নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পেগাসাস স্পাইওয়্যার, রক্ষা পেল না আইফোন পর্যন্ত!

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:০৪




অনলাইন বা ভার্চুয়াল পৃথিবী দিন দিন আমাদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যাচ্ছে। কাজে বা অকাজে এই অনলাইনের কিন্তু জুড়ি মেলা ভার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে আমরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে তো সক্ষম হচ্ছি অন্যদিকে একটি ফাঁদেও পড়ে যাচ্ছি।

কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সরবরাহ করা ব্যক্তিগত তথ্য হয়ে যাচ্ছে ফাঁস। আর এই সব ফাঁস হওয়া তথ্য নিয়ে কেউ কেউ ব্লাকমেইলের শিকার হচ্ছেন আবার কেউ কেউ ইজ্জতও হারিয়ে ফেলছেন। যার কারণে আত্মহত্যাও হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। যদিও বাংলাদেশে বর্তমানে সাইবার ক্রাইমের জন্য আইন আছে।


পেগাসাস স্পাইওয়্যার (Pegasus Spyware) কি?

আধুনিক যুগে Pegasus Spyware হলো একটি ভয়ায়ক ভাইরাসের নাম। খুব সম্ভবত এযাবৎ আবিষ্কৃত হওয়া সবচেয়ে পাওয়ারফুল ভাইরাস এটি। দুঃখজনক হলেও সত্যি এই স্পাইওয়্যার তৈরি করেছে ইজরায়েলের একটি প্রাইভেট কোম্পানি। যদি একবার আপনার ফোনে এই ভাইরাস প্রবেশ করে তবে এর থেকে আপনার কোনোভাবেই আর মুক্তি নেই।

চব্বিশ ঘন্টা আপনার সমস্ত কার্যক্রম আপনার পছন্দের স্মার্টফোন দিয়ে আপনাকেই স্পাই করা সম্ভব। এমনকি আপনার ফোন বন্ধ তবুও এই স্পাইওয়্যারের মধ্যে দিয়ে ফোনের ক্যামেরা সক্রিয় করা সম্ভব। এমনকি আপনি কি বলছেন সেটাও সরাসরি শোনা সম্ভব। আরো ভয়ানক বিষয় হচ্ছে, আপনাকে টেরোরিস্ট হওয়া জরুরী নয়, এই স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে টেরোরিস্টের গোপন নথিপত্র হ্যাকাররা আপনার ফোনে প্রবেশ করাতে পারেন সেটা হতে পারে ই-মেইলের মাধ্যমে বা আস্ত একটা ডকুমেন্ট। আর ঐ সব নথিপত্র দ্বারা খুব সহজেই প্রমাণ করা সম্ভব হতে পারে আপনি একজন টেরোরিস্ট।

এই প্রাইভেট কোম্পানি “এন.এস.ও (NSO)” ইজরায়েলের সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। প্রথম ২০১৬ সালে একটি গবেষণায় পেগাসাস এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে কিছু অদ্ভুত লিংকের মাধ্যমে ফোনে কিছু ই-মেইল ও এস.এম.এস খুঁজে পাওয়া যায়। বর্তমানে এর অস্তিত্ব বিশ্বের সামনে ঘোমটা খোলা অবস্থায় আসায় ব্যাপারটি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। কারণ এখন আর লিংকেরও নাকি প্রয়োজন হচ্ছে না! টার্গেট বা ভিকটিমের কিচ্ছু করার দরকার নেই, হ্যাকাররা যদি চায় তাহলে আপনি ফাঁদে পড়তে বাধ্য।


দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার দেওয়া তথ্য ও পেগাসাসের ভয়াবহতা

দেখুন, অপরাধ না করেও শাস্তি পাওয়া কোন সচেতন ব্যক্তির ইচ্ছের মধ্যে নিশ্চয় পড়বে না। ২০১৬ সালের পর পেগাসাস এত বেশি শক্তিশালী হয়েছে যা আইফোনের কঠিন সিকিউরিটি ব্যবস্থাকেও বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছে। ২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ পেগাসাসের দ্বারা কব্জায় পড়া ১,৪০০টি ফোনের কথা উল্লেখ করে। হোয়াটসঅ্যাপের এই সমস্ত ডিভাইস হোয়াইট লিস্ট বা পেগাসাসের টার্গেট ছিলো। একটা সাধারণ ফোন কল আপনার ফোনে আসতে পারে তারপর আপনি সেই ফোনকল আপনি রিসিভ করুন বা না করুন কিচ্ছু আসে যায় না, পেগাসাস আপনার ফোনে বাসা বেঁধেছে।

ফোন কোম্পানি যখন প্রশ্নের মুখে পড়লো বিশেষ করে আইফোন (অ্যাপল কোম্পানি) তখন তাদের ভাষ্য হচ্ছে তারা এখনো কিছুই বুঝতে পারছে না কীভাবে হ্যাকাররা পেগাসাস স্পাইওয়্যার তাদের ফোনে কাজ করছে। ব্যাকডোর থেকে আসা এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে আইফোন একের পর এক আপডেট নিয়ে আসছে বাজারে কিন্তু এখন অবধি এর সুরাহা মেলেনি। আর যদি অ্যান্ড্রয়েড ফোন হয় তাহলে আপনি নিশ্চিতে ঘুমাতে পারেন কারণ আইফোন যেখানে বেকুব বনে যাচ্ছে সেখানে অ্যান্ড্রয়েডের সুরক্ষা চাওয়া বোকামি নয় তো কি!


পেগাসাস (Pegasus) ও গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন!

গণতন্ত্রে যেমন স্বচ্ছতা প্রয়োজন ঠিক তেমনি প্লুরালিটির জন্য প্রাইভেসির প্রয়োজন আছে। এডওয়ার্ড স্নোডেন এর কথা আপনার নিশ্চয় মনে আছে। পেগাসাস আমাদের চোখ খুলে দেয় যে, কীভাবে স্নোডেন অ্যামেরিকার নাগরিকদের প্রাইভেসি কেড়ে নেওয়া হচ্ছিলো তা একের পর এক ফাঁস করে দেন।

একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা (যাদের সাথে সম্পৃক্ত ১৭টি মিডিয়া সংস্থা) দাবী করেছেন, শুধুমাত্র ভারতে এই অবধি ৩০০টি ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যার খুঁজে পাওয়া গেছে। এমনকি জার্মান ভিত্তিক মিডিয়া ডি.ডব্লিউ বাংলা (DW বাংলা) এর দেওয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশেও পেগাসাসের অস্তিত্ব রয়েছে। গণতন্ত্রে যদি এমন নজরদারি বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির উপর করা হয় তাহলে খোদ “গণতন্ত্র” শব্দটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। এটা যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয় জর্জ অরওয়েলের দেওয়া বিখ্যাত উক্তি, “বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ।”


পেগাসাস (Pegasus) বনাম জর্জ অরওয়েলের বিখ্যাত বই ১৯৮৪

এটি একটি ডিস্টোপিয়ান বই। ধরা হয়, ডিস্টোপিয়ান ওয়ার্ল্ড নিয়ে প্রথম বই লিখেছিলেন রাশিয়ার একজন লেখন। উক্ত বইটির নাম ছিলো “We”। এখন ডিস্টোপিয়ান ওয়ার্ল্ড কী? ডিস্টোপিয়ান পৃথিবী সম্পর্কে সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয়, একটি ধ্বংসাত্বক পৃথিবী যেখানে সমস্ত খারাপ কর্মকান্ড কে রাষ্ট্র ভালো চোখে দেখে আর ভালো কর্মকান্ড কে খারাপ চোখে।

ঠিক তেমনি জর্জ অরওয়েলের বই “১৯৮৪” -তে দেখানো হয়েছে এমন একটি পৃথিবী। যেখানে ব্যক্তির কোন প্রাইভেসি নেই। রাষ্ট্র যেটা বলবে ব্যক্তি সেটা করবে। শুধু তাই নয় রাষ্ট্র ২৪ ঘন্টা তার নাগরিকদের প্রতি নজর রাখবে। এই গল্পের প্রথম দিকে পাওয়া এক ব্যক্তি ডায়েরি লুকিয়ে রাখছেন আর তাকে ডাকা হচ্ছিলো তাই স্ক্রিনের সামনে গিয়ে তাকে হাজিরা দিতে হচ্ছে। শুধু তাই নয় রাষ্ট্র ব্যক্তির মানসিক অবস্থার পর্যন্ত খেয়াল রাখবে। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ও কথা নজরে রাখবে।


পেগাসাস (Pegasus) এবং বর্তমান পৃথিবী

সত্যি বলতে জর্জ অরওয়েলের সময়ে যেটুকু এই ফাঁদ পাতা সম্ভব ছিলো এখন তা জ্যামিতিক হারে বেড়ে গেছে। ইন্টারনেটের দুনিয়া বিস্তার করার সাথে সাথে হাতে হাতে বাড়ছে স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার আধিক্য ও অত্যাচার। বাড়িতে বাড়িতে সামান্য টাকা হলেই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। কিন্তু পাবলিক প্লেসে যে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর আইন সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল কতটুকু? সত্যি বলতে দুঃখজনক! নিরাপত্তার দায় দিয়ে যেখানে সেখানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বাংলাদেশে বসানো হচ্ছে এবং নেই কোন সুনির্দিষ্ট আইন বা নীতিমালা। কিন্তু এতে করে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে ব্যক্তির গোপনীয়তা।

সুতরাং স্মার্টফোনে ৪৮ বা তারও বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ও অগণিত সিসিটিভি ক্যামেরা থাকার জন্য পেগাসাস স্পাইওয়্যার ও সিসিটিভি হ্যাকাররা খুব সহজেই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন। এটা তো, “১৯৮৪” এর বাপ রে ভাই! একজন সাধারণ মানুষ তিনি তার কাজে ব্যস্ত থাকেন এখন যদি তিনি তার কোন কথা, কাজে বা লেখায় সরকার বিরোধী কিছু বলেই বসেন তো তিনিও হতে পারেন পেগাসাসের পরবর্তী টার্গেট।


পেগাসাস (Pegasus) ও অ্যাপল কোম্পানি

অ্যাপল কোম্পানি পেগাসাসের এমন কর্মকান্ডে তাদের রেপ্যুটেশন বাঁচাতে এন.এস.ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু তার উত্তরে তারা কি পেলেন? কোন সুরাহা মিলেছে কি? আমাকে কেও জানাতে পারলে ভালো লাগতো। যে কোম্পানি সিকিউরিটির নাম দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন সে কোম্পানির গ্রাহক তো আশা করতেই পারেন যে, অ্যাপল বা অর্ধেক অ্যাপল আমাদের প্রাইভেসি রক্ষা করবে। তাদের বিজ্ঞাপন মডেল হচ্ছে, তারা গ্রাহকদের কথা ভেবে কাজ করেন, ব্যবসা নয়।

তো আজ কি হলো? কোথায় গেল আপনাদের মিথ্যে ওয়াদা? আজ আপনারা বিশ্বের কাছে নতুন কি বলবেন? আর আমরা সাধারণ মানুষ কেন কথা বলা বন্ধ করবো? যদি গ্রাহকদের প্রাইভেসি নিয়ে এতই চিন্তিত ঐ অর্ধেক অ্যাপল কোম্পানি হয় তবে তাদের আগে সিকিউরিটি ফিক্স করা উচিত। তারপর না হয় বাজারে আপনাদের ফোন ছাড়ুন।


পরিশেষ

আপনার ফোনে যদি এমন কোন ভাইরাস থাকে তাহলে স্মার্টফোনে ভাইরাস পরীক্ষা করার ল্যাবও আছে (বাংলাদেশে আছে কিনা ঠিক তথ্য নেই আমার কাছে) । আপনি ল্যাবেও পরীক্ষা করাতে পারেন এই প্রাইভেসি সংকট থেকে বাঁচতে।

কিন্তু আফসোস! এমন কোন সফটওয়্যার তৈরিও হয় আর কোন রাষ্ট্রের সরকার সেটা অনুমোদনও দিয়ে দেয়। সবাই এত চুপ কেন? কেউ কেন এই ব্যাপারে কথা বলতে ভয় পান? আজ এত কোলাহল শূন্য ও নীরব কেন আমাদের পৃথিবী? নাকি আমরা ন্যায়ের কথা বলতে ভুলে গেছি?

ধন্যবাদ


আপনি চাইলে আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন: https://backspace-journal.com

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার সাইট ভিজিট করলাম।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৯

মি. বিকেল বলেছেন: ওটা তো ব্যক্তি বিজ্ঞাপন। ব্লগটি কেমন লেগেছে?

২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৪৩

সোহানী বলেছেন: এইটা কি শুনাইলেন ভাইজান। এমনিতে অস্থির আছি এখন আরো বাড়ায়ে দিলেন।.........

আপনার সাইটি ভালো লেগেছে।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৫৪

মি. বিকেল বলেছেন: জি, এটাই সত্য। যারা ভালো জানেন তারা দেখুন মন্তব্যে নেই।

ধন্যবাদ আমার ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.