নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ঘুড্ডির পাইলট; বিমানের না।।

তুমি আমি সে

বহুপথ হেঁটে আমি বড় ক্লান্ত; দোর খুলে নেমেছি সেই কবে তোমার দুয়ারে দাঁড়াব বলে.

তুমি আমি সে › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাজেক ভ্যালি বা সাজেক উপত্যকা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি ভ্রমণ

০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৩৮

সাজেকে সর্বত্র মেঘ, পাহাড় আর সবুজ। এখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেয়া যায়। সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে ট্রেকিং করে কংলাক পাহাড়-এ যাওয়া যায়। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবনযাপন, চারদিকে মেঘের আনাগোনা দেখা যায়। এখানে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে উপজাতিয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এবং তাদের সংস্কৃতির নানা উপকরণ উপভোগ করা যায়।

সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার সর্বউত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। আর দীঘিনালা থেকে প্রায় ৪৯ কিলোমিটার। সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত। সাজেক ইউনিয়ন হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন; যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল।

সাজেক ভ্যালি বা সাজেক উপত্যকা বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থল। রাঙামাটির একেবারে উত্তরে অবস্থিত এই সাজেক ভ্যালিতে রয়েছে দুটি পাড়া- রুইলুইপাড়া এবং কংলাকপাড়া।

১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়া; এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। আর কংলাক পাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সাজেকে মূলত লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা উপজাতি বসবাস করে। রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখে যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। এই জন্য সাজেক ভ্যালিকে রাঙামাটির ছাদ বলা হয়। সাজেকে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী মানুষের বসবাস। তাঁদের বাড়িঘর বাঁশের মাচানের উপর তৈরি করা




এবারের ট্যুরে আমার সাথে যুক্ত হয়েছে, রংপুরিয়া- মুকুল তার স্ত্রীসহ (সুমি); নোয়াখাইল্লা- আরিফ ও কুমিল্লাইয়ান- সজিব। ০১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার আমরা ফকিরাপুল থেকে রাত ১১ টায় রওনা দেই খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটির হলেও যোগাযোগের জন্য সহজ পথ হল খাগড়াছড়ি।

আমরা সবাই প্রথম বারের মতো খাগড়াছড়িতে যাচিছ। মোটামুটি সমতলেই চেঙ্গি নদীর পশ্চিম তীরের ছিমছাম শহর খাগড়াছড়ি। শহরটির চারদিক ঘিরে রেখেছে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়-টিলা। পাহাড়ের উচু-নিচু; আকা-বাকা রাস্তায় বাস চলছে করছে হেলে-দুলে; তাতে আমার আর আরিফের অনুভুতি হচ্ছে অন্য রকমের। মুকুল, সুমি আর সজিব বাসের মধ্যে ঘুুমিয়ে পড়েছিল।

ঠিক সকাল ৬ টার দিকে বাস আমাদেরকে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরে নামিয়ে দিল। আমরা গাড়ি থেকে নামার পর-পরই একটি জীপ গাড়ি বা চান্দের গাড়ি ভাড়া করলাম। ভাড়া দামা-দামি বা গাড়ি পছন্দ করে নেওয়ার কোন অপশন সেখানে নাই। আমরা ৮১০০ টাকায় চান্দের গাড়ি ভাড়া করলাম। গাড়ি আমাদের সাথে দুইদিন থাকবে; সাজেক ও খাগড়াছড়ির ৩/৪ টা স্পট ঘুড়িয়ে দেখাবে। গাড়ি ভাড়া করে আমরা সবাই টয়লেটের কাজ সেড়ে; সকালের নাস্তা করলাম ফেনী হোটেল নামক এক হোটেলে, খাবার টেষ্ট তেমন একটা ভাল না; বলা যায়- এভারেজ।

ঠিক সাড়ে ৭ টায় আমরা খাগড়াছড়ি শহর থেকে বাঘাই হাটের দিকে রওনা করলাম। আমি আর সজিব চান্দের গাড়ির ছাদে বসেছি; ফিলিংস নেবার জন্য। আমাদেরকে সকাল ১০ টার মধ্যে বাঘাইহাট পৌছাতে হবে। কেননা- বাঘাইহাট থেকে সাজেক যাওয়ার জন্য বাকি রাস্তা জনসাধারনের প্রবেশ নিষেধ। সাজেকে যেতে হলে বাঘাইহাট থেকে সাজেক যাওয়ার বাকি রাস্তা টুকু নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে দিনে দুইবার (সকাল ১০ টায় এবং দুপুর ৩ টায়) সেনাবাহিনির এসকোর্টের সাথে যেতে হয়। এছাড়া সাজেকে যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব না। আমার বাঘাই হাটে সকাল ৯ টায় পৌছে গেলাম সেনাবাহিনির প্রথম এসকোর্ট’টা কোন ভাবে মিস করতে চাই না। বাঘাই হাটে পৌছে আমার ওখানকার স্থানীয় বাজার ঘুড়ে দেখলাম এবং পাহাড়ের কিছু খাবার (জাম্বুড়া, মা্লটা, পেপে, কলা) খেলাম।

১০ টার কিছু পড়ে সেনাবাহিনির এসকোর্টে আমরা বাঘাইহাট থেকে সাজেকে উদ্দেশে রওনা করলাম; এখান থেকে দুরুত্ব প্রায় ৩৫/৩৮ কিলোমিটরি হবে। জিবনে প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনির নিরাপত্তায় যাচ্ছি; অনেক ভাল লাগছে। শুক্রবার হওয়ার কারনে অনেক পর্যটক সাজেকে ঘুড়তে এসেছে; রাস্তা অনেক জ্যাম হয়ে আছে। সাজেক ভ্যালিতে আমাদের পৌছাতে ঘড়িতে সময় হল দুপুর ২ টা।

আমরা রিসোর্ট আগেই বুক করেছিল। রুমে এসে রেষ্ট নিয়ে আমরা সবাই ফ্রেশ হলাম। এখানে হোটেল বা রেস্টুরেন্ট গুলোতে খাওয়ার জন্য আগে থেকে অর্ডার দিতে হয়। অর্ডার করলে ২/১ ঘন্টার মধ্যে তারা খাবার রান্না করে দেয়। একটা হোটেলে লাঞ্চ অর্ডার করলাম- পাহাড়ি মুরগি, ভর্তা, ডাল, কাকরোল আর বাশের সবজ্বি আর ভাত। প্যাকেজ জনপ্রতি ২২০ টাকা।

লাঞ্চ করার পর বাশের চোঙ্গায় আমরা চা খেলাম। এরা এটাকে বলছে ব্যাম্বু টি; দাম ২০ টাকা করে। চা খাওয়ার পরে বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে আমরা কংলাক পাড়ায় যাবো। এই পাড়ায় আছে পাহাড়িদের বসবাস; পাড়াটি কংলাক পাহাড়ে অবস্থিত। যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৮০০ ফুট উপরে। অনেক কষ্ট করে পাহাড়ে আমার উঠলাম।

সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাহাড়। চূড়ায় উঠতে উঠতে দেখতে পাচ্ছি মিজোরাম সীমান্তের পাহাড় আর সবুজের মিতালী। কংলাকের চূড়ার উঠে চারপাশে তাকালে সত্যি সত্যি ভুলে যাচ্ছি যে আমি ছিলাম কোন যান্ত্রিক নগরে দূষিত বাতাস, দূষিত শব্দ এবং কর্কট সমাজে জন্ম নেয়া এক মানুষ। আমার মন-প্রাণ-দেহ পুলকিত হচ্ছে এক বিশুদ্ধ চিন্তা এবং অনুভূতিতে।

কংলাক পাহাড় থেকে আমরা সবাই সূর্যাস্তটা উপভোগ করলাম। সন্ধ্যায় কংলাক পাহাড় থেকে নেমে রুইলুই পাড়ার দিকে আসলাম। এসে হেলিপ্যাড ও সাজেক জিরো পয়েন্টে এসে রাত পযর্ন্ত সময় কাটালাম। ডিনার করলাম রাত ৯ টায়। আমরা ডিনার করলাম ওখানকার লোকাল ফুড ব্যাম্বু চিকেন আর চা, পরাটা দিয়ে। ডিনার শেষে বাকিরা রুমে গেছে ঘুমাতে। আমি আর আরিফ হিলপ্যাডে বসে কিছুক্ষন সময় কাটালাম; তারপর একসময় আরিফ’ও রুমে চলে গেল ঘুমানোর জন্য; অনেক ক্লান্ত তারা। রাত তখন ১২ টা বাজে আমি একা একা রুইলুই পাড়ার এ মাথা থেকে শেষ মাথা পযর্ন্ত পায়ে হেটে হেটে ঘুড়ে দেখছি; আমার মতে অনেক পর্যটকরা রাস্তা হাটছে- দল বেধে।

ভোর সাড়ে ৪ টায় ঘুম থেকে উঠলাম মেঘ দেখার জন্য। কিন্তু তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি বারান্দায় দাড়িয়ে বউয়ের কথা ভাবছিলাম সাজেক শব্দটা মনে আসলেই যে কারও চোখের সামনে ভাসে মেঘময় এক পৃথিবী। এখানে ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতি তার রূপ বদলায়। কখনও তীব্র শীত, মুহূর্তেই হয়তোবা শীত অথবা বর্ষা। চোখের পলকেই হয়তো বা আপনার চারপাশ ঢেকে যাবে সাদাকালো মেঘে। এ যেন মেঘের উপত্যকা। নিজেকে মনে হবে মেঘের রাজ্যের বাসিন্দা। হয়তো মনের অজান্তেই খুঁজতে থাকবেন সাদা মেঘের পরী অথবা মেঘের মধ্যে পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়ে আসা রাজ পুত্রকে।

বৃষ্টি থামলো; আমার মতো সবাই অপেক্ষা করছে বৃষ্টি থামার জন্য। সবাই যাচ্ছে হেলিপ্যাডের দিকে মেঘ দেখার জন্য। হেলিপ্যাডে আমারা অনেকক্ষন সময় কাটালাম এবং উপভোগ করলাম সাজেকের আসল রুপটিকে।

নাস্তা সেড়ে সকাল ১০ টার দিকে আমরা সাজেক ছেড়ে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি যাওয়ার আগে স্থানীয় বাজারটি কিছু সময়ের জন্য ঘুড়িয়ে দেখলাম। দুপুর ২ টার কিছু আগে আমরা খাগড়াছড়িতেে এসে পৌছালাম। লাঞ্চ করার পরে আমরা রওনা দিলাম খাগড়াছড়ি শহরের ঝুলন্ত ব্রিজে।

ঝুলন্ত ব্রিজে দেখে আমরা ৩ টার দিকে রওনা দিলাম রিসাং ঝর্ণা দেখার জন্য। এটি খাগড়াছড়ি থেকে ১০/১২ কিমি। আমাদেরকে ২ কিমি. পথ পায়ে হেটে যেতে হয়েছে। অনেক কষ্ট হয়েছিল যেতে; কিন্ত ঝর্ণা দেখে সব কষ্ট ঝর্ণার পানির সাথে মিশে গেলে। ঝর্ণার পানিতে গোসল করলাম। অনেক ঝুকি ছিল; তারপরেও লোভ আর ধরে রাখতে পারি নাই আমার। রিসাং ঝর্ণা থেকে ব্যাক করতে আমাদের সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল।

সন্ধ্যায় আলুটিলা পাহাড়ে এসে আমরা আলুটিলা গুহার মধ্যে প্রবেশ করলাম। এটি একটি রহস্যময় গুহা। স্থানীয়রা একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা। তবে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে অবস্থিত বলে একে আলুটিলা গুহাই বলা হয় । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়, হৃদয় ছুয়ে যায়। আলুটিলা খাগড়াছড়ি জেলার সব চাইতে উচু পর্বত। নামে এটি টিলা হলেও মূলত এটি একটি পর্বতশ্রেনী। এখান হতে খাগড়াছড়ি শহরের বেশ কিছুটা অংশ দেখা যায়। শুধু তাই নয় পাহাড়ের সবুজ আপনার চোখ কেড়ে নেবে। আকাশ পাহাড় আর মেঘের মিতালী এখানে মায়াবী আবহ তৈরি করে।

ইতিহাস থেকে জানা যায় পূর্বে এই পাহাড়টির নাম ছিল আরবারী পর্বত। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই জেলাটিতে খাদ্যাভাব দেখা দিলে এখানকার মানুষ এই পাহাড় হতে আলু সংগ্রহ করে খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। সেই থেকেই লোকমুখে প্রচারিত হতে হতে এই স্থানটির নাম এখন আলুটিলায় রূপান্তরিত হয়েছে।

বর্ষার স্নিগ্ধতায় পাহাড়ের রুপে আসে লাবণ্যতা। আর ক্ষনে ক্ষনে রুপ বদলানো বিবির মুডের মত সাজেকের রোমান্টিক আবহাওয়ায় আমি হয়েছি বিমোহিত। এছাড়াও আকাশ এখানে দিগন্তের নীল ছুঁয়ে পাহাড়ে হেলান দিয়ে ঘুমায়। মেঘ উড়না উড়িয়ে দিগঙ্গনার নৃত্য করে।

রাত এখন ৮ টা বাজে; আমাদের দুই দিনের ট্যুর
এখানেই হয়তো শেষে। চান্দের গাড়ি এখন আমাদের কে নিয়ে যাচ্ছে খাগড়াছড়ি শহরের শ্যামলী বাস কাউন্টারে। ঢাকার উদ্দেশ্যে খাগড়াছড়ি থেকে আমাদের বাস ছাড়বে রাত ৯ টা ১৫ মিনিটে।

এবার বাস কাউন্টারে যাদুর শহরে ফেরার প্রহর গুনছি, আর ভাবছি - জীবনের কঠিন অংকগুলো খুব সহজে মিলবে কিনা জানি না। তবে আত্মবিশ্বাস এবং কিছু মধুর স্মৃতি নিয়ে ফিরছি মেঘের রাজ্য থেকে। কারণ রয় এম. গুডম্যান বলেছিলেন - মনে রাখবেন সুখ ভ্রমণের একটি উপায়, একটি গন্তব্য নয়।

- ধন্যবাদ।।

- লিমন ইসলাম।
উত্তরা, ঢাকা।
৭ অক্টোবর, ২০২০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৫৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অপরূপ আমার বাংলাদেশ । এমন দেশটি কোথায় তুমি পাবে নাকো খুজে।

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পশ্তের মাধ্যমে সাজেক ঘুরে এলাম এই করনার মধ্যেও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.