নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তব এবং সাধারন মানুষ আমার লিখার জীবন। এখানে রানা নামের একজন অতি সাধারন ব্যক্তির দৈনিক জীবন এবং তার দৃষ্টিতে সমাজের বর্তমান অবস্থা এবং এর প্রভাব তার নিজের ভাষায় প্রকাশ করা হবে।

আমি রানা

আমি বিশেষ কেউ বা কিছু না। যা মনে আসে যেভাবে মনে আসে তাই লিখি।

আমি রানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবিবার নীলার বিয়ে.......(শেষ পর্ব এবং নীলার সাদা খামের চিঠি..)

০৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩৪

রবিবার নীলার বিয়ে.......(৭)
প্রথমত ঘর বন্দি দ্বিতীয়ত বেকার কাজের মধ্যে রয়েছে শুধু তিনটে কাজ ১) ঘুমানো ২) খাওয়া এবং ৩) যত রকমের অকাজ করা যায় তা করা। এবং নিয়মিত রুটিন করে তাই করে যাচ্ছি। নতুন নতুন রান্না করছি, নতুন আইটেম নিয়ে কাজ হয় ভোর ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত, বই পড়ছি যদিও দুই পৃষ্ঠার বেশি একবসায় পড়তে পারিনা। তবে কম্পিউটারে অনেক সময় নিয়ে পড়তে পাড়ি সাথে মিউজিক ও চলে।আর লিখার চেষ্টাত করেই যাচ্ছি।

সকালের চেষ্টা।
দুদিন আগে সকাল এগারোটায় গভির ঘুমে আমি, বাসার কলিং বেলটা সমানে বেঁজে যাচ্ছে। শোনার পরও প্রথমে উঠিনি, কারন করোনা দেশে আসার পর আমার বাসায় মানুষ নামক কোন প্রাণ আসেনি। কেউ হবে হয়তবা ভেবে আবার ঘুমনোর চেষ্টা করতে থাকলাম। কিন্তু তা আর হলোনা। আমার বাসার কলিং বেলটা এতটায় বাজে শব্দ করে যে, প্রতিবারই বাজলে আমি বিরক্ত হই, গভির মনযোগ দিয়ে কোন কাজ করার সময় বেজেঁ উঠলে ভয়পেয়ে যাই। তারপরও বেলটা বদলানো হয়না কারন ব্যচেলর জীবন, যেখানে আলস্যই বেশি। বেশ বিরক্ত নিয়েই উঠলাম চোখে চশমা নেই তাই ভালো করে চোখ খুলতে পারছিনা। দড়জা খুলে দেখি নূরা দারোয়ান। নূরা দারোয়ান আমাদের বাসার দাড়োয়ান। তার ভালো নাম নূরুল ইসলাম, বাড়ি পটিয়া , বয়স আনুমানিক ৫৫ হবে। সে আমাকে মাস্টর বলে ডাকে কারন করোনার আগে আমি তার ছেলেকে পড়াতাম, এখন সে গ্রামে থাকে। হয়তবা করোনার পরও পড়াবো। নূড়া দারোয়ানের একটা ভালো গুন আছে, আমি মূলত তার ছেলেকে পড়ানোর জন্য কোন টাকা নেই না। কিন্তু যখন আমার কাছে টাকা থাকেনা এবং দোকানে সিগারেটের বিল দু-তিনশ টাকা হয়ে যায়, তখন সে টাকাটা দিয়ে দেয়(দু-তিন মাস পর পর)। কিভাবে যে বুঝে আমি অর্থাভাবে আছি কে জানে?
বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম "কি????''
নূরা দারোয়ান হাতের সাদা খামটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল।
"কি এটা?" প্রশ্ন করলাম। নূরা বলল "চিঠি"। আমি হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম "কে দিল?"
নূরা আঞ্চলিক ভাষায় বলল "পোয়া উগ্গা"(ছেলে একটা)।
আমি আচ্ছা বলে দড়জা বন্ধ করে, চিঠিটা টেবিলে রেখে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম। চোখ বন্ধ। হঠাৎ করেই চোখ খুলে বসে পড়লাম। কেমন একটা রহস্যের গন্ধ। আমার কাছে চিঠি???????????
কোথাও চাকরির জন্য আবেদন করিনি, বা এমন কেউ নেইও যে, যার সাথে চিঠি মারফত যোগাযোগ করি। তাহলে পাঠালো কে?
দাড়োয়ান বললো একটা ছেলে দিয়ে গিয়েছে, তার মানে চিঠিটা ডাকে আসেনি। তাহলে পাঠালো কে? বিছানা থেকে উঠে, প্রথমে চশমা চোখে দিলাম তারপর চিঠিটা হাতে নিলাম।
খামের উপরে নীল কালিতে লিখা "রানার জন্য"। খামটা ছিড়ে চিঠিটা বের করলাম পরিপাটি গুছানো লিখা। আমি চিঠি পড়া শুরু নাকরেই আগে নামটা দেখলাম। নামে লিখা আছে, ইতি নীলু। নীলার চিঠি, পড়বো কি পড়বোনা বুঝতে পারছিনা। পাচঁ মাস হলো নীলার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ নেই। কোথায় আছে কেমনইবা আছে কিচ্ছু জানি না। মাঝে মধ্যে রনি বলতো নীলা নাকি তার কাছে আমার কথা জিজ্ঞাসা করে, তবে আমি কখনোই এরপর কথা বাড়াইনি।

নীলার সাথে আমার শেষ দেখা পাচঁ মাস আগে এক বুধবার সকাল এগারোটাই, এর আগের রাতে নীলা আমাকে বলে ছিল তাকে বিয়ে করে ফেলতে, আমি সরাসরি না করে দিয়ে ছিলাম। নীলা রাগ করে ফোন অফ করে দিয়েছিল। ভোর পাচঁটাই একটা মেসেজ পাঠায় "আমি বিয়ে করে ফেলবো শুভকে, সে সবকিছু রেডি করে রেখেছে শুধু কোর্টে যাবো আর বিয়ে করে ফেলবো"। আমি তখনি মেসেজটা দেখে কোন উত্তর না দিয়েই নিজের কাজ করছিলাম। একঘন্টা পর উত্তর দিলাম "কল করো, দেখা করবো"
নীলা কল করলো, সে বলল যে সে দেখা করতে চায় না। কারন আমাকে দেখার পর সে তার মত পাল্টে ফেলতে পারে। আমি তাকে আস্বস্থ করলাম আমাকে বিয়ে করার জন্য আমি তাকে কোন ভাবেই কনভেইন্স করার চেষ্টা করবো না। নীলা প্রথমে রাজী হতে চাইনি তারপর রাজী হয়ে গেল।
সকাল এগারোটা, আমি সিআরবি তে বড় গাছটার শেকরে বসে আছি। বাইক নিয়ে এসেছি। কিছুখন অপেক্ষার পর নীলা আসলো। আজ নীলার মুখে সেই যাদুকরি হাসিটা নেই। কেমন যেন কাটাঁ কাটাঁ কথা বলছে আমার সাথে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আমি তার হাত ধরে তার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললাম "কেমন আছ নীলা" মূহুতেই নীলার সব রাগ অভিমান পানি হয়ে গেল, সেও তার সরল হাসিটি দিল, আর বলল "আমি এই জন্য আসতে চাইনি, কারন আমি জানি আমি তোমার সামনে আসলে, তোমার কথা শুনলে আর হাসি দেখলে আমার কোন রাগ অভিমানই থাকবেনা"। আমি জিজ্ঞাসা করলাম"সত্যিই বিয়ে করছো???" নীলা বলল "হ্যা" কেন? আমি জিজ্ঞাসা করলাম। নীলা কিছু বলল না। এরপর স্বাভাবিক কিছু কথা হলো। কথার মাঝে নীলা একসময় বলে উঠলো "ভাই প্লিজ আপনার পায়ে পড়ি, আপনি আমাকে বিয়ে করেন। আমি শুভকে বিয়ে করতে চাইনা, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই, শুধুই আপনাকে।"আমি জিজ্ঞাসা করলাম তাহলে শুভকে বিয়ে করছো কেন? আমি নিরুপাই নীলা উত্তর দিলো, প্লিজ আপনি আমাকে বিয়ে করেন নীলা আবার বলল। দেখ নীলা তোমাকে বিয়ে করে আমি রাখবো কোথাই? জীবনতো বাংলা সিনেমা না যে, তোমাকে গাছতলাই রাখতে পারবো। আমার কিচ্ছু নেই তোমাকে খাওয়ানোর মতো টাকাটাও নেই। তুমি দু-মাস অপেক্ষা করতে পারো আমি একটা চাকরীর ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখি। কথাগুলো বলতে বলতে নীলার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি নীলা কাদঁছে। এই প্রথম নীলার চোখে পানি দেখলাম, আমি চলে যাবো বলে উঠে দাড়াঁলাম। নীলা হাতটা টেনে ধরে বলল "আর একটু একসাথে থাকি?" না বলেই আমি উঠে দাড়াঁলাম। বাইকে করে নীলাকে কিছুটা এগিয়ে দিলাম। এর আগে নীলাকে কথনো আমার বাইকে তুলিনি। আমার পিছনে বসে পুরো শহর ঘুরে বেড়াবে এটা ছিল আমার কাছে নীলার শেষ চাওয়, তা পূরোন করে দিলাম অল্প করে। এর মাঝে স্বাভাবিক কথাই চলছিল নীলার সাথে।
রবি বার সকাল থেকে আমার ব্যস্ততার কারনে নীলাকে ফোন করা কিংবা কোন মেসেজ পাঠানো হয়নি। সন্ধ্যায় নীলার মেসেজ আসলো "আমি বিয়ে করে ফেলেছি, মাফ করে দিয়েন" আমি মেসেজ দেখার পর আর কোন উত্তর দেইনি, আজ পর্যন্ত দেইনি।

হঠাৎকরেই মনে হলো দেখি সে কি বলতে চায়? চিঠি পড়া শুরু করলাম, চিঠিতে লিখা ছিল....

প্রিয় রানা,
আশা করি ভালোই আছো, জানি ভালো থাকবে কারন স্বার্থপরেরা ভালোই থাকে। আর তুমি নিজে ভালো থাকার জন্য সব কিছুই করতে পারো তা আমি ভালো করেই জানি। আমিও ভালোই আছি, আমি এখন কক্সবাজার থাকি এখনে শুভ একটা বিদেশি এনজিও তে চাকরি করে অনেক ভালো বেতন পায় ৬৫০০০টাকা, নতুন সংসার শুধু আমি আর শুভ, আমাদের বাসাটা একটা চিলেকোঠাই ছোট্ট দুটি রুম যেমনটা আমি আর তুমি কল্পনা করতাম। আমি সারাদিনই ফ্রি থাকি, সকালে নাস্তা বানাই শুভ অফিসে চলে যায় তারপর ভাত আর দুট তরকারি রান্না করলে দিব্ব্যি দু-তিন দিন চলে যায় আমাদের। সবমিলিয়ে ভালোই আছি।
রানা আমি ভালো নেই, একপ্রকার নাপাড়তে, এবং অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে তোমাকে চিঠি লিখা এই অবসরে কেন জানি তোমাকে ছাড়া কিচ্ছু ভাবতে পারিনা। জানো রানা শুভর সাথে আমার কেমন যেন একটা যান্ত্রিক সম্পর্ক সে সকাল আটায় অফিসে যায় আসে সন্ধ্যা সাতটায় তারপর লেপটপে নাটক দেখে, আমিযে তার বউ সে কথা তার মনেই থাকেনা। তারপর রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। জানো রানা প্রতিরাতে যখন শুভর পাশবিকতা শেষ হয় এবং সে ঘুমিয়ে পড়ে তখন আমি কাদিঁ, প্রতিটা রাতেই। আমি সবসময় প্রার্থনা করি তুমি মারা যাও,না না তুমি মারা যেওনা। আচ্ছা রানা এই রাতগুলোত হতো তোমার আর আমার। তবে কেন আজ এমন হচ্ছে? আমি এখনো স্বপ্ন দেখি তোমাকে নিয়ে সাগরের পাড়ধরে হেটেঁ যাচ্ছি এবং হাড়িয়ে যাচ্ছি ঐ ঝাউবনে। শুভকে বিয়ে করে আমি ভূল করেছি যেভূলের কোন ক্ষমা নেই।
অনেক কথা বলে ফেললাম, ভালো থাকবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন। আর আকটা শেষ অনুরোধ আমার জন্য একটা চিঠি লিখবেন অনেক বড় চিঠি, যেটা আমার কাছে রেখে দিব আপনার শেষ সৃত্মি হিসেবে।
ইতি নীলু

চিঠি পড়ে একটা সিগারেট ধরালাম। চোখে এখন কোন ঘুমই নেই। পেন্ট সার্ট পড়ে বের হচ্ছি, অনেকদিন বের হইনা বাইক চালাইনা। আজ পুরো শহরটা ঘুরে বেড়াবো। ভাবছি করোনা চলে গেলে বাইকে করে সারা দেশ ঘুরবো ৬৪ জেলা ৬৮০০০গ্রাম। ছবি তুলবো আর ভিডিও ব্লগ করবো।
বাইক নিয়ে বের হয়ে পড়লাম।.....
ঘরে থাকবেন নিড়াপদ থাকবেন।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:১৭

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: মনটাই খারাপ হয়ে গেলো । আমড়ার ভালোবাসা
শেষ পর্যন্ত ধরে না রাখতে পারলে আমড়ার প্রেম করন লাগে ক্যারে হুহ

০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৪২

আমি রানা বলেছেন: প্রেম ভালোবাসা বলে কয়ে আসেনা।

২| ০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:২২

রাজীব নুর বলেছেন: মেয়ে গুলো বেঈমান হয়।
নীলা জীবনে শান্তি পাবে না।

০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৩৭

আমি রানা বলেছেন: জানিনা শান্তি পাবে কিনা, তবে শান্তিতে থাকুক।

৩| ০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: বাইক নিয়ে একা ঘুরে বেড়াবেন??
একা তো ভালো লাগবে না। আমাকেও সাথে নিতে পারেন । আমিও বেকার। হাতে সময় আর সময়।

০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯

আমি রানা বলেছেন: আপনাকে ফেসবুকে বন্ধু বার্তা পাঠিয়েছি।

৪| ০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৫৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: :( এইটা কী হলো? :((

শুরু থেকে আমি প্রত্যাশা করে ছিলাম যে গল্পের শেষে / পরিশেষে নিলা, রানার মিলন হবে এবং একটি সুখী যুগল জীবন অর্জন করবে।
তবে আপনি লেখক, প্রমাণ করে দিলেন যে বড় প্রেম কেবল কাছেই টানেনা কখনও কখনও এটি অনেক দূরেও ঠেলে দেয়।

তবে আমি ব্যাপক দুঃখিত :(( প্রেম /ভালবাসা এরম কিললাই?কেনে মিলন হয়না ?খালি ব্যথা দেয়,তাগোরে যারা ভালাবায়।

০৯ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৪

আমি রানা বলেছেন: প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ। ঘটনাটা এমনি ঘটেছিল।

৫| ০৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:১৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার হয়েছে।

০৯ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৭

আমি রানা বলেছেন: নেওয়াজ ভাই আপনাকে ধন্যবাদ বলা ছাড়া আর কিছুই বলার বা দেওয়ার নাই। সবসময় পাশে থেকে অনুপ্রেরনা দিবেন।

৬| ১৫ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:১৭

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লেগেছে।

আরো চাই এমন গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.