somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসে মুসলিমরা যেমন আছেনঃ

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতিহাস৷ অতীতে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনাইএকেকটা ইতিহাস৷যারা জয়ী হয় ইতিহাসে তাদের কথাই লেখা থাকে৷ যারা পরাজিত তাদের পক্ষে সাধারণত ইতিহাস লেখা হয় না৷ আর পরাজিতদের পক্ষ থেকে লেখা ইতিহাসে থাকে প্রচুর বানোয়াট তথ্য৷ বিরোধী দলকে তারা দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি হিসেবে উল্লেখ করে৷ কিন্তু এই ধরনের বানোয়াট ইতিহাসের মধ্যেও কিছু সত্য থাকে৷বিজ্ঞান ও অগ্রগতির কথা তারা কখনো অস্বীকার করতে পারবে না৷প্রতিপক্ষের যুদ্ধ কৌশল কেমন ছিল সেটাও বর্ণনা করতে বাধ্য৷

মুসলিমদের যুদ্ধের ইতিহাসঃ মধ্যযুগের মুসলিমদের ইউরোপীয় ইতিহাসবিদগণ বর্বর বলে প্রজন্মের সাথে পরিচয় করান৷কিন্তু মুসলিম ইতিহাসবিদগণ মধ্যযুগে মুসলিমদের স্বর্ণযুগ হিসেবে পরিচয় করান৷ কেন এমনটা হয়? পুরোপুরি সাংঘর্ষিক হয় কেমন? একই সময়তো কোনো জাতির স্বর্ণযুগ ও বর্বরতা হতে পারে না৷ এরুপ প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে কিনা? হ্যা, এরুপ প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে৷ ইতিহাসের ছাত্র নয় বরং ইতিহাস প্রেমিদের কাছে এটা অনেক চিন্তার বিষয়৷ বিশেষ করে মুসলিম ইতিহাস প্রেমীদেরতো বটেই৷ আচ্ছা, এখন চিন্তা করে বলুন তো মুসলিমদের বর্বর বলা হয় কোন কোন ক্ষেত্রে? মুসলিমদের বর্বর সব ক্ষেত্রেই বলা হয় না৷ যারা ইতিহাসনিয়ে ঘাটাঘাটি করেন তারা দেখবেন মুসলিমদের বর্বর বলা হয় শুধু মাত্র যুদ্ধ ক্ষেত্রে৷ সামাজিক, পারিবারিক ও বৈজ্ঞানিক জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই মুসলিমদের বর্বর বলা হয় না৷
যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলিমদের বর্বর বলার যথেষ্ট কারণও তাদের কাছে আছে৷আর থাকাটাই স্বাভাবিক৷ কোনো জাতিকে তো যুক্তি ও প্রমাণ ছাড়াই দোষারোপ করা যায় না৷চলুন বদরের যুদ্ধ থেকে শুরু করে কয়েকটা যুদ্ধের উদাহরণ দেই৷
১ বদরের যুদ্ধঃ ইসলাম সবে মাত্র জন্ম গ্রহন করছে৷ কিন্তু তার উপরই চেপে বসেছে কাফের সৈন্যরা৷ যুদ্ধ ছাড়া উপায় নেই নইলে চিরজীবনের জন্য ইসলাম ধর্ম বিলীন হয়ে যাবে৷ এমতাবস্থায় মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাত্র ৩১৩ জন যোদ্ধা নিয়ে ১০০০ কাফের সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী লাভ করলেন৷এটাকে অমুসলিম ইতিহাসবিদগণ বর্বরতা ছাড়া কিই বলতে পারে৷ তারা তো আর আল্লাহর রহমক্তে বিশ্বাসী নয়৷

২ খালিদ বিন ওয়ালিদের যুদ্ধঃ খালিদ বিন ওয়ালিদের যুদ্ধগুলোকে আলাদা আলাদা করে বোঝানোর প্রয়োজন মনে করছি না৷উনার বীরত্বের দরুন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উপাধি দিয়েছিলেন আল্লাহর তরবারি৷ আমাদের চোখে আল্লাহর তরবারিকি কোনো যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে পারে৷ যদিও তার যুদ্ধের কলা কৌশলগুলো অত্যান্ত নিখুঁত ও সুন্দর ছিল৷ তার সমর কৌশলগুলো বর্তমান সমরবিদদেরকেও তাক লাগিয়ে দেয়৷ তার নেতৃত্বেই পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যগুলো পরাজয় বরণ করে৷ মুসলিমরা তরবারির মাথা দেখে জান্নাত আর কাফেররা দেখে মৃত্যু৷ যার কোনো মৃত্যু ভয় নেই তার সাথে পেরে উঠবে কে? পরাজিত ঐতিহাসিকদের নিকট এটা বর্বরতা৷
৩ আইনে যালূতের যুদ্ধঃ এখানে দাউদ আ. এর সাথে যালূতের যুদ্ধের কথা বলছি না৷ বরং মোঙ্গলদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধের কথা বলছি৷ যেই মোঙ্গল জাতিরা অতি অল্প সময়ে সারা বিশ্বের শান্তি নষ্ট করে সব দখল করে নিয়েছে ৷ যারা নাকি মানুষের রক্ত পান করত৷ ঐতিহাসিকদের ভাষ্যমতে মোঙ্গলরা বাগদাদে ৩ দিনে ২০ লক্ষ মুসলিম হত্যা করেছে৷তারাই আইনে যালূতে এসে মুসলিমদের বর্বরতার স্বীকার হলো৷ এ কেমন কথা?
প্রায় সব ঐতিহাসিকদের মতেই মোঙ্গলদের দ্বারা মানবজাতির জন্য কোনো একটি ভাল কাজই হয়নি৷ সেই মোঙ্গলরাই আইনে যালূতে এসে সাইফুদ্দিন কুতুযের কাছে পরাজয় বরণ করে নিল৷ এরপর থেকেই মোঙ্গলদের লরাজয়ের ধ্বনি বাজতে শুরু করল৷প্রতিপক্ষের ঐতিহাসিকরা ভালভাবেই বলতে পারে মুসলিমরা মোঙ্গলদের থেকে বেশি বর্বর ছিল বিধায় মোঙ্গলরাও তাদের কাছে পরাজয় বরণ করেছে৷
৪ ভারত আক্রমণঃ প্রতিশোধের জের ধরে মুসলিমরা সর্বপ্রথম ভারত আক্রমণ করে৷ রাজা দাহিরের অত্যাচারের জবাব দিতে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ১৮ বছর বয়সি মুহাম্মদ বিন কাশিম কে সেনা প্রধান করে ভারতে পাঠান৷ ভারতের একজন ক্ষমতাধর রাজা দাহির যুদ্ধে বিন কাশিমের সাথে পরাজয় বরণ করে৷ এক্ষেত্রে ঐতিহাসিকগণ বর্বর বলেই উল্লেখ করেন৷

মুসলিমদের বিজ্ঞান ও অগ্রগতির ইতিহাসঃ মধ্যযুগ হচ্ছে মুসলিমদের অগ্রগতির স্বর্নযুগ৷মধ্যযুগে মুসলিমরা সব চেয়ে বেশি অগ্রসরছিল এক্ষেত্রে কোনো ঐতিহাসিকগণ দ্বিমত পোষণ করে নি৷ চিকিৎসাবিদ্যা, সমরবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন ও গণিত ইত্যাদি কোনো বিষয়ে মুসলিমদের সাথে টক্কর দেওয়ার মত কেউ ছিল না৷ এর আবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷তৎকালীন খ্রিস্টান সম্রাটেরা বৈজ্ঞানিকদের উপর প্রচুর অত্যাচার করত আর বিজ্ঞান চর্চায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করত না৷ এর মূল কারণ বৈজ্ঞানিকদের গবেষণা লব্ধ সূত্রাবলী ও ফর্মূলা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেলের সাংঘর্ষিক হত৷ পক্ষান্তরে মুসলিমদের সূত্রাবলী ও ফর্মূলা কোরআনের সাথে মিলে যেত৷ সেই কারণেই মুসলিম সম্রাটেরা বিজ্ঞান চর্চায় বৈজ্ঞানিকদের সহায়তা করত৷ আর খ্রিস্টান সম্রাটেরা বিজ্ঞান চর্চায় বিরোধিতা করত৷

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মুসলিমদের যে সকল ক্ষেত্রে বর্বর বলা সেটা মূলত রাগ ও ক্ষোভের কারণে বলা হয়৷ যদি কোনো জাতি জ্ঞান বিজ্ঞানে অগ্রসর হয় সে জাতি কখনও বর্বর হতে পারে না৷
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×