নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মা ও মাটির প্রতি মনের টান বুঝার জন্য অন্তত একবার বিদেশ ভ্রমন করুন

এপোলো

একটি বাংলা ব্লগ পেয়ে আমি খুব খুশি।আমি সকলের সাথে বাংলায় ভাব করতে পারব।

এপোলো › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুধু তাবিজে হবে না, পানিপড়াও লাগবে

১৫ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ৮:৩২


এখন তো আর সেই দিন নাই, আধুনিক যুগ, দিনের প্রত্যেক মূহুর্তে আমরা বিজ্ঞানের উপস্থিতি অনুভব করতে পারছি। সকালে উঠে দাঁত মাজি "টুথপেস্ট" দিয়ে, মাঝে মাঝে ব্যাটারি চালিত টুথব্রাশও ব্যবহার করি। আরেহ, ব্রাশ করা তো অনেক পরের কথা, ঘুম থেকেই তো উঠি স্বয়ংক্রিয় এলার্ম ঘরির আওয়াজে। এরপর থেকেই শুরু হয় বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। এখন তো আবার বাংলা কমোডকেও অবৈজ্ঞানিক ধরে সবাই হাই কমোড ব্যবহার করা শুরু করছে। এখন বৈজ্ঞানিক উপায়েই চিকিৎসা করতে হবে। তাবিজ-কবজের দিন আর নেই।

এক নিশ্বাসে এত লম্বা ভাষন দিয়ে হাসিবের খালু দম নেয়ার জন্য একটু থামল। এই সুযোগের কাজে লাগাতে চাইল, হাসিবের মা, মনিরা বেগম। বলল, তারপরও তো তাবিজের গুরুত্ব একটুও কমে নি। গতবছর তাঁকে প্রায় আধা ঘন্টা লাইনে দাড়িঁয়ে থাকতে হয়েছিল হুজুরের সাথে দেখা করতে। এত বড় লাইন, এতগুলো মানুষ, তাবিজে যদি কাজ না হয়, তাহলে এতগুলা মানুষ ওখানে লাইন ধরেছিল কেন?

হাসিব আমেরিকাতে থাকে বেশ ক'বছর ধরে। পড়াশুনা শেষ করে ভাল চাকরিতে ঢুকেছে। চাকরি নেয়ার পরপরই দেশে গিয়ে বিয়ে করে এসেছে। বছর দুয়েক হল বউকে নিয়ে এসেছে দেশ থেকে। তাদের সংসারের নতুন অথিতি এসে বছরের শুরুতেই। নবজাতক হলেও পিচ্চি অনেক ক্ষমতাবান। আমেরিকার সিটিজেন, সামনের মাসেই পাসপোর্ট চলে আসবে। আমেরিকার মত উন্নত দেশের পাসপোর্টধারী নাগরিক, চিন্তা করা যায়! এই নিয়ে দেশে-বিদেশে সবাই উচ্ছসিত।

যে শহরে থাকে ওরা, ওখানে তেমন বেশি বাংলাদেশি নাই। যেকজন আছে, অনেক আগে থেকেই ওদের বসবাস। বয়সে হাসিবের চেয়ে অনেক বড়, জেনারেশন গ্যাপটা খুব ভালভাবে লক্ষ্য করার মত। হাসিব মাত্র ক্যারিয়ার শুরু করেছে, থিতু হতে সময় লাগবে। শহরটা ভালই লেগেছে থাকার জন্য, কিন্তু চাকরিজীবনের তো মাত্র শুরু। এই শহরেই যে বাকি জীবন কাটাতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। সবকিছু মিলিয়ে নিজে নিজেই তার জীবনের প্রত্যেকটা দিক সামলানোর দিকে নজর বেশি। বাচ্চা দুনিয়াতে আসার আগে থেকে এখন পর্যন্ত সবকিছু নিজের হাতেই সামলাতে চেষ্টা করেছে। এইসব ব্যাপারে অবশ্য মনিরা বেগম তার ছেলেকে প্রতিটা ধাপে ধাপে নির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করেছে। হাসিবও মোটামুটি খুশি নিজের পারফরমেন্স এ। তেমন বেশি ঝামেলা হয়নি এখন পর্যন্ত।

সমস্যাটা চোখে পড়েছে মাত্র দুই-তিন ধরে। বাচ্চাটা রাতের বেলা ঘুমায় না, নিজে জেগে থাকে বাবা-মাকেও জাগিয়ে রাখে। হয়ত দুনিয়ার সব দেশের বাচ্চাদের একই সমস্যা, রাতজাগা। এইটুক হলেও হত, মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু সেটা আসলে কোন সমস্যাই না। সমস্যা হল, বাচ্চাটা রাতের বেলা কিছুক্ষন পরপরই আচমকা চিৎকার দিয়ে উঠে। যেন তেন চিৎকার নয়, খুব তীক্ষ্ণ শব্দ, কানফেটে একেবারে বুকে গিয়ে আঘাত করে, ওরকম চিৎকার। হাসিব এই ধরনের চিৎকারকে "চিক্কুর" বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করেছে। "পোলায় আমার কিছুক্ষন পরপরই চিক্কুর পারে" এই হল হাসিবের হুবহু বর্ণনা।

হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল সে এই সমস্যার বিহীত করতে। নার্স সমস্যার বর্ণনা শুনে বলছে, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। বাচ্চার স্বরযন্ত্র একটু বেশি শক্তিশালী হবে হয়ত, অথবা হয়ত ভবিষ্যতে ভাল ওপেরা সংগীত গাইতে পারবে তার পূর্বলক্ষন। চিন্তার কিছু নাই। এই বলে সে ডাক্তারের সাথে দেখাই করতে দেয়নি। হাসিবের মন নার্সের কথায় সন্তুষ্ঠ হয়নি, নার্সের সস্তা "অপেরা সংগীত" কৌতুকও তার ভাল লাগেনি। হাতে কিছু করারও নাই। আমেরিকার এই একটা সমস্যা। ডাক্তারেরা হুটহাট করে কোন ওষুধ দেয়না, এন্টিবায়োটিকতো দূরের কথা। দেশে হলেই এতক্ষন ২-৩ টা এন্টিবায়োটিক ওষুধ লেখায় নিতে পারতো ডাক্তারের কাছ থেকে।

এই আফসোসের কথা বউয়ের কাছে প্রকাশ করতেই বউ বলে উঠল, "আম্মা তো আছেনই দেশে, উনাকে দিয়ে কিছু ওষুধ কিনে কাউকে দিয়ে পাঠাতে বললেই তো হয়।" বুদ্ধিটা হাসিবের মনে ধরেছে। পরের দিন সকালেই দেশে ফোন লাগালো, সবকিছু বুঝিয়ে বলার পর মনিরা বেগমকে অনুরোধ করল যেন শহরের সবচেয়ে ভাল শিশু-বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে এই সমস্যার একটা বিহীত করে। যে যে ওষুধের নাম বলবে, সবকিছু যেন দ্বিগুন করে কিনে প্যাকেট করে রাখে, হাসিব কাউকে পেলেই নিয়ে আসাবে আমেরিকাতে। জামা-কাপড় সে নিয়মিতই আনে বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে, কিন্তু ওরা ওষুধ আনে না। ওষুধ আনতে হলে কারও লাগেজে করে আনতে হবে। সেটার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এখন বছর শেষের দিকে, অনেক ছাত্র-ছাত্রী এখন শীতের ছুটিতে দেশে গেছে। জানুয়ারির দিকেই ফেরত আসবে অনেকেই। কাউকে না কাউকে দিয়ে আনাতে পারবে।

ছেলের কথা শুনে মনিরা বেগম খুব চিন্তায় পড়ে গেল। শহরের নামি এক প্রফেসরের কাছে গিয়ে সে তার নাতির সমস্যার কথা বিস্তারিত তুলে ধরল। ডাক্তার সাহেব সব শুনে মুচকি হেসে মনিরা বেগমকে বললেন, "অত চিন্তার কিছু নাই। নাতি হয়ত ভাল গায়ক হবে বড় হয়ে, কোন ওষুধ খেতে হবে না এখন।"

কি এক হতাশাজনক অবস্থা! নাতিকে সে একবার নিজ চোখে দেখতেও পারল না। কত আশা ছিল নাতি-নাতনি নিয়ে বুড়া বয়সের অবসর সময় কাটাবে, চুরি করে দোকান থেকে চকলেট কিনে খাওয়াবে, লাই দিয়ে মাথায় তুলবে, আরও কত কি, কিন্তু তা আর হল কই? হাজার হাজার মাইল দূরে পড়ে আছে তার একমাত্র নাতি। সে নাতির জন্য কিছু ওষুধের ব্যবস্থাও করতে পারল না। ডাক্তার সাহেব কেমনে এমন প্রফেসর হইছে মনিরা বেগমের মাথায় ডুকছে না। ডাক্তারকে বেশি বদদোয়াও করতে পারছে না। হাজার টাকার ফিসের একটাকাও রাখেনি ডাক্তার। বলেছে, সেবা তো দিতে পারলাম না, আর দোয়ার জন্য ফিস নেওয়া যাবে না। যাহোক, ডাক্তারকে বদদোয়া না দিলেও কিছু একটা ব্যবস্থা তো করতে হবে।

বাড়ি ফেরার পথেই দেখা হল প্রতিবেশী রহমতউল্লাহ সাহেবের সাথে। রহমতউল্লাহ সাহেবের বাড়ি মনিরা বেগমের দুই বাড়ি আগে। ভাল মানুষ। সরকারি চাকরি থেকে রিটায়ার করেছেন। এলাকায় ভাল নাম ডাক আছে। মাঝে মাঝে মহল্লার সালিশ-বিচারেও আজকাল তাকে দেখা যায়। উনি মনিরা বেগমের চিন্তিত মুখ দেখেই জিজ্ঞেস করলেন কি সমস্যা। মনিরা বেগম শহর থেকে ফেরার ক্লান্তি মুখে নিয়েই সংক্ষেপে তার সমস্যার কথা জানালেন রহমতউল্লাহ সাহেবকে। নাতির চিন্তায় উনার আজকে ঘুম হবে না, সেটাও মুখ ফসকে বলে ফেললেন। সমস্যার এমন গুরুত্ব দেখে রহমতউল্লাহ সাহেব তড়িৎ গতিতে ফোন দিলেন কাকে যেন। খুব তাড়াতাড়ি কথা সেরে মনিরা বেগমকে বললেন, খুব শীগরীরই সমস্যার সমাধান করার ব্যবস্থা করছেন। মাগরিবের নামায পড়ে উনি বাড়িতে আসবেন চা খেতে। সাথে একজন মেহমান থাকবে। বলেই হাটাঁ শুরু করলেন দোকানের দিকে। মনিরা বেগমও বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন। মাগরিবের আর বেশি দেরী নাই। চা খাবে বললে তো আর শুধু চা বানালে হবে না, সাথে কিছু হালকা নাশতা-পানির ব্যবস্থাও তো করতে হবে। দেরী করার মত সময় হাতে নাই।

সন্ধ্যা হওয়ার কিছুক্ষন পরেই রহমতউল্লাহ সাহেব আসলেন মনিরা বেগমের সাথে দেখা করতে। সাথে একজন অপরিচিত মধ্যবয়স্ক মানুষ। দেখতে হুজুর এর মত লাগছে, আবার মসজিদের হুজুরদের চেয়ে কিছুটা পার্থক্যও লক্ষনীয়। লম্বা লম্বা চুল, বাবরি কাট, মাথায় দুইতলা টুপি, মুখে দাঁড়ি তেমন নাই, তবে বেশ কয়েকবছর ধরে নাপিতের সাথে দেখা হয় না, সেটা সহজেই বুঝা যায়।
রহমতউল্লাহ সাহেব পরিচয় করিয়ে দিলেন উনাকে। পাশের গ্রামের রহমান ফকিরের মাজারের খাদেম উনি। রহমতউল্লাহ সাহেবের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়েই খাদেম সাহেব নিজ সম্পর্কে বলা শুরু করলেন। বাড়ি উত্তরবঙ্গে। স্বপ্নে রহমান ফকিরের সাথে দেখা, ফকিরের নির্দেশেই নিজের বাড়ি ঘর ছেড়ে এখন দেশের অন্যপ্রান্তে এসে মাজারের খেদমত করেন। সেইজন্যই উনি নিজেকে খাদেম নামেই পরিচয় দেন। খাদেম সাহেব পার্থিব সব লেনাদানা থেকে নিজেকে মুক্ত করে এখন মাজারে নিবেদিতপ্রান। মাজারের অনুসারীদের দয়ার উপরই তার ভরনপোষন চলে যায়। এই হল খাদেম সাহেবের নিজের মুখে বলা সংক্ষিপ্ত পরিচয়।

চায়ের পর্ব শেষ করে মনিরা বেগম কাজের কথায় আসলেন। নাতির "চিক্কুর" নিয়ে সংশয়ে আছেন। কিন্তু ডাক্তার কোন চিকিৎসা দিচ্ছে না। খাদেম সাহেব খুব মন দিয়ে শুনলেন। মনিরা বেগমের কথা শেষ হলে কিছুটা সময় নিয়ে খাদেম বললেন, "সব সমস্যা তো আর ডাক্তারি দিয়ে হয় না, কিছু কিছু জিনিস পীর-আউলিয়াদের হাতে ছেড়ে দিতে হয়।" নাতির সমস্যার সমাধানে কোন তাবিজ দেয়া যাবে কিনা সে প্রশ্ন রহমতউল্লাহ সাহেবের। কিছুদিন আগেই তার স্ত্রীর ছোটবোনের দেবরের জন্য তিনি তাবিজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ঐটাও "আমেরিকান কেস।" তাবিজ মাশাল্লাহ ভাল কাজ দিছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বিকেলে মনিরা বেগমের সমস্যার কথা শুনে রহমতউল্লাহ সাহেব খাদেম সাহেবকে ফোন দিয়েছিলেন। ঐসময় বিস্তারিত কথা হয়নি। তাবিজের প্রশ্নটা এখন সামনাসামনি করতেই খাদেম সাহেব ধ্যান থেকে বের হয়ে আসলেন।

"যে গুরুতর সমস্যা, শুধু তাবিজে তো আর হবে না। সাথে পানি পড়াও লাগবে।" একটা তাবিজ আজ রাতের মধ্যেই লিখে দেবেন উনি। কিন্তু পানি পড়াটা অত সহজে হবে না। সাতমসজিদের পানি মিশিয়ে সেখানে দোয়া পড়া লাগবে। এই সাতমসজিদ ঘোরার সময় উনার হাতে এখন নাই। ২ সপ্তাহ লেগে যাবে যদি উনি পানি যোগাড় করে আনেন। কিন্তু মনিরা বেগম এত দেরি করতে ইচ্ছুক নন। রহমতউল্লাহ সাহেবও বললেন, অত দেরী করা যাবে না। তার এক আত্মীয়ের ছেলে রিমন নিউ ইয়র্কে যাবে আর ৪ দিন পর। তাকে দিয়েই তাবিজ আর পানি পড়া পাঠানোর ইচ্ছা। ২ সপ্তাহ অপেক্ষা করা যাবে না। তার চেয়ে উনি নিজেই সাতমসজিদের পানি যোগাড় করার দায়িত্ব নিলেন। "কালকেই পানি যোগাড় করে ফেলব।" এরপর সন্ধ্যায় খাদেম সাহেবের সাথে দেখা করে পানি পড়িয়ে নেবেন। ছোট একটা বোতলে ভরে ভালভাবে টেপ মেরে দেবেন উনি নিজের হাতে। দুই দিনের মধ্যেই তাবিজ আর পানি পড়া রেডি। ৫ দিনের মাথায় জিনিস পৌছেঁ যাবে নিউ ইয়র্কে। ঐখান থেকে হাসিবের কাছে পৌছাঁতে আর যে কদিন লাগে। আমেরিকান পোস্ট অফিস তো দেরি করার কথা না। সব মিলিয়ে মনিরা বেগম হিসাব করে দেখলেন ৭-১০ দিনের মধ্যেই নাতির চিকিৎসা পৌছে যাবে হাজার মাইল দূরে। কি একটা দিন আসল, দুনিয়ার অপর প্রান্তে জিনিস পৌছে যায় এক সপ্তাহের মধ্যেই। মনিরা বেগম অবাক না হয়ে পারে না। এদিকে নাতির একটা ব্যবস্থা হওয়ায় উনি একটু চিন্তামুক্ত হলেন।

যাক, এখন অন্তত উনার ছোট বোনের সাথে একটু কথা বলা যায়। সকালেই ফোন দিয়েছিল মনিরা বেগমের ছোটবোন। স্বামী-সন্তান নিয়ে উপজেলা শহরেই থাকে ওরা। সময়ে অসময়ে ওরাই এখন সম্বল। ফোন দিয়ে সবকিছু বললেন, আমেরিকান হাসপাতাল থেকে বাংলাদেশি ডাক্তার, রহমান ফকির থেকে সাতমসজিদের পানি, সবকিছুই। দুই বোনই মোটামুটি সন্তুষ্ট সবকিছু ঠিকঠাক মত ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ায়। কিন্তু হাসিবের খালু, মানে মনিরা বেগমের ছোটবোনের স্বামীর মনে কেমন যেন করছে। এখন কি এসব তাবিজ কবজে কাজ হয়? তার উপর আবার এই জিনিস পাঠাবে সেই আমেরিকাতে? উনার মনের উশখুশ অবস্থা জানাতে উনি মনিরা বেগমকে ফোন করলেন, বললেন, এইসব তাবিজ কবজের উপর ভরসা রাখলে হীতে বিপরীত হতে পারে। এখন তো আর এসব চলে না, বিজ্ঞানের উপর আস্তা রাখতে হবে। ডাক্তার যদি বলে নাতির কোন সমস্যা নাই, তাহলে এত কষ্ট করার কি দরকার। খাদেম সাহেব যে পরিমান সময় ব্যয় করছেন, তার বদলে তাকে কিছু হাদিয়া দিয়ে এই ব্যাপারটা এখানেই বাদ দেয়া ভাল।

কিন্তু মনিরা বেগম দমে যাওয়ার নয়। উনি চেষ্টা করেই ছাড়বেন। যদি পানি পড়াতে কাজ নাও হয় তাহলেও তো দোষের কিছু নাই। পানি খেলে তো আর কোন সমস্যা হবে না, পানি তো পানিই। কিন্তু খাওয়ার পর যদি নাতির একটু উন্নতি হয়, তাহলে চেষ্টা করে দেখতে তো দোষের কিছু নাই। উনি উনার পরিকল্পনায় অটল রইলেন। কালকেই রহমতউল্লাহ সাহেবকে কিছু টাকা দিতে হবে খাদেম সাহেবের হাদিয়া বাবদ। খাদেম সাহেব তেমন কোন কিছু দাবি করেন নি। তবে এইটা বলেছেন, তার একদিনের ভরনপোষণে শ'চারেক খরচ হয়। মনিরা বেগম ভাবলেন, পাচঁশ টাকার একটা নোট দিয়ে দেবেন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই হাসিবকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলে নিশ্চিন্তে থাকতে বলবেন, এই চিন্তা করেই ঘুমিয়ে গেলেন মনিরা বেগম।

পরের সপ্তাহের শুক্রবার সকালে বাড়ির বারান্দায় বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন মনিরা বেগম। হঠাত খেয়াল করলেন রহমতউল্লাহ সাহেব হেটেঁ আসছেন তার বাড়ির দিকে। ভাবলেন হয়ত রিমনের নিউ ইয়র্কে পৌছানোর খবর দিতেই হয়ত আসছেন উনি। ভেতরে গিয়ে উনার জন্য আরেকটা মোড়া নিয়ে আসলেন মনিরা বেগম। মোড়াতে বসেই রহমতউল্লাহ সাহেব খবরটা দিলেন। "নাতির কপাল খারাপ, বুঝলেন ভাবী। রিমনের কাধেঁর ব্যাগে নিজ হাতে পানি পড়ার বোতলটা দিয়েছিলাম আমি। শুনেছি বিমান বদলানোর সময় বড় লাগেজগুলো ধুমধাম করে ছুড়ে মারে বিমানের শ্রমিকরা। সেজন্য রিমনের কাধেঁর ব্যাগেই নিতে বলেছিলাম বোতলটা। ওটা তো কেউ ছুড়ে মারবে না, পানিটাও নিরাপদ থাকবে। কিন্তু বিমানে উঠার সময় নাকি কাধের ব্যাগে পানি নেয়ার নিয়ম নাই। সেজন্য ওরা রিমনকে পানিপড়াটা নিতে দেয়নি। ততক্ষণে তার বড় লাগেজগুলোও চলে গেছে বিমানের ভেতর। বাধ্য হয়ে ফেলেই দিতে হল পানিটা। এত কষ্ট করলাম নাতির জন্য, কিন্তু কিছুই তো হল না আর।"

পুরো সময়টাই মনিরা বেগম হা করে শুনছিলেন রহমতউল্লাহ সাহেবের কথা। ইশ, কেন যে কাধের ব্যাগে নিতে বলল? নাতির কপালটাই বা এত খারাপ কেন? ছেলেকেই বা এখন কি বলবে? উনার নিজের যা করার সবই তো করেছেন, বাকিটা ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন। ভাগ্যই বা কেন এমন বিট্রে করল? এইসব চিন্তার মাঝেই রহমতউল্লাহ সাহেবের কথায় সম্বিত ফিরে এল। "তারপরও বলি কপাল পুরোটাই খারাপ না। তাবিজটা নাকি রিমনের ব্যাগেই ছিল। ওটা নিয়ে কোন প্রশ্ন করে নি। সে বলেছে হাসিবের সাথে কথা বলে আজই সেটা পোস্ট করে দেবে।"

যাক, অন্তত তাবিজটা তো পৌঁছেছে। কিছুটা হলেও তো হল। মনিরা বেগম হাঁফ ছেড়ে বললেন, আহা, নাতিটা আমার কাছে থাকলে এত কষ্ট করা লাগত না। এখন যদি আমার ছেলেবৌ তাবিজটা ঠিকমত পড়ায়, তাহলে বাঁচি। ফোন করে বলে দেব, কিভাবে গলায় বাঁধতে হবে। এত ছোট বাচ্চা, কোমড়ে যদি বেঁধে দেয়, তাহলে আবার ব্যাথা পাবে।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:৫১

ছদকার ছাগল বলেছেন: তাবিজ, পানিপড়ার সাথে ছাগল ছদকাও করতে হবে।

১৫ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫১

এপোলো বলেছেন: ছদকার ছাগলের সাথে মানতের মোমবাতি নিয়ে যেতে হবে?

২| ১৫ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: পানি পড়া, তাবিজ কবচ এবং ঝাড়ফুক এঁর দিন শেষ।

আমার মেয়েটা রাতে ঘুমায় না। রাত তিনটা বেজে যায় তাও ঘুমায় না। বিরাট দিকদারির মধ্যে আছি।

১৫ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৫

এপোলো বলেছেন: রাত দশটার পর পুরো বাসা অন্ধকার করে দিয়ে আপনি আর ভাবিসহ ঘুমায় পড়ার চেষ্টা করেন। জানালাতে মোটা (darkening) পর্দা লাগাতে পারেন বাসার বাইরের আলো আসা বন্ধ করতে। অন্ধকারে বেশিক্ষন জেগে থাকা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না, ঘুমায় যাবে নিশ্চিত।

৩| ১৬ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১২:২৩

তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: ইমুর মাধ্যমে ফু দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারতো মনিরা বেগম। তবে বাচ্চার উপর চোখ পরছে বলে মনে হয়, কপালের ডান পাশে কালো টিপ লাগালে কাজে দেবে।
আমাকে ধন্যবাদ পরে দিয়েন।

১৬ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ৮:১০

এপোলো বলেছেন: মনিরা বেগমের প্রতিবেশী আপা বলছে, এই বয়সে বাচ্চাদের গায়ে বাতাস লাগা স্বাভাবিক। চোখও পড়তে পারে, নাকি? কি একটা ঝামেলা!

৪| ১৬ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:০৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: কিরাম শৃঙ্খলা যে ......

১৬ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৪

এপোলো বলেছেন: আপু কেমন আছেন? দিনকাল ভাল?

৫| ১৭ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৩৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: কেমনে ভালো থাকি
তাবিজ ছাড়া B-)

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.