নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

হত্যাকাণ্ড বন্ধে কেন ম্যাজিক জানা জরুরি ?

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৪


জাতি হিসাবে আমরা বড়োই অভাগা। ইতিহাসের মঞ্চে রাজা বদল হয়, কিন্তু চিত্রনাট্য বদল হয় না। এক রাজা যায়, আরেক রাজা আসে; কিন্তু পর্দার পেছনের কলকাঠি নাড়া সেই একই হাত। আর এই মঞ্চের সবচেয়ে সস্তা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটি হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যেখানে প্রতিটি নতুন সরকার একজন করে নতুন অভিনেতা বসিয়ে দেয়—যেন এক পুরনো নাটকের নতুন হাস্যকর সংযোজন। গত বছর কোটা আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে, আর আমাদের কপালে জুটেছেন একজন 'ভালো মানুষ' উপদেষ্টা, জাহাঙ্গীর স্যার। জনগণের চোখে এই 'অতিশয় ভালো মানুষ'টি এই মুহূর্তে একটি ভারী, নিষ্ক্রিয় বোঝা ছাড়া আর কিছু নন।

তবে জাহাঙ্গীর স্যারকে এককভাবে দোষ দেওয়া ভুল। তিনি সফলভাবে সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরম্পরা ধরে রেখেছেন, যেখানে দক্ষতা নয়, বরং আনুগত্য ও কোটা-ভিত্তিতে নিয়োগের রেওয়াজ চলে আসছে। ২০০১ সালের পর মঞ্চে আসেন লুৎফুজ্জামান বাবর। তার আমলে সংখ্যালঘু নির্যাতন আর ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যেন এক নতুন ওয়েস্টার্ন মুভির জন্ম দিল। সে সময় এই মন্ত্রণালয়টি পরিণত হয়েছিল ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি টর্চার চেম্বারে।

তারপর এলো ২০০৮ সালের পরিবর্তন। মঞ্চে এলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। ইতিহাসের পাতা সাক্ষী: বিডিআর হত্যাকাণ্ড, বিশ্বজিৎ হত্যা, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড—প্রতিটি ঘটনায় দেশবাসী কেবল স্তব্ধ হয়ে দেখল, আর মন্ত্রী বললেন, "তদন্ত চলছে।" এই তদন্ত যেন এক অন্ধকার গলি, যার শেষ কোথায় কেউ জানে না। পিলখানার রক্ত শুকায়নি, কিন্তু 'তদন্ত চলছে' যেন সেই সময়ে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার একমাত্র স্লোগান হয়ে দাঁড়াল।

সাহারা খাতুনের পর দায়িত্ব নিলেন সাবেক আমলা মখা আলমগীর। তিনি চ্যালেঞ্জ নিলেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় জামাত-শিবিরের তাণ্ডব, ব্লগারদের উপর হামলা, সবমিলিয়ে এক গোজামিল অবস্থা। এরপর যখন রানা প্লাজা ভেঙে পড়ল, তখন তিনি বলে বসলেন, এটি নাকি বিএনপি-জামাতের কর্মীদের ধাক্কায় ভেঙে গেছে ! সেই মন্তব্য ছিল আমাদের জাতীয় ট্র্যাজেডির উপর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিদ্রূপ। জনগণ বুঝলো, এই মঞ্চে সত্যের চেয়ে হাস্যকর স্ক্রিপ্টই বেশি কার্যকর।

এরপর আসাদুজ্জামান খান কামাল এলেন, এবং ব্যর্থতার সেই ঐতিহ্য বজায় রাখলেন পূর্ণ দমে। তাঁর শাসনামলে পুলিশ পুরোপুরি মস্তানে পরিণত হলো: চাঁদাবাজি, যাকে ইচ্ছা তাকে ফাঁসিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, গুম-খুন, টার্গেট কিলিং যেন আইনশৃঙ্খলার নতুন সংজ্ঞা হলো। ফেনী নুসরাত হত্যা, একরাম হত্যা, হলি আর্টিজানের মতো ঘটনাগুলো প্রমাণ করল, জঙ্গি দমনের নামে পশ্চিমের প্রশংসা কুড়ালেও দেশের ভেতরের নিরাপত্তা ছিল কাগজের দুর্গ। কামাল সাহেব যেন ছিলেন শুধু একটি সাইনবোর্ড মন্ত্রী , যার সব ক্ষমতা ছিল পর্দার পেছনের কারো হাতে।

আর এখন, সেই একই অমোঘ নিয়মে আমাদের সামনে হাজির হয়েছেন উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর স্যার। গত এগারো মাসে গড়ে ১৫ জন খুন, কেবল গাইবান্ধায় এক বছরে দেড়শো ধর্ষন, দিনে দুপুরে বিচারালয়য়ের সামনে খুন, শীর্ষ সন্ত্রাসী সব জামিনে মুক্ত এবং টারগেট কিলিং এর ছড়াছড়ি। মব করে হত্যা এখন খুবই সাধারণ ঘটনা । সামান্য টাকা নিয়ে দ্বন্ধ হতে শুরু করে কোন কারণ ছাড়াই সংঘাতে মানুষ মরছে। কেবল গত দুই দিনের ঘটনা দেখুন: রংপুরে এক মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করা হলো, রাজবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত কবরস্থানে আগুন লাগানো হলো, আর ঢাকার মতো জায়গায় মা-মেয়েকে হত্যা করে পালিয়ে গেল গৃহকর্মী। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, রংপুরে নিহত মুক্তিযোদ্ধার এক ছেলে র‍্যাবে এবং অন্যজন পুলিশে চাকরি করেন। যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পরিবারই নিরাপদ নয়, তখন আম-জনতা কার কাছে নিরাপত্তা চাইবে? এর মধ্যে জাহাঙ্গীর স্যার বললেন, "আমার কাছে কোনো ম্যাজিক নেই।"

তাঁর এই মন্তব্য কেবল একজন উপদেষ্টার অসহায়ত্ব নয়, বরং এই মন্ত্রণালয়ের বিগত দুই দশকের চরম ব্যর্থতার চূড়ান্ত স্বীকারোক্তি। কিন্তু মন্ত্রণালয় সম্ভবত জিন চালান দেওয়া হুজুর কিংবা মগ-বৈদ্যে বেশি বিশ্বাসী, কারণ জনগণের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সদিচ্ছা ও দূরদর্শিতা তাদের কাছে আজও অধরা।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৩

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: জুলাই শেখ হাসিনার নেংটি ইঁদুরের মত পালানো ছাড়া আর কি দিয়েছে বলেন তো?? মাঝে কতগুলো মা সন্তানহারা হলো।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: শেখ হাসিনা থাকলেও লাভ ছিলো না। নতুন ভাবে লুটপাটের কৌশল বের করেছিলেন।

২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ২:৩৩

ক্লোন রাফা বলেছেন: বর্তমান রাজাকারের শাসনের রিহার্সাল চলছে মাত্র। পরবর্তি সরকারের ব্যার্থতা লিপিবদ্ধ করার জন্য প্রস্তুতি নিন।এই প্রজন্ম এর চাইতে ভালো ডিজার্ভ করেনা। কার্জাইরা কারো কাছে দায়বদ্ধ হয়না। দেশ জাহান্নামে যাক , তার প্রভুরা খুশি থাকলেই হলো।
এনজয় স্বাধীনতা ২.০।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সব দোষ শেখ হাসিনার।

৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:৪৬

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: এগুলো পতিত শেখের পয়দা করা আবর্জনাদের কাজ যাতে দেশে এটা প্রতিষ্ঠা করা যায় যে দেশে মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আগে বুঝতে হবে মৌলবাদ কাকে বলে! শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য মৌলবাদ কে ব্যবহার করেছে। তবে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কিন্তু এই সরকারের আমলে জামিন পেয়েছে।

৪| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:৫৩

কামাল১৮ বলেছেন: আমি গর্ভিত যে জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে পেরেছি।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ব্লগে আপনাকে আমরা পেয়ে উচ্ছ্বসিত।

৫| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:০৩

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: এগুলো পরিস্কার কারা করছে; আম্লিগ ছাড়া কেউ করবেনা।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১০

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আওয়ামী লীগ করতেই পারে কিন্তু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেরুদণ্ডহীন।

৬| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৩

কিরকুট বলেছেন: জাতি হিসাবে আমরা অসভ্য ও দুরাচার ।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সঠিক কথা বলেছেন।

৭| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১৫

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি যেখানে; সমস্ত দোষ নন্দঘোষের উপরে চাপিয়ে দায়া এড়ানো হয়।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এই ব্ল্রেইম গেইম খেলা হয়।

৮| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: জাতির প্রথম অধপতন হয়েছে ১৯৭৫ সালের আগষ্ট মাস থেকে, শেখ মুজিবের হত্যার মধ্য দিয়ে।
দ্বিতীয় পতন হয়েছে ২০২৪ এর জুলাইতে, শেখ হাসিনা চলে যাওয়াতে।

জাতি আজ অসহায়, নিম্মজিত।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: শেখ হাসিনা এবং লীগের এমন নির্লজ্জ দালালী ব্যানগাজী ও করেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.