নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বার বার নিহত হব তোমার অবর্তমানে

যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য

বিবাগী বাউল

ইদানিং জ্যোৎস্না দর্শনই হয়ে পড়ে আমার একান্ত জীবনদর্শন!!!

বিবাগী বাউল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মতিয়া কি পারবেন বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা প্রশ্নে মজিনার সাম্রাজ্যবাদী বয়ান প্রত্যাখ্যান করতে?

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৪২









কই যামু কন, যেই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদের কারনে এদেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে সেই কয় আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে হেল্প করবে!! মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ১৬ই এপ্রিল বলেছেন, “ বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমেরিকা বাংলাদেশের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। কৃষি খাতে বর্তমানে আমেরিকা-বাংলাদেশ যে অংশীদারিত্ব রয়েছে, তা ইতোপূর্বে কখনো দেখা যায়নি”। বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন এ ঝুঁকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থেকে কাজ করবে।’ মজিনার এইসব কথায় এক কালের বাম পন্থি নেতা বর্তমান কৃষি মন্ত্রী মতিয়ার আস্থা আছে কিনা আমি জানি না কিন্তু আস্থা রাখা তো দূরের কথা এই মার্কিনী অংশীদারিত্ব বর্জন না করলে এদেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পরবে এইটা নিশ্চিত! আমাদের সুস্পষ্ট কথা হচ্ছে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে মূলত সাম্রাজ্যবাদী আম্রিকার নিয়ন্ত্রণাধীন WTO এর অন্যায্য নীতি TRIPS চুক্তির কারনে, তাদের মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানির কৃষিতে পেটেন্ট আগ্রাসনের কারনে।



যুক্তরাষ্ট্রের চাপে কৃষিতে ভর্তুকি হ্রাস করতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশঃ



খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে সব দেশই কৃষিতে বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে থাকে। আমেরিকা, জাপান, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে কৃষি ভর্তুকির পরিমাণ মোট বাজেটের ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ। আমাদের দেশে কৃষিতে ভর্তুকি মোট বাজেটের ৩.৬ শতাংশ মাত্র। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হলে কৃষিতে ভর্তুকি ব্যাপকহারে বাড়াতে হবে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কারনে তা বাংলাদেশ কখনোই পারবে না কেননা বাংলাদেশকে দোহা ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা (WTO এর অন্যায্য নীতি) অনুসারে কৃষিতে ভর্তুকি হ্রাসকরণ করতেই হবে। দোহা এজেন্ডা অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষিতে ৫% এর বেশি ভর্তুকি দিতে পারছে না, অথচ যুক্তরাষ্ট্র নিজেই কৃষিতে ৩২% এর বেশি ভর্তুকি দিয়ে তাদের কৃষি ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের কৃষিজ পণ্যের দাম ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।এখন এই যুক্তরাষ্ট্রকে যদি আমরা খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অংশীদার করি এতো আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই করবে না!!! যুক্তরাষ্ট্র আবার এখন তোড়জোড় শুরু করছে TICFA চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য যেখানে দোহা ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা অনুসারে কৃষিতে ভর্তুকি হ্রাসের প্রস্তাব আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে।





মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির বায়োপাইরেসি ঃ বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার প্রতি হুমকি



বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার গৃহীত নীতিমালা যেমন আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্য উদারিকরণ, মেধাস্বত্ব অধিকার, সার, বীজ ও কীটনাশক এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণের উপর বহুজাতিক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ দেশের সার্বিক কৃষি ব্যবস্থাকে নাজুক অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উত্পাদন।



মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির বায়োপাইরেসি বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার প্রতি প্রচণ্ড হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, ব্রাজিল সহ বিভিন্ন দেশের নিজস্ব জীববৈচিত্রের অনেক জীব-অণুজীব এবং উদ্ভিদ প্রজাতি এখন মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির পেটেন্টের দখলে।

গত দুই দশক ধরেই পশ্চিমা বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যেমন মনসেন্টো, ইউনিলিভার, ডুপন্ট তৃতীয় বিশ্বের হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত জ্ঞান, প্রাণবৈচিত্র্য তথা জেনেটিক সম্পদকে অবৈধভাবে পেটেন্ট করে নিয়ে এসব সম্পদের ওপর তাদের নিরঙ্কুশ মালিকানা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ ধরনের পেটেন্ট আগ্রাসনের সুযোগ করে দিয়েছে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস চুক্তির ২৭.৩(খ) ধারা যেখানে দুনিয়ার সব প্রাণ ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ওপর পেটেন্ট করার বৈধ অধিকার রাখা হয়েছে। প্রাণ এবং জীবনের পেটেন্টকরণ জীববৈচিত্র্যের পণ্যকরণ ও বাণিজ্যকীকরণের মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের স্থানীয় জনসাধারণের নিজস্ব লোকায়ত জ্ঞানের ওপর বহুজাতিক করপোরেশনের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করে, ঐতিহ্যবাহী সম্পদের লুণ্ঠনের পথ প্রশস্ত করে দেবে।



মার্কিন বহুজাতিক এগ্রো-কেমিক্যাল করপোরেশন মনসেন্টো, ইউনিলিভার ইত্যাদি বিভিন্ন দেশ থেকে শস্য বীজ সংগ্রহ করে গড়ে তোলে বিশাল শস্য বীজ ব্যাংক। এরপর উক্ত শস্যের জিনোম সিকোয়েন্স নির্ণয় করে যে জিনটি শস্যটির বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী তা শনাক্ত করে। লোকায়ত কৃষকদের বীজের সংরক্ষণ ও পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ক্রসিংয়ের ফলে যে জিনের উদ্ভব তাকেই ল্যাবরেটরিতে শনাক্ত করে বহুজাতিক কোম্পানি তার মৌলিক উদ্ভাবনা বলে চালিয়ে দেয় এবং ওই শস্য বীজের পেটেন্ট করে নেয়। কোম্পানি পরবর্তীতে জেনেটিক রিকম্বিনেশনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত সব উদ্ভিদ, বীজ ও উদ্ভিদজাত সব পণ্যের ওপর তার মালিকানা নিয়ে নেয়। এভাবেই তৃতীয় বিশ্বের কৃষক ও জনসাধারণের উৎপাদন প্রণালি উদ্ভূত বিভিন্ন শস্য বীজের জাত চলে যায় বহুজাতিক কোম্পানির মালিকানায়। বহুজাতিক কোম্পানি কর্তৃক এভাবে পেটেন্ট আগ্রাসনের ফলে পেটেন্ট আইনের বাস্তবায়ন শুরু হলে আমাদের জীববৈচিত্র্য এবং কৃষিতে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। প্রথমত বায়োপাইরেসির ফলে লোকায়ত জ্ঞানের প্রয়োগ এবং জেনেটিক সম্পদের ঐতিহ্যবাহী ব্যবহার বাধাগ্রস্ত বা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। এসব উদ্ভিদ এবং শস্য বীজের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উৎপাদনের ওপর বিধিনিষেধের ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো খাদ্যশস্যের ওপর গবেষণা করতে পারবে না এবং খাদ্য নিরাপত্তা চলে যাবে প্রাইভেট করপোরেশনের হাতে। স্বত্ব পাওয়া কোম্পানি এসব শস্য বীজ, উদ্ভিদ এবং ঔষধি গাছের সংরক্ষণ, উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করে দিতে পারবে। কৃষকদের নিজেদের জমিতে/খামারে বীজ সঞ্চয়, নবায়নকৃত ব্যবহার এবং বিক্রয় নিয়ন্ত্রিত হবে পেটেন্ট আইনের কারণে। ফলে পেটেন্টেড শস্য বীজ ও অন্যান্য জৈবিক সম্পদ উৎপাদনের জন্য হয় বহুজাতিক কোম্পানিকে রয়্যালিটি দিতে হবে অথবা আমাদেরই উৎপাদন প্রণালির অন্তর্ভুক্ত এসব দ্রব্যাদি উচ্চ দামে কোম্পানি থেকে কিনতে বাধ্য করা হবে। ফলে আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে কৃষিজ পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে, হুমকির মুখে পড়বে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা আর এসব পেটেন্টেড পণ্যের একচেটিয়া ব্যবসা করে অবাধে মুনাফা অর্জন করবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য চাপ দিচ্ছে তা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষিজ সম্পদ মার্কিন বহুজাতিকের দখলে চলে যাবে বলে আশংকা করার যথেষ্ট কারন রয়েছে!



হাইব্রিড-জিএম বীজের ব্যাপক ব্যাবহার বাংলাদেশের কৃষিজ উৎপাদন কাঠামো ধংস করে দিচ্ছেঃ







মার্কিন বহুজাতিক এগ্রো-কেমিক্যাল করপোরেশন মনসেন্টো, ইউনিলিভার, ডুপন্ট এর জিএম হাইব্রিড শস্য বীজের পেটেন্ট আগ্রাসন আমাদের জীববৈচিত্র্য এবং কৃষিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। অধিক উৎপাদনের আশায় কৃষকরা পেটেন্টেড শস্য বীজ উচ্চ দামে কোম্পানি থেকে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এই হাইব্রিড বীজ পুনরায় উৎপাদন যোগ্য নয়। অর্থাৎ একবছরের উৎপাদিত ফসল পরের বছর বীজ হিসাবে ব্যাবহার করা যায় না। ফলে দীর্ঘমেয়াদে হাইব্রিড বীজের ব্যাবহারের ফলে দেশী প্রজাতীগুলো বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে (ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের অনেক প্রজাতীর ধান বিলুপ্ত হয়েছে অনেক প্রজাতী বিলুপ্তপ্রায়) এবং বহুজাতিক কোম্পানীর বীজ না পাওয়া গেলে কৃষি উৎপাদন অসম্ভব হয়ে পড়বে। দেশীয় চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পুর্নতা নয় খাদ্যের জন্য বহুজাতিক কোম্পানীর প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতা তৈরী হবে। অধিক কৃষি উৎপাদনের নামে স্থানীয় কৃষিব্যবস্থা ধ্বংস করে হাইব্রিড বীজের প্রতি যে নির্ভরশীলতা তৈরী হচ্ছে তাতে লাভবান হচ্ছে বহুজাজতিক কোম্পানী, এসব বীজের পেটেন্ট শর্তে গ্যাট চুক্তির মেধাস্বত্ব আইন অনুযায়ী রয়ালিটি পাচ্ছে আমেরিকা আর ধ্বংস হচ্ছে দেশী প্রজাতি এবং পরিবেশ। TRIPS চুক্তির বাস্তবায়ন বাংলাদেশে শুরু হবে ২০১৬ এর পর। কিন্তু তার আগেই এদেশের কৃষি ও কৃষিজ সম্পদের উপর বহুজাতিক এগ্রো-কেমিক্যাল করপোরেশনের যে আগ্রাসন দেখতে পাচ্ছি তাতে করে সামনে যদি মজিনার প্রস্তাব অনুযায়ী মার্কিন সাহায্য নেয়া হয় তাহলে এদেশের কৃষিজ পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে, হুমকির মুখে পড়বে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা আর পেটেন্টেড পণ্যের একচেটিয়া ব্যবসা করে অবাধে মুনাফা অর্জন করবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।



মতিয়া কি পারবেন বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা প্রশ্নে মজিনার সাম্রাজ্যবাদী বয়ান প্রত্যাখ্যান করতে?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৫০

মৃন্ময় বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:০৮

বিবাগী বাউল বলেছেন: ধন্যবাদ মৃন্ময় ভাই!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.