ওরা কী করে জানো? সবাই মিলে একসঙ্গে থাকে। কী বুদ্ধিমান ওরা, চিন্তা করো!


রাজা শুঁয়োপোকা
এই হলুদ, কালো ও সাদা রঙের ডোরাকাটা দাগের শুঁয়োপোকাটি আকারে খুবই ছোট। এই শুঁয়োপোকারও একজোড়া কালো সরু সুতার মতো শিং আছে। আর এরা বাড়েও খুব দ্রুত। দুধের মতো রসওয়ালা একজাতের উদ্ভিদ ছাড়া এরা আর কিচ্ছুটি খায় না। পুরোপুরি বেড়ে ওঠার পর এটি লম্বায় হয় ২ ইঞ্চি। দেখতে খুব সুন্দর হলে কি হবে, এরা এতই বিষাক্ত যে, কোনো পাখিও ওদেরকে খায় না! আরে! ওরা যেই উদ্ভিদ খেয়ে বাঁচে, সেই গাছটাই যে বিষাক্ত! তবে বিষাক্ত হলে কী হবে। যখন এরা প্রজাপতি হয়ে যায়, তখন দেখতে এত্তো সুন্দর হয়! ওদের মতো সুন্দর প্রজাপতি আর একটিও হয় না। তাই একে বলা হয় প্রজাপতিদের রাজা।


জিপসি মথ শুঁয়োপোকা
মে মাস থেকে জুলাই এর মাঝামাঝি পর্যন্ত এই জিপসি শুঁয়োপোকাদের দেখা যায়। সদ্য ডিম ফুটে বের হওয়া এই শুঁয়োপোকা দেখতে কালো হয় আর পুরো গায়ে শক্ত ছোট ছোট লোম থাকে। বুড়ো শুঁয়োপোকাদের পিঠে পাঁচ জোড়া নীল আর ছয় জোড়া লাল ফোঁটা ফোঁটা দাগ থাকে। আর থাকে অল্প কিছু লোম। অল্প লোম বলে আবার অবজ্ঞা করো না। এই লোমগুলোই কিন্তু ওদের মোক্ষম মারণাস্ত্র। এই লোমে ছোঁয়া লাগলে ব্যথা তো হয়ই, সেই সঙ্গে চামড়ায় নানা ধরনের সমস্যাও হয়। আর ওদের প্রিয় খাবার কি জানো? ম্যাপল গাছ, ওক গাছ, এইসব গাছের পাতা।


ব্যাগ শেল্টার শুঁয়োপোকা
ওদের কিন্তু একটা বিশেষ নাম আছে- মিছিল করা শুঁয়োপোকা! কারণ, ওরা যখন হাঁটে তখন রীতিমতো মিছিল করে হাঁটে। মিছিলে যেরকম মানুষ একজনের পিছে আরেকজন লাইন করে থাকে, ঠিক সেরকম। আর কী জানো, শুঁয়োপোকাদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত। তাই এদের কোনভাবেই স্পর্শ করা পুরোপুরি নিষেধ। যেই ওদের স্পর্শ করবে, অমনি তোমার শরীরে রক্তক্ষরণ শুরু হবে। এই শুঁয়োপোকাদের শরীরের বিষে এমন কিছু উপাদান আছে যা একজন মানুষের শরীরে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে তাকে মেরে ফেলতে পর্যন্ত পারে! আর এর শরীর স্পর্শ না করে যদি শুধু এর লোম স্পর্শ করো, তবু রক্ষা নেই, তোমার গায়ে ফুসকুঁড়ি আর চুলকানি হবেই। এদের গায়ের রং গাঢ় বাদামি আর মাথার রঙও বাদামি। এরা বাদামি রঙের রেশমের তৈরি থলের ভিতর বাস করে আর বের হয়ে আসে রাতে, তাও শুধুই খাওয়ার জন্য। অয়াটল গাছে এদের বিশ্রাম নিতে অথবা লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়। ওরা এই গাছে শুধু বিশ্রামই নেয় না, এই গাছের পাতাও খায়।


পাস শুঁয়োপোকা
উত্তর আমেরিকার সবচাইতে বিষাক্ত শুঁয়োপোকা হচ্ছে এই পাস শুঁয়োপোকা বা পশমি শুঁয়োপোকা। এর তুলার মতো তুলতুলে লোমে ঢাকা শরীর দেখে বোকা বনে যেতে হয়, একটা শুঁয়োপোকা এত্তো সুন্দরও হতে পারে! এর একটা কারণও আছে। এদের গায়ের লোমের নিচেই যে লুকিয়ে আছে অসংখ্য বিষাক্ত শিং! আর কোনো জায়গায় একবার স্পর্শ করলেই হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে শিংগুলো বিষ ছড়িয়ে দেয়।আর শুরু হয়ে যায় মাথাব্যথা আর বমি বমি ভাব। আর তা কয়েকদিন স্থায়ীও হয়। তবে এর লম্বা নরম সুন্দর লোমগুলো মোটেও ক্ষতিকর না। এর গায়ের রঙ সাদা, সোনালী আর বাদামি। এক ইঞ্চি লম্বা এই শুঁয়োপোকা মূলত সিট্রাস, ওক ইত্যাদি গাছে থাকে। এছাড়া বাগানের গাছগাছড়াতেও এদেরকে দেখা যায়।


স্ট্রিঙ্গিং রোজ শুঁয়োপোকা
এই শুঁয়োপোকাটি যেমন ছোট্ট, তেমন রঙিন আর সেইরকম সুন্দর। আকারে এরা এক ইঞ্চিও হবে কিনা সন্দেহ। এদের গায়ের রং লাল, কমলা আর হলুদ, আর তার উপরে থাকে বেগুনী আর সবুজ রঙের ছোপ। এটা এতই বিষাক্ত যে, বলা হয় এর গায়ের উজ্জ্বল রঙ আসলে তোমাকে সাবধান করার জন্য। গায়ের উজ্জ্বল রং যেন সবসময় তোমাকে এই বলে সাবধান করতে থাকে, কেবল দেখো, ভুলেও ছুঁতে যেয়ো না। তবেই তোমার খবর হয়ে যাবে! এই রঙিন শুঁয়োপোকাটিরও শিং আছে, আর সে শিং বিষাক্তও বটে। শিং স্পর্শ করা মাত্রই চামড়ায় বিষ ছড়িয়ে যায়, ফুসকুঁড়ি ওঠে। চেরী, আপেল, ম্যাপেল, ওক ইত্যাদি গাছে এরা বাস করে।


হাইকোরী টুসোক শুঁয়োপোকা
এই সাদা কালো শুঁয়োপোকাটির শরীর ধুসর সাদা লোমে ঢাকা। পাশে আবার কালো কালো দাগও আছে। এর কিন্তু শিং নেই। এর অস্ত্র হলো লোম! ওদের সামনে ও পিছনে লম্বা তীক্ষ্ণ আর কালো দুইটি লোম আছে। এই লোমজোড়া খুবই বিষাক্ত। এই লোম গায়ে লাগলে চামড়ায় ফুসকুঁড়ি তো হয়ই, এমনকি চামড়া একেবারে নষ্টই হয়ে যেতে পারে! ওদেরকে অবশ্য সারা বছর দেখা যায় না। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ কানাডা ও উত্তর আমেরিকার কিছু অংশে দেখা যায়। বাকি সময় যে ওরা কোথায় লুকিয়ে থাকে, কে জানে!


লু মথ শুঁয়োপোকা
এই শুঁয়োপোকাটির কিন্তু একটা অদ্ভূত বৈশিষ্ট্য আছে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর গায়ের রঙও পরিবর্তিত হতে থাকে। প্রথমে ওর গায়ের রং থাকে কমলা। আর বড় হলে তা হয়ে যায় হালকা সবুজ। আর সেই সাথে সাদা দাগ ছড়িয়ে যায় পুরো শরীর জুড়ে। এটাকে তো তাহলে গিরগিটি শুঁয়োপোকা বলা যায়, কি বলো? ২ ইঞ্চি লম্বা এই শুঁয়োপোকাটির শিং থেকে আবার দুই ধরনের বিষ বের হয়। হালকা ছোঁয়াতেই এই বিষ শরীর একদম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরা সব ধরনের গাছেই বাস করে। চেরী, ম্যাপেল, ওক, নাশপাতি- এসব গাছের পাতা খায়। আর ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেকোনো খোলা মাঠে অথবা ভুট্টা ক্ষেতে এরা ঘুরে বেড়ায়।


স্পাইনী ওক স্লাগ শুঁয়োপোকা
এই সুন্দর শুঁয়োপোকাগুলোর গায়ে যেন কেউ রংধনুর রং লাগিয়ে দিয়েছে, এমনি সুন্দর একেকটি স্পাইনী ওক স্লাগের গায়ের রং। কোনোটার রং সবুজ, কোনোটার রং নীল, কোনোটা গোলাপী আবার কোনোটা হলুদ রঙের। এরা আকারেও খুব ছোট, এক ইঞ্চির চেয়েও ছোট হয়। এদেরও ভয়ংকর বিষ বের হয় এদের শিং থেকে। ছোট কাঠের চারা থেকে শুরু করে কাঠবাদাম, ওক, নানা গাছের পাতা খায় এই শুঁয়োপোকারা। কুইবেক এর দক্ষিণ অঞ্চলের খনিগুলোতে, মিসৌরীর দক্ষিণে, টেক্সাস ও ফ্লোরিডায় এই জাতের শুঁয়োপোকারা বাস করে।

তো, খুব তো সুন্দর সুন্দর আর ভীষণ ভয়ানক ভয়ানক সব শুঁয়োপোকাদের গল্প শুনলে! এখন নিশ্চয়ই শুঁয়োপোকাদের ধরার আগে কয়েকবার করে ভাববে, ওটা বিষাক্ত নাকি বিষাক্ত নয়! তবে এই ভয়ানক শুঁয়োপোকাগুলোই কিন্তু পরে পরীর মতো সুন্দর একেকটা প্রজাপতি হয়ে যায়। আর তখন ওদের ধরলেও কিচ্ছুই হয় না। ওরা তো তখন আর শুঁয়োপোকা থাকে না, হয়ে যায় প্রজাপতি!

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৬
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×