নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাল আছি ভাল থেকো- আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ। [email protected]
সময় হলে ডানা মেলে যেভাবে মা-পাখিকে ছেড়ে ছানা-পাখি উড়ে যায়, সেভাবেই কোন একদিন স্বনির্ভর মানুষ হতে আপনার আদর উপেক্ষা করে, মমতায় মোড়ানো পরিবার ফেলে, ভালবাসার শহর ছেড়ে, বহু বছর আগে নিজের স্বপ্ন পুরনে দেশান্তরী হয়েছি। ২০০৪ সালে যে বাড়ি ছেড়েছি, সেখানে আর কোনদিন আগের মত করে ফিরতে পারি নি। এই ফেরা হয় না বলেই, হয়ত সকল পুরুষ তার ভালোবাসার নারীর ভেতর তার মমতাময়ী মায়ের ছায়া দেখতে চায়, আমিও চেয়েছি। আজ যতটুকুই এই আমি, তা আপনার শেখানো আদর্শের প্রতিফলন। সেই রৌদ্রমাখা ভরা দুপুরে অথবা মেঘে ঢাকা বর্ষার বিকেলে আপনার বুকে-পেটে উম মাখানো কুঠুরিতে ছোট্ট আমি যেভাবে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকতাম; সেভাবে আপনার বুকে মাথাগুঁজে ঘুমানোর প্রবল আকাঙ্খা আমার এতটুকু কমেনি। সেই ছোট্ট আমি পুরুষ হয়েছি, কত শহরের মায়ায় থিতু হয়েছি কিন্তু আপনার মকমলের মত নরম কোলের নিরাপদ আশ্রয়ের শান্তি আর কোথাও পাই নি। এখনও আপনার শরীর ও শাড়ির গন্ধ নিতে ইচ্ছে হয়। ভাত খেয়ে হাতটা এখনও আপনার শাড়ির আঁচলেই মুছতে চাই। ছোট বেলার সন্ধ্যা গুলিতে হাত-পা ধুয়ে দিয়ে কাপড় পরিয়ে, আমি আর ছাঁপাকে আপনি রান্নার চুলার পাশে পাটিতে বসিয়ে পড়ালেখা শেখাতেন। যখন বালক হলাম, মার্বেল খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, পুকুরে গোষল, ক্রিকেট আথবা ফুটবল খেলে সন্ধ্যার দিকে আব্বার রাগের ভয়ে চুপচাপ পা টিপে টিপে বাসায় ঢুকতাম, আপনি সবসময় আগলে রেখেছেন। একটা মানুষ কি করে যুগের পর যুগ ক্লান্তিহীন ভাবে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তার সকল সন্তানকে জিজ্ঞেস করে তাদের পছন্দের খাবারগুলি নিরলস রান্না করে যায়, এটা আমাকে এখনও ভাবায়। জীবনে কোন দিন পড়ালেখার চাপ দেন নি। ফেল করতে করতে, একসময় যখন বুঝলাম আমার পড়া লেখা করা উচিৎ, সেই সময় আপনি রাতের পর রাত জেগে পাশে বসে ছিলেন। আপনার ফেল্টু মার্কা ছেলেটার পড়ায় মনোযোগ দেখে আপনারও হয়তো ভাল লাগত। আমি লজ্জা পেতাম এই ভেবে যে, চার/পাঁচটা বিষয়ে ফেল করা ছেলেটার পাশে বসে তার মা ঘন্টার পর ঘন্টা সোয়েটার বুনছে আর একটু পরপর বলছে চা খাবি, ঝালমুড়ি মেখে দিব। আপনার সেই সেবার কারনেই আমার ভাল ছাত্র হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা এবং ভাল কিছু করার তাড়না। বাড়ি ছেড়েছিলাম, সাথে ফেলে এসেছি আমার প্রিয় পড়ার টেবিল, ক্যসেট প্লেয়ার, ক্রিকেট ব্যাট, লাটাাই আর প্রিয় বন্ধুদের। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেমিস্টার ব্রেক এ খুলনা থেকে রংপুর যাওয়ার পথে, কি কি খাবো সব একে একে শুনতেন। প্রতিবার আপনাদের সবাইকে ছেড়ে ভার্সিটিতে ফিরে যেতে আমার খুব কষ্ট হত। সেই আমি নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ছুটতে রংপুর থেকে খুলনা, ঢাকা, আরো কত বিদেশী শহরের মায়া ছেড়ে আট হাজার কিলোমিটার দুরের এক শহরে বন্দি হয়েছি। পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন এবং বসবাসযোগ্য শহর গুলির একটিতে থেকেও যেন মাঝে মাঝে অনিরাপদ অনুভব করি, কারণ এ জীবনে সব কিছু থাকলেও আপনার আদর মমতা নেই। কতকিছু নিয়ে লেখা হয়, আপনাকে নিয়ে কিছুই লেখা হয় না। কি অদ্ভুত! আম্মা আপনি তো শুধুই ভালবাসেন, বিনিময়ে কিছুই করতে পারি নি, কোন দিন কারও সেবা নেন নি। জীবন বুঝে গেছি, আর ভুল হবে না। অসীম কৃতজ্ঞতা।
আম্মা, আব্বা এবং ছাঁপা। হ্য়ত ১৯৮৩-৮৪ ইং এর কোন এক দিনে।
স্বপ্নপুরী, দিনাজপুর-- আব্বা এবং আম্মা, ২০০০ ইং সালে হবে হয়ত।
আমি, হয়ত ২ বছর বয়স হবে।
১৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৪
মোঃ জুলকার নাঈন বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক পড়ার জন্য।
২| ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩২
করুণাধারা বলেছেন: মানুষ ক্রমশ দূরে যেতে থাকে, নিজের গ্রাম থেকে, তারপর শহর থেকে, এক সময় দেশ থেকে... কিন্তু প্রিয়জনের কাছে থাকার জন্য একটা হাহাকার মনে রয়ে যায়।
পোস্ট ভালো লেগেছে।
১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৮
মোঃ জুলকার নাঈন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ করুণাধারা । এই হাহাকার আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭
প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল