নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘স্কুইড গেম’-এ মেতেছে বিশ্ব, বাতিলের খাতা যার ১০ বছর!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৪




স্কুইড গেম (SQUID GAME) –এর আন্টি ক্যাপিটালিস্ট কাহিনী কি আমাদের বর্তমান সমাজের প্রতিবিম্ব নয় তো? না কি এটাই আমাদের সমাজ!


স্কুইড গেম (SQUID GAME) সিরিজ ও প্যারাসাইট (Parasite) মুভি

নিঃসন্দেহে স্কুইড গেম (SQUID GAME) সিরিজটি ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ও অস্কার জয়ী সাউথ কোরিয়ান সিনেমা “প্যারাসাইট (Parasite)” এর কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু স্কুইড গেমের (SQUID GAME) এই সিরিজে ক্লাস বিভাজনের বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কাহিনীর প্রথম খেলা দাদাক-চি তে গং ইয়ং(ট্রেইন টু বুসান মুভির অভিনেতা) খুব গুরুতর একটি প্রশ্ন জিগ্যেসা করেন যে, তুমি টাকার জন্য কতদূর পর্যন্ত যেতে পারবে? এই সমাজে বারবার ধাক্কা খাবার চেয়ে নিজেকেই কি বেচতে পারবে?

আর একবার যদি এই খেলা শুরু করে দাও তবে কি তুমি আর নিজেকে রুখতে পারবে? আর এই খেলার শেষে এতকিছু করার পর যখন জিতেও যাবে তখন এই খেলাটাই আর কি কোন বিষয় রাখবে? ঠিক এমনটাই আমাদের সম-সাময়িক পুঁজিবাদী সমাজ। এখানে নাইন টু ফোর পি.এম জব আমাদের কাছে দিনদিন বেশি মূল্যায়ন করা হচ্ছে। যাদের এই চাকুরী আছে তাদের আছে ভবিষ্যৎ। আর যাদের নেই, তাদের কিছুই নেই। এই ইঁদুর দৌড়ে আমরা সবাই (নাইন টু ফোর জব) শুধু ছুটেই চলেছি। টাকার আশায়, পদোন্নতির আশায়, ক্ষমতার আশায়।

কিন্তু দিনশেষে অদৌ কিছু মাইনে রাখে? যে টাকা যখন দরকার ঠিক তখন তো মিলছেই না। আর যখন মিলছে তখন কোথায় ব্যবহার করবো জানা নেই। কোরিয়ান মুভি ও সিরিজে এরকম কিছু কাজ করা হয়েছে ইতোমধ্যেই। কিন্তু এভাবে ঘোমটা খোলা অবস্থায় “স্কুইড গেম (SQUID GAME)” সিরিজটিই প্রথম বলে আমার মনে হয়।


স্কুইড গেম (SQUID GAME) খেলার মজা কোথায়?

আমরা বিভিন্ন হলিউড মুভি বা সিরিজে দেখেছি বিশেষ করে “The Hunger Games”, “Escape Room” যেখানে ফাঁদে পড়লে আর বের হবার উপায় নেই। কিন্তু এখানে দেখানো হচ্ছে, গণতন্ত্র। মানে যদি এই খেলায় অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ খেলোয়াড় “না” ভোট দেয় তবে খেলা বন্ধ হয়ে যাবে সেখানেই। তারপর সবাইকে মুক্ত করে দেওয়া হবে। কাউকে কোনোভাবে প্ররোচিত করা হবে না। একেবারে সুষ্ঠ গণতন্ত্র। এমনকি বাংলাদেশ ও ভারতের চেয়েও ভালো গণতন্ত্র।

এখন যে সমাজ নিজেই ফাঁদে পড়ে আছে পুঁজিপতিদের হাতে সে সমাজে নতুন করে ফাঁদ পাতার আর দরকারও পড়ছে না। টাকা যখন মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে চলে যায়। তখন সমাজে একরকম মেরুকরণ হতে বাধ্য।

ইসলামের ইতিহাসে অন্ধকার যুগেও এমনটি খেয়াল করা যায়। আর তারপর নবী(সাঃ) যাকাতের ব্যবস্থা করেন। এতে করে সমাজে পুনরায় স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছিলো। তবে কি ইসলামও কিছুটা সমাজতান্ত্রিক না কি? এর উত্তর আমার জানা নেই।


পুঁজিবাদী সত্ত্বাকে একটি মেটাফরিক দৃষ্টিতে দেখানো হয়েছে কি?

নিশ্চয়! যারা স্কুইড গেম (SQUID GAME) দেখেছেন তাদেরকে এই বিষয়টি বোধহয় নতুন করে বুঝানোর কোন প্রয়োজন নেই। তারপরেও কিছু কথা বলতে হয়।


১. শ্রমিক (Worker)


সত্যি বলতে এই কাহিনী দাঁড় করানোই সম্ভব হত না যদি টাকা-পয়সার বিষয়টি না থাকতো। একটি গ্রুপ দেখা যায় যারা বিভিন্ন কাজে তাদের সময় ব্যয় করছেন। সে সমস্ত ব্যক্তিরা জীবনের অনেক সময় ও শ্রম নির্দিষ্ট কোন কাজে স্রেফ এবং স্রেফ টাকার জন্য ব্যয় করেছেন এবং ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি তারা তাদের নায্য দাবীর জন্য স্ট্রাইকও করেছেন কিন্তু তাদেরকে খুব বাজে ভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেজান জুসের ফ্যাক্টরির কথা মনে আছে? বা ধরুন, রানা প্লাজার অগ্নিকাণ্ড?

কিন্তু বাংলাদেশের গল্প আলাদা। সাউথ কোরিয়ার কাছে এন্টি-লেবার বিষয়টির রেপ্যুটেশন আছে। এখানে আপনি ইউনিয়ন ভিত্তিক কাজ করতে পারবেন তবে শর্ত সাপেক্ষে। তো একটি ইউনিয়ন বানানো এবং সেটা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে এখানে মুসিবত লক্ষ্য করা যায়। আপনার ইউনিয়নে সব শ্রমিক আসতে পারবেন না। কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক আসবে তাও কিছু নিয়ম মেনে।


২. শাসক শ্রেণী (Ruling Class)

এই খেলায় ভি.আই.পি নামক কিছু ব্যক্তিদের আগমন ঘটে। যেমন, ঘোড়ার সাথে ঘোড়ার রেস বেশ ব্যয়বহুল একটি জুয়া। ঠিক তেমনি এই ভি.আই.পি’রা মানুষের সাথে মানুষের যে রেস সেটা জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে দেখতে থাকে। পার্থক্য ঘোড়ার বদলে মানুষ। খেলার শেষে এটার কিছু অর্থ পাওয়া যায়। এই ভি.আই.পি বা বিশেষ ব্যক্তিবর্গ তাদের জীবনে তারা কোনো কিছুতেই আর মজা খুঁজে পাচ্ছে না। তাই এমন একটি খেলা আবিষ্কার করে যেখানে মানুষের হত্যাযজ্ঞ দেখতে পায়, টাকার জন্য লালায়িত মানুষদের মৃত্যু দেখতে পায় আর এর মাধ্যমেই তারা জীবনে মজা খুঁজে পায়।

এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষনীয়, অধিক ধনী ব্যক্তি এবং অধিক দরিদ্র ব্যক্তির মধ্যে কোথাও একটি সমান্তরাল রেখা আছে। এই দুই ব্যক্তি জীবনে কোন মজা খুঁজে পায় না। কিছু পার্থক্য তো আছে। মধ্যবিত্ত একজন যেমন ঋণের মধ্যে ডুবে আছে অথবা লোন পরিশোধ করতে পারছে না তাকে যদি বলা হয়, “ভাই একটা খারাপ কাজ করো তাহলে আমি সেই টাকা তোমাকে দেবো।”

ফলে এখানে ভালো থাকার চ্যান্স অনেক কমে যায়। মানুষ বাধ্য হয় ওই একটি খারাপ কাজ করতে পারে। এখন যদি টাকা থাকে তাহলে আপনাকে কষ্ট করে ঋত্বিক রোশান/ক্যাটরিনা কাইফ হবার প্রয়োজন কোথায়? আপনার মত করে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারবেন, তাও না পারলে কিনে নিতে পারবেন তা যা কিছু আপনার মর্জি, আপনার সেক্স লাইফ দুর্দান্ত কাটবে। পয়সা থাকলে কিনা সম্ভব! জি হুং কেও ব্যাংকার বলেন, “এত টাকা ব্যাংকে জমা রেখে কি করবেন? ইনভেস্ট করলে ভালো ইন্টারেস্ট মিলবে।”

এই খেলার মধ্যে এত ইন্টারেস্টিং বিষয় আছে যা শেষ করা যাবে না হয়তো, দেখবেন খেলার মধ্যে মানুষদেরকে মারামারির জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, খাবার ইচ্ছে করেই কম দেওয়া হচ্ছে মানে প্রতিযোগীতা বাড়াতে, নির্দিষ্ট সময়ে লাইট অফ করে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে এমনকি সেক্স অফার করছে শুধু টিকে থাকার জন্য। আর খাবার টেবিলে ইচ্ছে করেই চাকু ছেড়ে যাওয়া যাতে তাদের মনে পুনরায় লড়াকু মনোভাব আসে। এছাড়া ওয়ার্কার ভার্সাস ওয়ার্কার একটি ইউনিউয়ন গঠন করে একে অপরের সাথে লড়ছে। অবশ্য তারা এটাও জানে যে, এতে করেও টাকাটা মিলবে না।

ফলে তারা এক ইউনিয়ন অন্য ইউনিয়ন কে তো শেষ করে দিচ্ছে এতে করে আরো ঝামেলা বাড়ছে। শ্রমিক ইউনিয়ন কমজোর হচ্ছে। সুতরাং তাদের পক্ষে সিস্টেমের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলার সুযোগ কোথায়? বরঞ্চ সারভাইভ করাটাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।


৩. ম্যানেজার (Manager)

এই খেলার হোস্ট কে পছন্দ না করে উপায় নেই। এখানকার ম্যানেজারদের দাবী এদের খেলার মধ্যে কোন ধরণের দুর্নীতি নেই। সবার জন্য সমান অধিকার। কিন্তু তবুও এখানে দেখা যায় তারা মানবদেহের বিভিন্ন অর্গান বিক্রি করছে, শেষের দিকে লাইট বন্ধ করে দিচ্ছে। তো, এরা যদি দুর্নীতিবাজ না হয়! তবে কারা? মানে এত সুক্ষ্ম তরিকা খাটিয়েও দুর্নীতি আটকানো গেল না।

তবে এই দুর্নীতি নিয়ে ফ্রন্টম্যানের কোন মাথ্যাব্যাথা নেই। কারণ এই গেম দেখে যারা ভি.আই.পি আছেন তাদের মন যেন জয় হয় এটাই তার লক্ষ্য। এতে কারে ভালো টাকাও ইনকাম হচ্ছে। মানে গণতন্ত্রের মধ্যে পুঁজিবাদ। আবার এও দেখা যায় এই ম্যানেজারদের মধ্যেও ভাগ আছে। আমি মোটমাট ৩টি ভাগ লক্ষ্য করেছি।


স্কুইড গেম (SQUID GAME) এবং কর্পোরেট দুনিয়া

বিষয় হলো, বাংলাদেশ হোক বা সাউথ কোরিয়া! সমস্যা নেই কোথায়? কর্পোরেট দুনিয়া সব জায়গায় সমস্যা বেঁধেই রেখেছে। প্রথম খেলা “রেড লাইট, গ্রীন লাইট” এর হত্যাযজ্ঞ দেখে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়।

এই নির্বাচন একটা ভ্রম তৈরি করতে বাধ্য। যেখানে সমস্ত লোক গেছে তাদের ঋণ চুকানোর টাকা পেতে। তারা এই খেলা বন্ধ করবে কীভাবে? তারপরেও জিতে যায় এবং সবাই মনে করে আমরা তো আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী এখানে এসেছিলাম। আমরা তো কারো দাস নই! আর এটাই হচ্ছে মর্ডান পৃথিবীর দাসত্ব। হ্যাঁ, নাইন টু ফোর পি.এম জব।

কিন্তু এর ঠিকপরেই বাস্তবতার সাথে আবার ধাক্কা খেয়ে অনেকে এই খেলায় ফিরে আসে। মূলত আমরা যে স্বাধীন, তা নির্বাচনের মাধ্যমে জাস্টিফাই করা গেল। আর আমরা যে পরাধীন বা দাস তা যেন আবার পরিষ্কার হলো আমাদের ফিরে আসার মাধ্যমে। মাঝখানে থাকলো একটা ইল্যুশন বা ভ্রম মাত্র। মানে আমাদেরকে ভাবানো যে, আপনি স্বাধীন এবং মুক্ত।


এছাড়াও আপনি আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন: https://backspace-journal.com

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫২

কুশন বলেছেন: সিরিজটা দেখেছি। ভয়াবহ।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৯

মি. বিকেল বলেছেন: হ্যাঁ, বেশ ভয়াবহ।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: সিরিজটা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
তবে বেশ কিছু ত্রুটি রয়ে পুরো সিজির জুড়ে।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৪০

মি. বিকেল বলেছেন: সেটা সব জায়গায় থাকে। নিখুঁত কিছুই নয়। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.