somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুডবাই ৫৭ স্বাগত ৩২ !

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৮ অক্টেবর ২০১৮ মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সম্পুর্ন রুপ পেল জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ।রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর যে কোনো বিল ই আইন হিসেবে গণ্য হয়। এখন এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করবে সরকার।দেশী বিদেশী বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদ ও আপত্তির মধ্যে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দশম জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে পাস হয় বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল। তথ্যপ্রযুক্তির এই ডিজিটাল যুগে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে একটি সুষ্ঠ ও সুন্দর আইন থাকবে এটা সবার ই কাম্য । তবে কোন আইনের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি গোষ্ঠি সমাজ বা রাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত করে বা সাধারন গতিকে ব্যহত করে এমন আইন রাষ্ট্রের কোন সুস্হ্য মানুষের ই কাম্য নয় । ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ তে সবচেয়ে হুমকির মুখে পরবে আমাদের সাংবাদিক সমাজ । এই জন্যই আইনটি পাস হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ মাধ্যম সম্পাদকরা মানববন্ধন করার ঘোষণা দেন। এর পর তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন আইন, তথ্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী।সেখানে গণমাধ্যমের আপত্তিতে থাকা ধারাগুলো আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়।অবশ্য আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩ অক্টোবর গনভবনে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন অপরাধী মন না হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই।

তাই সংক্ষেপে জেনে নেই কি আছে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সদ্য স্বাক্ষার করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ তে কি শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে , ‘এই আইনের আওতায় কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনও ধরনের প্রপাগান্ডা চালান, তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করে, তাহলে ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। নতুন আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, মানহানিকর কোনও তথ্য দিলে তিন বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া, ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনও ধরনের তথ্য উপাত্ত, যেকোনও ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এবং এ অপরাধে ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি জনগণকে ভয়ভীতি দেখায় এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করে, তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভয়ভীতি দেখায়, তাহলে তাকে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানাসহ উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।৩০ ধারায় বলা হয়েছে, না জানিয়ে কেউ যদি কোনও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক-বীমায় ই-ট্রানজেকশন করে, তাহলে পাঁচ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে সাত বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।আইনে বলা হযেছে, কেউ যদি বেআইনিভাবে কারও ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে, তাহলে তাকে সাত বছরের জেল ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। বেআইনিভাবে অন্য সাইটে প্রবেশ করার পর যদি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে।। আবার কেউ যদি বেআইনিভাবে কারও ডিভাইসে প্রবেশ করে তাহলে এক বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে। কেউ যদি কারও ডিভাইসে প্রবেশে সহায়তা করে, তাহলে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বলা হয়েছে, আইনটি কার্যকর হলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল হবে। তবে এ আইনটিতেই বিতর্কিত ৫৭ ধারার বিষয়গুলো চারটি ধারায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে।এ ছাড়া পুলিশকে পরোয়ানা ও কারও অনুমোদন ছাড়াই তল্লাশি এবং গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এই আইনে ঢোকানো হয়েছে ঔপনিবেশিক আমলের সমালোচিত আইন ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’।আইনের ১৪টি ধারার অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য। বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে কোনো বাংলাদেশি এই আইন লঙ্ঘন করলে তার বিচার করা যাবে।

আইনটির যেই ধারা সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তা হলো ৩২ ধারা । এ ধারায় ডিজিটাল অপরাধের বদলে গুপ্তচরবৃত্তির সাজার বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ঢুকে কেউ কোনো কিছু রেকর্ড করলে, তা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে। এর জন্য ১৪ বছরের জেল এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এতে আমাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকা ও সাংবাদিকরা সবচেয়ে হুমকির মুখে আছেন বলে সর্বমহলের ধরানা । এই আইনের বিভিন্ন ধারাগুলোতে চোখ বোলালে স্পষ্টই বোঝা যায় যে এই আইন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ কতটা রুদ্ধ করেছে । এ আইনের ২১, ২৫, ২৮,৩ ১, ৩২ ও ৪৩—এই ছয়টি ধারা সম্পর্কে চরম আপত্তি জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যম সম্পাদক পরিষদ । তাদের দাবী নতুন আইনটির এ ছয়টি ধারা সংবিধান ও তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী ।

সম্প্রতি আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ আমাদের মনে করিয়ে দেয় মিয়ানমারে রয়টার্সের ঐ দুজন সাংবাদিককে কথা যাদের ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ অভিযোগ এনে মিয়ানমারের বর্বর সরকার সাত বছরের কারাদন্ড দিয়েছে । যদিও সাংবাদিকদের দাবী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে তাঁরা আসলে ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন’। পুরো পৃথিবীর প্রতিবাদ উপেক্ষা করে মিয়ানমার রাষ্ট্রের কালো আইন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের শাস্তি দিয়েছে। আমাদের দেশে ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপব্যভার করে নানান সময় সমাজের নানা মানুষকে হ্যানস্ত করা হয়ছে ।এ বছরের প্রথম ছয় মাসে মোট মামলা হয়েছে ৩৯১টি। ওই সব মামলার বেশির ভাগই হয় ৫৭ ধারায়। এসব মামলায় আসামি ৭৮৫ জন, যাঁদের ৩১৩ জন গ্রেপ্তার হন। এই সময়ে ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা হয়। বাদ যায় নি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম ছাত্রলীগের এক নেতার মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন।

বর্তমান সরকারঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিতের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সে ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করবে।মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশ অনেকাংশেই বাঁধাগ্রস্হ্য হবে । মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে এমন একটি আইনে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি রাজনৈতিক দল ক্ষমতা অবস্হ্যায় চুরান্ত হবে এটা মোটেও দেশের সাধারন মানুষ ভাবতে ও পারেনি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৮
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×