নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তব এবং সাধারন মানুষ আমার লিখার জীবন। এখানে রানা নামের একজন অতি সাধারন ব্যক্তির দৈনিক জীবন এবং তার দৃষ্টিতে সমাজের বর্তমান অবস্থা এবং এর প্রভাব তার নিজের ভাষায় প্রকাশ করা হবে।

আমি রানা

আমি বিশেষ কেউ বা কিছু না। যা মনে আসে যেভাবে মনে আসে তাই লিখি।

আমি রানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

জুয়েল ভাই

২০ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৭


গ্রামে গেলেই নিঃসঙ্গ দিন কাটানোর জন্য কোন সঙ্গ প্রয়োজন হয়। আর এই সঙ্গ পাওয়ার জন্য প্রতিবার গ্রামে গেলেই হয়তবা কোন চাচাত ভাই অথবা কোন ফুপাত ভাই এর কাধেঁ ভূত হয়ে নাজিল হই। সারাদিনই তাদের সাথে , পিছে পিছে ঘুরে বেড়িয়ে সময় কাটাঁই। তাদের সঙ্গ সাধন করতে করতে কোননা কোন নতুন সঙ্গীর সাথে সাক্ষাৎ হয়ে যায়। শহর থেকে যাই বলে তাদের কাছে একটা ভালো রকমের গ্রহন যোগ্যতা পাওয়া যায়, আমার যা ইচ্ছা হয় তারা তাদের সাধ্য মতো আমার মনপূর্তি করতে চেষ্টা করে।
প্রতিবার গেলে নতুন কোন সঙ্গী জুটে যায়, আবার তারপরের বার গেলে তাকে পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। কারন সে অর্থের আশায় হয় শহড়ে পাড়ি জমিয়েছে অথবা দেশের সীমানা ছাড়ে।
এভাবেই একবার গিয়ে দেখা হয়ে যায় জুয়েল ভায়ের সাথে। বয়সে আমার চেয়ে বড় হবেনা। পুথিগত বিদ্যায় ও বড় না তারপরও আমি তাকে ভাই বলে ডাকি। আমার দেখা এখন পর্যন্ত অসাধারন একজন মানুষ। সকল কাজেই সে পারদর্শী , চিন্তা শক্তি কম্পিউটারের চেয়েও বেশি কিন্তু দূভাগ্য পড়ালিখা করেনি। জুয়েল ভাইকে প্রথম খন দেখি হ্যাংলা একটা ছেলে সদ্য বিদেশ ফেরত, মনে হবে একটু বিশেষ অবস্থান থেকে ফুঁ … দিলে উড়ে যাবে। কিন্তু গায়ে প্রচন্ড শক্তি। আর আমার মনে হয় তার চামড়ার নিচে হাড়ঁ কিংবা মাংশ কিছুই নেই সেখানে রয়েছে শুধুই সাহস আর সাহস।
একটু জুয়েল ভায়ের সাহসের বিবরন দেই- এক দুপুরে আমি জুয়েল ভাই আর আমার চাচাত ভাই পুকুরে গোসল করতে গিয়েছিলাম। জুয়েল ভাই আমাকে সাঁতারের নানা রকম কসরত দেখালো, এরপর হঠাৎ করেই তার চোখে পড়লো একটা সাপ, সাপটা তেমন বড় নয়, কিন্তু বিষাক্ত। জুয়েল ভাই বললো “সাপটা ধরে আনি?” আমি প্রথমে উত্তেজিত হয়ে হ্যাঁ বলে ফেললাম কিন্তু পরমুহূর্তে ভয় পেয়ে যেই না
বলতে যাবো দেখলাম জুয়েল ভাই ডুব দিয়ে দিল। কোথা থেকে যে সাপটিকে ধরে ফেললো টেরই পেলাম না। ডাঙ্গায় আসার পর যখন জিঞ্জাসা করলাম কোথা থেকে ধরলো। ‍ুয়েল ভাই বললো “ব্যাটা পানির মধ্যে গর্তে লুকিয়ে গিয়েছিল , টেনে বের করে এনেছি”। সাপটি বাঁচার জন্য প্রাণ-পণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো কিন্তু জুয়েল ভাই দক্ষ সাপুড়ের মত করে ধরলো যে সাপটি কোন কূলেই যেতে পারছিলনা। পরে সাপটিকে কিভাবে কিভাবে যেন গিট মারলো তারপর বাচ্চা ছেলেদের হাতে তুলে দিল।
তখন বর্ষাকাল, মানে খাল বিল সব পানিতে পরিপূর্ণ অথৈয় জল চারদিকে। এসময় রাতে মাছ মারার এক অদ্ভূত আনন্দ আছে, যারা মেরেছে একমাত্র তারাই বলতে পারবে।আপনাদের মাঝে কাউর এমন অভিজ্ঞতা আছে? রাত দশটার পর আমি জুয়েল ভাই আর আমার চাচাত ভাই বের হলাম মাছ শিকারে। একটা তিন ব্যাটারির টচ্ আর একটা চল (বর্ষার ফলার মতো অনেকগুলো চিকন ফলা যুক্ত মাছ মারার যন্ত্র ) নিয়ে রাস্তার কিনারে কিনারে হাটছি , আমার হাতে টচ্ আর জুয়েল ভায়ের হাতে চল । আমি একটু পর পর পানিতে টচ্ মেরে দেখছি জলের কিনারায় কোন মাছ ভেসে উঠেছে কিনা। জুয়েল ভাই আমার পিছে পিছে হাটছে। এক সময় দেখলাম জুয়েল ভাই পানিতে চল’টা মেরে দিল আমি পুরাই অবাক এই মাত্র টচ্ মারলাম কিন্তু কিছুই দেখলাম না। জিজ্ঞাসা করলাম-”জুয়েল ভাই মাছ নাকি ?” জুয়েল ভাই বলল ”না , সাপ ” । আমি আবার টচ্ মেরে দেখি বিশাল এক সাপ চার-পাচঁ হাত লম্বা হবে। চল দিয়ে গুতিয়ে জুয়েল ভাই সাপটিকে মেরে ফেললো। আমি এখনো মাঝে মাঝে ভাবি, জুয়েল ভাই সাপটিকে দেখলো কিভাবে??!!!
মাছ নাপেয়ে সে রাতে বাড়ী ফিরে আসলাম কিন্তু ঘুম হলো না। যদি সাপটার স্বামী কিংবা স্ত্রী এসে আমাকে কামড়ে দেই???!! আমি নিজ হাতে মারিনি তা সত্য কিন্তু আমিত সেখানে ছিলাম। এটা ভাবতে ভাবতেই একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই ভালো করে হাত-পা দেখলাম কোন কামড় আছে কিনা। কিন্তু নাহ্ সব ঠিক আছে। সেদিন বিকেলে জুয়েল ভায়ের ঘরে গিয়েছিলাম। বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল এটা থাকার ঘর নাকি কোন ল্যাব। ঘরে বিচিত্র রকমের সিডি প্লেয়ার , সাউন্ড বক্স, টেবিল , টিভি বক্স আরো বিচিত্র সব জনিস যা জুয়েল ভাই নিজের হাতে বানিয়েছে।
মূল লিখার সময় কাল- ১৩-০৫-২০১৪
সেবার বাড়ি থেকে ফেরার পর আবার অনেক দিন পর বাড়িগেলাম কিন্তু তখন থেকে জুয়েল ভায়ের সাথে আর কথা বলা হয়নি। বিচিত্র এক কারনে তার সাথে আর কথা বলিনি সামনে দেখা হলেও বলিনি।
পরে শুনতে পারলাম তিনি প্রেম করে বিয়ে করেছে, মেয়ে যতেষ্ঠ সুন্দরী এবং তিনি ইয়াবার নেশায় বুদ হয়ে গিয়েছেন। কদিন আগে তাকে দেখলাম নেশায় টলমল হয়ে আছে, চোখের সে তিব্রতা আর নেই, সেখানে লোভ ঢুকে গিয়েছে। শরীর ভেঙ্গে পরেছে, সেখানে কোন প্রাণ শক্তিত নেই ই বরং তা নিজের কাছে বোঝা হয়ে দাড়িঁয়েছে। নেশা সত্যিকারের এক জুয়েল কে যে কিনা অনেক কিছুই হতে পারতো তাকে সমাজের বোঝা বানিয়ে দিয়েছে।
ছবি: গুগল
ঘরে থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: ছবিতে কি জুয়েল ভাই?

২১ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২১

আমি রানা বলেছেন: না ছবিটা গুগল থেকে নেওয়া। এখন বাড়ি আছি হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হলে জুয়েল ভাইকে খুজেঁ বের করে একটা ছবি তুলব।

২| ২০ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:২০

বিজন রয় বলেছেন: আমিও সাপ ধরতে পারি।

২১ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২২

আমি রানা বলেছেন: আমি পারিনা, কেন জানিনা সাপ দেখলেই ঘিন লাগে। হয়তবা ছোট বেলার ভয়ের প্রভাব।

৩| ২১ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:২২

পদ্মপুকুর বলেছেন: সাপের ছবি দেখতে ভালো লাগে না, কেমন যেনো গা ঘিনঘিন করে। আমার কাছে সবচেয়ে খারাপ স্বপ্ন হলো যখন স্বপ্নে সাপ দেখি।

জোড়ার সাপ রাতে প্রতিশোধ নিতে আসে- এ রকম গল্প আমাদের ছোটবেলাকেও ভয়ে আচ্ছন্ন করে রাখতো।

২১ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৪

আমি রানা বলেছেন: ধন্যবাদ । আপনার সাথে শতভাগ সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.