নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রথো রাফি লেখালেখি গাণ্ডীব, অনিন্দ্য, শিড়দাঁড়া এবং দ্রষ্টব্যেই । মূলত কবিতা অন্তঃপ্রাণ তবে গদ্যও লিখেছি কিছু। অনুবাদেও আগ্রহ আছে। বই এখনো নাই। জন্ম: দক্ষিণ তারুয়া, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বসবাস ঢাকায়। প্রকাশনা সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ফ্রিল্যান্স কাজ করছি। [email protected]
নিশ্চয় অন্য মেয়েরা তোমাকে ঈর্ষা করে-- তুমি পাও সাড়ে পঁঞ্চমতম আঙুলেরও ভালবাসা, আহ! সে হাসে, খিল খিল করে হাসে, আর আমার ভাললাগে।
মি. আনিস পারভেজ বলছিলেন, তার কথা, আর আমি, শুনছিলাম। বললেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি একটু লাজুক প্রকৃতির। কারণটা আর কিছুই নয়, সবার মতো নিজের হাতটা ঠিক সবার সামনে মেলে ধরতে পারতেন না তিনি। তা অবশ্য কিছু একটার অভাবে নয়, বরং একটু অতিরিক্ত থাকার কারণেই। মি. আনিস দেখতে পেতেন সবার হাতে যেখানে পাঁচটা আঙুল, সেখানে তার ছটা। অন্যদের তুলনায় এই অধিক একটাকে কখনোই একটা মনে হতো না, মনে হতো অতিরিক্ত, এক্সট্রা। আর তাই হেন্ডশেকের সময়ে তার হাত যেনো আজও কিছুটা ধীরই রয়ে গেছে। অন্য হাতের দিকে এগোতে চায় না যেনো। তবে এখন লজ্জায় নয়, দেখতে পান হাতের ওই আঙলটার স্পর্শ পেলে করে-আবদ্ধ অপর হাতটি একটু চমকে ওঠে যেনো। তো এই অভিজ্ঞতা তার হাতটিকে যেমন টেনে রাখে নিজের দিকে, তেমনি খানিকটা কৌতুকবোধ অনেক সময় এ হাতটিকে অন্যের দিকে ঠেলেও দেয়। ফলে হাতটি আজও হেন্ডশেক করা বন্ধ করেনি।
তবে কিশোর বেলায় এ লজ্জা একটু বেড়ে গিয়েছিলো, কারণ আর কিছুই নয়, বন্ধুদের সাথে ঝগড়া। সে ভাবতো তার আঙুলটা তার বন্ধুরা বুঝি লক্ষ করে না। একদিন ঝগড়ায় হেরে যাওয়ার পর সে বুঝতে পারলো, তার আঙুল তারা ঠিকই খেয়াল করে। শুধু খেয়ালই করে না, একে ঘিরে তাদের কৌশলও নির্ধারণ করে ফেলে। তারা তার দুহাত রশি দিয়ে বেঁধে তাকে টানাটান করে দুইপাশের খুটিতে বেঁধেরেখেছিলো। ওর ওই এক্সট্রা আঙুলটাকেও মোটা সুতো দিয়ে বেঁধেছিলো ওরা। ওর ভীষণ রাগ হয়েছিলো। কারণ হাত বাধলে আপনি জোর করতে পারেন। কিন্তু ওই আঙুলটা বাধলে তো তা আর করতে পারে না, জোর করলে মনে হবে আঙুলটাই ছিঁড়ে যাচ্ছে। তাই সে জোরাজুরি করে-যে তার ভীষণ রাগটা দেখাবে, সেটাও সম্ভব হয়নি তখন। পাড়ার এক ভাই তাকে এ বাজে অবস্থা থেকে মুক্ত করেছিলো। তো সে ভীষণ লজ্জায় পড়লো। বাসায় ফিরে ভাবতে লাগলো কিভাবে আঙুলটাকে কেটে ফেলা যায়। শেষাবধি যদিও কাটা হয়নি আর।
তবে ওনি বেশ কটি প্রেম করেছিলেন জীবনে। আর তারা প্রত্যেকেই তার এই আঙুলটিকে এড়িয়ে চলতো বলে জানালেন তিনি। তারা কিছুতেই ঐ আঙুলটার দিকে চোখ ফেলতো না বা স্পর্শ করতে চাইতো না। যেনো এ আঙুলটির দিকে তাকানো মানে অপরের মুখ ম্লান করে দেয়ার মতো বাজে কাজটি করা। একে ছোঁয়া মানেই একটি ত্রুটির কথাই বারবার তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া, একটা অসম্পূর্ণতা।
পরে ওনি বুঝতে পারলেন, আসলে তারা তাকে ভালবাসতে পারেনি তেমন। মানে এই আঙুলের ভয়েই চলে গেছে। যদিও তার আর্থিক অবস্থা খারাপ নয়, এবং পাশাপাশি ভালবাসার ক্ষেত্রে তার ঘাটতিও নেই। বরং দাবী করেন, একটু বেশিই ওনি ভাল বাসতে জানেন।
বুঝলেন, কাউকেতো আর আটকে রাখা যায় না, বুঝাতে চাইলেন, বিশেষত ঐ এক্সট্রা আঙুল দিয়েতো না-ই, কারণ ওটার বল কম, আর তাই এ আঙুলটি আকড়েও থাকতে পারে না প্রিয়, আবশ্যিক ও অবিচ্ছেদ্য ওই অপরের আঙুলগুলো। অবশ্য আমি জিগ্যেস করিনি আনিস পারভেজকে, তাহলে বাকি আঙুলগুলো করেটা কী! তাছাড়া ওই আঙুলটি নিয়ে ওনারও কি অস্বস্তি ছিলো না! ছিলোতো। তিনি বললেন, অন্যরা ভালবাসেনি বলে আক্ষেপ করবো যে, আমিও কি তেমন ভালবাসতাম আমার আঙুলটাকে। আমিওতো প্রেমিকাদের সামনে অনেকদিন হাতটি নানা কৌশলে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি! সময় অনেক গড়িয়ে গেলে, আবেগ, মেলামেশা, কথাবার্তা বেশ গভীর হয়ে এলে, তবেই না আমার হাতটাকে একটু একটু করে সামনে আনা শুরু করতাম। প্রেমিকারা বলতো তুমি যেনো কেমন কনজার্ভেটিভ। ‘না, ঠিক তা না’ বলেই মৃদু হাসতাম। কই কখনোই তো তুমি আমার হাতটা ধরতে সাহস পেলে না। কিংবা আজকে নখে নেইল পলিশটা দেখো কি সুন্দর হয়েছে, তাই না? তখন আমি হাত গুটিয়ে বলতাম, হা, খুব সুন্দর। ভীষণ ইচ্ছে করলেও সামনে বাড়ানো হাতের পাতা দুটোকে আমি ছুঁয়ে দিতে পারতাম না! যদিও এর আগেই প্রেমিকারা প্রায় ওই আঙুল ঠিকই আবিস্কার করে ফেলতো, আর আমার মুখে ফুটে ওঠা অস্বস্তিটাকেও তারা এড়িয়ে যেতে চাইতো। আর আঙুলটার প্রসঙ্গ তুলতো না। কিংবা ওই আঙুলটার দিকে তাকাতো না। তারা হাত দিয়ে আমার কাঁধ ছুঁয়ে দিতো। বা কাঁধে মাথা রাখার চেষ্টা করতো, নয় পিঠে হাত রাখতো। আর হাত না ছুয়ে না ধরে প্রথমেই তেমন চেষ্টা করা তাদেরকে বিপুল অস্বস্তিতে ফেলতো। যেনো কোনো অনুশীল ছাড়াই ব্যাপক কঠিন কাজে নেমে পড়া। তো এসব প্রাপ্তির কারণে অবশ্য আমার এক্সট্রা আঙুলটাকে ধন্যবাদই দিতে হয়। বলার অপেক্ষা রাখেনা, আমি হাত বাড়িয়ে তাদের কোমর জড়িয়ে ধরতে অস্বস্তি বোধ করতাম। আমার এক্সট্রা আঙুলটা হয়তো তাকে সুরসুরি দিয়ে বসবে, নরোম তো। তো এসব কারণেও সবসময়েই ওই আঙুল অন্যান্য আঙুলের মতো ঠিক ভালবাসা পেতো না। বরং খুন হওয়ার ভয়ে ভুগতো। কারণ, আমার যেকোনো ব্যর্র্থতায় এ আঙুলটিই শেষপর্যন্ত প্রধান আসামী হয়ে পড়তো।
এখন তার এক ছেলে আর এক মেয়ে, বললেন তিনি। আর জানালেন, তার স্ত্রীরত্নটিও আঙুলটিকে একদম সইতে পারে না। কারণ, প্রতিরাতে এই আঙুলটির যতœ নেওয়ার দায়িত্ব তার স্ত্রীর। না তার কোন প্রেমিকা চিরস্থায়ীভাবে এ আঙুলটিকে আহত করে রেখে যায়নি। শুধু ঘুমের আগে অনেকক্ষণ এ আঙুলে মোলায়েম করে ছুঁয়ে না দিলে তার ঘুম হয় না। আর বউ এটা সইতে পারে না। বললাম, কেন? আনিস পারভেজ বললেন, সইতে না পারার কারণ আর কিছুই নয়, এক কাজ প্রতিরাতে কার ভাল্লাগে। তবে আমার মনে হয়কি জানেন, আসলে একঘেয়েমি নয়, এর পেছনে কাজ করছে আমার স্ত্রীর বিশুদ্ধ ঈর্ষা! বলেই হাহা করে হেসে উঠলেন।
তো ছেলেটা যখন জন্মালো, সবারই চোখ গেলো প্রথমেই তার ওই হাতের দিকে। আমার স্ত্রী বলছিলো আয়া, দায়-মা, শাশুড়ি, সবাই এই একই কাজটি করেছে। আরো একটা এক্সট্রা আঙুলের আবির্ভাব ঘটলো বুঝি! হাঁ, ঠিক এমন দশাই হয়েছিলো সবার, এমনকি আমারও। যে বন্ধুটির বিরুদ্ধে আপনারা ষড়যন্ত্র করছেন, তার আকস্মিক উপস্থিতিতে যেমন অস্বস্তি হয় আপনাদের, এও তেমনি। আপনার মনে আঘাত দিলাম বুঝি? কিছু মনে করবেন না, প্লিজ। আর ছেলেটার হাতে অতিরিক্ত আঙুলটাকে খুঁজে না পেয়ে সবাই স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। এখন মনে হয়, আসলে এমন হওয়ার কারণ আমিও আমার এই আঙুলটাকে মনের অনেক গভীর থেকেই চাই না। তো অন্যকে কী দোষ দেবো বলেন! আর আমার মা আতকে আমাকে কল দিলেন, বাবা ওর কি অতিরিক্ত আঙলটা আছে?
আর আমার মেয়েটার বেলাতো আরো বেশি অস্বস্তি শুরু হলো, ডাক্তার চেক আপের পর যখন জানালো একটা মেয়ে হতে যাচ্ছে আমাদের, সেদিন থেকে প্রতিদিনই আমি আর আমার বউ চিন্তা করেছি, মেয়েটা বুঝি ওই অতিরিক্ত আঙুলটা নিয়েই জন্মাবে। চিন্তা করো নাতো, আমার স্ত্রী বলতো, ছেলেটার যখন হয়নি, মেয়েটারও হবে না। আমার কি আর চিন্তা থামে! আমি বলি ছেলেটার যখন হয়নি, তখন মেয়েটির হওয়ার সম্ভাবনাতো আরো বেশি। তার মুখ কেমন ম্লান হয়ে যেতো। তবু হেসে বলতো, ভেবো নাতো, আগে হোক, তখন দেখা যাবে। তো হলে কী করতে পারতো সে। আপারেশন? তা হয়তো একটা পথ। কিন্তু তখনও সবাই জানতো, মেয়েটার একটা এক্সট্রা আঙুল ছিলো, তার বাবার মতোই। আর বিয়ের সময়ে এ প্রশ্নটাই বড়ো হয়ে দেখা দিতো। আর কারো সাথে প্রেমে তার এ আঙুলের স্মৃতি বাধা হলেও, হয়তো ঘনিষ্ট হয়ে আসার এক পর্যায়ে কেউ না কেউ তার প্রেমিককে বলে দিতো, জানিস ওর না একটা এক্সট্রা আঙুল ছিলো, আর তার বাবারও কিন্তু একটা আছে এখনো। ছেলেটা তাতে কী তাতে কী বলে বলে কিছুদিন পর ঠিকই পিছুটান দিতো। মেয়েটার বিষণ্ন মুখ দেখে আমি ঠিকই টের পেতাম, ওফ সেই এক্সট্রা আঙুল! কিন্তু বলতে কি কষ্ট হতো না আমার, মন খারাপ করিস না মা! আমি এসবই ভাবতাম, আর নিজের কষ্টগুলো আসন্ন মেয়েটির উপর আরোপ করে বিষণœ হতাম। ভাবুন, সে বড়ো হয়ে তার নেইল পলিশকরা আঙুলগুলো, তার প্রেমিককে দেখাতে পারছে না, বা দেখাতে গিয়েও লুকিয়ে রাখছে, ভাবুনতো! সে হয়তো বলতেও পারতো না, অতিরিক্ত আঙুলে নেইলপলিশটা আরো বেশি নাইস, তাই না? কিংবা ওই এক্সট্রা আঙুলটার কারণেই সে কোনদিনই হয়তো তার অপূর্ব আঙুলগুলোতে নেইলপলিশ দিতো না। তো হওয়া মাত্রই তার পায়ের আঙুলও চেক করা হলো। না-হ বাঁচা গেলো। তখন অনেকেই আমাকে বলেছে, যে আমার নাতিনাতনিদের ক্ষেত্রে তা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সে সম্ভাবনা আরো বেশি প্রবল হয়ে উঠলো এ ঘটনায়। কিন্তু আমি ও নিয়ে আর ভাবি না। আমার ছেলেমেয়ে দুটি আগে বড়ো হোক, প্রেম করুক, বিয়ে করুক, তারপরেতো সে-সম্ভবনার কথা আসছে। তখন না হয় এ বিষয়টা দেখা যাবে। এখনই ভাবার কোনো মানে হয় না।
তো আমার এক প্রেমিকা বলতো-- ওই আঙুলটার জন্য তুমিতো দায়ী নও। আর সবাই পাঁচটি আঙুলের ছোঁয়া পায়, আমি পাই ছয়টি আঙুলের, মানে বেশি পাই আদর। আমিতো সবার চেয়ে ভালবাসায় ধনী। কই ওই আঙুলটা, আমাকে দাওতো। লুকিয়ে রাখবে না, একদম লুকিয়ে রাখবে না বলছি। তাহলে কিন্তু আমি আর দেখা করতে আসবো না। লোকজানের সামনেও লুকিয়ে রাখবে না বলে দিলাম। সবার সামনে বের করে বলবে, জানো এ আঙুলটাকেও অনেক ভালবাসে আমার প্রেমিকাটি। পারবে না! পারবে, অবশ্যই পারবে। বুঝুনো ভালোবাসা কী হাবুডুবো দশা। তো একদিন এই প্রেমিকাটিই আমাকে জানালো, আঙুলটির কথা শুনে বা দেখা পেয়ে যারা চলে গিয়েছে তারা আসলে ভুল করেনি। শুনেতো আমার হৃদপি- ধক করে উঠলো, সে বুঝি আর আসবে না, তারও বুঝি এবার আমাকে ছেড়ে যাবার সময় হয়ে এলো। সে বলে যে, এটা জেনেটিক একটা ব্যাপার, পরবর্তী প্রজন্মে এর বিস্তার ঘটতে পারে। তো এটা একটা চাপ মনে হয়েছে তাদের কাছে। আমার কাছে নয় কিন্তু! বললো প্রেমিকাটি। আমি ভাবলাম, আঙুলটা ছোট হলেও এর ভার যেকোন আঙুলের চেয়ে কতোই না বেশি। শুধু বেশি না, এটা কেউ বহনই করতে পারে না। আমার কাছেও মাঝে মাঝে ভীষণ ভীষণ ভারী মনে হয়। সে বলতে থাকে, এই চাপতো মিথ্যে নয়। এ কথা শুনে আমার শ্বাস বন্ধ হওয়ারই যোগার। সে বললো, কিন্তু তারা ভেবে দেখেনি, এটা কি আশ্চর্য নরোম, বিশ্বাস করো, আমি ও আঙুলটার কত গভীর প্রেমেই না পড়ে গিয়েছি। আর আমার মুখ আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠে, মনে হলো পৃথিবী তন্ন তন্ন করে একশো আটটি গোলাপ এনে আবারও তার পায়ের কাছে নত হয়ে আছি। সে চেঁচিয়ে উঠে, দাও তো আঙুলটা। মনে হতো বুঝি সে আঙুলটা কেটে বাড়ি নিয়ে যাবে। আমি তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতাম। সে একটা চুমো খেতো ওই আঙুলে। আর সত্যিসত্যি যতোক্ষণ আমার পাশে থাকতো, আঙুলটাকে নিয়ে খেলতো আর খেলতো। নরোম আঙুলে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রেমিকার আদর পাচ্ছেন, ঘন্টার পর ঘন্টা প্রেমিকার আঙুলগুলোর মাঝে আপনার ওই আঙুলটা খেলছে, ভাবুনতো একবার, এর চেয়ে সুখ আর কীসে আছে! তো ভাবলাম, আমি কত সোভাগ্যবান, আর আমি কিনা এ আঙুলটা নিয়ে সংকোচ করি! ভাবলাম, এ আঙুলটার যতœ নেয়া দরকার। শীত এলে গেলাম হাত মোজা কিনতে, নিউমার্কেটে। কিন্তু আমার হাত মোজা পাই না। সবইতো পাঁচ আঙুলের। তো একটা বানিয়ে নেয়ার কথাই ভাবলাম। গেলাম টেইলারের কাছে। কিন্তু বেশির ভাগ টেইলারাই হাতমোজা বানাতে পারে না। পরে ভাবলাম, তারা বানাতে পারলেও পড়বো কিভাবে। এই সাড়ে পাঁচ নম্বর আঙুলটাতো হাড্ডি ছাড়া, নরোম, গোড়াটা একটু চিকন। মোজার আঙুলে একে ঢোকানো সম্ভব হবে না। বাদ দিলাম হাতমোজার শখ। আর বুঝলাম, বাবাই বা কেন কখনো আমাকে হাতমোজা কিনে দেননি! আর মা-ই-বা কেন বাবাকে কখনো অনুরোধ করেননি আমাকে হাত মোজা কিনে দিতে!
তো প্রেমিকার আশকারা পেয়েতো আমার লজ্জা হাতকে ঘিরে অনেকটাই কেটে গেলো। আমি সবার সামনে হাতটা দেখাতে পারতাম, সরাসরি সবার সাথে হেন্ড শেক করতাম। তাদের হাত কিছুটা চমকে উঠলেও আমার কিছু যায় আসে না। তবে কথা কী জানেন, সেও নানান ব্যস্ততার কথা বলে আসা কমিয়ে দিতে লাগলো। এবং একদিন আবিস্কার করলাম, সে আর আসছে না। তখন আমারও মনে হতে লাগলো, সে আসলে আসছে না ওই একই কারণে, যে-কারণে অন্যরা গিয়েছে। আর এদিকে আমার ভীষণ অভ্যাস হয়ে গেলো ওই নরোম আঙুলে কারো-স্পর্শ-পাওয়ার। না পেলে চলে না। মাথা কুটে মরি। বন্ধুদের বলি, এই আঙুলটা একটু টিপিটুপে দে তো। আরাম লাগে। দে না। তারা হাসতো। আর বলতো ফাজালামি করিস নাতো। আমি কী বলবো বলুন। আমার বান্ধবিদের অনুরোধ করি, এই আমার এক্সট্রা আঙুলটাকে একটু এক্সট্রাভাবে নেড়েচেড়ে দেতো। তার বলতো বদমাস, সুযোগ নিতে চাও না। আঙুলটা এক্ষুনি কাট বলছি, না হলে আমরাই তোর আঙুলটা কেটে টুকরো টুকরো করবো একদিন। আমারও মনে হতে লাগলো কেটে ফেলি। আর মনে হয় ওই আঙুল স্পর্শ করা বুঝি মেয়েদের জন্য খুব খারাপ একটা বিষয়। যদি কেউ কখনো একটু রাজিও হতো, অন্যসব আঙুলে এক পলক হাত বুলিয়ে দিতো, ওই আঙুলটা এমনকি ভুলেও স্পর্শ করতো না। একজনতো এই আঙুলটা ছুঁয়ে খিলখিল করে হেসে উঠেছিলো। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কেন, শুধু একটু ভেতরে ভেতরে গুটিয়ে গিয়েছিলাম। বুঝলাম, আমার অভ্যাস আমাকেই পুরণ করতে হবে। প্রতিদিন বাসায় ফিরে বিছানায় শুয়ে ঘুমের আগে নিজেই ওই আঙুলটাকে টিপে টুপে চলি। আর পেমিকাদের কথা ভাবি, তাদের স্মৃতির ভেতর থেকে মুনিমুক্তার মতো দুঃখ কুড়াই। আর একসময় ঘুমের অভ্যাসের সাথে এ অভ্যাসও মিশ খেয়ে যায়। অভ্যাস হালকা হওয়ার বদলে গাঢ় হলো আরও।
আমার মা ঠিকই ব্যাপারটা লক্ষ করলেন। কীরে তোর আবার এ অভ্যাস হলো কবে? দে আমাকে দে, টিপে দিচ্ছি। মা অনেক্ষণ টিপেটুপে দেয়, আমি ঘুমিয়ে পড়ি। মা চলে যায়। একদিন বলি, মা সেও চলে গেছে। এ আঙুলটার জন্যই গেছে, মা। মা হাসে, তাতে কি, ঘুমো তো। বেশকিছু দিন পরেই মা নানা সম্বন্ধ খোজেন। কিন্তু সবাই প্রথম দেখে আমাকে অনেক পছন্দ করেন, কিন্তু কিছুদিন পরেই তারা নিষ্ক্রীয় হয়ে পড়েন। বলেন, মেয়েটার সামনে মাস্টার পরীক্ষাটা আগে দিক, তারপর ভাববো। এভাবে নানান কারণ। কিন্তু আমার মনে হয়, আমার পাড়ায় যখনই কারো কাছ থেকে খবর নেয়, বলে দেয়, ওর না একটা এক্ট্রা আঙুল, আর যয় কোথা, সব পরতার সেখানেই ইতি ঘটে যায়। তো শেষ পর্যন্ত মা আমাকে এই স্ত্রীরত্নটিকে জুটিয়ে দিতে সক্ষম হলেন। দেখে পছন্দ হলো আমার, স্ত্রীরত্নটিও নাকি আমাকে পছন্দ করেছে। আমি প্রথম প্রথম ভেবে পাচ্ছিলাম না, এ আঙুলটা লুকিয়ে রাখবো, না তাকে দেখাবো। তো এ সমস্যা কাটানো কঠিন মনে হলো, বিয়ে হলো। তো একদিন সে খেয়াল করে ঘুমের আগে আমি আমার আঙুলটা নিয়ে একা একা ব্যস্ত থাকি। তাই আমার হাতটা পাচ্ছে না সে নিজের গায়ের উপরে। তার মনে হতে থাকে আমি তাকে কেমন যেনো একটু এড়িয়ে চলি, ততটা ভালবাসি না। আমার দুই হাতইতো তখন ব্যস্ত আঙুলটা নিয়ে, কী আর করা। তো সে খেয়াল করে। আর তাছাড়া ঘটনাটা বলি কী করে। ওর কথা বললেইতো জ্বলে উঠবে। মেয়েদের ঈর্ষাতো বিশ্ব বিদিত-- আমার অভিজ্ঞতাও তাই। সারাক্ষণই এর দিকে কেনো ওভাবে, ওর দিকে কেন এভাবে তাকালে, অ্যা! বলা যাবে না, এভাবে তাকাতে ভাললাগে বলেইতো তাকিয়ে ফেলি, আর এভাবে তাকানোর কারণেইতো তুমিও বুঝতে পেরেছিলে আমি তোমাকেই চাই! কিন্তু এসব বলা যাবে না। পাওয়ার পর কেন এই ভাল লাগা বদলাবে-- এওতো যৌক্তিক, স্বভাব যদি পরম যৌক্তিক হয়, প্রতিশ্রুতি আর কতক্ষণ টেকে বলুন। স্বভাব তখন আর কতটা অন্যের যুক্তি মেনে চলে বলুন। বলছিলাম বিয়ের সময়কার কথা।
তো সে ঐ রাতে আমার একটা হাত তার গায়ে তুলে নেয়। আমার অস্বস্তি হতে থাকে। ঘুম আসে না। আঙুলটা তো যথেষ্ট আদর পাচ্ছে না। ঘুম আসবে কীভাবে বলেন? আমি হাতটা তার গা থেকে সরিয়ে আবার আঙুলটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সে দেখে। তারপর মৃদু হেসে আবার হাতটা টেনে নেয় গায়ের উপর, ঠিক তার নাভির কাছে। আমার হাতটা তার একটা হাত দিয়ে ধরে থাকে আর আরেকটা হাতে ও ওই আঙুলটাকে আদর করতে থাকে। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। একসময় ঘুম আসে। সে পায় নিশ্চিত একটা ঘুমন্ত হাত তার গায়ের উপরে, তারও কী শান্তি। তার মুখ দেখে ঠিকই বুঝতে পেরেছলাম তার ওই প্রশান্তিটুকু।
তবে একটা কথা, এ বিয়েটাও কিন্তু ওই আঙুলের সংবাদে প্রায় ভেঙেই পড়েছিলো। তবু ঠেকানো গেলো চারপাঁচ ভরি সোনা বেশি উপহার দিয়ে, মেয়েদের ক্ষেত্রে এ উপহার। যৌতুক নয়! তো প্রথম রাতে হাত লুকিয়ে রেখেছিলাম, সে বিস্মিত কেন আমি এমন হাত বগলের নিচে লুকিয়ে রাখছি ঘন্টার পর ঘন্টা, এতো নিলোর্ভ পুরুষ আমি কীভাবে হলাম, ভাবছিলো সে, আর সে আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছিলো-- এ কথা পরে বলেছিলো সে আমাকে। তো বহুদিন পরে, বিছানায় তাকে ফিসফিয়ে বললাম, তুমি অনেক ভাগ্যবান, কেন জানো? কেন? -- আমার বউ জানতে চায়। বলি এই এক্সট্রা আঙুল। সে বলে, আঙুল নিয়ে মজা হচ্ছে, না? ওই এক্সট্রা আঙুল কেউ কি পছন্দ করে নাকি? বুঝতে পারলাম, আসলে সোনাও এ আঙুলকে তার কাছে বরণীয় করেনি। একটু খারাপই লাগলো আমার। আমি বলি, করে না বলেইতো তুমি সৌভাগ্যবান। এটা শুধু তোমারই ছোঁয়া পাবে, এবং তুমি ছাড়া কেউ একে ছোঁয়ারও সুযোগ পাবে না। সে ঝামটি দেয়, অন্যরা ছুঁয়ে দেখলে তো! বললাম, দেখো এ আঙুলটাই তোমাকে অতিরিক্ত পাঁচ-পাঁচ ভরি সোনা পাইয়ে দিয়েছে। ভাগ্যিস আমার এই ধন ছিলো, তাই তোমাকে পেলাম। তুমিও পেলে একটা ব্যক্তিগত একট্রা আঙুল। যা অন্যকারো বউয়েরই নেই। তোমারই শুধু আছে। নিশ্চয় অন্য মেয়েরা তোমাকে ঈর্ষা করে-- তুমি পাও সাড়ে পঁঞ্চমতম আঙুলেরও ভালবাসা, আহ! সে হাসে, খিল খিল করে হাসে, আর আমার ভাললাগে। সে বলে খুব মজা হচ্ছে না? আমি বলি, মজাইতো। তুমি আঙুলটাকে একটু আদর করোতো, এবার একটু ঘুমাই। সে আদর করে, আর আমি একসময় নাক ডাকতে থাকি।
তবে যেদিন খুটিনাটি নিয়ে ঝগড়া শুরু হয় সেদিনতো আর আঙুলের কপালে আদর জুটে না। একদিন খুনসটি লেগে গিয়ে একটু রেগে বলেছিলাম, এ আঙুলটাকে একজন কি ভালই না বাসতো। সে থাকলে আজকে তুমি এমন করতে পারতে না। আমারই কপাল খারাপ। এই আঙুলটা আমার কপাল নষ্ট করে ফেললো। সে বলতো, যাও না তোমার ওই প্রেমিকার কাছে, যাও, আঙুলটা দিয়ে আসো তাকে, যাও এখুনি, তুমিও আর ফিরে আসবে না বলে দিচ্ছি। আস্লে পরিণতি খুব খারাপ হবে। আমি আর ওই আঙুল নিয়ে পারবো না। আর যদি বাড়াবাড়ি করো আঙুলটা টুকরো টুকরো করে ড্রেনে ফেলে দেবো।
এতোদিন সংসার করার পরও মি. আনিস পারভেজ আমাকে বললেন, তার ভয় হচ্ছে তবু কোন একদিন রাগ করে আমার বউ এ আঙুলটি কেটে ফেলতেই পারে। তার যা রাগ, ও সম্ভাবনা ৯৯ পারসেন্ট। তাছাড়া কেটে ফেলাও অনেক সহজ। তাতে কোনো হাড় নেই, নরোম, বড়ো নরোম ওই আঙুলটি, বড়ো নিরীহ আর ভালবাসা-কাঙাল। ঘুমের ভেতর একটা চাকু দিয়ে পোচ দিলেই হলো। ঘেচ করে কেটে যাবে। এত দ্রুত যে আমি টেরই পারো না, এমনকি আঙুলটাও না। আমার ঘুম ভাঙবে আঙুল কাটারও আধ মিনিট পরে। ব্যথায়, সতর্ক হওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না। কিন্তু আমি এ আঙুলটা কাটা পড়–ক তা কোনভাবেই চাই না এখন। ছেলেমেয়েরা বেশ বড়ো হয়ে গেছে আর এটা ছাড়া আসলে সংসার টিকবে না। কিংবা ধরা যাক, আমার ছেলেমেয়েরা এ আঙুল ছাড়া যখন আমাকে দেখবে-- তখন কেমন করে তাকাবে আমার দিকে, একবার ভেবেছেন, তখন তারা বাবার ব্যর্থতা, অন্যায়, মায়ের ক্রোধ, অন্যায় ও নিষ্ঠুরতা এক সাথে দেখতে পাবে। তখন কেমন লাগবে আমার ভেবেছেন একবার। মি. আনিস আহমেদ আমার কাছে জানতে চাইলেন। আমি কিছুই বলিনি, তার মুখের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে থাকি। হাসি পেলেও তা চেপে যাই। আনিস পারভেজ বলেন, আমার কি মৃত্যুই ভাল না! কিংবা জনে জনে উত্তর করতে হবে-- এই বয়েসে আপনি আঙুল ফেলতে গেলেন কেন-- প্রেমে পড়েছেন নাকি নতুন করে। তাদের ঠাট্টার ভাষা আর তাদের মুখের অভিব্যক্তির অমিল আমার স্ত্রীর কীর্তিকে কখনো ম্লান করবে না, উজ্জ্বল করা ছাড়া।
যাক, তবু আঙুলটাই এখনও আমাদের সমঝোতার ভাষা। ঝগড়া শেষে কী-যে কাজে লাগে। বিশেষত যে রাতে ছেলেমেয়েদের কোন বিষয় নিয়ে বা নিজেদের মাঝেই নানা খুনসুটি হয়, বউ যখন রাগ করে ঘুমায় তারও একটু অসুবিধা হয়, মনে হয় হাতের মাঝে ঘুমের আগে কি যেনো নেই। আর আমারও ঘুম আসে না। আমি ঠিকই হাতটা বউয়ের কোমর পার করে বউয়ের নাভির কাছে রেখে দিই, আর বউয়ের হাতটাও অনেক্ষণ চুপচাপ স্পন্দনহীন হয়ে ওখানেই পড়ে থাকে। প্রথমদিকে দুএকবার ছুঁড়েও ফেলে আমার হাত। আমি আবার নিরুপায় হয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিই। না বাড়িয়ে আমার উপায় থাকে না। কারণ আমার ঘুম আসে না। আঙুলে আমার বউ মেসেজ না-করে দিলে। তবে এও কিন্তু সত্যি। অনেকবারই বউ ঝগড়া করে বাবার বাড়ি গিয়ে আবার ফিরে এসেছে। আর রাতে যখন রাগ আর থাকে না, আমার বউ ঠিকই মৃদু হেসে একবার বলেছিলো, কেন ফিরে এসেছি জানো, অভ্যাস হয়ে গেছে, ¯্রফে অভ্যাস। ঘুম আসে না। এমন নরোম একটা আঙুল, তার ছোঁয়া না পেলে মনে হয় কি যেনো নেই, হাহাকার করে উঠে মনটা। তাই বলে এখন ভেবো না আমি তোমাকে এখনও এক ফোটা ভালবাসি। বরং তুমি এখন একেবারেই দুচোখের বিষ। আমি ভাবি, নিশ্চয় ওই আঙুলটা ছাড়া। তাই আঙুলটা কাটা পড়–ক এটাও চাই না এখন, এই বয়েসে।
একসময় ভাবতাম, বউয়ের প্রতিওতো কৃতজ্ঞ থাকা উচিত তাই না। তাই তার জন্যেও এই আঙুলটাকে বাঁচানো উচিত তার আক্রমণের হাত থেকে। আনিস পারভেজ বললেন, এখন আমি ভাবছি, এই বিয়েটা বোধ হয় টিকেই গেলো এ আঙুলটার কারণেই। এই এক্সট্রা আঙুলটাকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। যেটা আর কারো নেই। আর তাই আমার বউয়েরই একমাত্র সম্পদ, এমন একটা সম্পদ যা অন্য কারোই নেই। অন্যকারো কাছে ছুটে গেলেও পাওয়া যাবে না। আমার বউ কি বলেছিলো জানেন, প্রথম প্রথম আমার আঙুলটা যখন স্বত:স্ফূর্তভাবে তার বন্ধুবান্ধবদের সামনে বের হয়ে পড়তো, সে লজ্জায় মরে যেতো। আর তার মনে হতো, তার বান্ধবীরা ভাবছে, তাদের চেয়ে অধিক স্বচ্ছল স্বামী পাওয়ার আসল কারণ এ আঙুলটাই। তখনো আমি এ আঙুল নিয়ে সংকোচে পড়ি।
আবার মাঝে মাঝে এও মনে হয়, এ আঙুলটাকে একটা গিফট কিনে দেই। কিন্তু এ আঙুলের জন্য গিফটের কথা ভাবলে শুধু আংটির কথাই মনে আসে। কিন্তু এ আঙুলে আংটির কথা ভাবলেই চারপাশের লোকদের বিস্ময়ে গোল হয়ে পড়বে চোখগুলো। এ বয়েসে আর এ দৃষ্টি টলার করতে পারবো না। মানিয়ে নেয়া মুশকিল, কেউ হেসে উঠলেই আমি লজ্জায় ধুলায় ছিটকে পড়বো। আর উঠতে পারবো না। আর ছেলেমেয়েদের কথা না হয় না-ই বললাম। তো আঙুলটাকে আমি চাইলেই কৃতজ্ঞতা জানাতে পারি না। বউকে একদিন একটা আংটি দিয়ে বলাম, ওটা তুমি পড়বে। এটা তোমার প্রিয় আঙুলের জন্য একটা গিফট। এটা তো আর এ আঙুলে পড়া সম্ভব নয়, তাই তুমি পড়বে। বউতো বিস্মিত, এ আঙুলটাকে কেন গিফট করেছি জানতে চাইলো। বললাম, কারণ আর কী হতে পারে, তুমি এখনতো শুধু এ আঙুলটাকে ভালবেসেই এ সংসারে আছো। সে তখনি ক্ষেপে অগ্নিমূর্তি ধারণ করলো, বললো, ইয়ার্কি হচ্ছে, না। আমি বলি, না না ইয়ার্কি নয় প্রিয়, এ জীবনে এ আঙুলটা একজেনরই প্রেম পেয়েছে, আর ওই একজনটা হলে তুমি.. আর তা জানোইতো তুমি। সে বললো, এবার তোমার আঙুলটা নিশ্চিত কাটবো, কেটে টুকরো টুকরো করবো। করে ডাস্টবিনে ফেলে দেবো। আজ রাতে চোখ বুজেই দেখো না একবার, পরদিন আর আঙুলের দেখা পাবে না বলে দিলাম। আমি বলি, তোমার কি ঘুম হবে? এ আঙুলের প্রেমটুকু না পেলে। সে কিছু বলে না। সে বলে ঐ আঙুল আমার আর দরকার নেই। দাও আংটিটা। আমার মেয়েছেলের মুখ দেখে এ সংসারে আছি, তোমার মুখ দেখে এ সংসারে থাকি না আমি। আমি তাকে বলি, আঙুলটাকেও কি আর ভালবাসো না, তাহলে? তাহলে আজকে থেকে অন্য বিছানায় শোবো।
সে আর আমি সেদিন রাতে দুই বিছানায় শুই। আর দুজনেই এপাশ ওপাশ করি। আর তার বিছানায় এসে ডাকি, রোকসানা ও রোকসানা শুনছো, ঘুম আসছে না ঘুম আসছে না, বুঝলা। রোকসানাও ফিসফিস করে, ওঁ-হ, আমারও। আমি তার পাশে শুই আর কোমার পার হয়ে নাভির পাশে পড়ে থাকা হাতটার দিকে আমার আঙুলটা বাড়িয়ে দিই। আর সে কিছুই বলে না, আঙুলটাকে নাড়তে থাকে। আমরা অভ্যাসের কারণে ফের একসাথে শোয়ার সুযোগ পেয়ে যাই। আর আমার খারাপ লাগে, তার জন্য। আমি আঙুলটাকে পুঁজি করে ফেলেছি খুব। হায়, এমনকি ওই এক্ট্রা আঙুলটাকেও এখন আর আমরা প্রেমময়ভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। তবু আমি তার পিঠে হাত বুলাই, আদর দিই। আর সাড়ে পাচ নম্বর আঙুলটার ওপর আমার নিয়ন্ত্রণ নেই তেমন-- ফলে আমার চাপ কমা-বাড়ার সাথে এর চাপ তেমন কমে-বাড়ে না-- কিন্তু এর নিয়ন্ত্রনহীন ছোঁয়া তাকে একদিন খুব জাগিয়ে তুলতো। ও বলেছিলো, আসলে সবকিছুতেই মৃদু নিয়ন্ত্রণহীনতার একটা ছোঁয়া থাকা চাই, না হলে জীবন জমে না। এটা আমার মনে পড়ে আর ভাবি হয়তো এই মৃদু নিয়ন্ত্রণহীনতাই আজও তাকে আমার কাছে টেনে আনে, জাগিয়ে রাখে তাকে আমার পাশে, আর তার গা থেকে আমার প্রতি যে বিরক্তি তা ধোয়ে ফেলতে তাকে সক্ষম করে তোলে, এইতো মুক্তির একটা চিকন পথ... যে পথে ম্লান একটা আলোর রেখা ফুটে উঠে স্বস্তির, এ পথের ভেতর দিয়ে আমি জীবনটাকে পার করে দিতে চাই আবার, আবার।
তার কানে কানে বলতে যাই, জানো এ আঙুলটা ভালবাসতো আরো একজন। সে বললো সে গল্প করো না তো, এখন। আমি ওকে ঈর্ষা করে করে এ অভ্যাসের গহ্বরে পড়ে গেছি, না হলে এমন পোড়া কপাল হতো না আমাদের, প্রেমহীন একটা এক্সট্রা আঙুলকেও অবলম্বন করে এভাবে সংসার করতে হতো না। সংসারের ইতি টানতে পারতাম কত আগেই। আমি তার কথা শুনে মৃদু হাসি। তাকে জড়িয়ে ধরি। নিয়ন্ত্রিনহীন আঙুলটা তার পিঠের উপর একবার বুলিয়ে দিই।
মি. পারভেজ আমাকে বললেন, সবাই আমার গল্প শুনে হাসে। সবাই মানে যাকেই বলি আর কি। একি হাসির গল্প, বলেন? আমি বলি, নাহ। সে বলে, অনেক দুঃখের গল্প শুনে আমরা হেসে ফেলি। ভাবুন একবার একটা প্রেমবঞ্চিত আঙুল আমাদের সংসারে আটকে রেখেছে। মি. আনিস পারভেজ আমাকে জানালেন, আমার ভয় হচ্ছে তবু কোন একদিন আমার বউ রাগ করে এ আঙুলটি কেটেই ফেলবে, তখন আমার বউ আর জাগবে না আমার পাশে, সমান্তরালে, আশায়, সম্ভাবনায়, দুশ্চিন্তায়, বিরক্তিতে, ক্রোধে, আর চাইলেও পারবে না। যে আঙুলটায় আমার মৃদু নিয়ন্ত্রনহীনতা, মানে আমার ইচ্ছের ছোঁয়া কম, আর তার ইচ্ছেরই একটু প্রগাঢ়তা, মানে, তার স্বাধীনতা, এককনা হয়তো এ আঙুলে এখনো অবশিষ্ট আছে, সে আঙুলটাইতো থাকবে না। আমিও এ বয়েসে কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবো না। আবার ভাবি, তবু আঙুলটা কাটা পড়লেই ভালো, কারণ ভালোবাসাহীন একটা আঙুল নিয়ে বাঁচাই বরং অনেক অনেক কঠিন!
আনিস পারভেজ বিস্মিত হলেন একটা কথা ভেবে, আমার দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টি দিয়ে তাকালেন, ভাবুনতো যেলোকটা আমার শবদেহটাকে শেষবারের মতো গোসল করাবে, আর হাতটা ধূতে গিয়ে এ আঙুলটার মুখোমুখি হবে, একটু অস্বস্তি লাগবে না তার? কিন্তু সে কি আদৌ অনুমান করতে পারবে, এক্সট্রা একটা আঙুলকে ঘিরে এতকিছু ঘটতে পারে বলে।
আনিস পারভেজের কথার পিঠে আমি কোন উত্তর দিলাম না, বললাম, চলেন এক কাপ চা খাওয়া যাক।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:০৯
জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন: গল্পের বর্ণনাশৈলী ভাল লাগল ৷