নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফ্রন্টলাইনার পোষ্য বুদ্ধিজীবি

১২ ই জুন, ২০২১ ভোর ৬:৩৩

মুনীর হাসান,
আমার বড় মামার ব্যাচমেট,
আমার মায়ের বংশের দিকের দূর সম্পর্কের আত্মীয়,
এবং আমার এক ঘনিষ্ঠ কলেজ ফ্রেন্ডের আপন ফুফাতো ভাই।

চট্টগ্রামের প্রথম ম্যাথ অলিম্পিয়াডটার কো-হোস্ট ছিল আমাদের স্কুল; মেইন ভেন্যু ছিল আমাদের পাশের এক স্কুল। খুবই এক্সাইটেড ছিলাম সেসময় গোটা ব্যাপারটা নিয়ে। জাফর ইকবালসহ আরো বেশ কয়েকজনের অনেকগুলো অংকের বই কিনে ফেলেছিলাম বইয়ের দোকান এবং বইমেলা থেকে শুধুমাত্র আসন্ন ঐ অলিম্পিয়াডকে কেন্দ্র করে। সেসময় খেয়ালই হয়নি এটা বই বিক্রির টোপ হতে পারে; সবকিছু সবার জন্য না।

অলিম্পিয়াডে ভলান্টিয়ার হিসেবেও ছিলাম। কোনরকম প্র্যাক্টিস ছাড়াই অলিম্পিয়াডে অংশ নিই। তেমন একটা ভালো করতে পারিনি যথারীতি- প্রথাগত অংকের চেয়ে অনেক ভিন্ন এসব সমস্যা; যেরকম করে প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থায় গড়ে তোলা হয় না, ভাবতে শিখানো হয় না। কিন্তু আমার ও অন্য অনেকের জন্য পার্টিসিপেটরি সার্টিফিকেট ও এক্সপেরিয়েন্সটাই ছিল অনেক বড় কিছু। সেলিব্রেটিদের দেখা, পত্রিকার খবরের ছবিতে আবছাভাবে আসার অপচেষ্টা করা, অন্য স্কুলের ছেলেমেয়েদের দেখা (বিশেষত মেয়েদের)- সবই ছিল একটা পিকনিক-পিকনিক ভাব।

মুনীর হাসানকে তারও সামান্য কিছু আগে থেকে প্রিন্ট মিডিয়ার কল্যাণে একটু একটু করে চেনা শুরু। ম্যাথ অলিম্পিয়াডে অফিশিয়ালি তাকে ও তার চেনাশোনা/চলাফেরার সার্কেলটাকে চিনিয়ে দিলো। অস্বীকার করবো না, এসব মানুষ ও এক্টিভিটি অবচেতনভাবে আমাকে আমার অবশ্যম্ভাবী ও বিলাসবহুল গন্তব্য/লক্ষ্যের দিকে ঠেলে দেয়, যেই পথে আজও চলছি।

তারও দুই বছর পরে সাস্টে সিএসইতে এসে নতুন সাগরে পরেছিলাম। ফেসবুক নতুন নতুন এসেছে বাংলাদেশে (ও দুনিয়ায়)। একাউন্ট খুলার পরে প্রথম যেই "সেলিব্রিটি" মানুষটা অতিকষ্টে লিস্টে সংযুক্ত হলো, সেটা ছিল মুনীর হাসান। সম্ভবত রিকোয়েস্ট পাঠানোর আগে নিজের ইন্ট্রো দিয়েছিলাম মেসেজে, সাথে এই কমেন্টের শুরুর লাইনগুলোও হয়তো বলেছিলাম; এখন অতটা মনে নেই। সাস্টের কিছু সিনিয়র ভাইব্রাদার (যারা পরে সাস্টের ফ্যাকাল্টি মেম্বার হয়েছিলেন; এখন বহির্বিশ্বে ছড়ানো-ছিটানো) মিউচুয়াল থাকার কারণেও উনি সামান্য একজনকে লিস্টে জায়গা দিয়েছিলেন। একটু অন্যরকম কিছু ট্রেন্ডের সূচনাকাজে অবদানের কারণে উনার ফ্যান-ফলোয়িং ও পরিচিত গণ্ডিটাও বিশাল ছিল; যেকোন কাওকে জায়গা দিতে না পারাটাই অস্বাভাবিক। আমি সাস্টে একবছরের বেশি থাকিনি।

এরপরে ৬/৭ বছর পর্যন্ত উনি লিস্টে বন্ধু হিসেবে ছিলেন। উনার পোস্টে রেলেভেন্ট হলে কমেন্ট করতাম। প্রযুক্তি, প্রকৌশল, উদ্যোক্তা ইত্যাদি বিষয়ক বিভিন্ন অনলাইন কন্টেন্টে ইন্টারএকশন হতো। ধীরে ধীরে উনার মেথডোলজি ও আইডলজি পরিস্কার হতে শুরু করে।
উনার মেইন পয়েন্ট ছিল- রাষ্ট্রব্যবস্থা, সরকার ও ক্ষমতাসীন জোট, সমাজপতি ও শিল্পপতিদের অবস্থান ও মতামত যা-ই হউক না কেন, একজন প্রান্তিক যুবক তার ইচ্ছা ও লক্ষ্যমতো, পড়ালেখা করে, প্রোগ্রামিং করে, অংক কষে, কোথাও ট্রেনিং করে, নিজ এলাকাতে বা অন্য কোথাও ফিরে গিয়ে, একটা ক্ষুদ্র ব্যবসা দাঁড় করিয়ে, জেফ বেজোস এর পথে হাঁটা শুরু করতে পারবে।

উনি এক্সিটেন্ট সিস্টেমের সাথে কিছুতেই কলিশনে যেতে বিন্দুমাত্র আগ্রহী ছিলেন না (কেন ছিলেন না, এটা পরবর্তীতে তার বইয়ের অংশবিশেষ পড়ে বুঝেছিলাম)। কিন্তু উনি নিজেকে, উনার পিয়ারদের, উনার অগ্রজদের, উনার অনুজদের, এবং উনার স্যাম্পল আইডলদের যাদেরকে সবার সামনে উনার বক্তব্যে ও লেখায় এক্সেমপ্লারি হিসেবে উপস্থাপন করেন ও ফলো করতে মোটিভেট করেন- তাদের একজনও যে সমসাময়িক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন এভারেজ আরবান স্ট্রাগলিং ইয়ুথ না, সেটা তার পক্ষে বুঝা সম্ভব হচ্ছিল না।

আমি নানাভাবে, উনার পোস্টের সাথে যায় এমন প্রাসঙ্গিক মন্তব্য করে করে, উনাকে এবং উনার ফেসবুক ফলোয়িং কমিউনিটিকে কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে চেষ্টা করতাম শেষের দিকে। ফলস্বরূপ একদিন আচমকা উনি পাবলিকলি উনার এক পোস্টের নিচে আমাকে হালকা বেইজ্জত করেন। আমিও কিছু বেয়াদবি না করে আনফ্রেন্ড করে চলে আসি। উনিই সম্ভবত আমার ফেসবুক লাইফের প্রথম আনফ্রেন্ড করা সেলিব্রিটি।

এরপরে অনেকবার এমন সময় এসেছে, যখন সোলায়মান সুখন, মোস্তফা জব্বার, জুনায়েদ আহমেদ পলক, প্রমুখ মানুষকে প্রশ্ন করতে গিয়ে উনার কথা মনে পরেছে। উনারা সবাই অবশ্য একই নৌকার মাঝি। নৌকার বললে ভুল হবে; Cruise ship এর। বাংলাদেশে যে কয়েকটা থিম্যাটিক শব্দাবলী নিয়ে সবচেয়ে বেশি ধান্ধাবাজি ও ধোঁকাবাজি হয়েছে ও হচ্ছে, "ডিজিটাল বাংলাদেশ" তার মধ্যে অন্যতম প্রধান। এক্সক্লুসিভ, মাস প্রোডাকশন করে না, অধিক সংখ্যক সিটিজেন ইনভল্ভ হতে পারে না, এরকম কিছু খাতকে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ইন্টেলেকচুয়াল রিপ্রেজেন্টেটিভেরা বার বার জনসম্মুখে প্রমোট করে এসেছে, প্রণোদনাও দিয়ে এসেছে, এবং ঘুরেফিরে সব টাকা তাদের পকেটেই গিয়েছে।

বিমূর্ত বা ধরাছোঁয়া যায় না- এমন জিনিসকে টোপ হিসেবে দেখিয়ে, দেশে ডিজিটাল/আইটি রেভলুশ্যন ঘটানো সম্ভব না, যখন দেশের শিক্ষা ও নিয়োগব্যবস্থাতেই গোড়ায় গলদ। টপ টু বটম- সরকারি বা বেসরকারি খাতে, ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল সম্পূর্ণরূপে প্রযুক্তিসংক্রান্ত ডিভাইস/মেশিনারিজ/সিস্টেম ইমপোর্ট এবং সেলসের ধান্ধা। বাংলাদেশে এমন অগণিত সরকারি অফিস আছে, যেখানে অতিউচ্চমূল্য মডার্ন ডিভাইস ও টেক প্রোডাক্ট কেনা হয়েছে (তদন্ত করতে গেলে রোজিনাভাগ্য বরণ করতে হতে পারে), এবং কেনাসত্ত্বেও কস্মিনকালেও ব্যবহার করা হয়নি এগুলো বেশিরভাগই। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলুশন ও ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশনকে হাইপ্রায়োরিটি না দিয়ে ওয়েব ডেভেলাপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং এর মত বিষয়গুলোকে আইটি খাতে হাইলাইট ও প্রমোট করার কারণে- দেশের তরুণসমাজ আজ বিভ্রান্ত ও বিষাদগ্রস্থ; এই বিষয়ে আমার পক্ষাবলম্বন করতে গেলে এই লেখা মারাত্মক বড় হয়ে যাবে, তাই করছি না। মুনীর হাসানদেরকে সবসময় বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি- উদ্যোক্তা বা টেকবেইজড কন্ট্রিবিউটর হতে গেলে প্রথমেই দেখতে হবে টার্গেট কনজ্যুমার মার্কেট কিরকম। সম্প্রতি উবার ঢাকার সিএনজিগুলোকে তাদের সার্ভিসের আওতায় আনবার ঘোষণা দেওয়ার ২দিনের মাথাতেই আবার পিছু হটে গিয়েছে। কারণ হিসেবে বলছে টেকনিক্যাল প্রব্লেম; কি প্রব্লেম হতে পারে, সেটা বুঝতে মাথায় ঘিলু লাগে না। বাংলাদেশের নানান সেক্টরের সিন্ডিকেটবৃত্তি কিরকম, সেটা মুনীর হাসানরা রুট থেকে দেখে না আসলেও আমার মত অনেকেই কাছ থেকেই দেখেছি।

পোষা কবি দিয়ে রাজার স্তুতিমূলক মহাকাব্যই রচিত হয়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০২১ ভোর ৬:৪৮

সাসুম বলেছেন: সুন্দর লিখা।

তবে মুনির হাসান দের এক তরফা দোষ দিয়ে লাভ কি? সবাই সবার মত কাজ করে যাচ্ছে। উনার রাজনৈতিক স্টান্ড নাই বা দেশের রাজনীতি নিয়ে না লিখে উনি বিজনেস, উদ্যোগ এসব নিয়ে লিখে যাচ্ছেন বা উনাদের মত কাজ করে যাচ্ছেন তাই উনাকে পারসোনালি শুলে চড়ানো দরকার এটার সাথে আমি একমত নই। উনার অনেক বড় সমালোচক আমি নিজেও বটে, উনার সাথে অনেক বিষয়ে একমত নই বাট উনার নিজের কাজ উনি নিজের দিক থেকে করে যাচ্ছেন।

উনি হয়ত সেফ সাইডে থেকে প্লে করছেন। সবাই তো আর রিস্ক নিয়ে সাপের মুখে গিয়ে হা ডু ডু করবেনা।

তবে আপনার একটা কথার সাথে আমি চরম মাত্রায় সহমত- এই যে ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন আর এস ই ও করাকে ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সাথে এক করে ফ্রি ল্যান্সার তৈরির হিড়িক লেগেছে এটা হাস্যকর।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বানাতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট, ৪র্থ শিল্প বিল্পব , মোদ্দা কথা জ্ঞান বিজ্ঞান এর সাথে যুক্ত হতে হবে। আমাদের কে নজর দিতে হবে ইনোভেশান , রিসার্স, নিত্য নতুন জিনিষ আবিস্কার মোদ্দা কথা আমাদের কে প্রতিযোগিতা করতে হবে দুনিয়ার সবার সাথে। নিজেদের সাথে না।

মোহাম্মাদপুর বা গুলশান বা ঢাকার বেস্ট হলে হবেনা আমাদের কে বেস্ট হতে হবে বাংলাদেশের এবং পুরা দুনিয়ার।

আমাদের কে জ্ঞান বিজ্ঞানে আগাতে হবে, আমাদের জ্ঞান বিজ্ঞান ইনোভেশান আর রিসার্স কে প্রাধান্য দিয়ে নিজেদের কে এগিয়ে নিতে হবে।

২| ১২ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:০৫

আল ইফরান বলেছেন: উনি খুব সম্ভবত এখনো এই ব্লগে আছেন।
বিজ্ঞানবিমুখ জাতির সন্তানদের বিজ্ঞানমুখী করার প্রচেস্টার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ওনাকে প্রশংসা করি।
সরকারের সাথে দ্বন্দে যাবার মত যথেস্ট কৌশল হয়তো এখনো ওনারা রপ্ত করতে পারেন নাই।

৩| ১২ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১২:৩৬

কল্পদ্রুম বলেছেন: মুনীর হাসানের লেখা বা চিন্তার সাথে পরিচিত নই। আপনার লেখা পড়ে যতটুকু বুঝতে পারছি, মুনীর হাসান যেমনটা মনে করেন। সেরকম বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে আপোষ করে চলার কথা আরো বুদ্ধিজীবী বলছেন। গতকাল সলিমুল্লাহ খানকে জিজ্ঞেস করা হলো উনি চাইলেই সব কথা বলতে পারেন কি না। উনি উত্তরে গালিবের কবিতা শুনিয়ে দিলেন। ব্যাপারটা হচ্ছে, সমালোচনা করে যেহেতু পরিবর্তন আনা যাচ্ছে না, তাই রাষ্ট্রব্যবস্থার কাছ সর্বোচ্চ যতটুকু আদায় করে নেওয়া যায়। ভালোর কাজের জন্যে হলেও।

৪| ১২ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:২৫

এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: ম্যাথ অলিম্পিয়াড কীভাবে বই বিক্রির টোপ হতে পারে, বোঝা গেল না। আপনার সঙ্গে কী ধরণের বিতর্ক হয়েছিল, তা না জানলে বেইজ্জতির ব্যাপারে মন্তব্য করা যাচ্ছে না। এমনও হতে পারে, যা আপনি বেইজ্জতি ভাবছেন, তা ছিল আপনার মতামতের সমালোচনা নিছক। ভুল সিস্টেমের সঙ্গে অনেকে লড়তে পারে না, সেক্ষেত্রে তাঁরা সিস্টেমের ভেতর দিয়েই গঠনমূলক অবদান রাখতে চান। মুনির হাসান অন্তত নিজেকে বিক্রি করে দেয়া বুদ্ধজীবি নন, সুতরাং এক্ষেত্রে তাঁর সমালোচনা অকাট্য নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.