নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ুন আজাদের জীবনী তৃতীয় র্পব

২০ শে এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১:২৯

শিক্ষাজীবন দ্বিতীয় পর্ব





হুমায়ুন আজাদ ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকিউলেশন বা প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন। ঐ বছরই ছিল এক বোর্ডের অধীনে শেষ পরীক্ষা; পরের বছর এক বোর্ড ভেঙ্গে একাধিক বোর্ড হয়। এই পরীক্ষার বর্তমান নাম এস.এস.সি। তখন ইস্ট পাকিস্তান সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ড নামে একটিই বোর্ড ছিল। এই পরীক্ষার পূর্বে তিনি সারাক্ষণই শুধু পড়তেন। শেষ রাতে উঠে পড়তেন। পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল মুন্সীগঞ্জ শহরে। একই মহকুমায় (বর্তমান জেলা) হলেও রাড়িখাল থেকে মুন্সীগঞ্জে যাওয়া সহজ ছিল না। রাড়িখাল থেকে যেতে হবে ভাগ্যকুল। সেখান থেকে স্টীমারে করে যেতে হবে মুন্সীগঞ্জ। থাকার কোন যায়গা আগে থেকে ঠিক করা ছিল না। তাঁর বাবা তখনো দিনাজপুরে। মা তাকে ৩ শত টাকা দিয়েছিলেন। তখনকার দিনে এটা অনেক টাকাই ছিলো। ওখানকার ছাত্র নেতারা নানা ব্যবস্থা করেছে। তিনি থাকতে পেলেন হরগঙ্গা কলেজের টিনের ছাত্রাবাসে। টেবিল চেয়ার চৌকি ছিলো না, মেঝেতেই তাদের থাকতে দেয়া হয়েছিল। এক ঘরে দশ-বারোজন থাকতেন। এক হিন্দু শুদ্র মহিলা সকালবেলা ছানা, মাখন, সন্দেশ, দই ও আরো নানা খাবার নিয়ে আসতো, সকালে মজা করে খেতেন। দুপুরে ও রাতে খেতেন রেস্টুরেন্টে। তাদের পরীক্ষার সিট পড়েছিল প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে। পরীক্ষা শুরু হবার পরদিনই প্রচন্ড ঝড় হলো, ঝড়ে তাদের ছাত্রাবাসের টিনের চাল উড়ে গিয়ে পুকুরে পড়লো। তারা দৌড়ে কোনো রকমে দালান ছাত্রাবাসে গিয়ে উঠলেন। ওখানকার ছাত্রনেতারা জেনে গিয়েছিল, তিনি খুব ভাল ছাত্র। ফলে তারা তাকে দালানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। মুন্সীগঞ্জের এক বড় গুণ্ডা, পরে আওয়ামীলীগের বড় নেতা হয়েছিলেন। এমপি নির্বাচন করেছেন। নিজের ভাতিজাকে খুন করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিস্তল প্রদর্শন করে আলোচিত হন। সে হুমায়ুন আজাদকে অংকের সমাধান করে দিতে বললেন। তিনি ওই বয়সেই তার নির্দেশ মানেন নি, তার কথায় হুমায়ুন আজাদের খুব রাগ হয়। হুমায়ুন আজাদ বলেন, আমি করে দিতে পারবো না। কিন্তু চার-পাঁচটি পরীক্ষা হওয়ার পর প্রশ্ন আউট হয়ে যায়। এক পরীক্ষা দিয়ে এসে শুনেন পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে। তিনি প্রথমে তাঁর মামাতো ভাই বাদশা খাঁনের সাথে মুন্সীগঞ্জে সিনেমা দেখেন তার পরে ঢাকায় গিয়ে সিনেমা দেখেন, ঘুরে বেড়ান। টাকা শেষ হয়ে গেলে বাড়ি ফিরে আসেন। মাস দেড়েক পড়ে আবারো পরীক্ষার তারিখ পড়লো। কিন্তু পড়াশোনার সেই গতি আর আসে নি। পরীক্ষা দিয়েই গ্রামে ফিরে এলেন। এরপরে কাজ বলতে পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা।

এই বিদ্যালয়ের মাত্র একজন ছাত্র সেই ১৯৪৯ সালে প্রথম বিভাগ পেয়েছিল। তিনি তাঁর সম্পর্কে কাকা হন, নাম আ.ম.ম মাহমুদুল হক, ডাক নাম পানু। সোনালী ব্যাংকের জিএম হিসাবে পরবর্তীতে অবসর গ্রহণ করেন। কেউ দ্বিতীয় বিভাগ পেলেও উৎসব বয়ে যেতো। ফলে প্রথম বিভাগ পাওয়ার স্বপ্ন দেখাটা সহজ ছিল না। তিনি হিসাব মিলাতে থাকেন কত পাবেন। তখন প্রথম বিভাগ পেতে ৪৮০ নম্বর লাগতো। তাঁর হিসাবে ৫৬০/৫৭০ পাওয়ার আশা করেন। নিজের হিসাবে কতটুকুই বা আস্থা রাখবেন। তারমধ্যে একটি অংক অসম্পূর্ণ করে এসেছেন। একদিন ফলাফল বিদ্যালয়ে এসে পৌঁছল। দেখা গেল সত্যিই তিনি প্রথম বিভাগ পেয়েছেন। মোট নম্বর পেয়েছেন ৫৯৪ এবং অংকে ৯৮। এই পরীক্ষায় এডিশনাল নম্বর ছাড়া তাঁর স্থান ছিল ১৮ তম; এডিশনালসহ ২১তম। মুন্সীগঞ্জের মধ্যে প্রথম।

হুমায়ুন আজাদের ইচ্ছা ছিল উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিকে পড়বেন। কিন্তু তাঁর বাবার এক ভাগ্নে বাবাকে বুঝিয়ে ফেললেন, আইএ পড়ে কি হবে! আইএসসি পড়তে হবে। ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। তাঁর পিতাও খুশি হলেন, ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। অভিভাবকদের চাপে তাই তিনি ঢাকা কলেজে বিজ্ঞানে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে। তিনি অত্যন্ত বিজ্ঞানমনস্ক হলেও আইএসসি পড়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে তাঁর ইচ্ছে করে নি। তখন প্রতিযোগিতা ছিলো ঢাকা কলেজ আর নটরডেম কলেজের মধ্যে। যদিও এসব কলেজে দেশের সেরা ছাত্ররা ভর্তি হন বলেই ভালো কলেজ। তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন সবচেয়ে বেশি নম্বর নিয়ে। দু-বছর সেখানে পড়েছেন। দেখেছেন স্যারেরা কিছুই পড়ান না, বোঝাতে পারেন না; তাদের ছুটতে হতো এক লেকচার রুম থেকে আরেক লেকচার রুমে, অনেকে ক্লাশেই আসতেন না। স্যারেরা ঘনঘন বদলী হতো। ঢাকা কলেজ তাঁর ভালো লাগে নি। বিজ্ঞানের পাঠ্যবই পড়তেও তাঁর ভালো লাগতো না। প্রিয় শিক্ষক ছিলেন শওকত ওসমান। তিনি লেখক হিসাবে বিখ্যাত ছিলেন, কিছুই পড়াতেন না; কিন্তু কথা বলতেন সাহিত্য ও জ্ঞানের নানা বিষয়ে। শুধু সেটা তার ভাল লেগেছিল। তিনি ভলো করে পড়েন নি। এসময় তিনি পাঠ্য বই পড়ার চেয়ে দেশি-বিদেশি সাহিত্য অনেক বেশি পড়েন। পরীক্ষায় তার প্রভাব পড়ে। তিনি দ্বিতীয় বিভাগ পান। এরপরেও সেসময়ে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিংএ হয়তো ভর্তি হতে পারতেন। কিন্তু তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন, বাংলায় অনার্স পড়বেন। কবিতা লিখবেন, সমালোচনা লিখবেন, পরে কবি হবেন, সমালোচক হবেন। তিনি যখন বাড়িতে বললেন, বাংলায় অনার্স পড়বেন। তখন তাঁর বাবার সেই ভাগ্নে ও বাবা বাধা দিয়েছেন। তাঁর মা বলেছিলেন, ও যা পড়তে চায় তাই পড়ূক। চলবে....

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-৩

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১:৪৬

শাওন চৌধুরী বলেছেন: আপনার স্যার কে নিয়ে লেখাগুলু পড়লাম ,ভালু লাগিল।

২০ শে এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১:৫২

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনাদের সমর্থন পেলে লেখা চালিয়ে যাব। ২৮ এপ্রিল স্যারের জন্ম দিন উপলক্ষ্যে জীবনী প্রকাশ করছি।

২| ২০ শে এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১:৫০

পারভেজ আলম বলেছেন: চলুক। ++++++

২০ শে এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১:৫৪

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনাদের সমর্থন পেলে চালাবো। হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে লেখালেখি কম হচ্ছে।

৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৩:১৩

ডিজিটালভূত বলেছেন: পড়লাম। চলতে থাক।

২০ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৩:২৩

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনাদের ভাললাগলে চলবে। তাকে কাছে থেকে দেখেছি। ভালবেসেছি।

৪| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১০:৫৮

রিসাত বলেছেন: ৭

১৪ ই মে, ২০১০ বিকাল ৪:২৫

মুজিব রহমান বলেছেন: সংখ্যা দিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছেন? আপনি মৌলবাদী মানুষ হুমকী নয়তো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.