| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুইজারল্যান্ড, ইউরোপের হৃদয়স্থলে অবস্থিত একটি ছোট দেশ, যা তার অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত। এই দেশের রাজনৈতিক কাঠামো বিশ্বের অন্যতম অনন্য এবং কার্যকরী মডেল হিসেবে পরিচিত, যা সরাসরি গণতন্ত্র, ফেডারেলিজম এবং সমঝোতামূলক শাসনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই আলোচনায় আমরা সুইজারল্যান্ডের রাজনৈতিক ও সরকারি ব্যবস্থার বিস্তারিত পর্যালোচনা করব, বিশেষ করে সরাসরি গণতন্ত্র এবং ফেডারেল কাউন্সিলের মতো ধারণাগুলো ব্যাখ্যা করব।
সুইজারল্যান্ড একটি ফেডারেল প্রজাতন্ত্র, যা ২৬টি ক্যান্টন নিয়ে গঠিত। ১৮৪৮ সালের সংবিধানের মাধ্যমে এই ফেডারেল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পূর্ববর্তী ক্যান্টনগুলোর loose confederation-কে প্রতিস্থাপন করে। এই কাঠামোতে ক্ষমতা ফেডারেল, ক্যান্টনাল এবং মিউনিসিপ্যাল স্তরে বিতরণ করা হয়েছে, যেখানে জনগণের সার্বভৌমত্ব সর্বোচ্চ। ক্যান্টনগুলোর নিজস্ব সংবিধান, আইনসভা, সরকার এবং আদালত রয়েছে, যা তাদের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করে। ক্যান্টনে বার্ষিক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নাগরিকরা জড় হয়ে সরাসরি গণভোট দিয়ে সরকার, বিচারব্যবস্থা এবং নীতি নির্ধারণ করে। এই বিকেন্দ্রীকরণ ফেডারেল সরকারের দায়িত্ব সীমিত করে এবং ক্যান্টনগুলোর স্বাধীনতা রক্ষা করে, যা দেশের স্থিতিশীলতার একটি মূল কারণ।
সুইজারল্যান্ডের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো সরাসরি গণতন্ত্র, যা নাগরিকদের নির্বাচনের বাইরেও সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। এটি সেমি-ডাইরেক্ট ডেমোক্রেসি হিসেবে পরিচিত, কারণ এখানে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের সাথে সরাসরি জনমতামতের সমন্বয় রয়েছে। প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক রেফারেন্ডাম, যেখানে সংবিধান পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগদান বা বহুবর্ষীয় ফেডারেল আইনের জন্য জনগণের অনুমোদন আবশ্যক এবং এতে দ্বৈত সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। এছাড়া ঐচ্ছিক রেফারেন্ডামের মাধ্যমে নতুন আইন চ্যালেঞ্জ করার জন্য ৫০,০০০ স্বাক্ষর ১০০ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করা যায় এবং সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জনপ্রিয় উদ্যোগের ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের জন্য ১০০,০০০ স্বাক্ষর ১৮ মাসের মধ্যে সংগ্রহ করা যায় এবং সফল হলে ভোট হয়, যেখানে উদ্যোগ, সরকারের কাউন্টারপ্রপোজাল বা উভয়ের মধ্যে নির্বাচন করা যায় এবং দ্বৈত সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। ১৮৭৪ সাল থেকে ঐচ্ছিক রেফারেন্ডাম এবং ১৮৯১ সাল থেকে উদ্যোগ ব্যাবস্থা চালু হয়েছে। মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত, ৭৫% বাধ্যতামূলক রেফারেন্ডাম, ৫৮% ঐচ্ছিক এবং ১১% উদ্যোগ পাস হয়েছে। এই ব্যবস্থা সরকারকে জনমতামতের সাথে সমন্বয় করতে বাধ্য করে, যা সমঝোতা এবং স্থিতিশীলতা বাড়ায়। প্রাক-পার্লামেন্টারি পরামর্শের মাধ্যমে স্টেকহোল্ডারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা চ্যালেঞ্জের হার কমিয়ে ৫% এ নামিয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের নির্বাহী শাখা হলো ফেডারেল কাউন্সিল যা সাত সদস্যের একটি সম্মিলিত প্রেসিডেন্সি ও ক্যাবিনেট। ফেডারেল অ্যাসেম্বলি চার বছরের জন্য তাদের নির্বাচন করে, এবং সদস্যদের ন্যাশনাল কাউন্সিলে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হয়। এটি কার্যত একটি কোয়ালিশন সরকার, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত “ম্যাজিক ফর্মুলা” অনুসারে আসন বণ্টন করা হতো: ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পিপলস পার্টি, প্রতিটি দুটি করে আসন, আর সুইস পিপলস পার্টি একটি। ২০০৩–০৪ সালে সুইস পিপলস পার্টির উত্থানের ফলে এই ভারসাম্যে সমন্বয় আসে। বর্তমানে দ্য লিবারেলস, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, দ্য সেন্টার এবং সুইস পিপলস পার্টি কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্ব করে।
ফেডারেল কাউন্সিলের স্থিতিশীলতা অনন্য: ১৮৪৮ সাল থেকে এটি কখনো পূর্ণাঙ্গভাবে নবায়ন করা হয়নি—পরিবর্তন এসেছে কেবলমাত্র ব্যক্তিগত পদে। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রতি বছর নির্বাচিত হলেও তাদের কোনো অতিরিক্ত নির্বাহী ক্ষমতা নেই; এই পদগুলো মূলত আনুষ্ঠানিক ও প্রতিনিধিত্বমূলক। ২০২৫ সালে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন কারিন কেলার-সুটার এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট গাই পারমেলিন। কাউন্সিলকে সহায়তা করেন ফেডারেল চ্যান্সেলর। এই সম্মিলিত নেতৃত্ব কাঠামো ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতার বদলে ধারাবাহিক সমঝোতা ও যৌথ দায়িত্ববোধকে উৎসাহিত করে।
সংসদ হলো ফেডারেল অ্যাসেম্বলি, যার অধিবেশন বার্নের ফেডারেল প্যালেসে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুটি চেম্বার রয়েছে। প্রথমটি কাউন্সিল অফ স্টেটস, মোট ৪৬ আসন যেখানে বেশিরভাগ ক্যান্টন থেকে ২ জন করে এবং ছয়টি ছোট ক্যান্টন থেকে ১ জন করে প্রতিনিধি। দ্বিতীয়টি ন্যাশনাল কাউন্সিল, যার ২০০ আসন জনসংখ্যার ভিত্তিতে বণ্টিত, অনেকটা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির মতো। উভয় চেম্বারের ক্ষমতা সমান এবং সদস্যরা চার বছরের জন্য সরাসরি জনভোটে নির্বাচিত হন। সুইজারল্যান্ড এখানে মিলিজসিস্টেম অনুসরণ করে, যেখানে অধিকাংশ সাংসদ পূর্ণ-সময় রাজনীতিবিদ নন; তারা নিজস্ব পেশা বজায় রেখে পার্ট-টাইমভাবে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন, যাতে একটি স্থায়ী পেশাদার রাজনৈতিক শ্রেণি তৈরি না হয় এবং বাস্তবপেশার অভিজ্ঞতা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হতে পারে। এই দ্বিকক্ষ কাঠামো জনবহুল অঞ্চলের আধিপত্য কমিয়ে ক্যান্টনগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে।
বিচার বিভাগের শীর্ষে লুসানের ফেডারেল সুপ্রিম কোর্ট, যার বিচারকরা ফেডারেল অ্যাসেম্বলি দ্বারা ছয় বছরের মেয়াদে নির্বাচিত। এটি ক্যান্টনাল কোর্ট এবং ফেডারেল প্রশাসনের আপিল শোনে, কিন্তু সংসদীয় আইনের বিচারিক পর্যালোচনা করে না যা জনগণ রেফারেন্ডামের মাধ্যমে করে।
সুইজারল্যান্ডের রাজনৈতিক ব্যবস্থা তার শিক্ষা নীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে সকলের জন্য বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রথমদিকের প্রবর্তনে। সংবিধান অনুসারে, প্রাথমিক শিক্ষা প্রত্যেক শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক এবং রাষ্ট্রীয় স্কুলে বিনামূল্যে। এই দায়িত্ব প্রধানত ক্যান্টনগুলোর, যা ফেডারেল কাঠামোর বিকেন্দ্রীকরণ প্রতিফলিত করে। প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণত ৯ বছরের বাধ্যতামূলক, যাতে প্রাইমারি স্কুল এবং লোয়ার সেকেন্ডারি অন্তর্ভুক্ত। কিন্ডারগার্টেন ১-২ বছরের, যা অনেক ক্যান্টনে বাধ্যতামূলক। ঐতিহাসিকভাবে, ১৮৪৮ সালের ফেডারেল রাষ্ট্র গঠনের পর শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয় স্তরে সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু ব্যর্থতার পর ১৮৭৪ সালের সংশোধিত সংবিধানে ক্যান্টনগুলোকে "যথেষ্ট" এবং "বাধ্যতামূলক" প্রাথমিক শিক্ষা বিনামূল্যে প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়। এটি অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক আগে ঘটেছে, কারণ ফেডারেলিজম ক্যান্টনগুলোকে স্থানীয় চাহিদা অনুসারে শিক্ষা বাস্তবায়নের স্বাধীনতা দেয়, যখন ফেডারেল ম্যান্ডেট সমতা নিশ্চিত করে। সরাসরি গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণ শিক্ষা নীতি প্রভাবিত করতে পারে, যা ২০শ শতাব্দীতে বাধ্যতামূলক শিক্ষা ১৬-১৮ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর দিকে নেয়। এই ব্যবস্থা শিক্ষার উচ্চমান এবং অ্যাক্সেসিবিলিটি নিশ্চিত করে, যা সুইজারল্যান্ডের অর্থনৈতিক সাফল্যের একটি ভিত্তি।
সুইজারল্যান্ডের রাজনৈতিক ব্যবস্থা কনসোশিয়ালিজমের উপর ভিত্তি করে, যেখানে মেজর পার্টিগুলো ক্ষমতা ভাগ করে নেয়, যা ১৯৫৯ সাল থেকে চলছে। সরাসরি গণতন্ত্র, ফেডারেল কাউন্সিলের সম্মিলিত নেতৃত্ব এবং বিকেন্দ্রীকৃত ফেডারেলিজম দেশকে স্থিতিশীল, দুর্নীতিমুক্ত এবং গণতান্ত্রিক করে তুলেছে। এই মডেল শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে প্রথমদিকের সাফল্য এনে দিয়েছে, যা অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয়। সুইজারল্যান্ড প্রমাণ করে যে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সমঝোতা একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৪২
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ওখানে বাংলাদেশীদের অবস্হান কেমন ???
............................................................
চাকুরীর সুযোগ আছে কী?
র্জামান থেকে কিভাবে টুর প্রোগ্রামে যাওয়া যায় ???