নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তব এবং সাধারন মানুষ আমার লিখার জীবন। এখানে রানা নামের একজন অতি সাধারন ব্যক্তির দৈনিক জীবন এবং তার দৃষ্টিতে সমাজের বর্তমান অবস্থা এবং এর প্রভাব তার নিজের ভাষায় প্রকাশ করা হবে।

আমি রানা

আমি বিশেষ কেউ বা কিছু না। যা মনে আসে যেভাবে মনে আসে তাই লিখি।

আমি রানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৮৬/বি শিরিয়া মন্জিল, ছোটবেলার ডায়রি।

০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১২:৩২

ফারুখ মিয়া - একটি নির্যাতনের গল্প (৮)


ছবি: ইন্টারনেট


শিরিয়া মঞ্জিলের আরেকজন সদস্য ছিল ফারুখ মিয়া। শিরিয়া মঞ্জিলের তার আগমন ঘটেছিল বুড়ির সাথে। বুড়া যখন লাকসাম থেকে বুড়িকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছিল সাথে করে ছিপ ছিপে কালো শরীরের ৫-৬ বছরের ফারুখকেও নিয়ে এসেছিল। বুড়ি না হয় নতুন জীবনের আশায় কিংবা শহরের উন্নত জীবনের জন্য বুড়ার সাথে চলে এসেছিল। কিন্তু ফারুখ কেন এসেছিল? তার মনের কি আশা বা চোখে কি স্বপ্ন ছিল তার একমাত্র স্বাক্ষী সেই ছিল। আর এ ইট পাথরের শহর তাকে কি দিয়েছে একমাত্র সেই জানে।
খুবই শান্ত স্বভাবের ছেলে ফারুখ কথাও বলে খুবই কম, যা বলে শুধু তার মায়ের সাথে নোয়খালীর আঞ্চলিক ভাষায় বলে। শিরিয়া মঞ্জিলে আমরা বাচ্চাদের আগ্রহ বুড়ির প্রতি ছিলনা , ছিল ফারুখের প্রতি। সে কি আমাদের বন্ধু হবে নাকি শত্রু । বন্ধু হবে না শত্রু তা নিয়ে মিটিং বসলো। গভীর আলাপ আলোচনা হলো, আলাপ আলোচনা শেষ করে আমরা কেউই কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পাড়লাম না। আসলে তার সাথে কথা না বলে আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। সুতরাং আমাদেরকে তার সাথে কথা বলতে হবে। নানা ভাবে আমরা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু পাড়ছি না। সে যেন তার মায়ের আচল থেকে বেরই হচ্ছে না। তার মা যেখানে যায় ফারুখও সেখানে যায়। এমনকি তার মা টয়লেটে গেলে সে টয়লেটের দড়জার সামনে গিয়ে দাড়িঁয়ে থাকে আর মায়ের সাথে কথা বলে। এমন করলে আমরা তার সাথে কথা বলবো কিভাবে ?! একদিন বিকেলে সুযোগ পেয়ে গেলাম, ফারুখের মা ঘুমিয়ে আছে। আমরা দুজন দেখলাম ফারুখ উঠোনে বসে পাতা দিয়ে নানা কিছু বানিয়ে খেলছে আর মাটিতে ছবি আকছে , দুজন দ্রুত ঝটিকা মিটিং করে ফারুখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি মনের ভিতর যুক্তি তর্ক চলছে সে ভালো নাকি খারাপ। অবশেষে ফারুখের সামনে গিয়ে দাড়াঁলাম। সে চোখ তুলে আমাদের দিকে তাকিয়েছে, চিটচিটে কালো মুখে যেন ভীত চোখ জোড়া জ্বল জ্বল করছিল। আমরা তার পাতার খেলনা আর মাটিতে আঁকা ছবিগুলো দেখছিলাম। ফারুখ সেখান থেকে চলে যেতে নেয় তখন আমি বলি “ তোমার নাম কি? ” ফারুখ উত্তর দেয় “ হারুক ” আর ধীর পায়ে সে তার মায়ের কাছে চলে যায়।
দিন দিন ফারুখের সাথে ভাব হয়ে যায়, কিন্তু ছয় মাস তার সাথে সব কথা হতো ইসারায় কারন না বুঝত সে আমাদের কথা না বুঝতাম আমরা তার কথা। ফারুখের কথা আমরা না বুঝলেও সে অনরগল কথা বলে যেত। এত এত খেলার নাম যে সে জানত আরও কত কিছুযে সে বানাতে পারতো, মাঝে মাঝে তা আমার চিন্তার বাহির দিয়ে যেত। দেখতে দেখতে সে হয়ে যায় আমাদের কাছের একজন।
হুট করেই কদিন দেখছি ফারুখ আমাদের চেয়ে আলাদা চলছে। মন মরা হয়ে থাকে। আগের মত তার খেলায় মন নেই। নতুন নতুন খেলা আর আবিষ্কার করে না সে। না তৈরী করে নতুন কোন খেলনা। প্রতিদিন দুপুরে সে চলে যায় দোকানদার সুমনের দোকানে। দু-চারদিন দেখার পর আমরা সবাই ভেবে নিলাম হয়তবা দোকানের কাজে সে ঢুকে গিয়েছে। গরিবের ছেলে অভাবের পেট কাজ না করলে খাবে কি ? একদিন দুপুরে আব্বার পকেট থেকে দু টাকা চুরি করে গেলাম সুমনের দোকানে, গিয়ে দেখি সুমন নেই। দাড়াঁলাম, একটু পর সুমন গোডাউন থেকে বের হলো, আমি টাকা এগিয়ে দিয়ে বললাম ” দুইটা চকলেট”। গোডাউন থেকে ফারুখ বের হয়ে আসলো। ফারুখের হাটতে একটু কষ্ট হচ্ছিল। দোকানদার সুমন তিনটা চকলেট বের করলো, আমিতো খুশি হয়ে গেলাম দুইটাকায় তিনটা চকলেট। কিন্তু না সুমন আমাকে দুটি চকলেট দিয়ে একটি ফারুখের হাতে দিয়ে বললো বাসায় চলে যেতে। ফারুখ চুপচাপ চকলেটটি নিয়ে বাসায় চলে আসে। উঠোনের এককোনায় বসে চকলেটের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে খেয়ে ফেলে। কদিন পর আমরা ব্যপারটা বুঝে ফেলি কামাল ফারুখকে গোডাউনে নিয়ে যৌন নির্যাতন করত। তারপর তাকে অনেক বার জিঞ্জাসা করেছি কামাল কি করেছে? কিন্তু ফারুখ সবসময় নীরবতাই পালন করেছে।

Manusher Jonno Foundation (MJF) and INCIDIN Bangladesh. এর "Violence against children in Bangladesh" নামে একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ১০০ জন শিশুর মাঝে ৯৫.৩% শিশু পরিবার , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্ম ক্ষেত্রে সহিংসতার(নির্যাতনের ) শিকার। যার মধ্যে ৯৬.৫% মেয়ে এবং ৯৪.৫% ছেলে।
এদেরে মাঝে ৮৬.৯% পরিবারে শারীরিক নির্যাতনের (শাস্তি) শিকার যার মাঝে ৮৮.৪% ছেলে ও ৮৪.১% মেয়ে।
এ শিশুদের মাঝে ৫৫% বলেছে তারা পরিবারে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে আর এখানে মজার ব্যপার হচ্ছে ৬০% ছেলে বলেছে তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে, যেখানে ৫০% ভাগ মেয়ে বলেছে তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
এছাড়াও ৮২% শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যতনের শিকার হয়েছে এর মাঝে ৮২% শারীরিক নির্যাতনের শিকার ও ২৪.১% যৌন নির্যাতনের শিকার।

যারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে এদের মাঝে ৬১.৭% বলেছে তারা লজ্জা কিংবা ভয়ের কারনে ওসব পশুদের কথা কাওকে বলেনি। এবং ৫২.৭% তখন বুঝতে পারেনি ওসব পশুগুলো তাদের সাথে তখন কি করেছে।

এটাতো শুধু একজন ফারুখের গল্প যে কখনো তার শারীরিক নির্যাতনের কথা শিকার করেনি। এমনো হাজার লক্ষ কোটি ফারুখ আছে যারা লজ্জা কিংবা ভয়ে তাদের শারীরিক নির্যাতনের কথা শিকার করে না।

সুতরাং আপনার মেয়ে শিশুটির পাশাপাশি আপনার ছেলে শিশুটির ও একটু খেয়াল রাখিয়েন। আপনার মেয়েটা তার মাকে হয়তবা বলতে পারে কিন্তু আপনার ছেলেটা কাকে বলবে? কিভাবে বলবে ? তাকে কি শিখিয়েছেন কিভাবে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। কিংবা কখনো চিন্তা করেছেন সেও যৌন নির্যাতনের শিকার হতে পারে ? এখন একটু চিন্তা করেন। এমন অনেক ছেলে আছে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে নিজেকে এমন ভাবে গুটিয়ে নিয়েছে যে ………………………..!
তথ্য - The Business Standard .

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১:২০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মাদ্রাসায় হওয়া কিছু কিছু ঘটনা মিডিয়ায় আসে। অনেক থেকে যায় আড়ালে। ছেলেরাও যে এমন নিগ্রহের শিকার হয়, অনেকে মানতেই চায় না।

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: বুঝাই যাচ্ছে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.