নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ঘুড্ডির পাইলট; বিমানের না।।

তুমি আমি সে

বহুপথ হেঁটে আমি বড় ক্লান্ত; দোর খুলে নেমেছি সেই কবে তোমার দুয়ারে দাঁড়াব বলে.

তুমি আমি সে › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহেশখালী দ্বীপ-সোনাদিয়া দ্বীপ ও কক্সবাজার ভ্রমণ ২০২০

১৮ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:২৫



গত ১২ অক্টোবর; সোমবার, কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই এই ট্যুরের আয়োজন হয়। আমরা এবার যাচ্ছি দেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালীতে। এর সাথে যোগ হচ্ছে সোনাদিয়া দ্বীপ।

সকাল সাড়ে ১১ টায় ঢাকা বিমান বন্দর থেকে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-১৪১ ’এ করে আমরা কক্সবাজার পৌছালাম। একদিন কক্সবাজারে থেকে পরের দিন সকাল ১০ টার দিকে রওনা দিলাম দেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালী ও সোনাদিয়া দ্বীপের দিকে।

মহেশখালী উপজেলা কক্সবাজার জেলার একটি পাহাড়ী দ্বীপ যা কক্সবাজার ৬ নং জেটিঘাট থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মাঝে অবস্থিত। মহেশখালী উপজেলায় সোনাদিয়া, মতারবাড়ি, ধলঘাটা নামে ৩টি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। পান, মাছ, শুটকি, চিংড়ি, লবন ও মুক্তার উৎপাদনে সমগ্র বাংলাদেশে এই উপজেলার ব্যাপক সুনাম রয়েছে।

১৫৫৯ সালের প্রচন্ড ঘূর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে মূল ভূ-খন্ড থেকে বিছিন্ন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়। একজন পর্তুগীজ ভ্রমণকারী আরাকান অঞ্চলে এই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। দ্বীপের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে উত্তর দক্ষিণমুখী পাহাড় এবং তার পাদদেশে প্রবাহিত চ্যানেল থাকার কারণে অনুমিত হয় যে, দ্বীপটি একসময় মূল ভূ-খন্ডের সাথে যুক্ত ছিলো। বৌদ্ধ সেন মহেশ্বর থেকেই প্রায় ২০০ বছর আগে এই জায়গার নামকরন করা হয়। যা মহেশখালী দ্বীপ নামে পরিচিত। দ্বীপটি লবণ ও পান ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র। পান, মাছ, শুঁটকী, চিংড়ি, লবণ এবং মুক্তার উৎপাদন এই উপজেলাটিকে দিয়েছে আলাদা পরিচিতি। বাংলাদেশের গ্যাস সংকট হ্রাস করতে এই দ্বীপে দুটি এলএনজি টার্মিনাল এফএসআরইউ এবং গ্যাস পাইপলাইন তৈরি করার পরিকল্পনা করছে সরকার।

মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। এ দ্বীপের মৈনক পর্বতের উপরে রয়েছে আদিনাথ মন্দির। এ দ্বীপের কারুকার্য এখানে আসা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। এখানে রয়েছে বেশকিছু বোদ্ধ বিহার, জলাবন ও নানা প্রজাতির পশুপাখি। মহেশখালীতে আছে আদিনাথ মন্দির, বৌদ্ধবিহার, রাখাইন পাড়া ও স্বর্নমন্দির। আছে ঝাউবাগান ও চরপাড়া বীচ।

মহেশখালীতে চলতি পথেই দেখা মিলবে গাছের বাগান, লবনের মাট বা লবস্টার, পানের বরজ ও শুটকীর পল্লী গুলো। মহেশখালীর পানের সুনাম সারা বাংলাদেশ ব্যাপী। এই পানের সুনাম নিয়ে বাংলার চলচিত্রে গান রচনা’ও হয়েছে।



কক্সবাজারের কলাতলী বীচ থেকে আমরা সকাল ১০ টায় রওনা করলাম। মহেশখালীতে যাওয়ার জন্য শহরের ৬ নং জেটিঘাটে যেতে হবে। আমরা অটো ধরে পৌছালাম ৬ নং জেটিঘাটে; ভাড়া রিজার্ভ ১০০ টাকা। ঘাটে পৌছে স্পিড বোর্ডে করে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই আমরা মহেশখালী দ্বীপে পৌছালাম।

মহেশখালীর প্রধান জেটিতে নামার পর সেখানকার বিখ্যাত পান মুখে দিয়ে একটি অটো রিক্সা রিজার্ভ করলাম। অটো রিক্সাটি ৪ থেকে ৫ ঘন্টা মহেশখালী দ্বীপ ঘুড়ে দেখাবে। ভাড়া দামাদামি করে ঠিক হল ৫০০ টাকা।

তিনি প্রথমে আমাদের কে নিয়ে যান আদিনাথ মন্দিরে। আদিনাথের গোড়াপত্তন কয়েক হাজার বৎসর পূর্বে ত্রেতাযুগে। এর একটি ঐতিহাসিক সত্যতা রয়েছে যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ, রামায়ণ, পুরাণ ও ঐতিহাসিকদের বর্ণনা থেকে জানা যায়। ত্রেতাযুগে রাম-রাবণের যুদ্ধের কথা ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায়। রাবণ লঙ্কা যুদ্ধে রামের সঙ্গে জয়লাভের জন্য দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে অমরত্ব বর প্রার্থনা করেন। মহাদেব এসময় কৈলাসে ধ্যানমগ্ন ছিলেন। তিনি রাবণের আরধনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে অভীষ্ট সাধনে বর দান করেন এবং শর্ত দেন শিবরূপী উর্ধমুখী শিবলিঙ্গ কে কৈলাস হতে বহন করে লঙ্কায় নিয়ে যেতে হবে এবং পথিমধ্যে কোথাও রাখা যাবে না। যদি রাখা হয় তবে মহাদেব সেই স্থানেই অবস্থান নেবেন এবং রাবণের অভীষ্ট সাধন হবেনা। শর্তানুসারে রাবণ শিবলিঙ্গ বহন করে লঙ্কার উদ্দেশ্য গমন করেন তবে পথিমধ্যে প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের লক্ষ্যে বর্তমান মহেশখালীর মৈনাক পর্বতে থামতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে শর্তানুসারে রাবণ শিবলিঙ্গ পূনরায় উঠাতে ব্যর্থ হন এবং মহাদেব এই মৈনাক শিখরেই অবস্থান গ্রহণ করেন।

শ্রী শ্রী আদিনাথ এর আবিস্কার সর্ম্পকে স্থানীয়ভাবে একটি জনশ্রুতি রয়েছে। এলাকাবাসীর মতানুসারে এই তীর্থ আবিস্কৃত এবং মর্যাদা পায় নূর মোহাম্মদ শিকদার নামক একজন সচ্ছল মুসলিম ধর্মালম্বীর মাধ্যমে। তিনি লক্ষ্য করেন তার একটি গাভী হঠাৎ দুগ্ধদান বন্ধ করে। এ ঘটনায় তিনি রাখালের উপর সন্ধিহান হন। রাখাল বিষয়টির কারণ অণুসন্ধানে রাত্রি বেলায় গোয়ালঘরে গাভীটিকে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেখতে পায় গাভীটি গোয়ালঘর হতে বের হয়ে একটি কাল পাথরের উপর দাড়ায় এবং গাভীর স্তন হতে আপনা আপনি ঐ পাথরে দুধ পড়তে থাকে। দুধ পড়া শেষ হলে গাভীটি পূনরায় গোয়ালঘরে চলে যায়। রাখাল বিষয়টি নূর মোহাম্মদ শিকদার কে জানালে তিনি গুরুত্ব না দিয়ে গাভীটি বড় মহেশখালী নামক স্থানে সরিয়ে রাখেন। একদিন শিকদার স্বপ্নাদেশ পান গাভীটিকে সরিয়ে রাখলেও তার দুধ দেওয়া বন্ধ হবে না বরং সেখানে তাকে একটি মন্দির নির্মাণ ও হিন্দু জমিদারদের পুজোদানের বিষয়ে বলতে হবে। স্বপ্নানুসারে শিকদার সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের মতানুসারে আদিনাথ মন্দিরই একমাত্র মন্দির যা, মুসলিম ধর্মালম্বী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত।

মৈনাক শিখরেই আদিনাথ মন্দিরের পাশে অষ্টাভূজারূপী দেবী দুর্গার একটি মন্দির রয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে নূর মোহাম্মদ শিকদারই অষ্টাভূজাকে সদূর নেপাল থেকে এখানে এনে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নাদেশ পান। পরবর্তীতে নাগা সন্ন্যাসী নামক একজন সাধক ১৬১২ সালে নেপালের ষ্টেট মন্দির থেকে অষ্টাভূজাকে চুরি করে আনার সময় ধরা পড়ে জেলবণ্দি ও বিচারের সম্মুখীন হন। বিচারের পূর্ব রাত্রিতে সন্ন্যাসী যোগমায়াবলে মহাদেবের কৃপা সান্নিধ্য লাভ করেন। মহাদেব অভয় বাণী প্রদান করেন এবং বিচারকের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ইচ্ছামোতাবেক উত্তর দিতে বলেন। পরের দিন বিচারকালে বিচারক প্রথমে নেপালের রাজা এর নিকট মূর্তির রং জানতে চাইলে রাজা কষ্টি পাথরের মূর্তি কাল রং বলে বর্ণনা দেন। একই প্রশ্ন সন্ন্যাসীকে করা হলে তিনি মূর্তির রং সাদা বলেন। পরবর্তীতে মূর্তি সকলের সম্মুখে উন্মোচন করে সাদা দেখা যায় এবং সন্ন্যাসীর পক্ষে রায় ঘোষণা করা হয়। রাজা প্রকৃত ঘটনা জানতে উদগ্রীব হলে সন্ন্যাসী তাকে বিস্তারিত বলেন। পরবর্তীতে রাজা যথাযথ মর্যাদার সহিত মৈনাক শিখরে শ্রী শ্রী আদিনাথ এর পাশে মন্দির নির্মাণ করে অষ্টভূজাকে প্রতিষ্ঠান করেন। মন্দির কমিটির তত্ত্বাবধায়কের মতে এখনও নেপাল সরকার মাঝে মধ্যে মন্দিরে যথাসাধ্য অণুদান দিয়ে থাকেন।

মূল আদিনাথ ও অষ্টাভূজা মন্দিরের পাশেই ভৈরব ও রাধা গোবিন্দ এর মন্দির রয়েছে।

তারপর তিনি আমাদের-কে নিয়ে যায় আদিনাথ জেটিঘাটে। সেখানে কিছু সময় থাকার পর জেটিঘাট থেকে আমার চলে আসি স্থানীয় লবনের মাট বা লবস্টার, পানের বরজ ও শুটকী পল্লী গুলোতে। সেখানে অনেকখানি সময় কাটানোর পর চলে আসি উপজেলার রাখাইন বসতিতে এখানে আছে তাদের বৌদ্ধ বিহার ও স্বর্ন মন্দির।

সারাদিন ঘোরাঘুরি শেষে; মহেশখালী দ্বীপ ও রাখাইনদের জীবন-জীবিকা’র কিছু ছুবি তুলো নিয়ে আসি। বিকাল শেষে ফের স্পিড বোর্ডে করে আমরা কক্সবাজারের উদ্দ্যেশে রওনা হলাম।

এখন কক্সবাজার বিমান বন্দরে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস-১৪২ এর জন্য অপেক্ষায়।

ধন্যবাদ।।

- লিমন ইসলাম
উত্তরা, ঢাকা।
১৮ অক্টোবর, ২০২০

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: এই করোনার মধ্যে ঘোরাঘুরি করছেন। আপনার সাহস আছে।

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৪৭

রাকু হাসান বলেছেন:



দারুণ মহেশখালী! ছবি সুন্দর তুলেছেন। মহেশখালীর টুরিজম পার্কটি চালু হলে পর্যটকরা আরও ভীড় করবে।রাখাইনদের ছবি মিস করলাম।এই সেই মহেশখালীর পানের কিলি

৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:২৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ছবিগুলি চমৎকার হয়েছে। তবে পোস্ট করার সময় কিছুটা গ্যাপ দিয়ে দিয়ে ছবি দিলে দেখতে আরো ভালো লাগতো।
বর্ননাও চমৎকার হয়েছে।
সোনাদিয়ার কথাতো লিখলেন না!!!

৪| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:১৬

কামরুননাহার কলি বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা তবে ছবিগুলোর ক্যাপশন দিলে আরো ভাল লাগতো।

৫| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: জানলাম মহেশখালি সম্পর্কে। ছবিগুলো ও সুন্দর।

৬| ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:২৮

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: আহা পান। মহেশখালীর পান!

৭| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৮:০৫

সোহানী বলেছেন: দীর্ঘদিন কক্সবাজারে ছিলাম বাবার চাকরীর সূত্রে। মহেশখালী, সোনাদিয়াতে ঘুরতে যেতাম প্রায় সাপ্তাহে। কারন বাবার অফিসে একটা স্পিডবোট ছিল। আদ্যিনাথের মন্দিরে সে শিবমন্দির দেখেছি। অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.