নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ঘুড্ডির পাইলট; বিমানের না।।

তুমি আমি সে

বহুপথ হেঁটে আমি বড় ক্লান্ত; দোর খুলে নেমেছি সেই কবে তোমার দুয়ারে দাঁড়াব বলে.

তুমি আমি সে › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাচা গিলে খাসনে, পেটে গরু হবে

২৫ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ২:৩৫

বাবা যেদিন বাজার থেকে আধা সের গরুর গোস্ত কিনে আনতেন সেদিন আমাদের ঘরে একটা বড় উৎসব আমেজ ভাব চলে আসত।
মা শাড়ির আচলকে কোমড়ে গুজে জিরা মসলা বাটতে বসে যেতেন। আমি কাচা গোস্ত গুলোকে নেড়ে চেড়ে দেখতাম,মুখের কাছে নিয়ে গেলেই মা দিত বকুনী।বলত "কাচা গিলে খাসনে,পেটে গরু হবে"।
আমি চোখ ড্যাব ড্যাব করে মা কে বলতাম "গরু হলে বেশ হবে মা, রোজ ই তো তাহলে গোস্ত খেতে পারব চিবিয়ে চিবিয়ে"।

মা আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে হাসি মুখ করে বলত "আমার পাগল ছানা একটা"।

খানিকটা দূরে বসে মা ছেলের খুনসুটি দেখে বাবা ঠোটের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসতেন।

একসময় নুনে,মরিচে মিশিয়ে মা ঝোল ঝোলকরা গোস্ত চুলা থেকে নামাতেন। আমি দৌড়ে হামলে পড়তাম।একটা চামচে এক টুকরো আমায় বাড়িয়ে দিয়ে মা বলতেন -"ধর খোকা, নুন হয়েছে কিনা দেখ"। আমি প্রথম টুকরো খেয়ে দুষ্ট গাল করে বলতাম -"এক টুকরোয় কি বুঝা যায়? আরেক টুকরো দাও না মা, খেয়ে ঝটপট বলে দিই। মা আরেক টুকরো দিত। আমিও খেতাম। স্বাদ করে খেতাম। আর মায়ের শাড়ির আচলে আয়েশ করে মুখ মুছতাম।

সেদিন বাবা এক পোয়া গোশত এনেছিল। এত কম এনেছে কেন জানতে চাইলে বাবা মুখ মলিন করে বলেছিল "আজকের গরুটা তোর মত বাচ্চা, তাই গোস্ত কম দিয়েছে"।

সবে এক দুই গুণতে শিখেছি। মা যখন মসলা বাটায় ব্যস্ত তখন গোস্ত গুলো ধরতে ধরতে আনমনে গুণে দেখলাম মোট পনের টুকরো গোস্ত আছে।

একসময় মা আলু মাখিয়ে ঝোল করে গোস্ত রাধে। তিন টুকরো আমায় দেয় নুন মরিচ পরখ করার জন্যে। আমি খেতে খেতে হিসেব রাখি আর বারো টুকরো আছে।

রাতে মা প্লেটে করে আরো পাঁচ টুকরো ভাত মাখিয়ে নলা করে আমায় খাওয়ায়। আমি খেতে খেতে হিসেব রাখি আর সাত টুকরো আছে।

এরপরের দিন সকালেও আমার প্লেটে গোস্ত আসে।দুপুরেও গোস্ত আসে। খেতে খেতে হঠাত হিসেবে গন্ডগোল বেঁধে যায়। হিসেব করে দেখলাম বারো টুকরো গোস্ত ই আমার পেটে।

বাবা খায়নি, মা ও খায়নি।
অনেক বছর পর আমি যখন অংক করানো শিখলাম।হঠাত অংক করতে করতে একদিন একটা অংক মিলালাম-
এক পোয়া গোস্তে যদি পনের টুকরো হয়। তবে আধা কেজি গোস্তে তিরিশ টুকরো।

যদি পাচ টুকরো করে ভাগ করা হয় তবে তিনজনে দুই বেলা খেতে পারবে। কিন্তু যেবার বাবা আধা কেজি গোস্ত আনতেন প্রত্যেক বার ই আমার ভাগে পাঁচ টুকরো করে মোট ছয় বেলা গোস্ত জুটত।
পাঁচ টুকরো করে ছয় বেলা।

অংকটার উত্তর:-
"বাবা-মা কোনদিন ই গরুর গোস্ত খান নি"
অংকটার মন্তব্য:-
অথচ গরুর গোস্ত বাবার ভীষণ প্রিয় ছিল।
অথচ গরুর গোস্ত মায়ের ভীষণ প্রিয় ছিল।

আজ আমার ৪ তলা ফ্লাটে থাকি তিনজন। আমি, আমার স্ত্রী ও ছেলে। প্রতিদিনই প্রায় গোস্ত কেনা হয়। আগের মত আধা কেজি না। ২ কেজি, ৩ কেজি। কিন্তু আগের মত সেই উচ্ছাস আর নেই, নেই মায়ের হাতের রান্নার সেই স্বাদ, নেই বাবার মুচকি হাসির মাঝে অফুরন্ত ভালবাসা।
মা বাবা দুজনেই আজ পরপারে
ভালো থাকুক সবার মা সবার বাবা

"রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা। হে আল্লাহ্‌ শিশুকালে আমার মা বাবা যেমন স্নেহ মায়া মমতা ভালোবাসা দিয়ে লালন করেছিলেন, তুমিও তাঁদের সে ভাবেই লালন কর"।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ২:৪৫

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: আহারে আহারে আফসোস আমাদের বিলাসী জীবন।

২| ২৫ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ২:৫৬

মুক্তা নীল বলেছেন:
এই স্মৃতিচারণ আমারও মনের ভেতর ভীষণ দাগ কেটে দিল ।
মহান আল্লাহ অবশ্যই আপনারমা ও বাবাকে
জান্নাতবাসী করুন।

৩| ২৫ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:১৯

করুণাধারা বলেছেন: খাননি কথাটা পুরোপুরি ঠিক না, সন্তানের তৃপ্তিতে বাবা-মায়ের তৃপ্তি। তাই যদি সকলে সমান ভাগ করে খেতেন, তাহলে বাবা মা যে আনন্দ পেতেন, তার চাইতে সন্তানকে ছয় বেলা খাইয়ে বাবা মা অনেক বেশি আনন্দ পেয়েছেন। চমৎকার গল্প, ++++

৪| ২৫ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:১০

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা

আল্লাহ তাআলা উনাদের জান্নাত দান করুন।

মা বাবা এমনই তো :)

৫| ২৫ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:১৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ভালো থাকুক সবার মা বাবা সন্তান ....সুন্দর ।

৬| ২৫ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


পাকিস্তানের সময়, এবং আজকের বাংলাদেশের সময়, বাংগালী পরিবারগুলো দরকার মতো আয় করে, সুখে শান্তিতে থাকতে পারেনি; জাতিকে দক্ষ করে, বিশ্বমানের জাতিতে পরিণত করা হয়নি, দারিদ্রতা ধৈন্যতা জাতিকে অশান্তির মাঝে রেখেছে; আজ দরকার সঠিক অর্থনৈতিক ভাবনা, যাতে জাতি দারিদ্রতা থেকে বের হয়ে আসতে পারে।

আপনার পরিবার এখন মাংস বেশী খাচ্ছে, মনে হয়। বেশী মাংস খেলে, ভয়ানক সমস্যা হবে।

৭| ২৫ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: পড়তে পড়তে চোখে পানি চলে এসেছে।

৮| ২৫ শে জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৯

আহা রুবন বলেছেন: মা-বাবারা এমনই। মনে দাগ কেটে গেল।

৯| ২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:০৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: তুমি আমি সে,




হৃদয় মোচড়ানো অনুভব। স্মৃতির ঢেউ জাগানিয়া অদ্ভুত লেখা ।
হায়!!!!!!! মনের ঝুল বারান্দা থেকে আমাদের স্মৃতির নিকানো উঠোন এখন যে সহস্র যোজন দূর !

১০| ২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ৮:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি পড়ে আবেগে আপ্লুত হলাম।

১১| ২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ৯:১৯

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: দারুণ লেখা ..

মা-বাবা সন্তানের সবচেয়ে বড় আপনজন।

১২| ২৫ শে জুন, ২০১৯ রাত ১০:৪৭

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: আপনি অনেক বড় ব্লগার কারো মন্তব্যে ধন্যবাদ দেওয়াটা প্রয়োজন মনে করেননি - আপনি সামহোয়ারইনব্লগের গর্ব

১৩| ২৬ শে জুন, ২০১৯ সকাল ১০:৩৫

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: খুবই সুন্দরভাবে গল্পের মাধ্যমে বাবা-মা এর ভালোবাসা তুলে ধরেছেন ভাই, পৃথিবীর সকল বাবা-মা'ই তাদের সন্তানকে নিজেদের চেয়েও অধিক বেশি ভালোবেসে থাকেন, নিজে বাবা হওয়ার পর আমার সেই-বোধের সত্যতা নিশ্চিত করছি।

সেই বাবা-মা'কে এখনকার কিছু অকৃতজ্ঞ সন্তানেরা বৃদ্ধাশ্রম নামের মানসিক কারাগারে পাঠায়! তারা কেমনে থাকতে পারে নিজের জন্মদাতা মা-বাবা'কে দূরে রেখে! আমার এই হিসেব মিলে না।

অনেক অনেক ভালো লাগা জানবেন পোস্টে

শুভকামনা আপনার জন্য

১৪| ২৬ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৭

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আমীন।

১৫| ২৬ শে জুন, ২০১৯ রাত ৯:৪০

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: "রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা আহ্ ভাই,চোখের কোণে পানি চলে আসছে। হৃদয়স্পর্শী কথাগুলো লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.