নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তব এবং সাধারন মানুষ আমার লিখার জীবন। এখানে রানা নামের একজন অতি সাধারন ব্যক্তির দৈনিক জীবন এবং তার দৃষ্টিতে সমাজের বর্তমান অবস্থা এবং এর প্রভাব তার নিজের ভাষায় প্রকাশ করা হবে।

আমি রানা

আমি বিশেষ কেউ বা কিছু না। যা মনে আসে যেভাবে মনে আসে তাই লিখি।

আমি রানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের ভয়ংকর কিছু মহামারি এবং মহামারী পরবর্তী বিশ্বের ভূমিকা।

১৬ ই মে, ২০২০ রাত ৮:১৫

মহামারি কিংবা ভাইরাসের ইতিহাস প্রায় ১২০০০ বছরের পুরোনো। গুটি বসন্ত এবং মিজেলস হচ্ছে এমন দুটি প্রাচিন ভাইরাস যা মানুষকে আক্রমন করতো। প্রায় কয়েক হাজার বছর আগে সর্বপ্রথম ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকায় দেখা যায় যা পরবর্তীতে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়।
প্রাচীন কালে মানুষ এই সকল রোগ কিংবা ভাইরাস সম্পর্কে অবগত ছিলনা, যার ফলে এই রোগ আসতো মানুষকে আক্রন্ত করতো প্রচুর মানুষ মারা যেত এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর এই রোগের প্রকোপ আপনা আপনি কমে আসতো এবং সুস্থ ব্যাক্তিরা অসুস্থদের এরিয়ে চলার মাধ্যমে রোগের সাময়িক অবসান ঘটতো।একটি গবেষনায় উঠে এসেছে, একটি পরিবেষ্টিত এলাকায় ভাইরাসের আক্রমন হলে সেখানকার মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেলে তারা বাকী মানুষদের জন্য অনেকটা ঢাল হিসেবে কাজ করে। এই অবস্থায় ভাইরাসের বিস্তার এতটায় ধীর হয়ে যায় যে তা প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি চলে আসতে পারে । এটাকে “HEARD IMMUNITY” বা “গণ প্রতিরক্ষা” বলা হয়। এবং পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময় পর আবার এইরোগ অন্য রূপে এবং অন্য নামে অন্য কোন স্থানে পৃথিবীকে আবার আঘাত করেছে।

জাস্টিনিয়ান প্লেগ:
৫৪১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মিশরে প্লেগ মহামরি আকারে ছরিয়ে পরে। সেখান থেকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টানটিনপোলে এই মহামারী পৌঁছাই। প্লেগের অন্যতম বাহক ছিল ইঁদুর। ৫৪২সালের বসন্ত কালে প্লেগ কনস্টানটিনপোলের বন্দর থেকে বন্দরে ও ভূমধ্যসাগরের চারদিকে ছরিয়ে পরে পরবর্তীতে এশিয়া মাইনর পশ্চিমদিকে গ্রিস ও ইতালি ছরিয়ে পরে। সম্রাট জাস্টিনিয়ানের প্রচেষ্টায় বিলাসবহুল পন্যদ্রব্য অমদানি-রপ্তানি হওয়ায় পণ্যদ্রব্য স্থানন্তরের কারনে দেশে দেশে প্লেগ ছরিয়ে যায়। ধারনা করা হয় এই প্লেগের কারনে প্রায় পাচঁ কোটি মানুষ মারা গিয়ে ছিল। এবং এর স্থায়ীত্ব ছিল পঞ্চাশ বছর। সম্রাট জাস্টিনিয়ানের কারনে এই মহামারি ব্যাপক হারে ছরিয়েছে বলে একে জাস্টিনিয়ান প্লেগ নামকরন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর দেপর ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক থামাস মাকাইটিস বলছেন, মানুষ তখন জানতনা কিভাবে এই রোগ প্রতিরোধ করবে তাই একপর্যায়ে অসুস্থ লোকদের এরিয়ে চলত সুস্থরা । যতটুকু যানা যায় একপর্যায়ে এইরোগের প্রকোপ কমে আসে। যারা বেঁচে ছিল তাদের মাঝে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।

ব্ল্যাক ডেথ/ কলো মৃত্যু
জাস্টিনিয়ান প্লেগের ৮০০ বছর পর আসে প্লেগের মহামারি ব্ল্যাক ডেথ বা বুবোনিক প্লেগ যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি বীভৎস অমানবিক ও কালো ইতিহাস বহন করছে। ধারনা করা হয় মধ্য এশিয়ার সমভূমিতে এইরোগের উৎপত্তি হয়েছে। বণিকদের জাহাজে বসবাস করা “কালো ইঁদুর”ও”ইঁদুর মাছি” নামক দুটি প্রজাতির মাধ্যমে এটি ভূমধ্যসাগর এবং ইউরোপে ছরিয়ে পরে। পৃথিবীব্যাপি ছরিয়ে পরা এই মহামারির কবলে পরে ১৩৪৬-১৩৫৩ সাল পর্যন্ত ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশে ৭৫ থেকে ২০০ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় । শুধু ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ৩০-৬০ ভাগ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে।
এই মহামারির সময়ে প্রথম বারের মত নাবিকদের আলাদা ভাবে রাখার চল শুরু হয়েছিল, যেখান থেকে কোয়ারেন্টিনের ধারনার উদ্ভব হয়েছিল। একপর্যায়ে রোগ নিয়ন্ত্রনে জাহাজের নাবিকদের ৪০ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখার নিয়ম শুরু হয়েছিল ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর রাগুসাতে।পরে পশ্চিমা বিশ্বে এই নিয়ম ছরিয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের ধারনা ,আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের নিয়ম চালু হবার বিষয়টি মহামারি নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

বুবোনিক প্লেগ/ লন্ডন প্লেগ
১৬৬৫ সালে লন্ডনে সবচেয়ে মারাত্মক বুবোনিক প্লেগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরে।মাত্র ৭মাসে প্রায় ১লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল যা তখনকার জনসংখ্যার ২০ ভাগ।ইতিহাসবিদরা মনে করেন, প্লেগটি নেদারল্যান্ডস থেকে লন্ডনে ছড়িয়ে পড়ে। আমস্টারডাম থেকে তুলা নিয়ে আসা ডাচ বানিজ্য জাহাজগুলো লন্ডনে প্লেগ নিয়ে আসে।
এই সময়টাতে, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেসন এবং লকডাউনের প্রচলন ঘটে। কারন তখন প্লেগের বিস্তার না ঘটার জন্য মানুষ নিজেদের ঘরে বন্দি করে রাখতো এবং কেউ প্লেগে আক্রান্ত হলে তাকে আটকে রাখা হতো , তার ঘরের সামনে লাল রং দিয়ে লিখে দেওয়া হতো “Lord have mercy upon us” এছাড়াও সকল প্রকার থিয়েটার খেলা এবং সামাজিক কার্যক্রম সরকারি ভাবে বন্ধ ঘোষনা করা হয়।

গুটি বসন্ত
গুটি বসন্ত বা small pox এক সময় যা ছিল সাক্ষাৎ মৃত্যু। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ইতিহাস এই মহামারিটির অনেকের ধারনা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এটি বিদ্যমান ছিল পৃথিবীতে,যার সবচেয়ে পুরোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমান পাওয়া যায় তিন হাজার বছর পূর্বর মিশরীয় মমির মধ্যে।এই রোগে আক্রান্ত ৩০% লোক মারা যেত। আর যারা বেচেঁ যেত তারা পুরো শরীরে এর দাগ বয়ে বেড়াত, অনেকে অন্ধ হয়ে যেত।
৫৭০ সালে প্রথম এরোগের বর্ণনা দেন বিশপ মেরিয়াস, তিনি এর নাম ভ্যারিওলা উল্লেখ করেছিলেন।ইংল্যান্ডের গিলবার্ট ১২০০ খ্রিস্টাব্দে গুটি বসন্তকে একটি ছোঁয়াচে রোগ হিসেবে সনাক্ত করে।সতেরো শতকের প্রথম দিকে এটি গোটা ইউরোপে বিস্তৃত ছিল দশ বিশ বছর পর পরই হানা দিত আর মানুষ মারতো।১৭৬৭ উইলিয়াম হেবারডেন গুটি বসন্ত ও জল বসন্তের মধ্যে পাথর্ক্য করেন । ১৭৯৬ সালে এডওয়ার্ড জেনার গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কার করেন।
গুটি বসন্তের সর্বশেষ রোগি ছিলেন ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের রহিমা বানু নামের তিন বছরের শিশু কন্যা। ১৯৮০ সালের ৮মে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা গুটি বসন্তকে বিলুপ্ত ঘোষনা করেন।
কলেরা
কলেরা মানুষকে প্রথম ঠিক কখন আক্রমন করেছিল তা অজানা।তবে খিষ্ট্রপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে ভারতের এবং খ্রিষ্টপূর্ব ৪থ শতাব্দী এবং ১ম খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের লেখকদের কাছ থেকে কলেরা জাতীয় অসুস্থতার বিচ্ছিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়।
বিশ্বে কলেরা মহামারি আকার ধারন করেছে সাতবার । ১৮১৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে থেকে ছড়িয়ে পরে যা ১৮২৩ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ১৮২৯ সালে কলেরা আবার মহামারী আকার ধারন করে। ১৮৩০ সালে কলেরা মস্কোতে দেখা দেয়। এবং তা ফিনল্যান্ড পোল্যান্ড হয়ে হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে পৌছে।১৮৩২ সালে সুন্দরল্যান্ড বন্দর দিয়ে তা লন্ডনে ছড়িয়ে পরে ও একই বছর আমেরিকায় কলেরায় মৃত্যু ঘটে।
১৮৫২ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে আরো চারটি কলেরার আঘাত হয়েছে। যারমধ্যে ১৮৫২-১৮৫৯ এর তৃতীয় মহামারীটি ছিল খুব ভয়ানক। ১৮১৭ থেকে ১৮৫৯ পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশে ১৫ মিলিয়ন এবং ১৮৬৫ থেকে ১৯১৭ পর্যন্ত ২৩ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে। রাশিয়াতে এর সংখ্যা ছিল ২ মিলিয়ন।
ব্রিটিশ চিকিৎসক জন স্নো প্রথম কলেরার সাথে পানি দূষনের সম্পর্ক আবিষ্কার করেন। এবং তার নিরলস চেষ্টায় লন্ডনে কলেরার পাদুরভাব অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

ইয়োলো ফিভার এপিডেমিক অব আমেরিকা
১৭৯৩ সালে মার্কিন রাজধানী ফিলাডেলফিয়ার ইয়োলো ফিভারে আক্রান্ত হয়। এটি মূলত মসার কামরের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। ১ আগস্ট থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত এটি স্থায়ী ছিল এর ফলে শহরের ১০ ভাগ মানুষের মৃত্যু ঘটে।

দ্যা থার্ড প্লেগ প্যানডেমিক
পৃথিবীর প্রধান দুটি বড় প্লেগ “প্লেগ অব জাসটিনিয়ান” এবং “ব্ল্যাক ডেথ” এর পর তৃতীয় মহামারীটি বা “দ্যা থার্ড প্যানডেমিক” শুরু হয় ১৮৫৫ সালে (কারো কারো মতে ১৮৬০ সালে)। চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী কয়েক দশকে তা ভারত, আফ্রিকা, ইকুয়েডর এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পরে।এতে ১৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে। ১৮৯৪ সালে হংকং এর চিকিৎসক “আলেকজান্দ্রে ইয়ারসিন” সনাক্ত করেন যে ব্যাসিলাস ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস এই রোগের প্রধান কারন। এরও কিছু বছর পর আরেকজন চিকিৎসক চূরান্ত ভাবে নিশ্চিত করেন যে, ইদুঁরের কামরই এই রোগ ছরানোর প্রধান কারন।

ফ্লু
ধারাবাহিক ভাবে ফ্লু এর ইতিহাস বলা আসলেই কঠিন। তবে মহামারীবিদরা একমত হন যে ১৫৮০ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জার পাদুর্ভাব ঘটে। ১৫৮০ সালে এশিয়া থেকে শুরু হয়ে তা ইউরোপ এবং আফ্রিকায় ছড়িয়ে পরে। এর সঠিক মৃত্যু সংখ্যা জানা যায়নি তবে এতে শুধু রোমে ৮০০০ মানুষ মারা যায়। এরও ১৫০ বছর পর ১৭২৯ সালে রাশিয়া থেকে তিন বছরে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে। এসময় কিং লুই চতুর্দশ এই রোগে সংক্রমিত হয়।
৪০ বছর পর ১৭৮১ সালে, আরেকটি মহামারী আঘাত আনে। এটি চীন থেকে উদ্ভব হয়েছে। এবং পরবর্তী এক বছরের মধ্যে রাশিয়া ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাকে আক্রান্ত করেছে। ১৮৩০-১৮৩৩ সালে মহামারীটি পুঃনরায় চীন থেকে আঘাত আনে যা জাহাজের মাধ্যমে ফিলিপাইন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া এবং ইউরোপে পুনরাবৃত্তি করে। শেষ হওয়ার আগে এই মহামারীটি পৃথিবীর ২০%-২৫% মানুষকে আক্রান্ত করেছিল। নিম্মে কিছু ভয়ানক ফ্লু সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

রাশিয়ান ফ্লু

ঊনবিংশ শতাব্দির সর্বশেষ মহামারি”রাশিয়ান ফ্লু” যার স্থায়িত্ব ছিল এক বছর । সাইবেরিয়া ও কাজাখস্তানে এর সূত্রপাত। পরে মস্কো হয়ে ফিনল্যান্ড ও পোল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ইউরোপে ও দেখা দেয় এই মহামারী। ১৮৯০ সালের শেষ নাগাদ এইরোগে মৃত্যুর সংখ্যা ৩,৬০,০০০ জন।

দ্য ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যানডেমিক / দ্য গ্রেট ফ্লু প্যানডেমিক /স্প্যনিশ ফ্লু
১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারীকে বলা হয় ”সকল মহামারীর জননী”। কারন এই মহামারীতে সবচেয়ে বেশী মানুষ মারা গিয়েছিল। এর নাম করন করা হয়েছিল স্প্যনিশ ফ্লু । ১৯১৮ প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সমাপ্তি হলে বিশ্ববাসী পরিত্রানের নিঃশ্বাস ফেলে তখনো তাদের সামনে আরেক মৃত্য মিছিল অপেক্ষায় ছিল তা তারা জানতো না। এই মৃত্যুর নাম দ্য ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যানডেমিক। এতে ১৮মাসে ৫০০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল এবং মৃত্যুবরন করেন ৫০মিলিয়ন মানুষ। স্প্যনিশ ফ্লু এর উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি , তবে এর উৎপত্তিস্থল নিয়ে অনেকে অনেক তথ্য দিয়ে থাকেন।

শেষ পর্যন্ত আক্রন্তদের মৃত্যু এবং যারা সুস্থ ছিলেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এইরোগের সমাপ্তি ঘটে। এছাড়াও প্যানডেমিকের সময় প্রত্যেক রাষ্ট্রে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সকল প্রকার জনসমাগম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিংশ শতাব্দিতে আরো দুটি ফ্লু মহামারী আকার ধারন করে, ১৯৫৭ সালে এশিয়ান ফ্লু যাতে ১.১ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় এবং ১৯৬৮ সালে হংকং ফ্লুতে ১ মিলিয়ন মানুষ পৃথিবী ব্যাপী মানুষ মারা যায়।
দ্য প্লেগ এপিডেমিক অব ফার্স্ট ডিকেড
১৯১০ সালে পৃথিবী আরেকটি প্লেগ দেখে পৃথিবী । চীনের মাঞ্চুরিয়া নামক স্থান থেকে এর উৎপত্তি ঘটে। দুবছর ব্যাপি এই মহামারীতে ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। মহামারীটি চীনের মাঞ্চুরিয়া অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল।
পোলিও
হাজার হাজার বছর পূর্বে কয়েকটি নির্ধারিত এলাকায় পোলিও বিরাজমান ছিল তা কিছু প্রাচীন চিত্রকর্মের মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৮৪০ সালে জার্মান অর্থোপেডিক জ্যাকব হেইন সর্ব প্রথম পোলিওমাইলিটিজ বা পোলিও আবিষ্কার করেন। ঊনবিংশ শতাব্দির শেষার্ধেব ইউরোপ ও পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোলিও মহামারী আকারে ছড়িয়ে পরে। বিংশ শতকে এসে এইরোগটি শিশুদের ভয়ানক রোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯১০ সালের মধ্যে বিশ্বে নাটকীয় হারে পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং নিয়মিত মহামরী সংঘটিত হতে থাকে। ১৯৫০ সালে পোলিওর টিকা আবিষ্কার হলে আক্রান্তের সংখ্যা হাজারে একজন এসে দাড়াঁয়।

এইডস
আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক মহামারীর নাম এইডস। এইচআইভি নামক ভাইরাস থেকে এইডস রোগ হয়ে থাকে যার সংক্রমনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস ,লোপ বা ধ্বংশ হয়ে যায়। ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম এইডস রোগ শনাক্ত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লসএঞ্জেলস-এ । এশিয়ার মধ্যে এইডস সর্বপ্রথম লক্ষ্য করাযায় থাইল্যান্ডে ১৯৮৪ সালে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ১৯৮৬ সালের মধ্যে এর পাদুর্ভাব ঘটে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম এইডস সনাক্ত করা হয় ১৯৮৯ সালে।
অতিমাত্রায় বিস্তার লাভ বিশেষ করে আফ্রিকা অঞ্চলে এর ভয়াবহতার কারনে এইডস বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক আলোচিত স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিনত হয়েছে। এই পর্যন্ত এইডস আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭৫ মিলিয়ন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৩২ মিলিয়ন।

এছাড়াও ২০০৩ সালে সার্সে ৮০০০ লোক আক্রান্ত হয়েছে যার মাঝে ৭৭৪ জন মারা গিয়েছে।
২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে মহামারী আকারে ছরিয়ে পড়ে ১৮৫০০ মারা যায়।
মধ্য আমেরিকার দেশ হাইতিতে ২০১০ সালে কলেরা মহামারী আকার ধারন করে এতে ১০০০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে।
২০১২ সালে ভাইরাস জনিত রোগ হামে মারা যায় ১ লক্ষ্য ২২ হাজার মানুষ।
২০১২ সালে বিশ্বে ব্যাকটেরিয়া সংক্রাক রোগ টিউবারকিউলোসিসে(যা যক্ষা রোগের জন্য দায়ী) রোগে মারা যায় ১.৩ মিলিয়ন মানুষ।
২০১২ সালে MERS (Middle East Respiratory Syndrom) এর প্রাদুর্ভাবে ৮৫৮ জন মারা যায়।
২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা জ্বরে মারা যায় অন্তত ১১৩০০জন।

মহামারী পরবর্তী বিশ্বের ভূমিকা

পৃথিবীতে মহামারীর আক্রমন ঠিক কখন থেকে শুরু হয়েছে তার প্রকৃত ইতিহাস করোই জানা নেই। পূর্বে মহামারীর কারন হিসেবে বিভিন্ন দেব-দেবীর কর্মকান্ড ও মানুষের পাপের শাস্তি মনে করা হতো কিন্তু আজ থেকে মাত্র সাড়ে তিনশত বছর আগে অ্যান্থনি ফন লিউয়েক যখন আতস কাচেঁর নিচে প্রথম আণুবীক্ষণিক প্রাণের দুনিয়া মানুষের সামনে উন্মোচিত করেন তখন থেকে মানুষ পূর্বের মহামারী সম্পর্কে প্রকৃত ধারনা পাওয়া শুরু করে।
ইতিহাসের শুরু থেকেই এই অণুজীবের শিকার হয়ে কোটি কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, অথচ এই প্রাণহাণির কারন বুঝতে মানুষের সময় লেগেছে লক্ষ লক্ষ বছর। ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কারের ও অনেক পরে উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মানুষ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পারে। এর আগে মানুষ মহামারীর কারন হিসেবে তাদের অনুমান ও কল্পনা নির্ভর ছিল।
এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীবসৃষ্ট মহামারীর কারনে নানা সভ্যতা ধ্বংশ হয়ে গেছে, পৃথিবীর ইতিহাস বদলে গেছে, পাল্টে গেছে সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও মানুষিক অবস্থা। এক একটি মহামারীতে ব্যাপক হারে মানুষের মৃত্যু ঘটেছে তারপর যারা বেচেঁ ছিল তারা আবার নতুন করে শুরু করেছে নতুন কোন মতবাদ বা ধারনা নিয়ে।
নিম্মে পূর্বের কিছু মহামারী ও তার পরবর্তী পৃথিবী সম্পর্কে তুলে ধরা হলো:
প্রায় পাচঁ হাজার বছর আগে, চীনের একটি প্রাগৈতিহাসিক গ্রামকে মহামারী নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটটি এখন “হামিন মঙ্গা” নামে চিহ্নিত এবং এটি উত্তর পূর্ব চীনের অন্যতম সেরা প্রাগৈতিহাসিক স্থান। প্রত্নতাত্ত্বিক এবং নৃতাত্ত্বিকগন মনে করেন যে মহামারীটি এত তারাতারি ঘটেছিল যে মৃতদেহ সৎকার করার জন্য কোন সময় ছিল না তাই ১০০জন আক্রান্তের দেহ বাড়ির ভিতর জড়ো করে পুরিয়ে ফেলা হয়েছিল, এবং তারপর সেখানে আর কেউ বাস করেনি। হামিন মঙ্গার আগে উত্তর-পূর্ব চীনের মিয়াওজিগৌ নামক স্থানে পাওয়া গিয়াছে প্রায় একই সময়কালের প্রাগৈতিহাসিক একটি গনকবর। একসঙ্গে এই আবিষ্কার গুলো প্রমান করে যে একটি মহামারী পুরো অঞ্চলকে ধ্বংশ করে দিয়েছে।
৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়া পর একটি মহামারী এথেন্সের মানুষকে বিধ্বস্ত করেছিল । মহামারীটি সত্ত্বেও যুদ্ধ খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৪০৪ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, অবশেষে এথেন্স স্পার্টারের কাছে আত্মসমর্পন করেন। এই মহামারীর ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্খলন ঘটে। মানুষের কাজকর্মে আইনের শাসন ভেঙ্গে পড়েছিল, ধর্ম হারিয়েছিল জনগনের আস্থা। নাগরিকদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের বিশাল পরিবর্তন ঘটেছিল কারন ধনীদের মৃত্যুর ফলে তাদের সম্পদ দখল করে নিয়ে ছিল তাদের গরিব আত্মীয় কিংবা প্রতিবেশিরা। ঐতিহাসিকদের মতে এই মহামারীর ফলে সামাজিক সাম্য কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
যে রোমান সাম্রাজ্যের সূর্য কখনো অস্তমিত হত না সেখানেও দেখা গেল মহামারীর কালো থাবা। ১৬৫ খ্রিস্টাব্দে রোমান সৈন্যরা যখন যুদ্ধ শেষে ফিরে আসে তখন লুন্ঠিত মালের সাথে করে নিয়ে আসে অ্যান্টোনাইন প্লেগ। এই প্লেগ রোমান সাম্রাজ্যের ৫০ লক্ষের ও বেশি মানুষকে হত্যা করেছিল। এই মহামারীটি পুরো রোমান সাম্রাজ্য জুরে মারাত্মক রাজনৈতি সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলেছিল। এর ফলে রোমানদের সামরিক শক্তি কমে যায়, কৃষি ও নগর অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে। রাজ্যের অর্থ ভান্ডার শূণ্য হয়ে পরে। এবং রোমানদের শৈল্পিক প্রকাশের উপর গভির ক্ষত তৈরি করে। এই মহামারী আধ্যাত্বিকতা এবং ধর্মীয় ভাবনাকে নব জীবন দান করেছিল, যারফলে মিথুত্রবাদ এবং একেশ্বরবাদী ধর্মগুলির প্রসারের ক্ষেত্র তৈরি করেছিল।এসময় স্বাস্থ্য , খাদ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের ফলে পার্শ্ববর্তী বর্বর উপজাতির সাম্রাজ্যে অনুপ্রবেশ ঘটে এবং সেনাবাহীনিতে তাদের নিয়োগের পথ সুগম হয়: এই ঘটনাগুলো বিশেষত ঐ জনগোষ্ঠির সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও রাজনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধির কাজ করে। ১৫ বছর ব্যাপী অ্যান্টোনাইন প্লেগ সম্ভবত রোম সাম্রাজ্যের পতনের ক্ষেত্র তৈরি করেছিল।

সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ানের সময়ে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য সর্বাধিক সীমায় পৌঁছেছিল। তখনই আঘাত হানে প্লেগ। পুরো সাম্রাজ্য জুরে তান্ডব চালাই এই প্লেগ। সম্রাট জাস্টিনিয়ানের নামানুসারে এর নাম দেওয়া হয় জাস্টিনিয়ান প্লেগ। সম্রাট জাস্টিনিয়ান এই সময় রোমান সাম্রাজ্যকে বাইজেন্টাইনের সাথে একীভূত করার পরিকল্পনা করছিল কিন্তু মহামারীতে সব ভেস্তে যায়। এই মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় পাঁচ কোটি মানুষ যা তখনকার মোট জনসংখ্যার ২৬ ভাগ। শুরু হয় অর্থনৈতিক সংকট। এই মৃত্যুর মিছিলে সামরিক শক্তি হ্রাস পায়, কৃষকের মৃত্যুতে ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় কারনে পবরর্তীতে দূর্বিক্ষ দেখা দেয়, ধ্বংস হয় সাম্রাজ্যের অবকাঠামো। ধীরে ধীরে সাম্রাজ্য ভূ-খন্ড হারাতে থাকে। এই সময়ে ইসলাম ধর্মের প্রভাব বাড়ে ও আধুনিক ইউরোপের জন্ম হয়।
মানব ইতিহাসের অন্যতম ধ্বংসাত্মক মহামারী হিসেবে পরিচিত “ব্ল্যাক ডেথ” । ১৩৪৪ সালে শুরু হওয়া এইরোগ পৃথিবীর জনসংখ্যা ১০ কোটি কমিয়ে দিয়েছিল । মরোক্কর ইতিহাসবিদ ইবনে খলদুন লিখেন – “ ধ্বংসাত্মক প্লেগ রোগের দ্বারা পূর্ব ও পশ্চিমের সভ্যতা আক্রান্ত হয়েছিল। এটি সভ্যতা ও জনসংখ্যা নিশ্চিহ্ন হওয়ার কারন হয়ে উঠেছিল। মানবসভ্যতার পতনের সঙ্গে মনুষ্যত্বের পতন ঘটেছিল। শহর, ঘরবাড়ি , রাস্তাঘাট বরবাদ হয়ে গিয়েছিল। বাড়িঘর জনশূন্য হয়ে যায়, বিভিন্ন গোষ্ঠি দূর্বল হয়ে পরে। সামগ্রিকভাবে মানব অধ্যুষিত অঞ্চলের জীবনধারা একেবারে বদলে গিয়েছিল।” একসময় পুরো ইউরোপ এই মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে পরে। এই মহামারীতে জনমিতিগত ও অর্থনৈতিক ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে ধসে পরেছিল ব্রিটিশ সামান্ততান্ত্রিক ব্যাবস্থা। এটি ইউরোপের ইতিহাসই বদলে দিয়েছিল। মহামারীর ফল সরূপ বিশ্বজুরে সল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি উভয় প্রভাব পরেছিল। এক সমিক্ষায় দেখাগিয়েছে ; পঞ্চদশ শতাব্দীটি নতুন সুযোগ এবং সমৃদ্ধির স্বর্ণযুগ ছিল, কারন জমি ছিল প্রচুর পরিমানে, মজুরি ছিল বেশি যার ফলে কৃষকেরা তাদের অবস্থার অনেক উন্নতি করতে পেরেছিল। সেসময় দাস প্রথা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। সস্তা শ্রমের অভাব প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনেও ভূমিকা রাখে। যারফলে শিল্পবিপ্লবের ক্ষেত্র তৈরি হয়। অপরদিকে সাংঘাতিকভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষ বেড়ে গিয়েছিল- ফ্রান্সের স্ট্রবার্গে একদিনে একসংগে প্রায় ১লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল।
একসময় মৃত্যুর দূত হয়ে আসে কলেরা। বাংলা থেকে শুরু হয়ে স্পেন, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি,জার্মানি হয়ে আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে মহামারী আকারে। ব্রিটিশ উপনিবেশ গুলোতেও মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে কলেরা। এতে প্রায় ২২-২৩ লক্ষ লোক মারা যায়। মূলত অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশ, খোলা নর্দমা এবং উন্মোক্ত শৌচ ব্যবস্থা কলেরা মহামারীর প্রধান কারন। কলেরা পরবর্তীতে পৃথিবীকে বিশুদ্ধ পানি পান এবং নিরাপদ শৌচ ব্যবস্থার প্রেরণা যোগায় এই মহামারী।
ফ্লু জনিত বৈশ্বিক প্রথম মহামারী ছিল রাশিয়ান ফ্লু । রাশিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশেষত নগরায়ন সম্পর্কে ভিক্টোরিয়ান সাংস্কৃতিক আশষ্কা উজ্জীবিত ও শক্তিশালী করেছে। মহামারী পরবর্তী দ্রুত সামাজিক পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা – মহামন্দা সূচিত করেছে। মহামারী এমন একটি সময়ে প্রকোপাকার ধারন করল যখন পুরুষদের গুরুত্ব তাদের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি সম্পর্কিত কাজকর্ম দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হতো। তখন নগরের বিশৃঙ্খল পেশাগুলোর সঙ্গে জড়িত অবসন্নতা ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ হয়ে উঠলো- এমন একটি লক্ষণ যা নিউরোসথেনিয়া, হতাসা তৈরি করেছিল জনমনে। যা মহামারী পরবর্তী সময়ে সভ্যতার অধুনিকীকরনের সাথে যুক্ত হয়ে সমাজের সাংস্কৃতিক ও মানুষিক উদ্বেগগুলো অংশ হয়ে উঠে।
১৯১৮ সালে মানুষ দেখেছে পৃথিবীর ভয়াবহ ও প্রাণঘাতি মহামারী স্প্যানিস ফ্লু । প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর পর পৃথিবীর প্রতিটা দেশ এই জ্বরের কবলে পরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যে পরিমান মানুষ মারা গিয়েছিল তারচেয়ে বেশি মানুষ মারা গিয়েছে এই ফ্লুতে। এই মহামারীর কারনে পৃথিবীর অনেক দেশ তাদের রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল। অনেক দেশ তাদের দেশে বিদেশিদের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল। অনেক এলাকায় ধর্মীয় উপাসনালয় সারা বছরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মহামারীর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের গড় আয়ু ১২ বছর কমে গিয়েছিল।
পরিশেষে বলা যায় যে, মহামারীর ইতিহাস মানব সভ্যতার মতোই পুরনো। এক একটি মহামারী আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে কিভাবে দৃর মনোবল নিয়ে আরো উন্নত ভাবে বাচঁতে হয়। বর্তমান সভ্যতার এই চরম বিকাশের জন্য মহামারীও কোন অংশে কম অবদান রাখেনি। মহামারী ব্যতিত পৃথিবী হলে হয়তবা আরও সুন্দর পৃথিবী আমরা পেতাম, তবে এসকল কিছুর জন্য আমরা মানুষরা একা দায়ী।
কারন যখনি কোন সভ্যতা কিংবা জনগোষ্ঠী উন্নতির চরম শিখরে পৌছতে গিয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতিকে অবজ্ঞা করে এবং তার উপর নানা চাপ প্রয়োগ করে তখনি মহামারী সকল কিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। মানূষ এই মহাপ্রকৃতির কাছে কিছুইনা তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃতি তার নিজের মত আপন নিয়মে চলে মানুষকেও তাই এই প্রকৃতিকে মানিয়ে সকল প্রাণীর সাথে একইসাথে বসবাস করার মাধ্যমেই সুষ্ঠ পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে।
রেফারেন্স:
1. Click This Link
2. Click This Link
3. Click This Link
4. Click This Link
5. Click This Link

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ৮:৫০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এখন করোনাত্তোর পৃথিবীর রুপ দেখার অপেক্ষায বিশ্ব!
কি যে হবে কিছুই নিশ্চিত নয়, কেবলই ধারনা আর পরিসংখ্যান নিয়ে ভাবনা।
বাস্তবতা বোঝা যাবে সময়ান্তরে।

১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৪২

আমি রানা বলেছেন: ঠিক বলেছেন। কথন কি হয় তা অতীতেও বোঝা যায়নি এখনও যাচ্ছেনা।

২| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ৮:৫৬

জুন বলেছেন: ইয়েলো ফিভারও কিন্ত কম ভয়ংকর ছিল না? এই হলদে জ্বরেও আমেরিকায় অনেক মানুষ বিশেষ করে আফ্রিকা থেকে বন্দী করে আনা ক্রীতদাসেরা মারা গিয়েছিল। অবশ্য এই জ্বর যতদুর ধারণা এখনো পুরোপুরি দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত হয়নি।
মহামারী নিয়ে আপনার তথ্য সমৃদ্ধ বিস্তারিত লেখাটি ভালোলাগলো।

১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৪৫

আমি রানা বলেছেন: দুঃখিত ইয়েলো ফিভার বাদ পরার জন্য। এড করে দিচ্ছি। ধন্যবাদ

৩| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ৮:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট ভালো লাগলো কারন করোনা নিয়ে চিন্তার কিছু নাই। মহামহারী তো যুগ যুগ ধরেই আছে। দুনিয়াতে এসেছি, দুঃখকষ্ট তো ভোগ করতেই হবে।

১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৪৯

আমি রানা বলেছেন: ঠিক বলেছেন । যুগে যুগে মহামারী আসেছে, মানুষ মেরেছে...... আমাদের কাছে মৃত্যুটা শুধুই একটা সংখ্যা হিসেবে রয়ে গেছে। করোনার পরেও তাই হবে। সুতরাং চিন্তা করে কিছুই হবেনা।

৪| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ৯:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



করোনা কি নিজে থামবে, নাকি ইহাকে থামাতে হবে?

১৭ ই মে, ২০২০ রাত ৩:৩৪

আমি রানা বলেছেন: ইতিহাসের বাকী মহামারী গুলো নিজে নিজেই থেমেছে(২-১ টা ছাড়া)।
বর্তমানে আমরা নিজেদের অনেক আধুনিক বলে থাকি। অনেক খবরে শুনি করোনার ঔষধ খুব তারাতারি পেয়ে যাবো।

৫| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১০:০১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বান্দার সীমাহীন পাপের শাস্তি আল্লাহর গজব (২য় পর্ব)

১৭ ই মে, ২০২০ রাত ৩:৩৬

আমি রানা বলেছেন: আপনার দেওয়া লিংকে কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।

৬| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৪৪

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: প্রতিটি মহামারীর পর বিশ্ব নতুন কিছু চাক্ষুস করে, করোনায় ও হয়তো করবে।

৭| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৪৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আল্লাহ সবাইকে সহী সালামত রাখো । হেদায়েত করো । সবই তোমার সৃষ্টি আল্লাহ ।

১৭ ই মে, ২০২০ রাত ৩:৩৭

আমি রানা বলেছেন: একমত। কিন্তু মাঝে মাঝে আমরা প্রকৃতিকে অবঞ্জা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.