নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রথো রাফি লেখালেখি গাণ্ডীব, অনিন্দ্য, শিড়দাঁড়া এবং দ্রষ্টব্যেই । মূলত কবিতা অন্তঃপ্রাণ তবে গদ্যও লিখেছি কিছু। অনুবাদেও আগ্রহ আছে। বই এখনো নাই। জন্ম: দক্ষিণ তারুয়া, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বসবাস ঢাকায়। প্রকাশনা সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে ফ্রিল্যান্স কাজ করছি। [email protected]
২. সমুদ্রের আত্মহারা আনন্দ
বিশাল সরকারী আমলা ও’হারার জন্য সেড্রোস ও মেইনের মাঝপথে
স্কচ চোরচালান করতাম, তাই কোস্ট গার্ড আমাদের ঘাটাতে পারতো না,
আর মাঝপথে স্প্যানিস জলদস্যুরা পড়তোই আমাদের সামনে,
কিন্তু একজনের গলা সবসময়েই বিরবির করতো: “স্যাবাইন,
এই ঝানু ডাকাতের ব্যবসাটা কি দেখেবে না?” বেশতো, যা-বলা, তা-ই করা!
ওই অবৈধ ব্যবসাটাই পুরোই পড়লো ধসে। আর আমিতো ধসে পড়লাম
এক নারীর জন্য, তার লেস আর রেশমের জন্য, মারিয়া কনসেপসিয়ন।
আহ, এ্যা! এর পরেই শুনলাম, বিশাল রহস্যের জট খুলতে
তাকে নিয়ে একটি তদন্ত-কমিশন গঠন করা হয়েছে,
চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেই নিজের তদন্ত করবেন।
যাইহোক, আমিও ভাল করেই জানি ওই চুদনা কে হতে পারে,
হাঙরের ছদ্মবেশে সেই হাঙরটি নয়, শুধু তার কা-ারি-মাছটি,
তোমার আমার মতোই খাকি প্যান্ট পরা লাল-নিগার একটা।
আরো মন্দ ব্যাপার, মারিয়া কনসেপশনের সাথে ঝগড়া বাধিয়েছি আমি,
থালাবাসন এটা ওটা ছুড়ে মেরেছি, কসম খাচ্ছি: “আর কখনোই করবো না!”
আমার ঘরবাড়ি আমার সংসার ধ্বংস করে দিয়েছে এই খিটিমিটি।
এতো বেশি ভেঙ্গে পড়েছি যে আমার দরকার একটা ছায়াময় আশ্রয়
আর একটা কাপ, কিংবা চারটা আশ্রয় আর চারটা কাপ চার-কাপ স্পেনীয় পোর্ট মদেভরা;
টাকা বলতে কয়টা পয়সা শুধূ এই সাগরের মাঝে।
দ্য এক্সপ্রেসে দেখতে পেলে ওই মন্ত্রীদের,
গরীরের অভিভাবক-- তাদের পিঠে একহাত, আর-হাত পুলিশের পিঠে
যারা শুধূ তাদেরই বাড়ি-পাহাড়া দেয়,
আর পিছন দরজায় দিয়ে ঢোকাচ্ছে স্কচ মদ।
ঐ মন্ত্রী-দানব যে যুক্ত ছিলো মদের চোরাচালানে ,
ঐ আধা-সিরীয় মাতাল, ফাসবাল্বের বিজলিপাতে
প্রাগৈতিহাসিক কাদার পিণ্ড ডাইনোসরের মতো সম্পদে ডুবন্ত
তার পাউডার আর আঁচিলে থকথকে ঐ মুখ আর ওই পাথুরে চোখের
পাতাগুলো দেখতে আমি এতা ব্যকুল হয়ে যেতাম যে
নিজেকে বললাম: “শ্যবাইন, এসবই খুব বাজে ব্যাপার, বুঝলা।!”
কিন্তু কাউকে দিয়ে আমার মতো শিল্পীর ক্রাচটা লাথি মেরে
অফিস থেকে বাইরে ফেলে দিলো! ওই শুয়োর এতোই অভিজাত,
তার ওই উচু আসন ছেড়ে নামতে পারেনি, শুধু সে নিজেই
লাথিটা মারলো আমাকে। এই ত্রিনিদাদে, এই কমলার প্রজাতন্ত্রে
আমি দেখলাম, কৃতদাসকে অসুস্থ করে ফেলে কোন কোন বিষয়।
মাথার ভেতর থেকে আমি সমুদ্রের কোলাহল ঝেড়ে ফেলতে পারছিলাম না,
মারিয়া কনসেপশনের গানই গাইছিলো আমার কানে শঙ্খটা,
তাই উদ্ধার পেতে, পাগলা মিক, ও’শাউনেসি নামে একজন,
আর হেড নামের এক ইংরেজ নাবিকের সাথে ডাইভিং করতে লাগলাম;
কিন্তু এই ক্যারেবীয় দ্বীপ মৃত লোকজনে এতো ভরা যে
যখনই গলেমিশে যেতাম পান্নাসবুজ জলে, যার উপর-দেশটা থাকতো
রেশম-তাবুর মতো কুচি-কুচি ঢেউ-খেলানো,
তখনই দেখতে পেতাম তাদের, প্রবালপুঞ্জে: মাথার গিলু, আগুন,
সাগর-পাখনা, ডেড-ম্যান-ফিঙ্গার, আর অবশেষে মৃত লোকদের।
দেখতাম যে, গুড়ো গুড়ো বালিই হয়ে আছে তাদের হাড়গুড়
সেনেগাল থেকে সান সালভাদর অবধি সমস্ত ভূমি সাদা করে রেখেছে,
তৃতীয়বার ডুব দেয়ার কথা ভাবতেই তাই আঁতকে উঠলাম আমি, আর জলের উপরে সিম্যানস হোস্টেলে কাটিয়ে দিলাম সারামাস। মাছের সুরুয়া খেয়ে আর ধর্ম-উপদেশ শুনে।
বউকে যদি সাথে নিয়ে আসতাম, এই দুঃখের কথা যখনই ভাবলাম
আর ঐ অপর মহিলাকে নিয়ে যখন আমার দুশ্চিন্তা টের পেলাম
জলের নিচে কাঁদলাম আমি, নোনাজল খুজে ফেরে শুধু নোনাজলই,
কারণ তার সৌন্দর্য তলোয়ারের মতোই আমার ওপর আছড়ে পড়েছে
আর আমারই দেহের দেহ আমার শিশুদের কাছ থেকে আমাকেই ছেটে ফেলেছে!
সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে এসেছিলো এই মালাবাহী বজরাটি, তবে ফের
ভাসানোর পক্ষে অনেক অনেক বেশি ভার। যখনই পান করতাম, ইংরেজটা
কান্ত হয়ে পড়তো মারিয়া কনসেপশনের জন্য আমার কান্নাকাটিতে।
বলতো সে, বাঁকের নাগাল পেতে চলেছে সে। তার জন্যতো খুশির ব্যাপার!
কিন্তু মারিয়া কনসেপশনের জন্য, আর আমার স্ত্রী আর শিশুদের
যে-আঘাত আমি দিয়েছি, তার জন্য
আমার হৃদয়ে যে যন্ত্রণা আর যন্ত্রণা--তা আরো বেশি বাজে ছিলো।
উত্তাল সাগরের কোথাও কোন পাথুরে ফাটলতো নেই
যেখানে বুবি পাখির মতো প্রতিটি সন্ধায় আমি মুখ লুকাতে পারি,
জানেনতো আলোকিত কোন বালিস্তুপও নেই
পেলিক্যানদের মতো যেখানে একটু জিরিয়ে নিতে পারি,
তাইতো একদিন আত্মহারা হয়ে দেখলাম ঈশ্বর
হার্পুনবিদ্ধ গ্রুপারের মতো রক্ত ঝরাচ্ছে, আর দূরে একটা গলা
চেঁচিয়ে মরছে, ‘স্যাবাইন, ছেড়ে আসো যদি,
যদি ছেড়ে আসো তাকে, তোমাকে দেবো আমি ভোরের তারাটি।’
পাগলাগারদ থেকে বেরোনোর পর অন্য রমনীদের চেষ্টা করলাম আমি,
কিন্তু, একবার নগ্ন হলেই, তাদের কাঁটাভরপুর যোনিদেশ
সি-এগের মতো ভাঁজ-খাওয়া, আমি আর ডুব দিতে পারতাম না।
দালাল ঘুরোফেরা করতো। টাকা শোধ করে বলতাম, কিছু মনে করো না।
কোথায় আমার বিরামখানা, জেযাস? কোথায় বন্দর আমার?
কোথায় আমার মাথার বালিশ যার জন্য কড়ি গুনতে হয় না,
আর কোথায় জানালাটি যেখান থেকে আমি জীবনের দিকে তাকাতে পারি?
(প্রাথমিক খসড়া:২০১২)
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৭
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
ভালো লাগা রইল।