নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সম্পাদক, শিল্প ও সাহিত্য বিষয়ক ত্রৈমাসিক \'মেঘফুল\'। প্রতিষ্ঠাতা স্বেচ্ছাসেবী মানবিক সংগঠন \'এক রঙ্গা এক ঘুড়ি\'।

নীলসাধু

আমি খুব সহজ এবং তার চেয়েও বেশী সাধারন একজন মানুষ । আইটি প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করছি। টুকটাক ছাইপাশ কিছু লেখালেখির অভ্যাস আছে। মানুষকে ভালবাসি। বই সঙ্গে থাকলে আমার আর কিছু না হলেও হয়। ভালো লাগে ঘুরে বেড়াতে। ভালবাসি প্রকৃতি; অবারিত সবুজ প্রান্তর। বর্ষায় থৈ থৈ পানিতে দুকুল উপচেপরা নদী আমাকে টানে খুব। ব্যাক্তিগতভাবে বাউল, সাধক, সাধুদের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। তাই নামের শেষে সাধু। এই নামেই আমি লেখালেখি করি। আমার ব্লগে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো। ভালো থাকুন সবসময়। শুভ ব্লগিং। ই-মেইলঃ [email protected]

নীলসাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদ মুবারক

১১ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সবাইকে ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা জানাই।
ঈদ মুবারক!
সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন এবং আনন্দ নিয়ে ঈদ পালন করুন।


'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।'


আপামর বাঙালির মননে গেঁথে যাওয়া এই গানটি কাজী নজরুল লিখেছিলেন জনপ্রিয় শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের অনুরোধে, ১৯৩১ সালে। গানটি লেখার পেছনে আছে অসাধারণ এক গল্প, আসুন তা জানি-
পুরো লেখাটি টিবিএস রিপোর্ট থেকে নেয়া। আপনার গুগলে সার্চ দিলেও এই গানটি নিয়ে নানা কথা জানতে পারবেন।

এই বিশেষ গানটি বেজে উঠলেই ছেলে-বুড়ো সবার মন দুলে ওঠে আনন্দে। প্রায় একশো বছর ধরে বাঙালির ঈদ-আনন্দের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হয়ে আছে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গানটি। এ গান বাজার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনের আঙিনায় বানের মতো হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে স্মৃতির লহর। ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশনে, রেডিওতে বাজতে শুরু করে গানটি। এ গান ছাড়া রমজানের ঈদ আমাদের অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সত্যি বলতে কী, গানটি ছাড়া বাঙালির ঈদ-উল-ফিতরের কথা তো ভাবাই যায় না। এটি হয়ে উঠেছে আমাদের জাতীয় ঈদ-সংগীত।

আব্বাসউদ্দীন আহমদের আত্মজীবনী 'আমার শিল্পী জীবনের কথা' থেকে জানতি পারি, নজরুলের সঙ্গে আব্বাসউদ্দীনের ছিল বেশ সুসম্পর্ক। আব্বাসউদ্দিন বয়সে একটু ছোট হলেও দুজনের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতোই। নজরুলকে তিনি শ্রদ্ধা করে, ভালোবেসে ডাকতেন কাজীদা। কাজী নজরুল ইসলাম তখন শ্যামাসংগীত লিখে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে তার লেখা কিছু গান রেকর্ড করেছেন আব্বাসউদ্দীনও। সেসবের মধ্যে অন্যতম 'বেণুকার বনে কাঁদে বাতাস বিধুর', 'অনেক কিছু বলার যদি দুদিন আগে আসতে', 'গাঙে জোয়ার এল ফিরে তুমি এলে কই', 'বন্ধু আজও মনে পড়ে আম কুড়ানো খেলা' ইত্যাদি।

এক রাতে রেকর্ডিং শেষে বাড়ি ফিরছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ফেরার পথে তাকে আটকালেন শিল্পী আব্বাসউদ্দীন। বললেন, 'কাজীদা, একটা কথা মনে হয়। এই যে পিয়ারু কাওয়াল, কাল্লু কাওয়াল এরা উর্দু কাওয়ালি গায়, এদের গানও শুনি অসম্ভব বিক্রি হয়। এই ধরনের বাংলায় ইসলামি গান দিলে হয় না? তারপর আপনি তো জানেন কীভাবে কাফের-কুফর ইত্যাদি বলে বাংলার মুসলমান সমাজের কাছে আপনাকে অপাংক্তেয় করে রাখার জন্য আদাজল খেয়ে লেগেছে একদল ধর্মান্ধ! আপনি যদি ইসলামি গান লেখেন, তাহলে মুসলমানের ঘরে ঘরে আবার উঠবে আপনার জয়গান।'
এ প্রস্তাব পেয়ে নজরুল পড়ে গেলেন দোটানায়। কারণ বাজারে তখন শ্যামা সংগীতের মোটামুটি একচ্ছত্র আধিপত্য। স্বয়ং নজরুলও শ্যামা সংগীত লেখেন, সুর করেন। ইসলামি ধারার গানের বাজারই গড়ে ওঠেনি তখন। এই অবস্থায় স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কাজ করে সফল হতে না পারলে ক্যারিয়ারই বরবাদ হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে ইসলামের সঙ্গেও যে নজরুলের আবেগ জড়িয়ে আছে! ইসলামকে তো তিনিও ভালোবাসেন। কিন্তু চাইলেই তো গান রেকর্ড করে ফেলা যায় না, সেজন্য লাগে সরঞ্জাম, লাগে লগ্নি। এসব বন্দোবস্তের জন্য ধরনা দিতে হবে গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সেল-ইন-চার্জ ভগবতী ভট্টাচার্যের কাছে। তাই নজরুল বললেন, 'আব্বাস, তুমি ভগবতীবাবুকে বলে তাঁর মত নাও। আমি ঠিক বলতে পারব না।'
এবার আব্বাসউদ্দীন গেলেন গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সেল-ইনচার্জকে ভগবতী ভট্টাচার্যের কাছে। প্রস্তাব শুনে ভগবতী বাবু তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। এককথায় মানা করে দিলেন ইসলামি ধারার গান করার প্রস্তাব। চলতি স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে গান করে ব্যবসায় লালবাতি জ্বালাতে রাজি না তিনি।
অগত্যা মনের দুঃখ মনে চেপে চুপ মেরে গেলেন আব্বাসউদ্দীন।

এরপর প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেল। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে একদিন দুপুরে। নিজের অফিস থেকে গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সেল ঘরে গেছেন আব্বাসউদ্দীন। গিয়ে দেখেন একটা ঘরে বেশ ফুরফুরে মেজাজে গল্প করছেন ভগবতীবাবু। তার খোশমেজাজ দেখে আব্বাসউদ্দীন ভাবলেন, এই তো সুবর্ণ সুযোগ। আব্বাসউদ্দীন ঝটপট বলে ফেললেন, 'যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে বলি। সেই যে বলেছিলাম ইসলামি গান দেবার কথা, আচ্ছা, একটা এক্সপেরিমেন্টই করুন না, যদি বিক্রি না হয় আর নেবেন না, ক্ষতি কী?'
এত জনপ্রিয় শিল্পীকে এবার আর ফেরাতে পারলেন না ভগবত বাবু। হেসে বললেন, 'নেহাতই নাছোড়বান্দা আপনি, আচ্ছা আচ্ছা, করা যাবে।'
সেদিন আব্বাসউদ্দীনের ভাগ্য ছিল ভীষণ ভালো। ওখানে বসেই শুনলেন পাশের ঘরেই আছেন আছেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি তৎক্ষণাৎ গিয়ে নজরুলকে বললেন যে ভগবতবাবু রাজি হয়েছেন।
নজরুল তখন ইন্দুবালাকে গান শেখাচ্ছিলেন। খবর শুনে তিনি ইন্দুবালাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে গান লিখতে বসলেন আব্বাসউদ্দীনের জন্য। তার জন্য এক ঠোঙা পান আর চা আনিয়ে দিলেন আব্বাসউদ্দীন। তারপর দরজা বন্ধ করে আধ ঘণ্টার মধ্যেই নজরুল লিখে ফেললেন সেই বিখ্যাত গান—'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ'।

লেখার সঙ্গে সঙ্গে সুরসংযোগ করে শিখিয়ে দিলেন আব্বাসউদ্দীনকে। পরদিন তাকে ঠিক একই সময় যেতে বললেন নজরুল। পরদিন তিনি লিখলেন: 'ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর'। লেখার চারদিন পরে রেকর্ড করা হলো গান দুটো। তার দু-মাস পরে ঈদুল ফিতর। আব্বাসউদ্দীনকে বলা হলো, ঈদের সময় গান দুটো বাজারে বের হবে।

ঈদের ছুটিতে কলকাতা থেকে বাড়ি গেলেন আব্বাসউদ্দীন। বন্ধের সঙ্গে আরও বিশ-পঁচিশ দিন বাড়তি ছুটি নিয়েছিলেন। তাই নতুন ইসলামি গান কেমন চলল, তা জানার সুযোগ পাননি। তারপর ঈদে যে গানটি বাজারে ছাড়ার কথা রয়েছে, সে কথা ভুলেই গেলেন।
ঈদের ছুটি শেষে কলকাতা ফিরে এসে ট্রামে চড়ে অফিসে যাচ্ছেন আব্বাসউদ্দীন। হঠাৎ শুনলেন ট্রামে তার পাশে বসা এক যুবক গুনগুন করে গাইছে, 'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে।'
শুনে একটু অবাকই হলেন আব্বাসউদ্দীন। এই যুবক এ গান শুনল কীভাবে? অফিস ছুটির পর গড়ের মাঠে বেড়াতে গিয়েও শোনেন মাঠে বসে একদল ছেলের মাঝে একটি ছেলে গেয়ে উঠল—'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে।'
তখন আব্বাসউদ্দীনের মনে পড়ল এ গান তো ঈদের সময় বাজারে বের হবার কথা। সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলেন সেনোলা রেকর্ড কোম্পানীর বিভূতিদার দোকানে গেলাম। আব্বাসউদ্দীনকে দেখেই তাকে জড়িয়ে ধরলেন বিভূতিবাবু। সন্দেশ, রসগোল্লা, চা আনিয়ে খেতে দিলেন। আব্বাসউদ্দীনের গান দুটো আর আর্ট পেপারে ছাপানো তার বিরাট ছবির একটা বান্ডিল সামনে রেখে বললেন, 'বন্ধু-বান্ধবদের কাছে বিলি করে দিও। আমি প্রায় সত্তর আশী হাজার ছাপিয়েছি, ঈদের দিন এসব বিতরণ করেছি। আর এই দেখ দু'হাজার রেকর্ড এনেছি তোমার।'
এ কথা শুনে আনন্দে নেচে উঠল আব্বাসউদ্দীনের মন। সঙ্গে সঙ্গে ছুটলেন কাজী নজরুলের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে শুনলেন নজরুল রিহার্সেল রুমে গেছেন। সটান সেখানে গিয়ে হাজির হলেন আব্বাসউদ্দীন। তার গলার স্বর শুনে লাফিয়ে উঠলেন দাবা খেলায় মগ্ন নজরুল। তাকে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, 'আব্বাস তোমার গান কী যে—'
ওইটুকু কথাতেই বুঝিয়ে দিলেন, তাদের গান তোলপাড় ফেলে দিয়েছে বাজারে। বাংলার মুসলমানের ঘরে ঘরে বাজছে তাদের গান। আনন্দে চট করে নজরুলকে কদমবুসি করে ফেললেন আব্বাসউদ্দীন।

ওদিকে গানের সাফল্যে মহাখুশি ভগবতীবাবুও। এরপর একের পর এক ইসলামি ধারার গান লিখলেন নজরুল, গাইলেন আব্বাসউদ্দীন। নতুন জোয়ার এল বাংলা গানের ধারায়। এভাবেই জন্ম হলো এক অবিস্মরণীয় গানের আর সেই গান হয়ে উঠল আমাদের ঈদ উদযাপনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। আমাদের সবার শৈশব-কৈশোরের ঈদ উদযাপনের রঙিন স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে গেল 'রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ' গানটি।


মন্তব্য বিষয়ক কৈফিয়ত:
নিজের লেখালিখি প্রকাশের জন্য আমি এই প্রিয় প্ল্যাটফর্মে সময় দেই।
সঙ্গত কিছু কারণে আমার পোষ্টে সহ-লেখক/ব্লগার দের মন্তব্য করার অপশন বন্ধ রেখেছি, আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.