নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আহমাদ মাগফুর। ৯৪ এ ময়মনসিংহে আমার জন্ম। স্কুল, কওমি আর আলিয়া -- সবার অবদান প্রাপ্ত হয়ে আপাতত আমি ‘মূর্খ কবি’ হিসেবে জীবনযাপন করছি। তাই আমার অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করে। জানতে ইচ্ছে করে, মানুষ কেন খুন করে! জানতে ইচ্ছে করে, মানুষ কেন ভালবাসে!

আহমাদ মাগফুর

অবশেষে তুমি নিরব হলে, নিভে যায় দিগন্তের বাতি। দিক ভুলে পিছু হাটতে হাটতে, বেড়ে যায় আঁধারের বেলা। পান্থপথের ফুটপাত মনে রাখে তোমার, মোমের মত নরম আঙুলের ছোঁয়া। ভুলে যাই তখন, দিগন্ত আমারও আছে। রৌদ্র নেই যদিও। নেই বসন্তের সুখময় রেখা। উত্তর দক্ষিণ সব কিছু ভুলে আমি তখন সে দিগন্তেই ঝুঁকি। বিকেলের শেষে যে দিগন্তে জ্বলে টুকটুকে লাল স্বপ্নের অনুশিখা। তাই সাধারণ চাওয়াটাই আজ হলো প্রতিবাদ। রাগে নয় অনুরাগে। শুধু একবার খুলে দাও দিগন্ত তোমার। সিঁথিতে সিঁদুর কি বা কবুল বলার আগে।

আহমাদ মাগফুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

হেফজখানা জীবনের এক শীতের রাতের কথা

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৫



তখন হেফজখানায় পড়ি। সাত - আট সিপারা মুখস্থ করেছি মাত্র। সিপারার সাথে বয়সের তফাৎটাও খুব বেশি না। তো একদিন রাতের কথা। শীতের রাত। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। আমার ঘুম আসছে না। ঘুম আসছে না মূলত খিদের কারনে। এশার নামাজের পর আরও কিছুক্ষণ পড়তে হতো। তারপরই ছিল খাবারের সময়। আমার তখন খেতে ইচ্ছে করেনি। এখন সবাই ডালভাত খেয়ে ভরপেটে ঘুমিয়ে আছে কিন্তু আমি খিদের চোটে ঘুমুতে পারছি না।
বোর্ডিং ছিল দূরে। খাবারের সময় খাবার আসতো। খাবারের সময় শেষ হলে সাথেসাথে বাসনপত্র ধুয়ে রেখে দেয়া হত। সুতরাং এত রাতে ভাত পাবার কোন আশা তো নেই। ট্রাঙ্কে অবশ্য বিস্কুট আছে। কিন্তু শীতের এমন নিশ্চুপ রাতে কিছুতেই ট্রাঙ্ক খুলবার সাহস হচ্ছিল না।

অনেকটা সময় এভাবেই কেটে যাবার পরও যখন দেখি ঘুম আসছে না তখন উঠে বসলাম। ডিমলাইটের মিহিন আলোতে দুরুদুরু বুকে ট্রাঙ্কের কাছে গেলাম। খুব ধীরেসুস্থে ট্রাঙ্ক খুলে বিস্কুটের পট থেকে বিস্কুট বেরকরে যেই খেতে যাবো তখনই ট্রাঙ্কের ডালাটা সশব্দে পড়ে গেল। ভয় পেয়ে হাত থেকে বিস্কুটের দূরে ছিটকে পড়ল। সব মিলিয়ে বিরাট রকমের একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী হয়ে গেল।
পাশ থেকে পর্দা সরিয়ে হুজুর ডাক দিলেন, 'কে রে এতো রাতে, এই দিকে আয়, আয় বলছি এই দিকে!'
বেশ কয়েকজন ছাত্রও শোয়া থেকে উঠে বসলো তখন। আমি প্রচন্ড ভয়ে ভয়ে হুজুরের কাছে গেলাম। হুজুর জিজ্ঞেস করলেন, এত রাতে ট্রাঙ্ক খুলে কী করোস?। আমি কিছুই বলতে পারলাম না। সামনে কঠিন পরিণাম ভেবে আমি ভয়ে কাট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।

হুজুর অন্য এক ছাত্রকে বল্ল, 'দেখ্ তো অয় ট্রাঙ্কে কী করতাসিলো'!
তুলনামূলক বড় একজন ছাত্র তখন লাইট জ্বেলে ট্রাঙ্কের বাইরে পড়ে থাকা বিস্কুটের পটটা নিয়ে হুজুরের কাছে আসলো। হুজুর আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'রাইতে ভাত খাস নাই?', আমি নিচ দিকে তাকিয়ে ডানেবামে দুইবার মাথা নাড়ালাম শুধু। কথা বলার সাহস সাহস পেলাম না। হুজুর সেই ছাত্রকে কাছে ডাকলো। ভাবলাম বেত আনতে পাঠাবে। এত রাতে সকলের ঘুম নষ্ট করার অপরাধে আমি শাস্তি পাব। কিন্তু
হুজুর তখন ওই ছাত্রটিকে বোর্ডিংয়ে পাঠিয়ে দিলো - খাবার আছে কি না দেখার জন্য। কিছুক্ষণ পর সে শুধু এক প্লেট ভাত নিয়ে এসে জানালো ডাল তরকারি কিছুই পাওয়া যায়নি। তখন হুজুর আমাকে বসিয়ে বল্লেন,
'পানি আর লবন দিয়া মাখাইয়া সবগুলো ভাত খা'! আমি চুপচাপ হুজুরের আদেশ পালন করলাম।

স্বাদহীন সেই পানিভাত বা নুনভাত খেয়ে আমার সেদিন এতোটাই ভালো লেগেছিলো যে খেয়েদেয়ে বিছানায় যাবার পরও আরও অনেকটা সময় আমি জেগেছিলাম শুধু অপার্থিব এক ভালো লাগায়, নির্মোহ এক স্নেহের উপলব্ধিতে। কী ঘটে গেল, এটা ভেবে ভেবে আমার মুখে কেবল একটা তৃপ্তির হাসি লেগে ছিল...
আমি জানি না, সেই হুজুর এখন কোথায় আছেন। কেমন আছেন। দেশে আছেন না বিদেশে। ইহকালে না পরকালে। যেখানেই থাকেন, আল্লাহ যেন তাকে সদাসর্বদা হাসিখুশিই রাখেন!
____________________
আহমাদ মাগফুর,
লাখনৌ, ভারত

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫২

চাঁদগাজী বলেছেন:



ভারতে কি করছেন?

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৩০

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: পড়ছি ভাই

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: মাদ্রাসায় পড়া ঠিক না।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫১

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: কেন ভাই?

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হ্যাঁ অনেক সময় আমাদের প্রতাশ্যা প্রাপ্তি আমাদের প্রশান্তি দেয়। আপনার স্মৃতি ভালো লেগেছে।
লখনউ আমার প্রিয় একটা শহর। আশা করছি আপনার চমৎকার সময় কাটছে।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২৩

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: হ্যাঁ। নতুন পুরাতনের এক অদ্ভুত মিশেলে ছেয়ে আছে সবটা শহর। জীবনযাপন বড়ই মনোরম লাগে।

৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার জীবনের অভিজ্ঞতাটা ভালো লাগলো।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১১

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: পাঠ এবং অনুভূতি প্রকাশেরে জন্য ধন্যবাদ।

৫| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:২৭

জগতারন বলেছেন:
হুজুর তখন ওই ছাত্রটিকে বোর্ডিংয়ে পাঠিয়ে দিলো - খাবার আছে কি না দেখার জন্য। কিছুক্ষণ পর সে শুধু এক প্লেট ভাত নিয়ে এসে জানালো ডাল তরকারি কিছুই পাওয়া যায়নি। তখন হুজুর আমাকে বসিয়ে বল্লেন,
'পানি আর লবন দিয়া মাখাইয়া সবগুলো ভাত খা'! আমি চুপচাপ হুজুরের আদেশ পালন করলাম।


হেফজখানা ছাত্রদের জীবনের করুন দৃশ্য আমি উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময়ে খুব কাছ থেকে দেখেছি।
সে অভিজ্ঞতা থেকে বলছিঃ
হেফজখানা জীবনের যে অভিজ্ঞতা আপনি বর্ননা করেছেন তা বিরল বা অবিশ্বাস যোগ্য।
হেফজখানার এক একটা হুজুর এক একটা জীবন্ত আতঙ্ক বা হিংস্র জানোয়ার ছাত্রদের জন্য।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৩

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতাটা খুব ভয়ঙ্কর মনেহচ্ছে। বিশেষত শিক্ষকদের মানবিক হওয়া খুব প্রয়োজন। আমার অভিজ্ঞতাগুলো অবশ্যই ভাল ছিল। দিনেদিনে ভালোর পাল্লাটা ভারী হবে - এই তো আশা।

৬| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:২৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



লেখক বলেছেন: পড়ছি ভাই
-কি পড়ছেন?

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৫

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: আরবী ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার্স করছি।

৭| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৪৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আমাদের গ্রামে একটা বড় এতিমখানা আছে। খুব ভালো বদনাম নেই।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৮

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: আমার বিশ্বাস, আমাদের সমাজে এখনও পর্যন্ত ভালোর পরিমাণই বেশি তবে চর্চাটা বেশি খারাপের তাই হয়ত খারাপটাই বেশি চোখে পড়ে। পাঠ এবং অনুভূতি প্রকাশেরে জন্য ধন্যবাদ।

৮| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৩০

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার পড়াশোনা কেমন চলছে?

মাদরাসার এই গল্প শুনে দু'একজনের মাথা রীতিমত নষ্ট হবারই যোগার। এই কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী খোড়াক না পেয়ে তারা একটু মনো:ক্ষুন্ন কিন্তু হতেই পারেন। এটা তো তাদের একান্তভাবে অধিকারের মধ্যেই পড়ে, তাই না? তাদের হয়তো চিন্তা ছিল- হয় পেটানোর, না হয় ছাত্র হয়রানির আরও কঠিন কোন কিচ্ছা কাহিনীর বর্ণনায় হুজুরের ভালো একটা বদনাম উঠে আসবে গল্পে! কিন্তু আপনার স্মৃতিকথায় সেসবের কিছুই না এসে উল্টো হুজুরের সাধারণ মানবিক একটি দিক উঠে আসায় রীতিমত হতাশ তারা! তারপরেও, এই পরিস্থিতিতেও আপনার এই পোস্টে মাদরাসাবিরোধী বন্ধুরা কটাক্ষ করতে কিন্তু একেবারে ছেড়ে দেননি।

কথা হচ্ছে, আপনি তাদের প্রতি একটু সহৃদয়তার পরিচয় দিয়ে চেষ্টা করে দেখুন, হুজুরের বিরুদ্ধে কঠিনভাবে কোন পোস্ট দেয়া যায় কি না, তাহলে দেখবেন তারা আপনাকে কিভাবে কোলে তুলে নেন!

জাজাকুমুল্লাহ।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:১১

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: পড়ালেখা ভালোই চলছে আলহামদুলিল্লাহ।

‘‘তাদের হয়তো চিন্তা ছিল- হয় পেটানোর, না হয় ছাত্র হয়রানির আরও কঠিন কোন কিচ্ছা কাহিনীর বর্ণনায় হুজুরের ভালো একটা বদনাম উঠে আসবে গল্পে!’’

এইগুলো তো খুব খারাপ চাওয়া ভাই। একজন মানুষ হিসেবে- মানুষের ভাল হোক, এমনটাই তো চাওয়া উচিৎ। চাই সে আমার মতের হোক বা মতের বিপরীত। এরকম চিন্তা তো পরিহার করা চাই। কোথাও নির্যাতন হোক, হয়রানি হোক বা কারো বদনাম হোক - এমন আশা করা তো ঠিক না।

ভাল থাকুন!

৯| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৮

তারেক ফাহিম বলেছেন: শৈশব জীবনের অভিজ্ঞতা পড়ে ভালো লাগলো।


০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:১৩

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব তারেক ফাহিম। পাঠ এবং মন্তব্যর জন্য ভালোবাসা।

১০| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৪২

এলমা নুর বলেছেন: একজন শিক্ষকের গর্ভের বিষয় আর কি হতে পারেে আপনার মত একজন ছাত্র গড়তে পেরেছেন। আমরা শুধু হজুদের খারাপ দিগটা তুলে ধরি।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:১৮

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: শিক্ষক শব্দটা সত্যিই একটা যাদুর মত বিষয়। যাদের স্পর্শে অনেক শুকনো জীবন মুহূর্তেই সজীব হয়ে ওঠে। আবার তাদের ভুলের কারনেই আবার অনেক সময় সবকিছু এলোমেলোও হয়ে যায়। এ জন্যই , পৃথিবীতে সৎ শিক্ষকের কোন তুলনা হয় না।

১১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪০

জ্যাকেল বলেছেন: আপনার ঘটনা পড়ে মনটা আরো ভাল হয়ে গেল।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:২০

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: আপনার মন ভালো হওয়ার কারন হতে পেরে সত্যিই আনন্দিত অনুভব করছি।

১২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪৯

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
মাদ্রাসার ভাল দিকগুলো মিডিয়ায় আসেনা, আসে মন্দদিকগুলো আর তা নিয়েই হৈচৈ। যাক আপনার ভাল অবিজ্ঞতা হয়েছে। শুভ কামনা।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:২৪

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: একটা সময় মিডিয়া মানেই ছিল গোষ্ঠী কেন্দ্রিক। এখন সেটা অনেকটাই ব্যক্তি কেন্দ্রিকের দিকে ধাবমান। আশাকরি খারাপ আর ভাল দুনোটাই যদি সমানভাবে প্রকাশিত হয় তবে এখনও ভালোর পরিমাণটা জিতে যাবে। পাঠ এবং মন্তব্যর জন্য ভালোবাসা।

১৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: কেন ভাই?

ভালো চাকরী পাওয়া যায় না। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা যায় না।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২১

আহমাদ মাগফুর বলেছেন: এটা ঠিক বলেছেন, জেনেরাল হাই লেভেলের জব বা তাল মিলিয়ে চলার প্রত্যয় নিয়ে মাদরাসায় পড়া বা পড়ানো কোন ভাবেই উচিৎ না। যারা মাদরাসায় এসব উদ্যেশ্যে পড়তে যায় তারা যথেষ্ট বোকামি করে। জেনেরাল হাই লেভেলের জব বা তাল মিলিয়ে চলার জন্য তাদের অন্য পথ ও পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.