নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক যে এক পাখিরাজ্য ছিল

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:১৮

এক যে এক পাখিরাজ্য ছিল, কোনো এক সত্যযুগে -
খুব দয়াবান আর প্রজাবৎসল ছিলেন পাখিরাজ্যের রাজা
আর তার সমগ্র পারিষদ।
তাদের মনে একবিন্দু ক্রোধ বা নিষ্ঠুরতা ছিল না,
এতটুকু প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা ছিল না,
একফোঁটা নৈরাজ্য ছিল না পাখিরাজ্যের কোথাও,
তারা খুব ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন;
প্রজাপাখিদের সুখের জন্য তাদের চিন্তার অন্ত ছিল না,
ছিল না চেষ্টার কোনো ত্রুটি;
নিজেরা না খেয়ে, সব তারা বিলিয়ে দিতেন প্রজাদের।
তাদের বাণী আর বচন ছিল গানের চেয়েও অমিয়-মধুর,
যা শুনে প্রজাদের প্রাণ জুড়িয়ে যেত
আর বেঘোরে সুখমগ্ন হতো তারা।

প্রজাদের কখনো কামড়ায় নি, ঠোকরায়ে শরীর ঘা করে
মেরে ফেলে নি রাজা বা তার অমাত্যগণ,
গাছের বুকে গোপন গর্ত খুঁড়ে
কোনো পাখিকে লুকিয়ে ফেলে নি চিরদিনের জন্য,
এমনকি কাউকে ঝাঁটিয়ে পরদেশেও পাঠায় নি,
তাই, প্রজাপাখিদের মনে কোনো ভয় বা আতঙ্কের চিহ্নমাত্র ছিল না;
তারা পরম সুখে বারোমাস নিঃশঙ্ক বিলাসী জীবন কাটাতো
বনময় উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে।

গুণমুগ্ধ সুখী প্রজারা প্রাণের চাইতেও
বেশি ভালোবাসতো রাজ-রাজড়াদের।
কোনো পাখিরাজা বা জনৈক সভাসদ পটল তুললে,
কিংবা দৈবাৎ গুরুতর অসুস্থ হলে, মৃত্যু হয় নি জেনেও
'ওপারে ভালো থাকবেন' বলে কোনোরূপ হাসিঠাট্টা করে নি,
কোনো ধরনের আনন্দ-উল্লাসও করে নি প্রজাপাখিরা,
বরঞ্চ সারা রাজ্য শোকে মোহ্যমান হতো।
দুঃখাকুল আপামর প্রজারা সারে সারে
গলাগলি ধরে প্রভুদের ‘বেহেশ্‌ত নসিব' কিংবা আশু-সুস্থতার জন্য
সৃষ্টিকর্তার দরবারে প্রার্থনায় কেঁদে কেঁদে
চোখ ক্ষয় করে ফেলতো।
আহা, আকাশ-বাতাস-মেঘ গলে গলে পড়তো প্রজাদের কান্নায়,
আর,
কান্নার আবহে মৃতদের আত্মা আনন্দ ও তৃপ্তিতে বিভোর হতো।

আহা, সেই রাজ্যে কোনো তেলবাজ ছিল না। চাটুকার ছিল না।
ধান্ধাবাজ ছিল না। রাজারাও ছিলেন অতিশয় অমায়িক,
ভান ও ভনিতাবিমুখ - তৈল পছন্দ করতেন না বিলকুল।
সেকালে কোনো কোনো রাজ্যে তো নিয়মই ছিল – কারো বক্তৃতা মানেই
রাজাদের নামে প্রশংসা, সংবাদ সম্মেলন মানেই রাজাদের নামে
বানোয়াট সুনামের ফিরিস্তি - এর বাইরে কিচ্ছু বলা যাবে না
অথচ, বিদিত সেই পাখিরাজ্যে কেউ সাহসই পেতেন না
রাজাদের নামে একপ্রস্থ স্তুতি বর্ষণের, বরং তারা উন্নয়নের
ধারাবিবরণী পড়তে পড়তেই প্রাণান্ত হতেন।

আহা, সে-রাজ্যের রাজা ও তার সভ্যরা ছিলেন খুবই সত্যবাদী
তারা কখনোই বিশ্বাস করতেন না যে, ‘রাজনীতি’ মানেই
কেবল বিরোধী দলের নামে বিষোদগার করা, জনসেবা নয়
এজন্য, বাস্তবিকই বিরোধীপক্ষের নামে কুৎসা গাইতে গাইতে
কখনোই মুখে ফেনা তুলে ফেলতেন না,
কাউকে গালিও দিতে জানতেন না
এবং দিনের পর দিন মিথ্যা প্রচার করে প্রজাদের কাছে
তা সত্যে পরিণত করতেন না
তারা কোনোদিনই নিজে চুরি করে অন্যকে বলতেন না ‘তুই চোর’
কস্মিনকালেও তারা সাজানো ও পাতানো নির্বাচন করতেন না
নির্বাচনের ফলাফলও নির্বাচনের আগেই স্থির করে রাখতেন না
‘স্বৈরাচার’ কথাটা তো তাদের অভিধানেই ছিল না
আহা, তারা কত যে ভালো রাজা ছিলেন, তা লিখতে গেলে
সব সাগরের সমগ্র পানিকে হতে হবে দোয়াতের কালি
মুখে মুখে বর্ণনা করতে গেলে মানব-পৃথিবীর সবাইকে একযোগে
এক শতাব্দীকাল কীর্তন করতে হবে

সেই যে এক স্বপ্নরাজ্য ছিল, রূপকথার সত্যযুগে,
তার জন্য প্রজাপাখিরা এখনো ব্যাকুল হয়ে কাঁদে।

১৩ জুন ২০২০

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৪৮

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: সেই স্বপ্ন রাজ্য একদিন মূর্ত হবে।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ হাসান জামাল গোলাপ ভাই। শুভেচ্ছা।

২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: অতি মনোরম।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.