নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭ বছর ৩ ঘণ্টা বয়েসি একটি ব্লগ

০২ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৩২

যখন লেখাটি লিখছি, আমার চোখের সামনে ভাসছে আজ হতে সাত বছর আগে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের এক সন্ধ্যার কথা। যে সন্ধ্যায় সামহয়ারইনব্লগে আমি প্রথম একাউন্ট খুলি। আমি তখন বাংলালায়নের মডেম ইউজ করি। ১ জিবি ৩০০ টাকা করে ছিল খুব সম্ভব। তিন - চারদিন টানা চালালেই শেষ হয়ে যেতো। যাই হোক, এমন এক সন্ধ্যায় - যখন আমার মডেম দেখাচ্ছে যে আর ১০০ মেগাবাইটেরও কম আছে আমার মডেমের ব্যালান্স, তখন সামুর রেজিস্ট্রেশন শেষ হয়। সামুর রেজিস্ট্রেশনের প্রসেসটা আমার মত যারা টেকনো স্যাভি না, এমন মানুষজনের জন্যে খানিকটা হেকটিক ছিল। এখন কি অবস্থা, জানি না। যে ইয়াহু মেইল দিয়ে আকাউন্ট খুলেছিলাম, তার পাসওয়ার্ড আমার এখন জানা নেই। গুগল ক্রোম, জিমেইল ২০১৩ তে অতটা জনপ্রিয় ছিল না। মনে পড়ে, আজ হতে পাঁচ বছর আগেও অনেক পিসিতে ডিফল্ট সার্ভার হিসেবে ফায়ারফক্স দেখা যেতো। আমার পরিচিত সিনিয়র সিটিজেনদের অনেকেরই ইমেইল আইডি এখনো ইয়াহুতে। অর্থাৎ, একদশক আগে ইয়াহুতে মেইল আইডি খোলার পর গুগলে তারা আর মেইল অ্যাকাউন্ট খোলেন নি। একই সঙ্গে ড্রাইভ , ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামে প্রোফাইল সিঙ্ক করবার সুবিধা বিবেচনায় আমরা অনেকেই এখন জিমেইল ইউজ করি, প্রফেশনাল মেইলিং আইডির পাশাপাশি।

বলছিলাম সামুতে প্রথম অ্যাকাউন্ট খোলার সন্ধ্যের কথা। মডেমে ব্যালান্স নেই, অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ শেষ। আপাতত পোস্ট দেয়া নিয়ে অস্থির না হলেও চলতো। কিন্তু আমার সমস্যা ছিল অন্যত্র। আমি আগে দুটো ব্লগ ঘুরে সামুতে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলাম। তাঁর একটা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচিত্র সংসদে আমার কিছু সিনিয়র ভাইব্রাদারদের বানানো প্যাঁচা ব্লগ - নামে একটি ব্লগ , যেটা বেশীদিন টিকে থাকতে পারে নি, আর একটি ছিল ইস্টিশন ব্লগ। দুটো ব্লগেই অ্যাকাউন্ট খুলেছিলাম বছর দুয়েক আগে। তখনও তত লেখা জমে নি আমার। কাজেই রেগুলার বেসিসে উক্ত ব্লগদ্বয়ে পোস্ট করা হত না। ফিরে আসার তাড়া না থাকায় পাকে চক্রে দুটো ব্লগের সঙ্গেই আমার সম্পর্কচুতি ঘটে। মধ্যে দু' বছর লেখা ফেসবুকেই শেয়ার করতাম। একটা কবিতা লিখে একসঙ্গে একশো জনকে ট্যাগ করে বসে থাকতাম , লেখা ট্যাগ করলে অনেকে যে মনে মনে গালি দেয় তা তো তখন বুঝতাম না।

যাই হোক, বাবার সাংবাদিকতার সূত্রে আমার পত্রিকায় লেখার হাতেখড়ি ২০০৮ এর ডিসেম্বর থেকে। কিংবদন্তী সাংবাদিক শাহাদাত চৌধুরীর হাতে গড়া পাক্ষিক আনন্দধারার নির্বাহী সম্পাদক তখন তিনি। সম্পাদক ছিলেন জীবদ্দশায় শাহাদাত চৌধুরী নিজে, আর ২০০৫ বা ৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে অরুণ চৌধুরী। পরবর্তীতে এক অভ্যন্তরীণ ঝামেলায় অরুণ চৌধুরী চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন সাপ্তাহিক ২০০০ আর আনন্দধারা - দুটো পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে আসেন কথাসাহিত্যিক মইনুল আহসান সাবের। বাবার তত্ত্বাবধানে মূলত ওয়ার্ল্ড মিউজিক বিট কাভার করতাম আমি। বিদেশী পত্রপত্রিকা, ইন্টারনেট থেকে সমসাময়িক সঙ্গীতের ওপর লম্বা লম্বা আর্টিকেল লিখতে হত। সৃজনশীল লেখালিখির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না, যদিও বাসায় সাহিত্য ও মননশীল রচনার ছড়াছড়ি ছিল আমার শৈশব থেকেই। ২০১২ সাল থেকে নিজের জন্যে লেখা শুরু করি।

২০১৩ সালে এসে মনে হল, ফেসবুকে লেখাগুলোর স্থায়িত্ব নিয়ে আমি কিঞ্চিত চিন্তিত। লিখি, পোস্ট করি, লেখা হারিয়ে যায় নীল জানালার ফোঁকর গলে। তখনও মেমোরি শেয়ার করার অপশন এসে সারে নি। ফলে, লেখাগুলি আরও স্থায়ী কোন একটি মাধ্যমে জমা করবার পরিকল্পনা মনে দানা বাঁধে। বন্ধুবান্ধবের পরামর্শ মতে সামুতে একটা অ্যাকাউন্ট খুলি ২০১৩'র আজকের দিনে। অ্যাকাউন্ট খুলে নিজের যতগুলো লেখা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ডকে সেইভ করা ছিল, সবগুলো একটার পর একটা পোস্ট করে চলি আমার প্রোফাইলে। এভাবে, সন্ধ্যা ছ'টা থেকে রাত দশটা নাগাদ - যখন আমার মডেমের ব্যালান্স ইন্তেকাল করে , তন্মধ্যে আমি পোস্ট করে ফেলি ৬১ টি লেখা। ফ্লাডিং এর ব্যাপারে আমার আইডিয়া ছিল না, ফ্লাডিং হয় ও নি সে রাতে। কারন, তখন অ্যাকাউন্ট খোলার অন্তত মাস চারেক আগে কারো লেখা প্রথম পাতায় আসতো না। আমি নিজে জেনারেল হই অ্যাকাউন্ট খোলার চার মাস পরে। তারপর প্রচুর লেখা ড্রাফ্‌টে নিয়েছি। এখন সাত বছর পরে এসে প্রোফাইল ঘাঁটলে দেখা যাবে আমার পোস্টের সংখ্যা ৭০ - ৭১টি। প্রথম দিন কেন ৬১ টি পোস্ট করেছিলাম তাঁর ব্যাখ্যা হচ্ছে এই যে - আমি কিছু স্থাবর সম্পত্তি জমা করে নিতে চেয়েছিলাম এই ব্লগে, যাতে এই ব্লগে ফিরে আসার তাড়াটা আমার থাকে। পৃথিবীতে যা কিছু সুন্দর, যা কিছু চিত্তাকর্ষক, তাঁর সবকিছুই আমাকে আকর্ষণ করে। ফলে শৈশব থেকেই আমি একটি বস্তুর প্রতি দীর্ঘদিন মনোযোগ ধরে রাখার মত মানুষ নই। আমার মনোযোগ ডাইভারট করে শিল্পের এক মাধ্যম থেকে আরেক মাধ্যমে, খুব দ্রুতই। ব্লগে একসঙ্গে ৬১টি লেখা জমা করেছিলাম, যাতে এখানে আমার ফিরে আসার তাড়াটা থাকে। যদি একটি একটি করে লেখা জমা করতাম সপ্তাহে, তবে হয়তো ইস্টিশনের মতো সামুতেও আমার আগ্রহ চলে যেতো।

এই ব্লগে আমার সক্রিয়তার সময়কাল তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত। প্রথম পর্যায় ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল, দ্বিতীয় পর্যায় ২০১৬ থেকে ২০২০ এর করোনা শুরু হবার আগের সময়টুকু, আর শেষ পর্যায় এই করোনাকালীন ওয়ার্ক ফ্রম হোমের পিরিয়ডটি।

২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পিরিয়ডটি আমার সামুতে হানিমুন পিরিয়ড।

২০১৪ সালে আমার প্রথম বইটি বের হয়। জাতীয় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সেই বইয়ের মুখবন্ধে আমার পৃথিবী দেখার চোখের প্রশংসা করেন। হুমায়ূন আহমেদের প্রথম বইদুটি'র প্রশংসাপত্র লিখেছিলেন, আহমদ ছফার অনুরোধে ঢাবির বাংলা বিভাগের প্রবাদপ্রতিম অধ্যাপক ডঃ আহমদ শরীফ, যিনি আমার বাবার সরাসরি শিক্ষক বলে আমার গর্বের অন্ত নাই। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার শরীফ স্যারের সমসাময়িক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর মত একজন জাতীয় অধ্যাপক, ঢাবির ইংরেজি সাহিত্যের একজন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব যখন আমার প্রথম বইয়ের মুখবন্ধ লিখে দেন, এবং তাতে লেখক হিসেবে আমার শক্তির জায়গাগুলো তুলে ধরেছিলেন, আমার অনুপ্রেরণার জন্যে আর কখনোই অন্য কোনমুখী হওয়া লাগে নি। তারপরেও , আমার সৃজনশীল লেখালিখিতে অনেক মুহূর্ত এমন এসেছে, যা অত্যন্ত সুন্দর, অনুপ্রেরনাদায়ী। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যার (আমার সরাসরি শিক্ষক), পশ্চিমবঙ্গের লেখক সমরেশ মজুমদার, থেকে নিয়ে আমার বর্তমানে খুবই পছন্দের লেখক রায়হান রাইন স্যার - আমার লেখা নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। অপর দিকে নিয়মিত বেসিসে আনন্দধারায় লিখে চলেছি ওয়ার্ল্ড মিউজিক নিয়ে, জনকণ্ঠ ও ইত্তেফাক পত্রিকায় আমার চিত্র ও সাহিত্য সমালোচনা নিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছিল নিয়মিত বিরতিতে। আমার মনে আছে ঢাবির বাংলা বিভাগের আমার একই বছরে অধ্যয়নরত এক বান্ধবী একবার আমাকে বলেছিলেন - তাঁদের উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসের কবিতার অনুবাদ ছিল চতুর্থ বর্ষে বা মাস্টার্সে। শ্রেণী শিক্ষকের সেই বিষয়ক ক্লাস যথেষ্ট না হওয়ায়, এবং ইয়েটস সংক্রান্ত পর্যাপ্ত ম্যাটেরিয়াল বাংলা বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরীতে না থাকায়, তারা অনলাইনে খুঁজে আমার জনকণ্ঠ পত্রিকায় ২০১৪ বা ১৫ সালে প্রকাশিত "জাতীয়তাবাদের আলোছায়ায় ইয়েটস" প্রবন্ধটি পড়ে পরীক্ষায় উত্তর লিখেছিল।

এরকম ছোট ছোট ঘটনা আমার জীবনে আরও অনেক আছে। তবে উপরের ঘটনাগুলো উল্লেখ করবার উদ্দেশ্য এটা বোঝানো যে - অনুপ্রেরণা খোঁজার জন্যে, বা লেখালিখিতে হাতেখড়ি পাকাবার জন্যে আমার সামুতে আগমন ছিল না। সামুতে আমার অ্যাকাউন্ট খোলা আমার লেখা আরও বৃহৎ পরিসরে পাঠকের কাছে পৌঁছাবার জন্যেই। ব্লগিং এর প্রথম পর্যায়ে সামু আমাকে সে সাহায্যটুকু করে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করে। আমার মনে আছে, ২০১৪ সালে আমার প্রথম বই প্রকাশ পেলে সামুর তৎকালীন মডারেটর শরৎ চৌধুরী সাহেব সামুর আরও দু'জন ব্লগারসহ আমার একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার নেন, ব্লগের নতুন লেখকদের প্রোমোশনের উদ্দেশ্যে।

ব্লগিং এর প্রথম ধাপের সময়টুকুতে এরকম অনেকেই ছিলেন যাদের মন্তব্যে , সমালোচনায় আমি উপকৃত হয়েছি। ব্লগার জাহাঙ্গীর আলম সাহেব, মামুন রশিদ সাহেব, হাসান মাহবুব সাহেব, প্রফেসর শঙ্কু সাহেব, বৃতি হক আপা, আরজুপনি আপা, ব্লগার এরিস, মাইনুদ্দিন মইনুল সাহেব, মাহমুদ ০০৭ সাহেব, আমিনুল ইসলাম জেসন সাহেব, সুমন কর সাহেব তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

সামুতে লেখার দ্বিতীয় পর্যায় চলেছে ২০১৬ সাল থেকে করোনা শুরু হবার পূর্ব পর্যন্ত। এই সময়টায় আমি প্রফেশনাল জীবনে জড়িয়ে পড়ি। ব্যস্ততা বাড়ে। লেখা পোস্ট করতাম কালে ভদ্রে। কারো লেখা পড়ার সুযোগ হত না। মন্তব্য করতামও কম। এই সময়টা আমার হাইবারনেশন পিরিয়ড বললেও অত্যুক্তি হবে না।

এই করোনাকালে এসে ওয়ার্ক ফ্রম হোম পিরিয়ড, প্লাস ফেসবুকে আপাতত প্রোফাইল না থাকার কারণে বিগত পাঁচ ছয় মাস আমার সামুতে সবচে ইনটেনসিভ ব্লগিং এর পিরিয়ড। এই ছয়মাসে সামুতে আমি যে রকম আপডেট রেখেছি - গত সাত বছরেও তা রাখি নি।

লম্বা সময় পেরিয়ে এসে এই ব্লগ নিয়ে আমার খুচরো কিছু চিন্তাভাবনা শেয়ার করতে মন চাইছে আজ। আমার এই চিন্তার সঙ্গে সকলের চিন্তা মেলানোর দায় আমার নেই। কিন্তু চিন্তার প্রকাশ পরিশীলিতভাবে ঘটানোর দায় লেখক হিসেবে রয়েছে আমার।

প্রথমত, আমি আমার চারপাশের ম্যাটেরিয়াল জগতটাকে যেভাবে দেখেছি, ব্লগটাকেও দেখেছি সেভাবেই। আমার বাস্তব জীবনে আমার সবার সঙ্গে সখ্য নেই। সবার সঙ্গে সখ্যতা রেখে যারা চলে আমি তাঁদের সন্দিঘ্ন চোখে দেখি। তেমনি এই ব্লগে লেখা শেয়ার করবার সময়ও আমার কখনো এটা মনে হয় নি যে আমার সবার সঙ্গে সখ্যতা থাকবে, বা সবার সখ্যতা আমার প্রয়োজন। আমি যখন প্রথমবার কারো বাড়িতে অতিথি হিসেবে গিয়েছি, বা যতবারই গিয়েছি অতিথি হিসেবে - আমি আমার আচরণে চেষ্টা করেছি তাঁদের বিন্দুমাত্র কষ্ট না দেয়ার। ব্লগেও আমি যখন কারো পোস্টে মন্তব্য করেছি, আমি চেষ্টা করেছি - মতের দ্বিমত থাকলেও , উক্ত ব্লগারকে কষ্ট না দিয়ে, সরাসরি ডিকটেট করবার মত কিছু না বলে বরং একটি, দুটি প্রশ্ন তুলে ধরার, যাতে তিনি তাঁর প্রকাশিত মতামত নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। সাত বছরে, দু' একটা ইনসিডেন্ট ছাড়া - কারো ব্লগে গিয়ে আমি কখনো আক্রমণাত্মক টোনে কথা বলেছি, এমনটা আমার মনে পড়ে না। আমার বাড়িতে যখন অপরিচিত কেউ প্রথমবারের মত আসে, তাকে যেরকমভাবে আপ্যায়ন করি, আমার ব্লগেও চেষ্টা করেছি সেভাবে নতুন ব্লগারকে আপ্যায়ন করে নিতে। এলাকায় এমন অনেকেই থাকে যাদের আমরা পছন্দ করি না, বা যে আমাদের পছন্দ করে না। যদি ভদ্রতা, সৌজন্যতাবোধ থাকে তবে আমরা একে অপরকে এড়িয়ে চলি। ব্লগেও আমি তাই করেছি। যার লেখা ভালো লাগে নি, যার চিন্তার প্যাটার্ন আমার চিন্তার প্যাটার্নের সঙ্গে খাপ খায় নি, আমি সচ্ছন্দে এড়িয়ে গেছি। তবে, কেউ আমার বাড়িতে প্রথমবার এলে যদি তাকে আপ্যায়নের উদ্দেশ্যে পরিবেশিত খাবার আমার মুখের ওপর ছুঁড়ে মারে, আমি সবসময় নিশ্চিত করি যে এমন কোন অসভ্য যাতে আর কোনদিন আমার বাড়ির চৌকাঠে পা না রাখতে পারে। ব্লগেও কোন ব্লগার যখন আমার সহিষ্ণুতার অতিমাত্রায় পরীক্ষা নিতে চেষ্টা করেছে, তবে বেআদবির মাত্রার উপর ভিত্তি করে আমি নিশ্চিত করেছি যে জ্বালাতন করবার জন্যে আমার ব্লগে এই বেআদব, অভদ্র যেন আর দ্বিতীয়বার না আসে।

দ্বিতীয়ত, আমি কখনো জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্যে ব্লগে সিন্ডিকেট পাকানোর চেষ্টা করি নি। কখনো নিজের লেখায় মন্তব্য পাওয়ার জন্যে নির্দিষ্ট কোন গ্রুপ বা কোন ব্লগার/ব্লগারদের পোস্টে গিয়ে খেজুরে আলাপ শুরু করি নি। আমার পছন্দের দু' চারজন মানুষেরও যে সব লেখা পছন্দ হয় নি, তাতে মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছি। মনে পড়ে, প্রথম যখন ব্লগে লেখা শুরু করি, তখনই আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয় তখনকার তুমুল একটিভ ব্লগারদের একটি সার্কেলের সঙ্গে। যোগাযোগ প্রথম ব্লগে, পরে ফেসবুকে, পরে ফোনে এবং সবশেষে ঢাকায় দেখা করবার মাধ্যমে। আমি সাহিত্যের মানুষ, সাহিত্য নিয়ে আড্ডা দিতে ভালোবাসি। আড্ডা দিতে সমস্যা নেই। কিন্তু পরে দেখা গেল তাঁদের মধ্যে কারো কারো এই সুর যে - ব্লগের দখল লইতে হইব। ব্লগের দখল নেয়ার মানে হচ্ছে নিজের অ্যাকাউন্ট এবং আরও কিছু মাল্টি নিক খুলে একজন আরেকজনের পোস্টে গিয়ে পীঠ চুলকানো। আমি তখনও বুঝি নি, আমি এখনো বুঝি না, আমার ব্লগে ১০ লাখ ভিউ হলে , প্রতি পোস্টে ১০০ মন্তব্য জমা হলে আমার কি লাভ। জীবন নিয়ে আমার খুব স্পেসিফিক কিছু লক্ষ্য থাকায় - অনলাইনে জনপ্রিয় হওয়াটা আমাকে টানে নি। অথবা, হয়তো এটাও সত্য যে - যে মানসিক শান্তি ছাড় দিয়ে আমি ব্লগে বা ফেসবুকে জনপ্রিয় হতে পারতাম, সে ছাড় দিয়ে ওঠাটা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে নি। সিন্ডিকেট বললে রাগ করবেন অনেকে, কিন্তু পরস্পরের পীঠ চুলকানো এখনো ব্লগে কমেনি। সেটা না কমুক। যে যেভাবে খুশী সে সেভাবেই থাকুক।

তৃতীয়ত, আমি খুব সচেতনভাবে যেকোনো বিষয়ে ব্লগ কর্তৃপক্ষের মধ্যস্ততা মানার চেষ্টা এড়িয়ে গিয়েছি। শুধুমাত্র পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত কোন সমস্যা ছাড়া আমি কখনো ব্লগ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবার চেষ্টা করি নি। কোন বিষয়ে সাহায্য বা ফেভার চাই নি। কখনো কোন পোস্টে বা মন্তব্যে এই মর্মে ঘোষণা দেই নি - অমুকে আমার ইজ্জত নিয়ে টান দিয়েছে, আমাকে বাচান, ব্লগের পরিবেশ রক্ষা করেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি এই ব্লগটাকে বিশ্বের অন্যান্য যেকোনো কমিউনিটি ব্লগের মতই একটা অর্থকরি প্রতিষ্ঠানের চোখে দেখেছি, বিবেচনা করেছি। লেখকরা লেখে, পাঠকরা পড়ে, ভিজিটররা ভিজিট করে, ব্লগের ভিউ বাড়ে, ব্লগে বিজ্ঞাপন আসার সুযোগ বাড়ে, ব্লগ তা থেকে ইনকাম করে। এর মধ্যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানুষকে মুক্তভাবে নিজের কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার মত রোম্যান্টিসাইজিং ইস্যুগুলো এসে তো পড়েই,

কিন্তু আমার মতামত এ ব্যাপারে এই যে - বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তভাবে নিজের কথা বলার, বা মনের ভাব প্রকাশের সুযোগ করে দিলেই যে তাঁর জীবনযাত্রার ধরনে খুব বড় পরিবর্তন আসবে, বা তাঁর চিন্তাচেতনায় উন্নতি আসবে, আমি এমনটা মনে করি না। কারন, আগে তো প্রয়োজন নিজের মনের ভাব পরিশীলিতভাবে কীভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরতে হয়, সে ব্যাপারে পর্যাপ্ত শিক্ষা। যে শিক্ষা নিশ্চিত করে তাঁর ব্যক্তিজীবনের, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিবিধ ইন্সটিটিউশান। সর্বোপরি তাঁর নিজ জীবন দর্শন। দিনের শেষে দেখা যায়, যে ব্যক্তি সমাজের যে আর্থ- সামাজিক অবস্থায় বা সোশ্যাল স্ট্রাটায় বসবাস করে, সে ব্লগেও কথা বলে, সাধারণত, সেই অবস্থান থেকেই। সেই অবস্থান, বলাই বাহুল্য সবসময় যুক্তি, বা সত্যভাষণ নিশ্চিত করে না।

ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতার সময় দেখেছি, সাংবাদিকদের একটা বড় অংশ আসেন , উইথ ডিউ রেসপেক্ট, প্রথিতযশা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রী, বা সাংবাদিকতা বিষয়ক ট্রেনিং ছাড়াই। আমি আমার পড়াশোনার সঙ্গে মিলিয়ে না হয় এখন এমন একটা অবস্থানে আল্লাহর রহমতে আছি, যেখানে আমার কারো তাবেদারি না করে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে নিজের জীবন - জীবিকা, ১০০ ভাগ সততা ও হালাল উপায়ে নির্বাহ করতে পারি। কিন্তু আমার সেই লিখিয়ে ভাই বা বোন, যার মার্কেটে সেলেবল একটা ডিগ্রী না থাকার কারণে লিখে পেট চালানোর মত একটা অনিশ্চিত প্রফেশনকেই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে হয়, সে যদি আবিষ্কার করে যে নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে হয়ে ক্রমাগত লিখে তাঁদের লিটারেচার ভারী করবার দায়িত্ব নিলে তাঁর টুপাইস কামানোর সুযোগ হবে, অথবা একটা নির্দিষ্ট লবি মেনটেইন করে, ইসলাম - মুসলমানদের গালাগালি করে সুইডেন - জার্মানি - নেদারল্যান্ডসে অ্যাসাইলেম নেয়া সম্ভব, যেদিকে দেশে বসে জীবন জীবিকা নির্বাহ করাই কঠিন- তখন কারো কারো পক্ষে ব্লগে, অনলাইনে, বা পোর্টালে সেটা লিখবেন, যেটা লিখলে আপনার জীবনযাত্রার মান আর একটু উন্নত হয়।

অপরদিকে যদি আপনি পরিকল্পনা করেন যে আপনি জাতির বিবেকের স্থলে বসে যা সত্য কেবল তাই লিখবেন তখন দেখবেন কত বিচিত্র পন্থায় আপনাকে হয়রানি রাহজানি করা হয়। আপনার বিপদের মুহূর্তে খেয়াল করবেন, যে জনতার পক্ষ হয়ে আপনি লিখতে চান, সেই জনতাই আপনার পাশে দাঁড়াচ্ছে না, কারন আপনার জীবনের নিরাপত্তা তাঁদের জীবনের প্রথম প্রায়োরিটি নয়। তারাও খেয়ে পরে বাঁচতে চায়। এমতাবস্থায় আপনি নিজের জীবন না হয় উৎসর্গ করে দিলেন, কিন্তু আপনার পরিবার, যারা আপনার ওপর নির্ভরশীল, তাঁদের কি হবে? এইরকম চিন্তায়ও অনেকে একদম নির্ভেজালভাবে আমাদের সিস্টেমের সিস্টেমেটিক সমালোচনা করতে পারেন না। ব্লগেও কি আমরা উপরুল্লেখিত এ সমস্ত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে লিখতে পারি?

তবে ব্লগের কর্তৃপক্ষ / মালিক / মডারেটরের কাজ যে কঠিন, তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। সিরিয়াস লাইফ থ্রেট আসা ইস্যু থেকে শুরু করে বিবিধ বিষয়ে, যেমন মন্তব্য - প্রতিমন্তব্যে বাটহার্ট হওয়ার মত ইস্যুতেও ব্লগারদের টিনেজারদের মত মান অভিমান ভঞ্জন করবার দায়িত্বও ব্লগাররা মাঝে মাঝেই মডারেটরের কাঁধে চাপাতে চেষ্টা করেন। এবং সেই দায়িত্বে পান থেকে চুন খসলেও তাঁদের পিণ্ডি চটকানো শুরু করে অনেকে। এই ব্যাপারে আমার সমবেদনা - সহানুভূতি ব্লগ কর্তৃপক্ষের প্রতি।

চতুর্থত, আমি ব্লগে নিক ব্যাপারটির সঙ্গে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি নি কখনো। বহু আগে ব্রাত্য রাইসুরও একটা পোস্ট দেখেছিলাম যে নিক থেকে মন্তব্য করলে উনি ব্লক করবেন এই মর্মে একটা পোস্ট দিয়েছিলেন। ব্লগের ব্যাবসায়িক দিক বিবেচনা করলে নিকের তাৎপর্য রয়েছে। একজন মানুষ দশটি নিক থেকে যদি এই ব্লগে অ্যাপ্রোচ করেন, আলাদা আলাদা সার্চ ইঞ্জিন থেকে, ব্লগের ভিউয়ার বাড়বে। ব্লগের জন্যে এটা ভালো। কিন্তু যারা স্বনামে লেখেন, তাঁদের জন্যে আত্মপরিচয়হীন নিকদের সঙ্গে ডিল করা মুশকিল। অন্তত আমার কাছে তা সমস্যাশঙ্কুল মনে হয়েছে। আমি নিজের নামে লিখি। আমার নাম বাংলা বা ইংরেজিতে গুগল করলেই অন্তত একটি পাতা জুড়ে আমি কে, অতীতে কি করেছি, এখন কি করছি - এসমস্ত ব্যাপারে তথ্য মিলবে। কিন্তু ব্লগে নিক থেকে যার পূর্বপরের কোন ধারণা মেলে না, তাঁদের ডিল করবো কীভাবে এটা নিয়ে আমার মনে বরাবর প্রশ্ন এসেছে। একটা নিক একজন চালাতে পারে, একটা নিকের পাসওয়ার্ড শেয়ার করলে একাধিক মানুষ মিলে সেই নিক চালাতে পারে। আবার একজন তিনটা নিক খুলে একদিনে একজন স্বনামে লেখা ব্যক্তির সম্মান ক্ষুণ্ণ করতে পারে। ব্লগ কর্তৃপক্ষ হয়তো সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেন বা নিতে পারেন, কিন্তু তাঁর আগে যে হ্যাসলটা হয় - তাতে যে পতিত হন, তাঁর জন্যে সেটা বড় কষ্টের।

এই ব্লগে আহমদ মোস্তফা কামাল লিখতেন, আবদুন নূর তুষার লিখতেন, ফাহমিদুল হক লিখতেন, মানস চৌধুরী দীর্ঘদিন পর পুনরায় সক্রিয় হবার চেষ্টা করে ফিরে গেলেন - এই সমস্ত সক্রিয় লেখকদের ব্যাপারে অতীত ক্রিয়া "লিখতেন" কেন ব্যাবহার করা লাগছে বলে আপনাদের মনে হয়? কমিউনিটি ব্লগে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের নিষ্ক্রিয়তার দুটো কারন আমি আন্দাজ করি। এক, কমিউনিটি ব্লগিং এ আপনি কারো পীঠ না চুল্কে দিলে আপনার পীঠ কেঁউ চুল্কাতে আসবে না, তা আপনি যতবড় তালেবরই হন না কেন। প্রথিতযশা লেখক, বিবিধ দৈনিক পত্রিকা হতে যাদের কলাম চাওয়া হয় , বিনিময়ে অর্থ দেয়া হয় - তারা কখনোই কমিউনিটি ব্লগের এই গণতান্ত্রিক পরিবেশ মানতে পারেন না। তাঁদের প্রয়োজনই বা কি? দুই, বিভিন্ন বেনামি উড়ো মন্তব্য। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী সাহেব কিছুদিন আগে পুনরায় ব্লগে লেখা দেয়া শুরু করেছিলেন। আমি তাঁর সাত - আট বছর পেছনের কিছু লেখার উপর করা মন্তব্য পড়ে অবাক হয়ে গেলাম - ভদ্রলোককে বিভিন্ন বেনামি ব্লগ থেকে তাঁর ব্যক্তিজীবন নিয়ে এমন সকল অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করা হয়েছে, বন্যা মির্জার সঙ্গে তাঁর পরিণয়বন্ধন নিয়ে এমন সব অপমানকর মন্তব্য, এমন কি পোস্ট করা হয়েছে, যেগুলো হজম করে রাতে ঘুমানো মুশকিল। প্রশ্ন হচ্ছে এই , মানস চৌধুরীর মত লোক, যারা যারা নিজ কর্মক্ষেত্রে থিতু হয়ে গেছেন, শিক্ষক, চিন্তক, লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছেন, তারা এসমস্ত ইস্যু ডিল করে কমিউনিটি ব্লগে টিকে থাকবেন কীভাবে? ফলশ্রুতিতে তাঁদের জায়গা দিনান্তে হবে ফেসবুকেই - যেখানে গুছিয়ে নিজের মত করে নিজের চিন্তাভাবনা শেয়ার করা যায়। যাকে বা যাদের অপছন্দ, তাকে বা তাঁদের এমনভাবে ব্লক করা যায় যে কেউ কারো আপডেট আর কখনোই দেখতে পাবে না। ব্লগে আপনি কাউকে ব্লক করলেও সে যদি আপনার নামে পোস্ট দেয়, বা অন্যের পোস্টে গিয়ে আপনার নামে বিরূপ মন্তব্য করেন, তা কালেভদ্রে আপনার চোখে পড়ে, বা পড়বেই।

পঞ্চমত, আমি কয়েকটা প্যাটার্নিক ব্লগকে সচেতনভাবে এভয়েড করেছি গত সাত বছরে। তন্মধ্যে একটা হচ্ছে ভাইয়ুউউউউউউউ গ্রুপ, আরেকটা হচ্ছে আপ্পেএএএএএএ গ্রুপ। আরও আছে নাস্তিকতাকে যারা পেশা হিসেবে নিয়েছে এমন কিছু অসৎ ব্যক্তি। এবং আরও একটি গ্রুপ হচ্ছে যারা ব্লগে নিজের ধর্মবিশ্বাসের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার দায়িত্ব যেচে কাঁধে তুলে নিয়েছেন, অন্যান্য ধর্মবিশ্বাস ও মতপথের লোকের ব্যাপারে সংবেদনশীলতা প্রদর্শন না করে, এমন ইনসেনসিটিভ লোকজন।

আমার এই সাতবছরের ব্লগিং এ আমি সবচে গর্বিত আমার "বরেন্দ্রভূম থেকে জাহাঙ্গীরনগর - বাংলার চিত্রকলার ইতিহাস" নামক ধারাবাহিক ব্লগটি নিয়ে। আমার সংক্ষিপ্ত জীবনে আমি বেছে বেছে সে সমস্ত বিষয় নিয়েই কাজ করেছি, যা আমাকে অন্যদের থেকে আলাদা করবে। বাংলার চিত্রকলার ইতিহাস নিয়ে এই সিরিজ, যেটা বাংলা ভাষাভাষী চারুকলার ছাত্রছাত্রীদের জন্যে অপরিসীম গুরুত্বের একটি বিষয়, ঢাকা - কোলকাতা মিলিয়ে, দুই বাংলার অনলাইন/ব্লগ জগত মিলিয়ে, এতটা তথ্যবহুল, এতটা চিত্রসম্বলিত, ও ব্যক্তিগত ব্যাখ্যাসম্বলিত আঙ্গিকে - আর কোথাও নেই। আপনি মুর্শিদাবাদ শৈলী, দরবারি চিত্রকলা, কালীঘাটের পট, পাল পুঁথিচিত্রকলা ইত্যাদি লিখে গুগলে সার্চ দিন, দেখবেন আমার একটা না একটা ব্লগ পোস্টের লিঙ্ক অবশ্যই ভেসে উঠবে। আমি - আপনি থাকবো না। অনলাইনে এই ব্লগটা থেকে যাবে। ব্লগের সঙ্গে বাংলার চিত্রকলার ইতিহাস প্রেমীদের মনোরঞ্জন ও জ্ঞানপিপাসা মেটানোর জন্যে থেকে যাবে আমার এই সিরিজ ব্লগ।


নিজের একটা পার্সোনাল ওয়েবসাইট ও ব্লগের অর্ডার করেছি একটি প্রফেশনাল কোম্পানিকে, সামনের জানুয়ারি মাস নাগাদ সেটা লঞ্চ হবে আশা রাখি। এছাড়া, ২০২১ এর বইমেলায় ২০১৪ এ সাহিত্যে নোবেল জেতা প্যাত্রিক মোদিয়ানো'র সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারের জিউইশ আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ও ডায়াস্পোরা লিটারেচারের অনন্য নিদর্শন "মিসিং পারসন" - আমার অনুবাদে, বাংলাভাষায়, দুই বাংলা মিলে প্রথমবারের মত রিপ্রিন্ট হতে চলেছে, আমার প্রকাশক আজ বিকেলে ফোন করে খবর দিলেন। সংবাদটাও সাত বছর পূর্তি পোস্টে আগাম জানিয়ে রাখলাম।

সম্প্রতি সামুর চেহারা দেখলে ভালোই লাগে। ব্লগাররা বই পড়ছে, বই নিয়ে লিখছে, তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে লেখা শেয়ার করছে, আন্দাজে ঢিল মারছে কম, এই বাংলাদেশই তো আমরা চাই, এই ব্লগজগতই তো আমরা চাই।

সামু টিকে থাকুক নতুন নতুন পাঠক - চিন্তক - লেখকদের পদচারনায়। সৎচিন্তার, মুক্তচিন্তার, মুক্তবুদ্ধির জয় হোক।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৪৮

আরাফাত৫২৯ বলেছেন: আপনি যখন ব্লগ শুরু করছেন তার দুই বছর আগে আমি ব্লগ ছেড়ে দিসি। আমার মতে এই ব্লগের সেরা সময় ২০০৮ থেকে ২০১২। সেই সময় এত এত জনপ্রিয় ব্লগার ছিল যে বলার মত না। পোস্ট করার ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্য পোস্ট পরের পেজে চলে যেত, কারণ তখন মিনিটে মিনিটে পোস্ট হত। ব্লগে মাইনাস রেটিং করা যেত। অনেক পোস্ট ছিল এমন যে হাজারখানেক মাইনাস খাওয়া। বেশ মজার ও উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। তারপর নানা কারণে জনপ্রিয়তা কমতে কমতে আজ ব্লগের এই অবস্থা।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:১২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আচ্ছা।

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:০৭

জাহিদ হাসান বলেছেন: আমি আপনার বহু আগে এই ব্লগে এসেছি।

আমি ডোডো পাখির মত প্রাচীন B-)

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:১৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ব্লগের বিলুপ্তপ্রায় ডোডো পাখিরা হচ্ছে প্রথিতযশা লেখকেরা, স্যার। যারা বাংলাব্লগ কমিউনিটি ওপেন হবার সঙ্গে সঙ্গে তাতে সংশ্লিষ্ট হয়েছিলেন, এবং বিবিধ কারণে টিকে থাকতে না পেরে ব্লগ ছেড়ে চলে গেছেন। আপনি স্যার তেলাপোকা। টিকে ছিলেন, টিকে আছেন, টিকে থাকবেন, এবং বিভিন্নজনের পোস্টে গিয়ে ল্যাদা ছড়াতে থাকবেন, যেমন কিনা আমার পোস্টে ছড়াচ্ছেন গত মাস দুই ধরে।

৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:২৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



অভিনন্দন।
শিক্ষা নিয়ে লিখুন।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:১৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ স্যার। চেষ্টা করবো।

৪| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৩৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
অভিনন্দন।

শুভ ব্লগিং।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:১৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ স্যার। শুভকামনা। হ্যাপি ব্লগিং।

৫| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৪৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: সপ্তম বর্ষপূর্তির শুভেচ্ছা সাজিদ উল হক আবির !
ব্লগ আবার মুখরিত হোক আপনাদের সবার লেখালিখিতে। সামু টিকে থাকুক নতুন নতুন পাঠক - চিন্তক - লেখকদের পদচারনায়। সৎচিন্তার, মুক্তচিন্তার, মুক্তবুদ্ধির জয় হোক।

শুভ কামনা।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:১৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপা। আপনার জন্যে শুভকামনা। শুভকামনা সামু ব্লগের প্রতিও। তারুণ্যের পদচারনায় , চিন্তায় এই ব্লগ মুখরিত হয়ে থাকুক।

৬| ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: পাক্ষিক আনন্দধারা আর ২০০০ এর অফিস কি এক জায়গা ছিলো? আমি তো ২০০০ সাপ্তাহিক পত্রিকায় দীর্ঘদিন আড্ডা দিয়েছি। পাক্ষিক এর ফটোগ্রাফার তখন কে ছিলেন? নাম টা আমি জানি কিন্তু এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না।

সাত বছর দীর্ঘ লম্বা সময়। আসলে এই সামু দিয়েই কত রকমের লেখা পড়ছি। কত কিছু জানছি। সামু টিকে থাকুক কেয়ামত পর্যন্ত।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:২২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: দুটো পত্রিকার অফিসই ছিল নিউইস্কাটনে, জনকন্ঠ ভবনের উল্টোপাশে। দোতালা একটা দালানে। নীচতলায় আনন্দধারা, দ্বিতীয়তলায় সাপ্তাহিক ২০০০। পরে ২০১৩ / ১৪ সনে পত্রিকাদুটি'র মাদার অর্গানাইজেশন ডেইলি স্টার তাঁদের আত্মীকৃত করে নিলে তাঁদের জায়গা হয় ফার্মগেটের ডেইলি স্টার ভবনে। ফটো সাংবাদিক অনেকেই ছিলেন পত্রিকাদুটির সঙ্গে। জন্মলগ্ন থেকে ২০০৭ - ০৮ পর্যন্ত খুবসম্ভব পল ডেভিড বারিকদার ছিলেন প্রধান ফটোগ্রাফার, পরে তুহিন হোসেইন, আকাশ সাহেব, এবং সব শেষে সুদীপ্ত সালাম সাহেব।

৭| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১:২১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অভিনন্দন প্রিয় বগ্লার । সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:২৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় নেওয়াজ ভাই। ব্লগার প্রান্তের পোস্টে দেখেছিলাম, আপনি এই করোনার টানাটানির সময়েও মরন্মুখ এক ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার সাহায্যার্থে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আপনি একজন ভালো মনের মানুষ। স্রষ্টা আপনার মঙ্গল করুন।

৮| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:০০

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
অভিনন্দন। পথ চলা আরও দীর্ঘ ও গভীর হোক।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ, মাইদুল সাহেব। শুভকামনা আপনার জন্যে।

৯| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: সপ্তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন!
বর্ণাঢ্য আপনার সাত বছরের ব্লগজীবন। লিখেছেনও অনেক ডিটেইলসে, তাই পটভূমি সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলাম।
আগামী বইমেলায় 'জিউয়িশ আইডেন্টিটি ক্রাইসিস' এবং 'মিসিং পার্সন' এর রিপ্রিন্ট প্রকাশ উপলক্ষে আগাম অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা!

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৩৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ স্যার। আপনার নির্বিরোধ ও বিতর্কহীন ব্লগিং এর প্যাটার্ন আমার ভালো লাগে, ভেতরে শীতলতা অনুভব হয়। আমার আসলে ব্লগিং এর বয়স ২ বছর, প্রথম দেড় বছর, আর করোনার পর ছ' মাস। মধ্যখানে পাঁচ বছর ব্লগে কি চলেছে খেয়াল করার সুযোগ হয় নি।

মিসিং পারসন নামের বইটির অনুবাদ রিপ্রিন্ট হচ্ছে স্যার। বইটির লেখক প্যাট্রিক মোদিয়ানো একজন ফ্রেঞ্চ জিউইশ, এবং তিনি ২০১৪'র সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজেতা। বইটি বিশ্বযুদ্ধের সরাসরি ফল ভুগেছে এমন একজন স্মৃতিভ্রংশ জিউ'র আত্মপরিচয় খুঁজে বের করা সংক্রান্ত একটি উপন্যাস। ২০১৫ সালেই আমার অনুবাদে বইটি ঘাসফুল প্রকাশনা থেকে বের হয়। বইটি সমস্ত প্রিন্টেড কপি বিক্রয় হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই বইটি পুনপ্রকাশের জন্যে আমাকে তাগাদা দেন। তন্মধ্যে বিখ্যাত লেখিকা শাহিন আখতার আপা আমাকে মাওলা ব্রাদার্সের সঙ্গে যোগাযোগও করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গত বছর আমার মৌলিক গল্পের বইয়ের সংকলন যে প্রকাশনা সংস্থা বের করেছিল, সেই চমন প্রকাশের মালিক এনাম রেজা ভাইও অনুবাদ বইটি প্রকাশ করতে চাইলে আমি কৃতজ্ঞতার প্রকাশস্বরূপ ওনাকেই বইটি রিপ্রিন্ট করবার অনুমতি দিই।

আমার সপ্তম বই / প্রথম উপন্যাস ও লেখার কাজ সমাপ্ত। সেটা সামনের বইমেলাতেই আনবো, নাকি কোন পত্রিকার ঈদসংখ্যায় প্রকাশ করে ২০২২ এর বইমেলা টার্গেট করবো এটা নিয়ে কিঞ্চিত দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি।

আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, এই কামনা করি।

১০| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:০১

ইসিয়াক বলেছেন: অভিনন্দন রইলো।
সামুতে আপনার পথচলা আরো দীর্ঘ হোক।

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:১৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ ইশতিয়াক ভাই। আপনার জন্যে শুভকামনা।

১১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:১২

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:



অভিনন্দন কবুল করুন, সাজিদ উল হক আবির! অনেকদিন পর এলেন। আমিও অনেকদিন পর পর উঁকি দেই।
লেখাটি পড়লাম। সবই আছে। তাই কিছুই যোগ করছি না। :)

০৫ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১:১৩

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: শুকরিয়া, এবং আহলান সাহলান মইনুল ভাই। দীর্ঘদিন পর পর উঁকি দেন, তা তো বোঝা যায়ই। একটা দীর্ঘ সময় যাদের সঙ্গে এক সাথে লেখালিখি করা, তাঁদের অনুপস্থিতি চোখে ধরা পড়ে, মনেও বাজে। ২০১৪'র ব্লগ দিবসের অনুষ্ঠানে আপনার সঙ্গে আলাপও হয়েছিল। ব্লগের বাইরে হাতে গোনা যে দু' একজন ব্লগারের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত জীবনে আমার কথাবার্তা হয়েছে, আপনি তাঁদের একজন।

সব নেই স্যার! সব লিখতে গেলে সাতখন্ড রামায়ণ হয়ে যেত বিধায় এতটুকুতেই ক্ষান্ত দেয়া। : )

আপনি ভালো থাকেন, সুস্থ্য থাকেন, আপনার পরিবার পরিজন ও ভালোবাসার মানুষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে, এই কামনা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.