নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভুলকে ভুল বলাটা সৎ সাহসের পরিচায়ক বরং নীরব থাকাটাই শয়তানি....

মোগল

মোগল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমেরিকায় বা বাইরে কি সবাই ধনী? বাইরে সবাইকে অনেক টাকা সেভ করে চলতে হয়।

০৭ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:২১

ভার্সিটিতে থাকতে বাসা থেকে মাসে ২ হাজার টাকা দিতো (সব খরচ মিলিয়ে)। বাকি টাকা আমি জোগাড় করতাম টিউশনি করে আর কখনো কখনো দুপুরে না খেয়ে (বাইরে খেলে খরচ বেশি)। তারপর মাস্টার্সের শেষের দিকে বুঝলাম আব্বা আমাকে আর ছোট ভাইয়ের খরচ একসাথে সামাল দেয়া কঠিন তার। আমি না করে দিলাম বাসা থেকে টাকা দিবার। মাস্টার্সের চাপের জন্য তখন মাত্র দুটা টিউশনি ছিলো তখন, সেগুলো দিয়ৈই বাকিসব চালিয়ে নিতাম। ভার্সিটিতে থাকতে এক্সট্রা কিছু কোর্সও করেছি সেগুলোও নিজের টাকায় করেছি। পরে মাস্টার্স শেষে এক মাস পরেই আইসিডিডিআরবিতে চাকুরিতে জয়েন করি রিসার্স অফিসার হিসেবে ২০১২ তে। ভালো বেতন পেতাম ৩০-৩৩ হাজারের মতো। টাকা জমানো শুরু করি, কিছু ধারদেনা ছিলো সেগুলো শোধ করি, বাসায় টাকা (বাবা-মার জন্য খরচ- আব্বা বলে দেন ২/৩ হাজার প্রতি মাসে দিলেই হবে) পাঠাই, মহাখালিতে বন্ধুদের সাথে রুমে উঠি, আইএলটিএস দিই, বিমান ভাড়ার টাকা (‍৮৫ হাজার টাকার মতো যতদূর মনে পড়ে) জমাই, প্রয়োজনীয় শপিংও করি। আমার চাকরি ছিলো নভেম্বর, ২০১২ থেকে আগস্ট, ২০১৩ পর্যন্ত। নেদারল্যান্ডসে যাবার জন্য ১০০০ ইউরোর মত হাতে নিয়ে যাই, এর মধ্যে বড় ভাই ধার দিয়েছিলেন ৬০০ ইউরো আর কেনাকাটার জন্য মুক্তহস্তে উপহার দিয়েছিলেন ২০ হাজার টাকা (এর আগেও ভারত ট্যুরের সময় আমারে টেকাটুকা দিছে, বড় দিলের মানুষ)।

তারপর নেদারল্যান্ডস থেকে বাসায় টাকা পাঠানো চালু ছিলো, টাকা জমাতাম, নেদারল্যান্ডস ছাড়ার আগে প্রিয় চিনু ভাইয়ের কাছ থেকে ধারদেনা করে বিবাহ ও আম্রিকা যাবার কাজ সম্পন্ন করি। চিন্ময় ভাই শিখিয়ে ছিলেন কিভাবে টাকা কতভাবে সঞ্চয় করা যায়।
তারপর আমেরিকা আসার পর আবারও আমার ধার করতে হয়, কারণ এখানে বাড়ি ভাড়া নিবার জন্য আকাশচুম্বী ভাড়া ও সিকিউরিটি ডিপজিট দিতে হয়। তবে এক বছরের মধ্যে চিন্ময় ভাইয়ের টাকা সবার আগে শোধ করি। তারপর শাহজাদা ভাই ও সামি ভাইয়ের ধার শোধ করি। তখন টাকা বাঁচানোর জন্য হেঁটে হেঁটে ট্রেন স্টেশন পর্যন্ত যেতাম (মোট এক ঘন্টা সময় নষ্ট হতো) এবং সান ফ্রান্সিসকো রাস্তা যে পাহাড়িয়া উচুনিচু তাতে হাঁপিয়ে যেতাম। দুজনে কোন রেস্টুরেন্টে যাই নাই বা এক বছর খাটছাড়া মেট্রেসে থাকতাম। ঘরে আসবাবপত্র বলতে ছিলো একটা চেয়ার, একটা টেবিল। ফ্যান বাড়িওয়ালার ছিলো। বাসায় কাউকেই দাওয়াত দিতাম না। তখন বাড়ি ভাড়া দিতাম ঠিক আমার বেতনের অর্ধেক, ১৪০০ ডলার। আমাদের ছিলো স্টুডিও, একটাই রুম-ডাইনিং,লিভিং,বেডরুম,ক্লজেট, স্টাডিরুম সবই এক জায়গায়। রুম থেকে আবার কিচেনও দেখা যায়।

যাই হোক এক বছরে আমার কিপ্টামি ও বউয়ের আমার চেয়ে ১০০গুণ বেশি কিপ্টামি করে সকল ধারদেনা শোধ করে মোটামুটি আমরা একটু উঠে দাঁড়াতে শুরু করি। তারপর ৩০০ ডলার বাঁচানোর জন্য বউ আরেক বাসা খুঁজে পায়- এলাকা ভালো না কিন্তু কি করা। বাসা পছন্দ হয়ে যায়- খাট কিনি! সে একটি চাকরি শুরু করে, অটিস্টিক বাচ্চাদেরকে ট্রেইন করার- সার্টিফিকেট ও কোর্স করার পর।
আস্তে আস্তে একটু স্বচ্ছল হই। দুজনে কষ্ট করে ১-২ ডলার বাচিয়ে মোটামুটি একটু ভালো পজিশনে আসি। এদিকে বাসা ভাড়া একটু কম হওয়ায় টাকাও বেঁচে যায়। বাবা-মাকে টাকা দেয়া বন্ধ হয় নাই, বুদ্ধি করে একবারে বড় অংশ টাকা পাঠিয়ে দিতাম তাতে টাকা পাঠানোর খরচ কম।

অনেকেই প্রশ্ন করে আমার গাড়ি নাই কেন, গ্রিন কার্ড নাই কেন (এপ্লাই করে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার ডলার লাগে), বড় বাড়িতে থাকি না কেন, স্কুটার কেন চালাই, এক রঙের টিশার্ট পড়ে কেন ঘুরি, অন্য কোন স্টেটে ঘুরতে যাই না কেন- কারণ হাতে টাকা না রেখে খরচ করা রিস্কি। আমার আপনাদের মতো টেকাওলা বাপ নাই যে আম্রিকায় বিপদে পড়লে সাহায্য করতে পারবে।

এটা শুধু আমি না। আমেরিকায় যারা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে তাদের সবারই প্রায় একই কাহিনী। কেউ অবিবাহিত হলে হয়তো তারা ডর্মে বা অন্যদের সাথে থেকে স্বচ্ছল থাকে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়া বা নিউইয়র্কের মতো জায়গায় থাকলে বাড়ি ভাড়া আর কিডনীর দাম প্রায় একই হয়ে যায়। এছাড়া আপনার ইমারজেন্সীতে বাংলাদেশ থেকে টাকার সাহায্য আসার সম্ভাবনা কম। আপনি নিজেও নিজের পরিবারকে ঋণগ্রস্থ করতে চান না।

অনেকেই আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখেন বা কল্পনার রাজ্যে কেউ আমেরিকা গেলে তাকে মিলিয়নিয়ার ভাবেন। ব্যাপারটা তাদের জন্য।

কোর্টেসি @খালিদ ভাই, ক্যালিফোর্নিয়া

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৪১

নীল আকাশ বলেছেন: নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। অনেকেই যাবার আগেই অলীক সব স্বপ্ন দেখে।

২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:১৩

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
খুবই ভালো এবং বাস্তব সম্মত লেখা।

৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৪৭

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনারা কি বেশ বড় একটা গ্রুপ ক্যালিফোর্নিয়াতে ?
মানে অনেকেই থাকেন ?

হ্যাঁ হিসেব করে চলা আমাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। আমার বোন ৫/৭ বছর পর দেশে এসছে যাবার পর। এর মাঝে তাকে আমাদের এবং শ্বশুর পরিবারের অনেককিছু সামাল দিতে হয়েছে।

৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:০০

ফুয়াদের বাপ বলেছেন: ত্ক্তি কঠিন বাস্তবতা ফুটে উঠেছে আপনার লেখনীতে। পৃথিবীর যে যেই প্রান্তই থাকেন, সঞ্চয়ের বিকল্প নাই। সঞ্চয়ী না হলে পদে পদে বিপদে পড়তে হবে (যাদের বাপের রেখে যাওয়া টাকা আছে তারা বাদে)। তবে হ্যাঁ, উপার্জনের পরিমান সন্তোষজনক হলে কিছুটা হাতখোলা খরচ করা যেতে পারে নিজের আত্বার সুখের আশায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.