somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের সন্ধানে: পুরানো ঢাকায় উইকি-অভিযান - প্রথম পর্ব

২৬ শে জানুয়ারি, ২০০৭ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[এই লেখাটি আস্তে আস্তে লিখছি - গত মাসে বাংলা উইকির]পক্ষ হতে পুরানো ঢাকার ছবি তোলার জন্য যে অভিযান চালিয়ছিলাম, তার উপরে।

বাংলা উইকিপিডিয়া নিয়ে কাজ করি অনেক দিন। ইংরেজি উইকিপিডিয়াতে বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে নিবন্ধ খুব কমই আছে। আর যা আছে, তাতে ছবি নেই একেবারেই। আর আমাদের প্রজেক্ট বাংলা উইকিপিডিয়াতেও ব্যাপারটা একই। কারণটা আসলে মুক্ত লাইসেন্সে ব্যবহার্য ছবির অভাবের জন্য। ঐতিহাসিক স্থানগুলোর ছবি তোলা হয়নি, তা না, কিন্তু যেসব ফটোগ্রাফার ছবি তুলেছেন, তাদের কাছে উইকিপিডিয়ার জন্য ছবি চাইতে গেলেই তাঁরা ছবি প্রতি টাকা চেয়ে বসেন। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে তোলা গণমানুষের মুক্ত বিশ্বকোষের পক্ষে তা দেয়া তো আর সম্ভব না, তাই মুনির হাসান ভাইয়ের আয়োজিত ঢাকার প্রথম উইকি-আড্ডায় সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, আমরা নিজেরাই আমাদের দেশের সুন্দর ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর ছবি তুলে মুক্ত লাইসেন্সে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এগুলি সারাবিশ্বের মানুষের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেবো। ছবি গুলো নিয়ে যে যা খুশি, যেকোনো নিবন্ধে, যেকোনো কাজেই ব্যবহার করতে পারবেন। মুক্ত বিশ্বকোষের মূল ধারণা তো সেটাই, জ্ঞানকে মুক্ত হস্তে, কোনো বিধি নিষেধ ছাড়াই দান করা। জ্ঞান আর ভালোবাসাই হলো একমাত্র দুটো জিনিষ, যা দান করলে বেড়ে যায়, টাকা পয়সার মতো কমতে থাকেনা।

যাহোক, উইকি-আড্ডায় হাজির ছিলেন পুরানো ঢাকার অধিবাসী মাহে আলম খান (ম্যাক) ভাই, আর বাংলা উইকির দুইজন প্রশাসক রাজিবুল ও বেলায়েত। গল্পে গল্পে বেরিয়ে এলো পুরানো ঢাকার ছবির অভাব। আসলে পুরো ঢাকা শহরের ছবিই মুক্ত লাইসেন্সে (ক্রিয়েটিভ কমন্স বা জিএফডিএল) এর অধীনে পাওয়া দুষ্কর। আমার মনে পড়লো, সংসদ ভবনের ছবি জোগাড় করতে গিয়ে আমাকে এক জার্মান ভদ্রলোকের কাছে বিস্তর ই-মেইল চালাচালি করে তাঁর অনুমতি জোগাড় করতে হয়েছিলো। ইংরেজি/বাংলা সহ বিশ্বের অনেক গুলো ভাষার উইকিপিডিয়াতে এখন সেই ছবিই ব্যবহার করা হচ্ছে। যাহোক, প্রস্তাবটা আমরা সবাই লুফে নিলাম। আমি ছাত্রজীবনের গবেষণা-বৃত্তির অল্পবিস্তর কিছু টাকা জমিয়ে একটা ক্যানন ব্রান্ডের ডিজিটাল ক্যামেরা কিনেছিলাম বছর কয়েক আগে, সেটা সাথে করে নিয়ে এসেছি দেশে বেড়াতে আসার সময়। সেটাতে ২৫৬ মেগাবাইটের মেমরি কার্ড ভরে নিলে শ্থকয়েক ছবি তোলা যায় একবারে। ঠিক হলো, সেটা নিয়েই আমি চলে আসবো পুরানো ঢাকায়। বেলায়েত ও রাজিবুল মহা উৎসাহে দিনক্ষণ ঠিক করে নিলো।

শনিবার সকালে ঠিক দশটায় হাজির হলাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর ক্যাফের সামনে। আমি বুয়েটে পড়াশোনা করেছিলাম, তবে আসলে আলসেমি করে ঢাকেশ্বরী_মন্দির আর আহসান মঞ্জিল ছাড়া পুরানো ঢাকায় ঘোরা হয়নি খুব একটা। যাহোক, বেলায়েত আর রাজিবুলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথম গন্তব্য ছিলো ঢাকেশ্বরী_মন্দির। বুয়েট ক্যাম্পাসের পিছনে গেলেই পাওয়া গেল মন্দিরের এলাকাটি। সুন্দর কারূকার্য্য মন্ডিত মন্দিরটি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো, পরে এটিকে আবার নতুন করে গড়া হয়েছে। মন্দিরের মূল অংশে ঢোকার আগে ডানে রয়েছে মহানগর পুজা মন্ডপ। এখানে দূর্গার স্থায়ী মন্ডপ রয়েছে। সেটা পেরুলেই মন্দির অঙ্গন। ঢোকার মুখে জুতো/স্যান্ডেল জমা দিয়ে মন্দিরের বিভিন্ন অংশের ছবি তুললাম। দিনের এই শুরুর দিকেও পুজা করতে এসেছেন অনেকে। মন্দিরের দেবীমূর্তির পাশে গিয়ে সেবায়েতের অনুমতি নিয়ে ছবি তুলে নিলাম। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের উপরে নিবন্ধটি !@@!440801 !@@!440802 শুরু করেছিলাম বছর খানেক আগে। আজ ছবি তুলতে পেরে ভালো লাগলো।

এর পর রাজিবুলের সাথে রিকশায় চেপে চললাম খান মহম্মদ মির্ধার মসজিদের পানে। বেলায়েত ও তার সঙ্গী আরেক রাজিব পিছনের রিকশায় অনুসরণ করলো। ওরা এই এলাকারই ছেলে, কাজেই পথঘাট সব নখদর্পনে। ওদের সাথে ছিলো মুনতাসীর মামুনের লেখা ঢাকা স্মৃতির বিস্মৃতির নগরী বইটি। পুরানো ঢাকার রাস্তাঘাট একটু সংকীর্ণ আকারের। সেখানে ট্রাফিক জ্যাম বেঁধে যায় সহজেই। সেরকম হালকা কিছু জ্যাম পেরিয়ে পৌছালাম মসজিদটির পাশে। গিয়ে আরেক বিপত্তি, মসজিদের গেটে তালা মারা। শিঁকের ফাঁক দিয়ে ক্যামেরা গলিয়ে ছবি তুললাম কিছু, কিন্তু ভালো অ্যাঙ্গেল পাচ্ছিলাম না। ভিতরে মসজিদের খাদেমকে দেখতে পেয়ে রাজিবুল তাঁকে অনুরোধ করলো আমাদের একটু ঢুকতে দেয়ার জন্য। বিশ্বকোষ আর নিবন্ধের কথা শুনে তিনি সোৎসাহে রাজি হয়ে গেলেন। ভিতরে ঢুকে বিভিন্ন দিক হতে গোটা বিশেক ছবি তুলে নিলাম। মোগল আমলের এই মসজিদটির বয়স অন্তত সাড়ে তিনশ বছর। নির্মাণ করেছিলেন খান মোহাম্মদ মীর্ধা। খাদেমকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, এখানে এখনও নিয়মিত নামাজ হয়। মসজিদটির জরাজীর্ণ মিনারের পাশে আধুনিক মাইক লাগানো আছে সেজন্যই। জুতো খুলে মসজিদের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলাম, গত ৩শ বছরে কত লাখো মুসুল্লী এইভাবে এই সিঁড়ি বেয়ে উঠেছেন, তা ভেবে খুবই রোমাঞ্চ হলো। তবে দুঃখের কথা, মসজিদটির সুপ্রাচীণ গম্বুজটির ঠিক পিছনেই সুঊচ্চ মোবাইল ফোনের টাওয়ার, যা মসজিদের চমৎকার দৃশ্যটির সৌন্দর্যহানী ঘটিয়েছে কিছুটা।

(এই লেখাটি বাংলা উইকিপিডিয়া প্রজেক্টের ২৩শে ডিসেম্বরের উইকি-অভিযানের উপরে)

[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৯:৪৬
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×