নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

৯ হাজার কোটি টাকার মডেল মসজিদঃ কিরকম "মডেল" হতে পারে

১০ ই জুন, ২০২১ সকাল ৭:৩৯

প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে দেশব্যাপী নির্মিতব্য ৫৬০টি মডেল মসজিদের ব্যাপারে আমার কিছু সাজেশন ছিলো, যেগুলো খেয়াল রাখা হলে মসজিদগুলো শুধু মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য সাময়িক মডেল নয়, বরং বিশ্ববাসীর জন্য দীর্ঘমেয়াদী "মডেল" বা "আদর্শ" হয়ে উঠতে সক্ষম হবে।

১) মসজিদগুলোতে এয়ারকন্ডিশন, ফ্যান ও লাইট এর সংখ্যা/সংযোগ কমিয়ে, বিদ্যুৎ এর কম খরচের জন্য, ভবন ও অবকাঠামোগুলো এমনভাবে বানানো উচিত, যাতে আলো ও বাতাস প্রাকৃতিকভাবে আসাযাওয়া করতে পারে। আধুনিক প্রকৌশল ও স্থাপত্যবিদ্যায় এসব যুগ যুগ ধরে আছে। এখন আরও আপডেটেড হয়েছে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন সিন্ডিকেটের খপ্পরে পরে, বাড়তি খরচের ঝামেলায় পরি- সবসময়!

২) ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য নামাজ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। মসজিদ এই ইবাদত পালনের মুখ্য স্থান। নামাজ ছাড়াও অন্যান্য অনেক সুন্নত ও নফল পালনের পাশাপাশি, বেশকিছু সদকায়ে জারিয়া পালনেরও সুযোগ আছে- দেশব্যাপী এই মসজিদগুলো নির্মাণের মাধ্যমে।

ক) বৃক্ষরোপণঃ মসজিদের ইট-লোহার অবকাঠামো বানানোর চাইতে, মসজিদের পরিসীমায়, প্রবেশপথে, এবং ছাদে- যত বেশি সম্ভব- দ্রুত বর্ধনশীল, ফলের গাছ, ঔষধী গাছ এবং উচ্চতাসম্পন্ন গাছ লাগানো উচিত। এতে মানুষ ছায়া পাবে, ফল-ফুল-খাবার পাবে, পাখি ও ছোট পশুদের বাসস্থান হবে, অমূল্য অক্সিজেন পাবে, সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে, মাটির ভিত শক্ত হবে, ভূমিকম্প ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কমবে।

খ) গণশৌচাগারঃ পর্যাপ্ত, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত প্রাকৃতিক কার্যসম্পাদনের জায়গা না থাকার কারণে দেশে বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ দূষিত হয়, মানবিক বিপর্যয় হয়, জনগণ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়, মানসিকভাবে লাঞ্ছিত হয়। দেশব্যাপী ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের উপলক্ষকে একটি সুন্দর সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে, সরকার/প্রশাসন- মসজিদকেন্দ্রিক এলাকার বাসিন্দা ও পথচারীদের মলমূত্র ত্যাগ করার সভ্য-সুন্দর ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। এর চেয়ে সওয়াবের ও জনকল্যাণমূলক কাজ আর কি হতে পারে। সরকার/প্রশাসন যদি আন্তরিক/আগ্রহী/উদ্ভাবনমুখী হয়, তবে মসজিদের পেছনে/পাশে সল্পখরচে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টও স্থাপন করা যাবে, যেখানে এলাকার পচনশীল বর্জ্যের পাশাপাশি গণশৌচাগারের বর্জ্য থেকে মূল্যবান বায়োগ্যাস উৎপাদন করা যাবে; যা রান্নার জ্বালানি, যানবাহনের জ্বালানি ও এমনকি স্বল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যবহার করা যাবে।

গ) জলাধার/ওয়াটার রিজার্ভারঃ বিশ্বব্যাপী সুপেয় মিঠাপানির আধার দূষিত/কমে যাওয়া এবং মাটির নিচের পানির স্তর শেষ হয়ে যাওয়া/কমে যাওয়ার কারণে অদূর ভবিষ্যতে গোটা দুনিয়া ভয়াবহ বৈশ্বিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। অসীম সাগরের লোনা পানি কিছুতেই স্বাদুপানির অভাব পূরণ করতে পারে না। বাংলাদেশেও একই সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এমতাবস্থায়, সরকার এই মডেল মসজিদের মাধ্যমে একটি মডেল ধারণা/দৃষ্টান্ত সবার সামনে স্থাপন করতে পারে। ওয়াসার লাইন ও গভীর নলকূপের লাইনকে প্রাধান্য না দিয়ে (ব্যাক-আপ হিসেবে রাখা যেতে পারে), প্রতিটা মসজিদের আশেপাশে (যদি আগে থেকে না থাকে) অথবা নিচতলায় পুকুর বা বিশাল চৌবাচ্চা/জলাধার নির্মাণ করা উচিত। নিচতলায় ওয়াটার রিজার্ভার থাকলে, মসজিদের নামাজের স্থান দুইতলা থেকে শুরু করা যেতে পারে। এই চৌবাচ্চা বা পুকুরের পানি পরিস্কারের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। জলাধারের পানি ভরাটের জন্য অবশ্যই বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক পানির উৎসের ব্যবহার করতে হবে। একই সাথে, মসজিদের ছাদে বা আঙিনায় রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম থাকলে, বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, সরবরাহ ও চৌবাচ্চা ভরাট করা যাবে।

৩) মসজিদের ছাদে, জানালার কার্নিশে, গেইটের উপরে, এবং সম্ভাব্য সব স্থানে সোলার প্যানেল বসিয়ে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে মসজিদের ভেতর ও বাইরের আলোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রথাগত উৎসের উপর চাপ অনেক কমবে। এবং মানুষ সৌরবিদ্যুৎ এর ব্যাপারে আগ্রহী হবে।

৪) বাংলাদেশের এ টু জেড যেকোন কন্সট্রাকশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে অবহেলিত ব্যাপারটা হচ্ছে সঠিক বর্জ্যব্যবস্থাপনা। সলিড এবং লিকুইড- দুই ধরণের ওয়েস্টের কার্যকরী ম্যানেজম্যান্ট দেখানোর সুন্দর সুযোগ হতে পারে দেশজুড়ে বানানো এই মডেল মসজিদগুলো। প্রতিটা মসজিদে শুধুমাত্র তিনটা ডাস্টবিন থাকবে- একটি হবে জৈব আবর্জনার (খাদ্য উচ্ছিষ্ট) জন্য, যেগুলো থেকে কমপোস্ট/সার বানিয়ে মসজিদের আশেপাশের গাছে দেওয়া হবে। ২য় ডাস্টবিনটি হবে- যেকোন রকমের প্লাস্টিকের জন্য; ৩য়টি হবে- ধাতু, কাঁচ, কাপড় ও কাগজের জন্য। ২য় ও ৩য় ডাস্টবিনের আবর্জনা নির্দিষ্ট সময় পরপর স্থানীয় রিসাইক্লার/ভাঙ্গারিওয়ালাকে দিয়ে দেওয়া হবে। ১ম ডাস্টবিনের আবর্জনা কিভাবে মসজিদের তত্ত্বাবধানকারী নিজেই কমপোস্ট করতে পারবেন, এই ব্যাপারে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাগণ সাহায্য করতে পারবে। মসজিদের বর্জ্যপানি স্থানীয় নর্দমাতে সঠিকভাবে অবমুক্ত করতে হবে। মলমূত্রের পানি ও ওজুর পানির মধ্যে আকাশপাতাল ব্যবধান- দুইটার গন্তব্য কার্যত এক স্থান হওয়া উচিত না। কিন্তু আমাদের দেশে এসবের কোন সুষ্ঠ ব্যবস্থা রাখা হয়নি কোথাও! মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র মসজিদের সেজদার স্থানই যে পবিত্র রাখা আমাদের নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব- তা ই নয়। আমাদের দৈনন্দিন বসবাস, কাজ ও চলাফেরার স্থান যদি আমরা পরিচ্ছন্ন রাখতে না পারি, বর্জ্যযুক্ত পানি দ্বারা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করি, তবে মডেল মসজিদের কোন মর্যাদাই আর থাকবে না।

উল্লেখ্য যে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের অনেক মুসলিম/অমুসলিম দেশের অধিকাংশ মসজিদকে পরিবেশবান্ধব, টেকসই প্রযুক্তি ও পদ্ধতিতে নতুনভাবে বানানো হয়েছে বা রেট্রোফিট করা হয়েছে। পুরো পৃথিবীর মুসলমানেরা মক্কার যে মসজিদে পবিত্র হজ্জ্ব পালন করতে যায়, সেই মসজিদও প্রয়োজন অনুসারে বার বার জনবান্ধব করা হচ্ছে, আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। নিচের লিংকে এনার্জি ও ওয়াটার-সেভিং বৈশিষ্ট্য সহ মসজিদের নকশা বিষয়ক একটি বিশদ গবেষণাপত্র পাওয়া যাবে।

মসজিদের আধুনিক, টেকসই, পরিবেশবান্ধব, জনবান্ধব নকশা

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুন, ২০২১ সকাল ৮:৩১

নূর রহমান বলেছেন: ভাই, সৌদি সরকার টাকা দিয়েছে করার জন্যে তাই করতেছে। এর মধ্যে কত টাকা কাটিং হবে আল্লাহ মালুম :(

২| ১০ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:৪২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

" বিশ্বে কোনো মুসলিম শাসকের একসঙ্গে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ এই প্রথম।”
এই মসদিগুলোতে ইবাদতের পাশাপাশি আরো অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ড হবে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রচারের পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও
সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হবে। আর এই
মসজিদগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিবন্ধিদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা এবং
তাদের মসজিদে প্রবেশের জন্য আলাদা র‌্যাম থাকবে।
মহৎ উদ্দ্যোগ। সাধুবাদ জানাই

৩| ১০ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:৪৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
@ নূর রহমান আপনার অবগতির জন্য বলছি,
এই মডেল মসজিদ করতে ব্যয় হচ্ছে আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা।
শুরুতে এই প্রকল্পে সৌদি সরকারের অর্থায়নের কথা থাকলেও
পরে তারা করেনি। এখন পুরো প্রকল্পটিই সরকারের অর্থে
বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

৪| ১০ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১২:৫৯

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: সুকাজে সাধুবাদ জানাই।

৫| ১০ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশে মসজিদের চেয়ে বেশি দরকার লাইব্রেরী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.