নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ নেশা করতে পানীয় খুঁজে, আমি খুঁজি বই। এই একটাই নেশা আমার। পড়তে পড়তেই লেখার ইচ্ছে জন্মাল। আর তার জন্য হাত মকশো করি এখানে এসে।
"আজকে রাতে আমরা তোমাদেরকে দেখাবো নিঃশব্দে মানুষকে হত্যা করার আটটি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি।"
যে এই কথাটা বলল তার পদবি সার্জেন্ট, দেখতে বয়সে আমার চাইতে বছর পাঁচেক বড়ো হবে। কাজেই, যদি কোনোদিন সে কাউকে হত্যা করেই থাকে, নিঃশব্দে বা সশব্দে যাই হোক না কেন, সেসময় সে সদ্যোজাত শিশু ছিল তাতে সন্দেহ নেই।
আমি অবশ্য আশি রকম উপায়ে মানুষ হত্যা করতে সক্ষম, তবে তার বেশিরভাগ পদ্ধতিতেই নিঃশব্দের তুলনায় শব্দের ছড়াছড়ি বেশি। নিজের চেয়ারে শিরদাঁড়া সোজা করে বসে, চোখে মুখে মেকি ভদ্রতাসূচক আগ্রহ ফুটিয়ে তুলে আমি দুই চোখ খোলা অবস্থাতেই ঘুম দিলাম। উপস্থিত অধিকাংশ প্রশিক্ষণার্থীরা যে তাই করছে আমি নিশ্চিত। এই সময়টায় কোনও গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস রাখা হয় না, আমরা এতদিনে জেনে গিয়েছি।
প্রোজেক্টরের কারণে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো আমার। বসে বসে ছোট্ট একটা ভিডিও দেখতে হলো, নিঃশব্দে খুনের আট পদ্ধতির উপর। ভিডিওতে থাকা অভিনেতাদের সকল স্মৃতি খুব সম্ভবত মুছে ফেলা হয়েছে, এটা বুঝতে পারলাম তাদেরকে সত্যি সত্যি মেরে ফেলা হচ্ছে দেখে।
ভিডিওর শেষে সামনের সাড়িতে বসে থাকা একটা মেয়ে হাত উঁচু করলো। সার্জেন্ট তার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে অনুমতি দেয়ায় উঠে দাঁড়ালো মেয়েটা। দেখতে শুনতে খারাপ না। কিন্তু, কাঁধ আর ঘাড় সুদৃঢ়, পেশীবহুল। টানা কয়েক মাস ধরে ভারী ব্যাগ নিয়ে ঘুরলে সবার এই একই দশা হয়।
"স্যার"- সার্জেন্টদের স্যার বলে সম্বোধন করাটাই নিয়ম যতদিন না আমাদের গ্রাজুয়েশন সমাপ্ত হচ্ছে- "যেসব পদ্ধতি দেখানো হলো তার মধ্যে বেশীরভাগই কেমন যেন, মানে, হাস্যকর।"
"যেমন?"
"যেমন কিডনিতে মাটি খনন করার কাস্তে দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা। মানে, এটা কি সম্ভব যে আপনার কাছে শুধুমাত্র একটা কাস্তেই আছে, বন্দুক কিংবা ছুরি নেই? আর যদি থাকেই তবে তার মাথা ঐ কাস্তের বাড়ি দিয়ে দুই ভাগ করাটাই তো সহজ সমাধান।"
"হতে পারে, তোমার প্রতিপক্ষের মাথায় হেলমেট পড়া থাকবে," বেশ যুক্তিসংগত কথাই বলল সার্জেন্ট।
"সবচেয়ে বড়ো কথা, টরানদের খুব সম্ভবত কিডনি বলে কোনও অঙ্গ নেই।"
এবারও কাঁধ ঝাঁকিয়ে স্বীকার করে নিলো সে, "সম্ভবত, নেই।" ১৯৯৭ সাল চলছে, আর এখন পর্যন্ত কেউ টরানদের সামনাসামনি দেখে নি। এমনকি টরানদের দেহের কোনও অংশবিশেষও খুঁজে পাওয়া যায় নি।
"কিন্তু, তাদের দেহের গঠন ও রাসায়নিক ধরন অনেকটাই আমাদের মতন। কাজেই আমরা ধরে নিচ্ছি তাদের দেহ আমাদের মতই জটিল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশিষ্ট হবে। আর সেসব অঙ্গের সুনির্দিষ্ট দুর্বলতাও থাকবে। এমন কোনও জায়গা যেখানে আঘাত করলে তাদের মৃত্যু হতে বাধ্য। সেটা তোমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে।"
'আর এটাই সবচাইতে জরুরি বিষয়," প্রোজেক্টরের স্ক্রিনের দিকে আঙ্গুল তুলে বলল সে। "এই আটজনকে তোমাদের শেখানোর জন্য হত্যা করা হয়েছে, তোমাদের বুঝানোর সুবিধার্থে। কারণ তোমাদের খুঁজে বের করতে হবে একজন টরানকে কিভাবে হত্যা করা সম্ভব। আর সেটা তোমাকে তোমার হাতের মেগাওয়াট লেজার দিয়েও করতে হতে পারে কিংবা তোমার হাতে থাকা নেইলকাটার দিয়ে।"
চুপচাপ বসে পড়লো মেয়েটা, অবশ্য দেখে মনে হচ্ছিল না সে ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছে।
"আর কারও কোনও প্রশ্ন আছে?" কেউ হাত তুলল না।
"ওকে। এটেনশন।" আমরা সটান সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। সার্জেন্ট আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন, কিছু একটা শোনার প্রত্যাশায়।
"******, স্যার।" ক্লান্ত গলায় সবাই কোরাসের মতন বলে উঠল।
"আবার, আরও জোরে।"
"******, স্যার।" এই অদ্ভুত কথা বলে সেনাবাহিনীর মধ্যে কার কতটুকু মরাল বৃদ্ধি পায় কে জানে?
"এবারে ঠিক আছে। ভুলে যেও না। সূর্য ওঠার আগেই তোমাদের দিন শুরু। চপ হচ্ছে ০৩৩০ বাজে, প্রথম ফর্মেশন ০৪০০ টায়। ০৩৪০ এর মধ্যেই কেউ বাদ পরলে তার কপালে খারাপি আছে। ডিসমিসড।"
কভারঅলটার জিপার লাগিয়ে বরফের ওপাশে থাকা লাউঞ্জের দিকে গেলাম আমি। এককাপ সয়া আর একটা বিড়ি টানার জন্য। পাঁচ কি ছয় ঘণ্টা ঘুমালেই আমার চলে যায়, এছাড়া বাকি সময়টুকু একান্তই আমার। আর্মির বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে কাটানোর জন্য। কিছুক্ষণ ধরে খবরের কাগজ উল্টেপাল্টে দেখলাম। আলডেবারান সেক্টরের ঠিক বাইরে, আরেকটা মহাকাশযান আটকে গিয়েছে টরানদের জালে। চার বছর আগে এই মহাকাশযানটা যাত্রা শুরু করেছিল।
পাল্টা আঘাত হানার জন্য মহাকাশযানের বহর তৈরি করা হচ্ছে, কিন্তু সেটা ওখানে পৌঁছাতে আরও চার বছর লাগবে। আর ততদিনে, টরানরা যে পোর্টালের আওতায় থাকা প্রতিটা গ্রহে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করে তুলবে তা বলাই বাহুল্য।
বিশ্রামাগারের আলো নিভিয়ে দেয়া হয়েছে, সবাই কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে ব্যস্ত। চাঁদে দুই সপ্তাহের বিশেষ ট্রেনিং থেকে ফিরে আসার পর সবাই একটু ঢিলেঢালা ভাবে সময় কাটাচ্ছে।
লকারে আমার কাপড় রেখে রোস্টার খুঁজে দেখলাম। গুঙিয়ে উঠলাম আজকে ৩১ নাম্বার বাংকে শুতে হবে দেখে। ঠিক হিটারের নীচে এই বাঙ্কারটা।
টেনে রাখা পর্দা এড়িয়ে যতটা নীরবে সম্ভব ভেতরে ঢুকলাম যাতে আমার পাশে থাকা ব্যক্তির ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে। পাশে কে সেটা অবশ্য ঠিক দেখা যাচ্ছিল না, সেটা নিয়ে অত ভাবার সময়ও নেই। কম্বলের নীচে আস্তে প্রবেশ করলাম আমি।
"অনেক দেরি করে আসলে, ম্যান্ডেলা।" হাই তুলতে তুলতে বলে উঠলো একটা কণ্ঠ। রজার্স।
"তোমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে থাকলে দুঃখিত," ফিসফিস করে বললাম আমি।
"ঠিক আছে, সমস্যা নেই।" আমার দিকে ফিরে গায়ের উপর পা তুলে আরাম করে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিলো মেয়েটা। ওর দেহটা বেশ উষ্ণ, নরম - স্বাভাবিকভাবেই।
অনেকটা অভ্যাসবশতই ওর পশ্চাতদেশে আলতো চাপড় মেরে "শুভ রাত্রি, রজার্স," বললাম আমি।
সেও একই কাজ করলো সহজাত ভঙ্গিতে, "শুভ রাত্রি, স্ট্যালিয়ন।"
কেন যে যখন তুমি সেই কাজটা করার জন্য তৈরি হয়ে থাকবে তখন তোমার কপালে সঙ্গিনী হিসেবে ক্লান্ত একজন এসে পড়বে, আর যেদিন তুমি নিজে ক্লান্ত থাকবে ঐদিন কেউ একজন সব করতে সম্মতি সহকারে তৈরি হয়ে থাকবে - এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। নিজের অদৃষ্টর প্রতি মনে মনে সালাম ঠুকলাম আমি।
২১ শে অক্টোবর, ২০২১ ভোর ৬:৪৩
অন্তরা রহমান বলেছেন: আপনার মতন পাঠক মানুষ এ মন্তব্য করলে সমস্যা। মিলিটারি সায়েন্স ফিকশনের মধ্যে অন্যতম সেরা একটি বই দ্য ফরেভার ওয়ার। পরের পর্বগুলো পড়লে আশা করি বুঝবেন। ইচ্ছে থাকলে গুগল করে কাহিনীর সংক্ষিপ্তসার পড়তে পারেন, মাচ বেটার।
২| ২১ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:০৬
Abida-আবিদা বলেছেন: ভালো লিখেছো, আপু।
তবে, তোমার আটটি পদ্ধতি আমি খুঁজে পাইনি।
২১ শে অক্টোবর, ২০২১ ভোর ৬:৪৪
অন্তরা রহমান বলেছেন: সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সময় সার্জেন্টের বলা কথা আপু। সেটা এখানে না থাকাটাই স্বাভাবিক।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।