নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সুখী মানুষ, স্রষ্টার অপার ক্ষমা ও করুণাধন্য, তাই স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।

খায়রুল আহসান

অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।

খায়রুল আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে....

২৬ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৮:০৯

একজন শ্রোতা যখন কোন গান শোনেন, আর সে গানটি যদি তার ভালো লেগে যায়, তখন তার তিনটে ইন্দ্রিয় একত্রে কাজ করতে থাকে- কর্ণ, মানস (মন, কল্পলোক) আর নয়ন। গানের সুর কর্ণকুহরে প্রবেশ করা মাত্র তার মন সেই গানের কথা ও সুরের আবহে স্পর্শিত হয়ে, স্পন্দিত হয়ে, তরঙ্গায়িত হয়ে কল্পলোকে বিস্তৃত হয় এবং একইসাথে সেই সুরসৃষ্ট কিছু ছবি তার চোখের সামনে দিয়ে ভেসে যেতে থাকে। যতক্ষণ সেই সুর তার কানে প্রবেশ করতে থাকে, ততক্ষণ সে দু’চোখে ছবি দেখতে থাকে, যদিও প্রকৃতপক্ষে তার চোখের সামনে দেখার মত কোন ছবি থাকে না। এই ছবি দেখানোর কাজটা মন করে থাকে, তার কল্পলোকের মাধ্যমে। এই তিন ইন্দ্রিয়ের সমন্বিত কার্যক্রমে তার মনে ভালোলাগার অনুভব তৈরী হয় এবং তার দেহমনে positive vibes সৃষ্টি হয়।

ধরুন, তার শোনা কোন একটি গান শেষ চরণে এসে "নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে" কথাগুলো দিয়ে শেষ হয়ে গেল। যারা রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভক্ত, তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কোন গানটির শেষ চরণে এ কথাগুলো রয়েছে। গান শেষ হবার সাথে সাথে তার কান আপাততঃ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। কিন্তু মন ও চোখও কি তাই? না, মন ও চোখের যৌথ ক্রিয়াকলাপ তখনও চলতে থাকে। নীরব রাতের নিবিড় আঁধারের কথা ভাবতে ভাবতে মনের তোরঙ্গে সযত্নে সজ্জিত কিছু ছবি তখন তার চোখের সামনে চলে আসে। শ্রোতা বিশেষে এই ছবি ভিন্ন ভিন্ন হবে অবশ্যই, তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে। সে অভিজ্ঞতাটা হতে পারে কখনো আনন্দের, কখনো বিষাদের, কখনো ভয় বা ত্রাসের। যাদের নীরব রাতের নিবিড় আঁধার অবলোকন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে ছবি দেখতে থাকবে। যাদের তা নেই, তাদের মন তাদেরকে নিয়ে যাবে তাদের কল্পলোকে, যেখানে বিচরণ করে তারা আপন কল্পনাশক্তির বলে ভিন্ন ভিন্ন ছবি দেখবে। আপন খেয়ালে ঐন্দ্রিয় বিচরণে এই ছবি দেখাকেই কবিগুরু বলেছেনঃ

"গানের ভেলায় বেলা অবেলায় প্রাণের আশা
ভোলা মনের স্রোতে ভাসা ....
কোথায় জানি ধায় সে বাণী দিনের শেষে
কোন ঘাটে যে ঠেকে এসে চিরকালের কাঁদা-হাসা
ভোলা মনের,
ভোলা মনের স্রোতে ভাসা..."।

এই "নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে" কথাগুলোয় দুটো শর্ত আছে। প্রথম শর্ত, রাত হতে হবে নীরব, অর্থাৎ কোলাহলমুক্ত স্থান ও পরিবেশ। আর দ্বিতীয় শর্ত, আঁধার হতে হবে ’নিবিড়’ অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের গভীর রাত হতে হবে। এটা হতে পারে কোন নির্জন এলাকায়; যেমন পাহাড়ের কোলে, নদীতীরে, বৃক্ষতলে, জোনাক জ্বলা বাঁশবাগানে, গোরস্তানে কিংবা শ্মশানঘাটে, নদীবক্ষে জেগে ওঠা নির্জন চরে কোন ভূমিশ্রমিকের পর্ণকুটিরে, এমনকি নীরব আপনালয়ে। এ দুটো শর্ত পূরণ হলে মুহূর্তেই কোন শ্রোতা স্বপ্নদ্রষ্টা দার্শনিকে পরিণত হয়ে যেতে পারে। তখন একসময় গান থেমে যাবে, শ্রোতা ছবি দেখতে দেখতে স্বপ্ন দেখা শুরু করবে। অবশ্য ভোরের আলোয় সে স্বপ্ন মিলিয়েও যাবে! আর সেটা মিলিয়ে যাবার পর সে আপন মনে ভাবতে থাকবে... "আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাই নে তোমারে"! এই স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্ন মিলিয়ে যাওয়ার খেলা নিয়েই মানুষের ’গানের ভেলায় বেলা অবেলায় .....ভোলা মনের স্রোতে ভাসা’। মানুষ জানে না, ’কোন ঘাটে যে ঠেকে এসে চিরকালের কাঁদা-হাসা, (এই) ভোলা মনের স্রোতে ভাসা’...! তখন সে আত্মস্থ হতে চায় এই ভেবে যে, "তোমার সাথে গানের খেলা দূরের খেলা যে, বেদনাতে বাঁশি বাজায় সকল বেলা যে। কবে নিয়ে আমার বাঁশি বাজাবে গো আপনি আসি, আনন্দময় নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে"!


ঢাকা
২৬ মার্চ ২০২৪
শব্দ সংখ্যাঃ ৪৮৭


মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

মিরোরডডল বলেছেন:




এটা হতে পারে কোন নির্জন এলাকায়; যেমন পাহাড়ের কোলে, নদীতীরে, বৃক্ষতলে, বাঁশবাগানে, গোরস্তানে কিংবা শ্মশানঘাটে, নদীবক্ষে জেগে ওঠা নির্জন চরে কোন ভূমিশ্রমিকের পর্ণকুটিরে, এমনকি নীরব আপনালয়ে।

সবই ঠিক ছিলো কিন্তু গোরস্তানে কিংবা শ্মশানঘাটে :(

২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২০

খায়রুল আহসান বলেছেন: :) :) :)
আঁধারের প্রকৃত রূপ অবলোকন ও অনুভবের জন্য মধ্যরাতের গোরস্তান কিংবা শ্মশানঘাটও কিন্তু বেশ সহায়ক একটি জায়গা। অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও একবার গিয়ে দেখতে পারেন। আধুনিক শহরের cemetery গুলোতে অবশ্য নিরাপত্তার কারণে হয়তো মধ্যরাতে আপনাকে সেখানে যেতে দিবে না, আর সেগুলো অন্ধকারও নয়, সারারাত ধরে আলোকজ্জ্বল থাকে। তবে নীরব রাতের নিবিড় আঁধারের প্রকৃত রূপ দেখতে পাবেন বাংলার গ্রামগঞ্জের গোরস্তানগুলোতে।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:২৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: এমন সুযোগ খুজে পাওয়া দুষ্কর বিশেষ করে জীবন যখন ব্যস্ত ভীষণ ‌‌।

২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: জীবন ভীষণ ব্যস্ত ঠিকই; কিন্তু তার ভেতর থেকেও এক রত্তি সময় বের করে আনতে পারলে মন্দ হয় না। অনেক সময় প্রাকৃ্তিক নিয়মেও কারো কারো নিকট সে সুযোগ উপস্থিত হয়ে যায়।

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: আসলে রবীন্দ্রনাথের তুলনা হয় না। সুখে দুঃখে আমাদের বারবার রবীন্দ্রনাথের কাছেই যেতে হবে।

২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:০৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: দুঃখ-কষ্ট না পেলে মানুষের আত্মশুদ্ধি হয় না, মানুষ জীবন দর্শন নিয়ে ভাবার সময় সুযোগ পায় না। জমিদারবাবু হলেও, রবীন্দ্রনাথের জীবনে মোটা দাগের বেশ কিছু দুঃখ-কষ্ট ছিল। তাই তিনি মানুষ নিয়ে ভেবেছেন, প্রকৃতি নিয়ে ভেবেছেন, প্রার্থনা নিয়ে ভেবেছেন। এই ভাবনাগুলো তাকে জীবন দর্শনের সন্ধান দিয়েছে। তাই তিনি জীবন দর্শন মূলক অনেক কালজয়ী কবিতা, গল্প, গান ও নৃত্যনাট্য লিখে যেতে পেরেছেন।

৪| ২৬ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৭

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: পোস্ট ভালো লাগলো।

২৯ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:১২

খায়রুল আহসান বলেছেন: পোস্ট এর প্রশংসা ও প্লাসের জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানবেন।

৫| ২৬ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:১৯

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের বিশ্লেষন ভালো লেগেছে। এমন করে করে রবিঠাকুরের প্রতিটি গান নিজের ভেতরে অনুভব করা যায়। আমি তো রবিঠাকুরের গান আমার জীবনের প্রতি মুহুর্তে অনুভব করি। আগে এটা আরও বেশি ছিলো। এখন কিছুটা কমেছে যদিও।

৩০ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার মত একজন রবীন্দ্রসঙ্গীত ভক্ত শ্রোতা ও গায়িকার কাছ থেকে এ ভালো লাগার কথাটা জেনে আমারও অনেক ভালো লেগেছে।
এমন করে করে রবিঠাকুরের প্রতিটি গান নিজের ভেতরে অনুভব করা যায় - সম্পূর্ণ একমত। আপনার অনেক পোস্ট পড়ে আপনার এ ভাবনার পরিচয় আমি এর আগেও পেয়েছি।
মন্তব্য এবং 'লাইক' এর জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানবেন।

৬| ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:০২

ইসিয়াক বলেছেন: গান বরাবরই আমার অনুভবে। জীবন চলার পথ কোনদিনই মসৃণ ছিল না।টাকা পয়সা আমাকে আকর্ষণ করে না। আমার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বই আর গান কখনও কখনও পুরানো দিনের ছবি। কবিগুরুর গান আমি প্রায় শুনি। মনে দারুণ প্রশান্তি আনে।দুঃখ ক্লেশ যাতনাকে প্রশমিত করে। একসময় গানও গাইতাম। রবীন্দ্র সংগীত শিখতাম আর কি।নানাবিধ ব্যস্ততায় ছেড়ে দিয়েছি।
রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করা সহজ কথা নয়।আপনার বিশ্লেষণটি যুক্তিযুক্ত।আপনার অভিজ্ঞতার ব্যপ্তি বিশাল।সম্প্রতি আপনার সম্পর্কে আপনার বই "Wandering Thoughts" থেকে জেনেছি। আপনার কবিতাগুলো পড়ছি।অনুভব করার চেষ্টা করছি।
ভালো থাকুন সবসময়।

৩০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:২৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: নিজের সম্বন্ধে আপনি উপরে যে কথাগুলো বললেন, তা কেমন করে যেন আমি আগে থেকেই জানি। আপনার লেখা পোস্ট, মন্তব্য, প্রতিমন্তব্য ইত্যাদি পড়ে আমার মনে আপনার যে প্রোফাইল গড়ে উঠেছে, সেখানে এসব কথাগুলোর প্রতিফলন রয়েছে।

আমার সম্বন্ধে যে কথাগুলো বলেছেন, তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার "Wandering Thoughts" বইটি সংগ্রহ করে আপনি পড়া শুরু করেছেন জেনে বাধিত বোধ করছি।

মন্তব্য এবং 'লাইক' এর জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

৭| ৩১ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৮:৪২

শ্রাবণধারা বলেছেন: খায়রুল আহসান ভাই, আশা করি ভালো আছেন!

আপনার পোস্টের শুরুর দিকের বক্তব্যটা বেশ ভালো লাগলো। একদম শেষে এসে যেখানে আপনি গানটির শেষ তিনটি লাইনের ব্যাখ্যা করেছেন, এটা যে পুরো বুঝতে পারলাম তা নয়, তারপরও পুরো লেখাটা মিলে বেশ লাগলো।

আপনার যেহেতু এই গানটা ভালো লেগেছে তাহলে নিচের এই গানটাও হয়তো আপনার ভালো লাগবে: (দুটি গান কিছু আলাদা হলেও imagery গুলোতে মিল আছে)

দূরদেশী সেই রাখাল ছেলে
আমার বাটে বটের ছায়ায় সারা বেলা গেল খেলে॥
গাইল কী গান সেই তা জানে, সুর বাজে তার আমার প্রাণে--
বলো দেখি তোমরা কি তার কথার কিছু আভাস পেলে॥

আমি তারে শুধাই যবে 'কী তোমারে দিব আনি'--
সে শুধু কয়, 'আর কিছু নয়, তোমার গলার মালাখানি।'
দিই যদি তো কী দাম দেবে যায় বেলা সেই ভাব্‌না ভেবে--
ফিরে এসে দেখি ধুলায় বাঁশিটি তার গেছে ফেলে॥

৩১ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: হ্যাঁ, ঠিকই; দুটি গান কিছুটা আলাদা হলেও imagery গুলোতে মিল আছে।
গানটি শুনে শ্রোতার মাথায় বহুমুখি অনেক ভাবনার উদয় হতে পারে, চোখে নানান দৃশ্য ভেসে উঠতে পারে।

৮| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭

এম ডি মুসা বলেছেন: গান জীবনের কথা বলতে আগে, এখন লাভের কথা বলে

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১

খায়রুল আহসান বলেছেন: যে গানে জীবনের কথা নেই, সে গান শ্রোতা পায় না।

৯| ০৬ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:১৫

বলেছেন: আপনার লেখা আমাকে সবসময় টানে।।

০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেকদিন পরে এলেন আমার কোন পোস্টে। আশাকরি ভালো আছেন সপরিবারে, সুস্বাস্থ্যে।
এমন উদার মনোভাব প্রকাশক একটি মন্তব্যের জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.