নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তব এবং সাধারন মানুষ আমার লিখার জীবন। এখানে রানা নামের একজন অতি সাধারন ব্যক্তির দৈনিক জীবন এবং তার দৃষ্টিতে সমাজের বর্তমান অবস্থা এবং এর প্রভাব তার নিজের ভাষায় প্রকাশ করা হবে।

আমি রানা

আমি বিশেষ কেউ বা কিছু না। যা মনে আসে যেভাবে মনে আসে তাই লিখি।

আমি রানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৮৬/বি শিরিয়া মন্জিল, ছোটবেলার ডায়রি।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:১২


৬ ( জোনাকীর মা আর জোনাকী )


পানির টেংকের পাশটা খালি পড়ে রয়েছে বলে জমিদার খালাম্মা সেখানে একটা ছোট ঘর তুলে দেন। সেখানে দু-তিনজন ভাড়াটিয়া আসা যাওয়ার পর শেষে আসেন জোনাকীর মা। তখন তার বয়স হবে পঞ্চাশ কিংবা তার চেয়ে কিছুটা বেশি। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রঙ, মুখে সবসময় একটা হাসি। তবে তখন সেটাকে স্বভাব হাসি মনে করলেও পরে বুঝতে পারলাম তা স্বভাব হাসি নয় বরং মন ভোলানো হাসি। জোনাকীর মায়ের সাথে থাকেন তার দশ-বারো বছরের মেয়ে জোনাকী, বয়স কম হলেও মায়ের মতই উজ্জল ফর্সা ও লম্বা সে।
জোনাকী তার মায়ের দ্বিতীয় সংসারের একমাত্র মেয়ে, তার প্রথম সংসারে বেশ কয়েকজন ছেলে মেয়ে রয়েছে, জোনাকীর সমান নাতী-নাতনীও রয়েছে। তারা সকলেই মোটামুটি সচ্ছল জীবন-যাপন করে , কিন্তু তাদের মাকে সহযোগিতা করেনা। সহযোগিতা না করার ও বিশেষ এক কারন রয়েছে।
জোনাকীর মায়ের প্রথম স্বামীর মৃত্যুর দু-বছরের মাথায় তিনি ভালোবেসে জোনাকীর বাবাকে বিয়ে করেন। কিন্তু এই বৃদ্ধ বয়সে, বিধবা হয়ে এতগুলো সন্তান ও নাতী-নাতনী রেখে প্রেম? আবার বিয়ে? তার সন্তানদের সাথে সাথে এ সমাজও তার এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। তাই পূর্বের সাজানো বাগান ছেড়ে নতুন করে ঘর বেধেঁছে জোনাকীর বাবার সাথে। কিন্তু অভাগার কপাল জোনাকীর যখন পাচঁ বছর হঠাৎই সংসার ত্যাগী হয় জোনাকীর বাবা। তারপর থেকে এই পর্যন্ত আর ফিরে আসেনি। এবং জোনাকীর মাকেও তার পুরোন সমাজে ফিরে যাবার পথ রাখেনি।
জোনাকীর মায়ের কথা চিন্তা করলেই চোখে ভেষে উঠে ঋণে জড়াজির্ণ এক মহিলার ছবি।জোনাকীর বাবা যাওয়ার পর থেকে নিজের আর জোনাকীর খরচ তাকেই বহন করতে হয়। কোন কর্ম বা অর্থের উৎস নেই, কিন্তু বেচেঁত থাকতে হবে। সারা মাস যেমন তেমন, মুখ লজ্জা বাদ দিয়ে যার তার ঘরে খেয়ে ফেলা যায় কিন্তু যেদিন কিস্তির তারিখ পড়ে, আমি দেখেছে জোনাকীর মাকে যদি বলা হয়, আম গাছের কাছে চাইলে আম গাছ পাতার বদলে টাকা দেয়। তিনি আম গাছের কাছে গিয়েও হাত পাতেন। আমার মনে পড়ে, আমার মায়ের কাছে প্রথম প্রথম টাকা ধার চাইলে মা দুই বার টাকা দিয়েছে, কিন্তু মা যখন বুঝতে পেরেছে এ ধারের টাকা তিনি জীবনেও শোধ করতে পারবে না। আর উনার কিস্তির টাকা দেওয়াও শেষ হবেনা। মা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপর থেকে জোনাকীর মা আমার কাছেও হাত পেতেছে। একবার আমি একটি ছেড়া একশ টাকা দিয়েছিলাম তিনি তা জোড়া লাগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপরও কদিন পর পর কিস্তিওয়ালারা তার ঘরে এসে বসে থাকতো কিন্তু তখন তিনি দু-তিন দিনের জন্য উধাও হয়ে যেতেন। তখন জোনাকী আমাদের ঘরেই থাকতো।
জোনাকীর মা সারাদিন বাহিরে বাহিরে ঘুরত আর নানা কাজ করতো। যেমন একদিন পত্রিকায় দেখলাম জোনাকীর মায়ের ছবি। ছবির উপরে লিখা সাহায্য চাই… ভিতরে লিখা একজন ক্যান্সার আক্রন্ত রোগীর জন্য সাহায্য চাই । পরে জোনাকীর মাকে জিঞ্জাসা করলে সে অস্বীকার করে, কেউ শত্রুতা করে এমনটা করেছে সে বলে।
তারপর একদিন এসে মাকে ইন্সুরেন্স করার জন্য নানা ভাবে প্রলুব্ধ করতে থাকেন। মা এসবের কারন জিঙ্গসা করলে পরে বলেন তিনি ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে চাকরী নিয়েছেন। পরে ছেড়েও দিয়েছেন। আমার মনে হয়না। একজনকেও তিনি ইন্সুরেন্স করাতে পেরেছিলেন।
বিভিন্ন নির্বাচনের দিন আসলে জোনাকীর মা অনেক ব্যস্ত থাকতো। কারন তিনি সেদিন দশ- বারটি জাল ভোট দিতেন। প্রতি ভোট হিসেবে তিনি টাকা পেতেন। এভাবে নানা সময় নানা কাজ করে জোনাকীর মা অর্থ উপার্জন করতেন।
এবার আসা যাক জোনাকীর কথায়, জোনাকী ছিল কিছুটা পাগলাটে কিন্তু সরল। খাবারের লোভ দেখিয়ে তাকে দিয়ে অনেক কিছুই করানো যেত। সে আমাদের ঘরে আমার মায়ের সাথে থাকতো । আমাদের ঘরেই খেত ঘুমাতো। মাঝে মাঝে সেও উধাও হয়ে যেত এক-দুই বেলার জন্য। কোথায় যেত কি করতো কিছুই জানতামনা। ফিরে এলে আমার মা জিঙ্গসা করলে বলতো তার সৎ বোনের বাসায় গিয়েছে। একদিন দেখি আমাদের বাসার সামনের দোকানদার ছেলেটা রাজিব, বয়স পনের-ষোল হবে। দুপুরে চুপিচুপি এসে জোনাকীর ঘরে ঢুকে পড়লো, আমিও গিয়ে টিনের ফুঁটোয় চোখ রাখলাম। পাচঁ-সাত মিনিট পর সে জোনাকীর হাতে একটা দশ টাকার নোট দিয়ে বের হয়ে গেল।
বেশ কয়েক মাস পর জোনকীর মাকে বের করে দেওয়া হলো, কারন সে ভাড়া দিতে পারতো না। এমনিতে সে বের হয়নি, প্রথমে অনেক বার বলা হয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি, তারপর খারাপ ব্যবহার করা হলো কিন্তু জোনাকীর মা তার মুখের হাসি ধরে রেখে সব হজম করে নিয়েছে, তারপর ঘরের বিদুৎ লাইন কেটে দেওয়া হয়ে ছিল কিন্তু কাজ হচ্ছিল না তারপরের মাসে ঘরের দড়জা খুলে ফেলা হয়েছিল অতপর জোনাকীর মা শিরিয়া মঞ্জিল ছেড়েছে।
তারপর জোনাকীর মা কোথায় উঠেছে কিংবা কেমন করে বেচেঁ ছিল তার কোন খবর রাখিনি। কিন্তু এর বছরখানেক বাদে শুনতে পেলাম জোনাকীর বিয়ে হয়েছে, ত্রিশউর্ধ্ধ এক পূর্বে বিবাহিত লোকের সাথে। তখন কদিন জোনাকীকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিল। কারন এতো ছোট বয়সে বিয়ে । জোনাকী কি সংসার করতে পারছে? আর যাকে বিয়ে করেছে ওটাত একটা পশু, সে কি জোনাকীর কিছু অবশিষ্ট রাখে? জোনাকী কি এখনো পাগলামি করে? জোনাকী কি ভালো আছে ? নাকি তার মায়ের মতো হয়ে গিয়েছে ?


পর্ব ৫ Click This Link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৪৬

মা.হাসান বলেছেন: খুব সহজ ভাবে সমাজের একটা বিশেষ ক্লাসের গল্প বলে যাচ্ছেন। বর্ননা শৈলি আমার ভালো লাগছে। জোনাকি বা জোনাকির মার নাম বদলে আর যে কোনো নাম রাখতে পারেন, গল্পটা কিন্তু সব সময়েই কাছাকাছিই হয়।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:৩৯

আমি রানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আমি চেষ্টা করে যাবো।

২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০০

রাজীব নুর বলেছেন: সমস্যা হলো আপনার পোষ্ট পড়তে গিয়ে আমি আমার নিজের অতীতে ফিরে যাই।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:৩৭

আমি রানা বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই, কিছু অতীত আমাদের ও জানান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.