নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বার বার নিহত হব তোমার অবর্তমানে

যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য

বিবাগী বাউল

ইদানিং জ্যোৎস্না দর্শনই হয়ে পড়ে আমার একান্ত জীবনদর্শন!!!

বিবাগী বাউল › বিস্তারিত পোস্টঃ

দৈনিক প্রথম আলোয় বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের এর “টিকফা চুক্তিতে বাংলাদেশই লাভবান হবে” শীর্ষক কলামের জবাব

২১ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮



দৈনিক প্রথম আলোয় ১৯/৬/২০১৩ মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী “টিকফা চুক্তিতে বাংলাদেশই লাভবান হবে” শীর্ষক কলাম লিখে এই চুক্তি স্বাক্ষরের পক্ষে সাফাই গাইলেন।



১। “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা কাঠামো (টিকফা) চুক্তির খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেল গত সোমবার। বহু বছর ধরে ঝুলে থাকার পর শেষমেশ একরকম সুরাহা হওয়াটা অবশ্যই স্বস্তির। তবে আমি আজও বুঝতে পারি না, এটি কেন এত বছর ঝুলে ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কিছুই নেই। আছে যা, তা হলো উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের দিকনির্দেশনা। সম্ভাব্য চুক্তির খসড়াটি এতটাই সাদামাটা ও নিরীহ গোছের যে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা একবারেই অবান্তর”।

২। “এক সময় আমারও সন্দেহ ছিল আগের টিফা নিয়ে। কী সর্বনাশই না হয়ে যায়! টিফার বদলেই তো টিকফা হয়েছে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে দেখেছি এর খসড়া। আমি অসংগতি বা আপত্তির কিছু দেখিনি। বারবার পড়েছি”।

৩। “আসলে আমি যেটা দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভালো চায়। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বাঙালি কর্মঠ ও দক্ষ জাতি। দেশটি আমাদের সাহায্য করতে চায়। আমরা না বুঝে অনেক বিরোধিতা করলেও এ ব্যাপারে তারা যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। ধন্যবাদ জানাই যুক্তরাষ্ট্রকে। আমরা যেভাবে চেয়েছি, অনেক ছাড় দিয়েও তারা সেভাবেই রাজি হয়েছে” ।



বাণিজ্য মন্ত্রীর এসব কথায় বুঝা যাচ্ছে এই চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী কিছু নেই, এতে আপত্তির কিছু নেই, এই চুক্তি হলে বাংলাদেশই লাভবান হবে! যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়নের জন্যই এই চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু আমরা না বুঝেই অনেক বিরোধিতা করেছি! বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন মন্ত্রী এভাবে মার্কিন স্বার্থের সাফাই গেয়েছেন কিনা এটা আমার জানা নেই, মাননীয় মন্ত্রী সম্পূর্ণ মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এই চুক্তি সই করার পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই চুক্তির বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা, কৃষি, শিল্প, জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে!!



বাণিজ্যমন্ত্রীর সাফাইঃ

“টিকফা কী এবং কী উদ্দেশ্যে তা করা হচ্ছে, একটু তলিয়ে দেখলেই এর উত্তর পাওয়া যাবে। উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ়, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যেই টিকফা হচ্ছে”।



বাস্তবতাঃ টিকফার উদ্দেশ্য বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ়, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করা এবং তার ফলে বাংলাদেশ বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে এসব হচ্ছে সুগার কোটেড কথা! মূলত এসব দ্বিপাক্ষিক চুক্তির উদ্দেশ্য নিম্নরূপ-

১। বাংলাদেশের মত অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের (Periphery) বাজার দখল করাঃ



বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, টিকফা/টিফা এসবের অর্থনৈতিক দর্শন হচ্ছে নিওলিবারেল পলিসি যার যার মূল কথা হচ্ছে বাণিজ্য উদারীকরণ এর মাধ্যমে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে উন্নত বিশ্ব কর্তৃক (Core state) অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের (Periphery) বাজার দখল করা। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মাধ্যমে মুক্তবাজার অর্থনীতির বিশ্বায়নের ফলে বাংলাদেশের মত অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার উন্নত দেশের জন্য অনেকটাই উন্মুক্ত করে দিতে হয়েছে এবং এই সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোর বহুজাতিক কোম্পানি (ইউনিলিভার, শেভ্রন, কনকোফিলিপ্স) আমাদের বাজার দখল করে নিচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংশ্লিষ্ট দেশকে কিছু ব্যবসার সুযোগ দেয়ার বিনিময়ে ওই দেশের বাজার ও সম্পদ যাতে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত করা যায় তা নিশ্চিত করাই টিফার মূল লক্ষ্য।



২। এল ডি সি’র নেতা হিসেবে বাংলাদেশকে নিষ্ক্রিয় করাঃ WTO’র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার আধিপত্যবাদী বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কিছুটা হোঁচট খায় স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সংঘবদ্ধ লবির জোটবদ্ধতার কারনে! বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আওতায় বহুপাক্ষিক আলোচনায় এই লবির কারণে প্রত্যাশিত বাণিজ্য সুবিধা পুরোপুরি আদায় করতে না পেরে মার্কিন সরকার অনুন্নত দেশগুলোর সাথে দ্বি-পাক্ষিক টিফা চুক্তি স্বাক্ষরের কৌশল নিয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বাইরে স্বল্পোন্নত দেশের ওপর আধিপত্য বিস্তারের জন্যই আমেরিকা সহযোগিতামূলক উদ্যোগের ছদ্মাবরণে টিফা বা টিকফার মতো দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো করার চেষ্টা করছে। যদি স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বেড়াজালে আবদ্ধ করা যায় তবে আন্তর্জাতিক বহুপাক্ষিক ফোরাম ডবিস্নউটিও এ আমেরিকা তার আধিপত্যবাদী বাণিজ্যনীতি বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে। এ লক্ষ্যেই পাকিস্তান, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ইরাক, উরুগুয়েসহ বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই টিফা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নেতা হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তৃতীয় বিশ্বের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছে। বিশ্বব্যাপী পরাশক্তিগুলোর অর্থনৈতিক আধিপত্যের বিপরীতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষার জন্য এসব ফোরামে বাংলাদেশ যাতে কোন ভূমিকা না রাখতে পারে সেজন্য বাংলাদেশকেও টিকফা চুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে যুক্তরাষ্ট্র। কেননা টিকফা স্বাক্ষর হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া আর সম্ভব হবে না।



৩। “টিকফা(বা টিফা) চুক্তির প্রস্তাবনা কিংবা ধারায় ব্যাবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ইত্যাদি কথা থাকলেও চুক্তির ব্যাবহার কিন্তু স্রেফ বাণিজ্যিক নয়। উইকিলিকস প্রকাশিত বার্তা থেকে দেখা যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশের সাথে টিফা স্বাক্ষরের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেছেন: “I would like to stress our compelling political, economic, and potentially commercial reasons for securing a TIFA with Bangladesh….We have important strategic reasons for helping Bangladesh succeed, politically and economically, and approving the Bangladesh TIFA would be a significant step in thatdirection.” [ সুত্রঃ THE IMPORTANCE OF MOVING FORWARD WITH TIFA শীরোনামের মার্কিন বার্তা

Click This Link

কাজেই দেখা যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থই নয়, সেই সাথে রাজনৈতিক ও কৌশলগত কারণেও বাংলাদেশের সাথে টিফা স্বাক্ষরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে”। - .......প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা



যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার প্রশ্নে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র মনে করে গণচীনের অব্যাহত উন্নয়ন ও পরাশক্তি হিসেবে চীনের অভাবনীয় অগ্রগতি ঠেকাতে এবং দক্ষিন এশিয়ার বিশাল বাজারের উপর নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে বঙ্গোপসাগরে এবং ভারতমহাসাগরে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি বজায় রাখতে হবে। আর বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা বজায় রাখতে হলে বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আঞ্চলিক পার্টনার বানাতে আগ্রহী। ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তা ইস্যুতে ঢাকার কাছ থেকে অধিকতর সহযোগিতার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর করতে চাচ্ছে কেননা এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ মার্কিন বলয়ে আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়ে যাবে।



বাণিজ্যমন্ত্রীর সাফাইঃ

“বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য উভয় দেশের মধ্যে একটি উদার ও অনুধাবনযোগ্য পরিবেশ তৈরির কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এর ফলে সম্প্রসারিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ হবে এবং এ থেকে লাভবান হবে উভয় দেশ। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পথে বর্তমানে যেসব প্রতিবন্ধকতা এবং রক্ষণশীল উপাদান রয়েছে, সেগুলো কমিয়ে আনা হবে—এ কথাও বলা হয়েছে”। “দেশীয় ও বৈদেশিক উভয় ক্ষেত্রেই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি করা হবে, যাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হয়”।



বাস্তবতাঃ



বাণিজ্য মন্ত্রী এই চুক্তির প্রস্তাবনা ২,৩, ৫ ও ৬ উল্লেখ করে যা বলার চেষ্টা করেছেন তার সারকথা হলো উদারনৈতিক অর্থনীতি, দেশিয় বাজার উন্মুক্তকরণ, ঢালাও বেসরকারিকরণ এসব বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করবে। পলিটিক্যাল ইকোনমি না এনে শুধুমাত্র ভালগার শাব্দিক ইকোনমির চোখ দিয়ে এই চুক্তির প্রস্তাবনা পাঠ করলে এরকমই মনে হবে। আমরা মনে করি, বাণিজ্য মন্ত্রী ভালগার শাব্দিক ইকোনমির ভিত্তিতে এই চুক্তিকে জাস্টিফাই করার জন্য মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন! এ চুক্তিতে উদার বাণিজ্যনীতি, মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং মেধাসত্ত্ব আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণের যে রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে তা বাংলাদেশের জন্য হবে মারাত্মক ক্ষতিকর!



১। এই চুক্তি দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে ঃ



ক। সেবা খাত চলে যাবে মার্কিন কোম্পানির দখলে :



এ চুক্তির বিভিন্ন প্রস্তাবনায় (২, ৩, ৫, ৬,৭) এবং অনুচ্ছেদে (১, ৩) বাজার উন্মুক্তকরণ এবং সেবাখাতের ঢালাও বেসরকারিকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতগুলো বিশেষ করে সেবা খাতগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। এ চুক্তির চুক্তির ২, ৩, ৫, ৭ এবং ১৫ নম্বর প্রস্তাবনায় মাধ্যমে বিনিয়োগের বিশেষ সুরক্ষাসহ মার্কিন কোম্পানিগুলোকে সেবাখাতে বাণিজ্যের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ( বেসরকারিকরণ, সংরক্ষণবাদী বাণিজ্য নীতি বাদ দিয়ে ওপেন মার্কেট পলিসি নিরঙ্কুশভাবে গ্রহণ, নন ট্যারিফ বাধা দূরীভূতকরণ ইত্যাদি) দেশের জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর, টেলিযোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন ইত্যাদি সেক্টরকে মার্কিন পুঁজিপতিদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। ফলে চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে দেশের সেবাখাতগুলো রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়ে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির দখলে চলে যাবে। টিকফা চুক্তিতে বলাই আছে, বাংলাদেশ ১৯৮৬ সালে স্বাক্ষরিত 'দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি' অনুযায়ী মার্কিন বিনিয়োগকারীদের অর্জিত মুনাফা বা পুঁজির ওপর কোন কর আরোপ করতে পারবে না এবং বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়া হলে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। [ “বিনিয়োগ বিষয়ে পারস্পরিক অনুপ্রেরণা এবং সংরক্ষণের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাঝে মার্চ ১২, ১৯৮৬ সালে স্বাক্ষরকৃত চুক্তিটিকে (Bilateral Investment Treaty)বিবেচনা করে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় উভয় দেশের নিজ নিজ অধিকার ও বাধ্যবাধ্কতাগুলোকে ক্ষুন্ন না করার বিষয়ে জোর দেয়” – প্রস্তাবনা ১৫]



খ। পরিণামে ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে সেবা ও পণ্যের দামঃ

অবাধ মুনাফা অর্জনের জন্য বিদেশি কোম্পানিগুলো সেবা ও পণ্যের দাম অত্যধিক বৃদ্ধি করবে। টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, চিকিৎসা, শিক্ষা, বন্দর প্রভৃতির ব্যবহার মূল্য বহুগুণ বেড়ে যাবে। সেবা খাতের বেসরকারিকরণ আর বাণিজ্যিকীকরণের ফলে আরো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন ইত্যাদি সেবার দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।



গ। দেশীয় কোম্পানির স্বার্থ বিপন্ন হবেঃ

এই চুক্তির ভিত্তিতে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিকে উপরে বর্ণিত বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়া হলে এবং দেশীয় শিল্পের/কোম্পানির প্রতি সুবিধা প্রদানকারী বাণিজ্য সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ সংরক্ষণ নীতি প্রত্যাহার করা হলে জায়ান্ট মার্কিন কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশীয় কোম্পানিগুলোর স্বার্থ বিঘ্নিত হবে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের নিজস্ব কোম্পানির বিকাশে সরকার সংরক্ষণ সুবিধা প্রদান করতে পারবে না বলে দেশীয় শিল্পের বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। জাতীয় সক্ষমতা সৃষ্টির জন্য এই টিকফা চুক্তি তাই একটা বড় প্রতিবন্ধক আকারে কাজ করবে!



ঘ। সেবাখাতে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রনীতির ধারণা বাদ দিতে হবে বাংলাদেশকে, বিপাকে পড়বেন গরিব জনগোষ্ঠী ঃ

সেবাখাতে বিদেশি প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর অবাধ ও বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করলে বাংলাদেশ তার কল্যাণমূলক রাষ্ট্রনীতির আওতায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও সাধারণ মানুষকে কম মূল্যে সেবাদানের যেসব কর্মসূচি নিয়ে থাকে তা সংকুচিত হবে অথবা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ফলে গরিব এবং সাধারণ মানুষের জীবনধারণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।



ঙ। উৎপাদনশীল অর্থনীতিতে আগ্রহ নেই মার্কিনীদেরঃ অনুচ্ছেদ ১-এ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু সার্ভিস সেক্টরের কথা উল্লেখ রয়েছে, 'পণ্য' উৎপাদনের বিষয়টি সংযুক্ত রাখা হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যে বিনিয়োগ করবে, তা শুধু সেবা খাতেই। তারা কোন পণ্য এ দেশে উৎপাদন করবে না। ফলে উৎপাদনশীল অর্থনীতিতে বাংলাদেশের কোন লাভ নেই। সেবা খাতে বাণিজ্যের নামে মুনাফা লুণ্ঠনেই ব্যস্ত থাকবে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি!



বাণিজ্য মন্ত্রীর সাফাইঃ

“এ ছাড়া উভয় পক্ষের সেবা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা দূর করা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় মেধাস্বত্ব আইন বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মূলনীতি অনুসরণ করে উভয় দেশেরই শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন করা এবং পরিবেশের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করতে পরিবেশ আইন মেনে চলার কথাও বলা আছে এ খসড়া চুক্তিতে”।





আমাদের জবাবঃ



প্রথমে শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন করা এবং পরিবেশের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ বিষয়ে আসা যাক।

বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে কেন যুক্তরাষ্ট্রকে শ্রম অধিকার ও পরিবেশ রক্ষার পথপ্রদর্শক মনে হোল তা আমার জানা নেই। বাস্তবে বিশ্ব পরিবেশ আন্দোলনের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি এই যুক্তরাষ্ট্র কেননা যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বেশি পরিবেশ দূষণ করছে, এমনকি কোন বহুপাক্ষিক পরিবেশ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পর্যন্ত রাজি না যুক্তরাষ্ট্র, পাছে তার শিল্প উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় বলে! কার্বন নির্গমন রোধ চুক্তি স্বাক্ষরে যুক্তরাষ্ট্রের অনীহা কে না জানে! তাহলে সেই যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে এত জোরদারের মাজেজা কি? আবার এই যুক্তরাষ্ট্রই ২০০৯ সালে বিনা নোটিশে কেবল সরকারি খাতেই ৬ লক্ষ শ্রমিক ছাটাই করেছে, তখন কই ছিল শ্রমিক অধিকারের বুলি? তাই “ শ্রম আইন এবং পরিবেশ বিষয়ক নীতিমালা মেনে চলার গুরুত্বারোপ আপাত দৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও এগুলোর মাধ্যমে মূলত নীতিগত ভাবে আমেরিকা তার বাজার যেসব ক্ষেত্রে খুলে দেবে, কার্যক্ষেত্রে সে সব খাতে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে বাধা আরোপে বিভিন্ন ধরনের অজুহাত তৈরী করবে” [প্রকৌশলী কল্লোল মুস্তফা]



টিকফার প্রস্তাবনায় মানবাধিকার, শ্রমের মান এবং শ্রমজীবীদের অধিকার ও পরিবেশগত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তার লক্ষ্য শ্রমজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা নয় বরং এসব ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বলে অজুহাত দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।





“উভয় পক্ষের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা দূর করা” প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ ১৬ আনা কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষতি মারাত্মক!



বাংলাদেশ নন ট্যারিফ বা অশুল্ক বাধা দূর করলে তা বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। অশুল্ক বাধা হচ্ছে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের শিল্প, কৃষি সহ সামগ্রিক অর্থনীতিকে বহুজাতিক কোম্পানিসহ উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক আগ্রাসন থেকে রক্ষার সর্বশেষ রক্ষাকবচ। বিদেশি কোম্পানির পণ্য আমদানিতে নানান অশুল্ক বাধা আরোপ করে বাংলাদেশ তার নিজের বাজার ও শিল্পের বিকাশ করতে পারে। কিন্তু এই নন ট্যারিফ বাধা অপসারণ করলে এদেশ হাইতির মত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের একচেটিয়া বাজারে পরিণত হওয়ার আশংকা আছে! মার্কিন বহুজাতিক এগ্রো-কেমিক্যাল করপোরেশন মনসেন্টো, ইউনিলিভার, ডুপন্ট এর জিএম হাইব্রিড শস্য বীজের আগ্রাসন বাংলাদেশের কৃষিতেও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে এবং এসব কোম্পানির জিএম ফুডে সয়লাব হয়ে যাবে এদেশের বাজার!



সম্প্রতি পোশাকশিল্পের জিএসপি সুবিধা বাতিল ও শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধার সাথে যুক্ত করে এই চুক্তি স্বাক্ষরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে আসছিলো। তাই টিকফা চুক্তির পক্ষে এদের যুক্তি হচ্ছে জিএসপি কিংবা শুল্কমুক্ত প্রবেশধিকার পেলে এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বাড়বে। এশিয়ার দুটি প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি গণচীন এবং ভারত তার রপ্তানির যথাক্রমে ২১ এবং ১৯% পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করলেও তারা এ চুক্তি স্বাক্ষর করেনি। অর্থাৎ টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির সম্পর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে প্রধান বাধা হচ্ছে শুল্ক বাধা। বর্তমানে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকদের যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৫.৩% শুল্ক দিতে হয় অন্যদিকে চীনকে পরিশোধ করতে হয় মাত্র ৩%। তাহলে দেখা যাচ্ছে চীন টিফা চুক্তি স্বাক্ষর না করেও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম শুল্কে পণ্য রপ্তানি করতে পারছে। তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের লোভ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য এদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে কিন্তু টিকফা অ্যাগ্রিমেন্টে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের কোন নিশ্চয়তা রাখা হয়নি কারণ চুক্তির ৭ নম্বর প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে উভয় দেশ নিজ নিজ বাজারে পণ্য প্রবেশে নন ট্যারিফ বা অশুল্ক বাধা দূর করবে। কিন্তু বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্র্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অশুল্ক বাধা খুব সামান্যই। ট্যারিফ বা শুল্ক মুক্ত বাজার সুবিধার কিছুই নেই যখন টিকফা চুক্তিতে তখন এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বাড়বে বলে প্রচার প্রোপাগান্ডা চালিয়ে এই চুক্তি সই করার জন্য জনমতকে ধোঁকা দেয়ার হেতু কি?



টিকফার ফলে কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি প্রদানের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হারাবে বাংলাদেশ ঃ



চুক্তির ১৩ এবং ১৪ নং প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলাদেশকে দোহা ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা অনুসারে কৃষিতে ভর্তুকি কমানো এবং মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজে সুকৌশলে বাণিজ্য সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করে অনুন্নত দেশকে বাণিজ্য সুবিধা প্রদান থেকে বিরত রাখছে। দোহা নীতি অনুসারে আমেরিকা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ৯৭% পণ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথা। আমেরিকা ঠিকই বাংলাদেশের ৯৭% পণ্যের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিয়েছে তবে তাতে ওইসব পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যার রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাককে এর বাইরে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র নিজে কিন্তু বাণিজ্য সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করছে অথচ আমাদের মতো অনুন্নত দেশগুলোকে বাণিজ্য উদারনীতি গ্রহণে নানা চুক্তির মাধ্যমে বাধ্য করছে।



এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ তার নিজস্ব প্রয়োজন অনুসারে কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি প্রদানের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হারাবে। দোহা এজেন্ডা অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষিতে ৫% এর বেশি ভর্তুকি দিতে পারছে না অথচ যুক্তরাষ্ট্র নিজেই কৃষিতে ৩০% এর বেশি ভর্তুকি দিয়ে তাদের কৃষি ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের কৃষিজ পণ্যের দাম ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।



বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় মেধাস্বত্ব আইনের বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের কোথায় লাভবান হবে তা কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় উল্লেখ করেন নাই।





যুক্তরাষ্ট্র মনে করে পেটেন্ট আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের অনুপস্থিতির কারণে বহুজাতিক মার্কিন কোম্পানির অবাধ বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। টিফা চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই মেধাসত্ত্ব আইন মানতে বাধ্য করছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। টিকফা চুক্তির ফলে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের আগেই মেধাসত্ত্ব আইন মেনে চলতে হবে, কেননা চুক্তির ৮ নম্বর প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাসত্ত্ব অধিকার (TRIPS) এবং অন্যান্য প্রচলিত মেধাসত্ত্ব আইনের যথাযথ এবং কার্যকরী রক্ষণাবেক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এর ফলে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প, কম্পিউটার সফটওয়্যারসহ গোটা তথ্যপ্রযুক্তি খাত আমেরিকার কোম্পানিগুলোর পেটেন্ট, কপিরাইট, ট্রেডমার্ক ইত্যাদির লাইসেন্স খরচ বহন করতে গিয়ে অভূতপূর্ব লোকসানের কবলে পড়বে। ফলে বিভিন্ন পণ্য এবং প্রযুক্তির দাম অভাবনীয়ভাবে বেড়ে যাবে।



১। তথ্যপ্রযুক্তি খাতেই দেশকে সফটওয়্যার লাইসেন্স ফি বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।



২। মেধাসত্ত্ব আইন কার্যকর হলে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো অনেক ওষুধ তৈরি করতে পারবে না। আমাদের কয়েকগুণ বেশি দামে বিদেশি কোম্পানির পেটেন্ট করা ওষুধ খেতে হবে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে রপ্তানি সম্ভাবনা হারাবে। দরিদ্ররা ওষুধ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাবে। আমাদের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেননা দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজ দেশেই তাদের ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। ফলে অনেক মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। তাছাড়া ওষুধের পেটেন্ট আগে দেয়া হতো সাত বছরের জন্য, এখন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস আইনে তা আরও বাড়িয়ে ২০ বছর করা হয়েছে। অর্থাৎ আবিষ্কারক কোম্পানি সুদীর্ঘ ২০ বছর ধরে নিজের ইচ্ছামতো দামে ওষুধটির একচেটিয়া ব্যবসা করে অবাধে মুনাফা লুট করবে।



৩। পেটেন্ট আইন বাস্তবায়ন আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্য এবং কৃষিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের পেটেন্ট আইনে বলা আছে, 'কোন কিছুর পেটেন্টের বেলায় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অলিখিত উৎসের অনুসন্ধানের কোন বাধ্যবাধকতা নেই।' এর মানে হচ্ছে হাজার হাজার বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশের প্রচলিত উৎপাদন প্রণালি, জীববৈচিত্র্য, কৃষকদের নিজস্ব শস্যবীজ ইত্যাদি শুধুমাত্র প্রযুক্তি এবং অর্থের জোরে পেটেন্ট করে নিতে পারবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশ, ভারত, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশের নিজস্ব জীববৈচিত্র্যের অনেক জীব-অণুজীব এবং উদ্ভিদ প্রজাতি এখন বহুজাতিক কোম্পানির পেটেন্টের দখলে। ভারত উপমহাদেশের শতাধিক গাছগাছড়া যুক্তরাষ্ট্রের পেটেন্ট অফিসে রেজিস্ট্রেশনের অপেক্ষায় রয়েছে। নিম, হলুদ, মসলা, থানকুনি, চিরতার রস, ট্রাইফোলিয়েট অরেঞ্জসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ফলদ এবং ওষুধি গাছ যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশের কোম্পানির পেটেন্ট আগ্রাসনের শিকার হতে চলেছে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো তাদের উন্নত জেনেরিক টেকনোলজির মাধ্যমে ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্ট নির্ণয় করে অন্য দেশের জীববৈচিত্র্য এবং কৃষিজ সম্পদকে নিজের বলে পেটেন্ট করিয়ে নিচ্ছে।



৪। কৃষিতে পেটেন্ট বাস্তবায়ন হলে কৃষকদের শস্যবীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ, পুনরুৎপাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার কেড়ে নেয়া হবে। মেধাসত্ত্ব আইন অনুযায়ী রয়্যালিটি পাবে আমেরিকার বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আর ধ্বংস হবে দেশি প্রজাতি, পরিবেশ এবং কৃষি উৎপাদন কাঠামো। বীজ এবং কৃষি পণ্যের দাম অনেকগুণ বেড়ে যাবে বলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হলে কৃষিতে ভর্তুকি ব্যাপকহারে বাড়াতে হবে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কারনে তা বাংলাদেশ কখনোই পারবে না কেননা বাংলাদেশকে দোহা ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা (WTO এর অন্যায্য নীতি) অনুসারে কৃষিতে ভর্তুকি হ্রাসকরণ করতেই হবে।



মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় , টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হবে বিনিময়ে লাভের পরিমাণ হবে সামান্যই। তাই দয়া করে এই চুক্তি সই না করে দেশের স্বার্থ সুরক্ষায় দায়িত্বশীল আচরণ করুণ!





পুনশ্চঃ

মন্ত্রীর তথ্য বিভ্রাটঃ “এযাবৎ ৯২টি দেশ ও আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভুটান ও বাংলাদেশই শুধু এখনো বাকি” । বাণিজ্য মন্ত্রী, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মাঝে ভারত কিন্তু এখনো টিকফা স্বাক্ষর করেনি , একটু খেয়াল কইরেন! [সুত্রঃ Click This Link



চুক্তির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাঃ

Recognizing the importance of fostering an open and predictable environment for trade and investment; (প্রস্তাবনা ২)

Recognizing the benefits the Parties can derive from increased trade and investment, and that trade-distorting investment measures, investment constraining and protectionist trade measures can reduce these benefits; (প্রস্তাবনা ৩)

Recognizing the essential role of private investment, both domestic and foreign, in furthering growth, creating jobs, expanding trade, improving technology, and enhancing economic development; (প্রস্তাবনা ৫)

Recognizing the increased, importance of trade in services between their economies; (প্রস্তাবনা ৬)

Taking into account the desirability of reducing non-tariff trade barriers in order to facilitate increased trade among the Parties; (প্রস্তাবনা ৭)



২। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অবাধ পরিবেশ তৈরীর গুরুত্বকে স্বীকৃতি প্রদান করে;

৩।- উভয় পক্ষের জন্যই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কার্যক্রম বৃদ্ধি লাভজনক এবং বাণিজ্যে বিঘ্নসৃষ্টিকারী বিনিয়োগ সম্পর্কিত পদক্ষেপ, বিনিয়োগে বাদাপ্রদান ও সংরক্ষণবাদী বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা উভয় পক্ষকেই এইসব সুফল থেকে বঞ্চিত করে- এই বিষয়টিকে স্বীকৃতি প্রদান করে;

৫।- প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বাণিজ্য বিকাশ, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করা ইত্যাদির জন্য দেশী এবং বিদেশী ঊভয় ধরণের বেসরকারী বিনিয়োগের অপরিহার্য (এসেন্সিয়াল) ভূমিকার বিষয়টিকে স্বীকৃতি প্রদান করে;

৬।- উভয় অর্থনীতিতে সেবা খাতে বাণিজ্যের বর্ধিত গুরুত্বকে স্বীকৃতি প্রদান করে;

৭।- পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য অ-শুল্ক বাধা দূর করার আকাঙ্খার গুরুত্বকে বিবেচনায় রাখে;



পুরা চুক্তির খসড়া পাবেন এখানেঃ

Click This Link





মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৫

ফারজুল আরেফিন বলেছেন: ++++

২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:৫১

বিবাগী বাউল বলেছেন: আরেফিন ভাই, ধন্যবাদ !

বাংলাদেশের গলার ফাঁস টিকফা চুক্তি সই করা চলবে না!

২| ২১ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: বিবাগী বাউল,

সহমত ।

যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার প্রশ্নে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র মনে করে গণচীনের অব্যাহত উন্নয়ন ও পরাশক্তি হিসেবে চীনের অভাবনীয় অগ্রগতি ঠেকাতে এবং দক্ষিন এশিয়ার বিশাল বাজারের উপর নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে বঙ্গোপসাগরে এবং ভারতমহাসাগরে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি বজায় রাখতে হবে। আর বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা বজায় রাখতে হলে বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।

ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স সম্পর্কে আমি একদম নাদান । তবুও আমার স্বল্পবুদ্ধিতে এটা দীর্ঘদিন ধরেই আমার হিসেবের মধ্যে ছিলো । কারন চীন-কোরিয়া ( উভয় কোরিয়া । দু'টি সম্পূর্ন ভিন্ন কারনে ) এবং শেষেরটি ভারতকে ও কব্জা করতে বাংলাদেশই তাদের তুরুপের তাস । জাপানকে নিয়ে তাদের তেমন ভয় নেই । সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়লে ব্যালান্স অব পা্ওয়ার যেমন তাদের দিকেই সম্পূর্ণ ঝুঁকে পড়েছে সেটা এখোন এই তিন তিনটি দেশের সমন্বয়ে আবার তাদের বিরুদ্ধে চলে গিয়ে পাল্লাটা আবার সোজা হতে যাচ্ছে, এই ভয়েই বাংলাদেশকে তাদের দরকার - We have important strategic reasons for helping Bangladesh ... এটাই আসল কথা । বাংলাদেশে বা ধারেকাছের কোনও দেশের মাটিতে তাকে ঘাঁটি গাড়তেই হবে কিস্তি মাৎ করার জন্যে, আজ অথবা কাল । এটা তাদের লং টার্ম প্রস্তুতি ....

শুভেচ্ছান্তে ।

২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:৫২

বিবাগী বাউল বলেছেন: আপনার জন্য ও শুভেচ্ছা রইল, ভাল থাকবেন!

৩| ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:২৬

দুরন্ত-পথিক বলেছেন: টিকফা চুক্তি কোন মতেই চাইনা।এর জন্য জোরালো প্রতিবাদ আশা করছি ব্লগার দের কাছ থেকে।

২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:৫৩

বিবাগী বাউল বলেছেন: বাংলাদেশের গলার ফাঁস টিকফা চুক্তি সই করা চলবে না

জোরালো প্রতিবাদ আশা করছি ব্লগার দের কাছ থেকে।

৪| ২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:০৮

মোহাম্মদ আলমগীর খান বলেছেন: আমি আপনার পোস্টে + দিতে আসি নাই আমি আসছি আপনার পোস্টের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রী রে গালি দিতে......বাংলাদেশের যত আঞ্চলিক খারাপ গালি আছে সব দিলাম।

২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:৫৩

বিবাগী বাউল বলেছেন: দেন, এই মন্ত্রী মার্কিন দালালিতে নোবেল পাইতে পারেন!

৫| ০৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৩

নুসরাতসুলতানা বলেছেন: সংগ্রহে নিলাম আর পোষ্ট বিষয়ে মন্তব্য নিস্প্রয়োজন।

১৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৩২

বিবাগী বাউল বলেছেন: ধন্যবাদ ! ভালো থাকবেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.