নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বায়োপলিটিক্স: আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ফুকোডিয়ান ব্যাখ্য (শেষ পর্ব)

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:১২



সংক্ষিপ্ত এই আলোচনার দ্বিতীয় বা শেষ পর্বে এসে অনুরোধ প্রথম পর্ব টি আগ্রহ নিয়ে পড়ার। এতে করে আপনার ‘বায়োপলিটিক্স’ সম্পর্কে জানতে বা বুঝতে অনেক সুবিধে হবে। উল্লেখ্য, ‘বায়োপলিটিক্স’ তুলনামূলক ইতিবাচক ‘পলিটিক্স’। ‘Power Practice’ এবং ‘Domination’ -এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন। কারণ, মানুষকে জোর করে কিছু কাজ করানো গেলেও দীর্ঘসময় তা ঠিকসই হতে নাও পারে কিন্তু ঝিঁ’কে মেরে বউকে বুঝানোর ব্যাপারটা কিছুটা হলে পূর্বের চেয়ে বেশি সময় টিকতে বাধ্য। কিন্তু ফুকো’র লেন্সে এটি অনেকটা ‘Loop’ এর মত। একবার যদি এই লেন্সে আপনার চারপাশটা দেখা শুরু করে দেন তাহলে হতে পারে আপনি নিজে থেকেও আরো অনেক নতুন নতুন কিছু আবিষ্কার করতে শুরু করেছেন। চলে যাচ্ছি মূল আলোচনায়…

আধুনিক রাষ্ট্র একজন মৃত মানুষকে নিয়ে খুব একটা সোচ্চার নয়, এমনকি একটি হত্যাকাণ্ড এবং তার বিচার নিয়েও খুব বেশি সোচ্চার নয় যতটা কতিপয় মানুষ একসাথে বসে নতুন নতুন চিন্তা করছে যা প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যায়, সে ব্যাপারে অনেক সোচ্চার। মানে সরকার দল সবসময় দেখবেন বিরোধী দলের বৈঠক বা সমাবেশ কে থ্রেট হিসেবে দেখে। উল্লেখ্য, এটি কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো সরকারের জন্য প্রযোজ্য নয়।

এবার দেখা যাক, আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কখন আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে? আধুনিক রাষ্ট্র আপনাকে আত্মহত্যা তো করতে দেবেই না, যদি কোন কারণে আপনি আত্মহত্যা করতে ব্যর্থ হোন এবং এ বিষয়ে আপনার কোন বন্ধু জ্ঞাত ছিলো বলে প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তারও সমপরিমাণ শাস্তি হবে। কেন? কারণ, আপনি হচ্ছেন রাষ্ট্রের সম্পত্তি এবং আপনার ‘জীবন’ নেবার অধিকার শুধু রাষ্ট্রের আছে, আপনার নয়।

কৃপামৃত্যু (Euthanasia অথবা Mercy-killing) ক্ষেত্রে, রাষ্ট্র আপনাকে মরতে দিচ্ছে। কারণ তখন আর আপনি রাষ্ট্রের কোনো কাজে আসছেন না। আবার দেখবেন দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেই ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার ব্যবহার করা হয়। এবং উক্ত সময়ে, স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও আপনি বাইরে পা ফেলতে পারবেন না। উক্ত জায়গায় মিটিং, মিছিল, সমাবেশ তো দূরের কথা। তাহলে স্বাধীনতা বা স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীন মানুষ হয়েও আপনার স্বাধীনতা এখানে থাকছে না।

শুধু সন্ত্রাস নয়, রাষ্ট্র আপনাকেও হত্যা করতে পারে যদি কখনো রাষ্ট্রের মনে হয় ‘সাবজেক্ট’ হিসেবে আপনি উক্ত রাষ্ট্রের জন্য থ্রেট। আপনি বেঁচে থাকলে আরো ১০০ জন ব্যক্তির বাঁচতে অসুবিধা হচ্ছে তাহলে রাষ্ট্র আপনাকে হত্যা করতে পারে। অথবা, আপনি রাষ্ট্রের কোন গোপন নথিপত্র/দলিল/তথ্য সম্পর্কে জ্ঞাত থাকেন তাহলেও আধুনিক রাষ্ট্র অসুবিধায় পড়ে যায় এবং এজন্যও আপনাকে হত্যা করা হতে পারে।

আবার চাইলেই আপনি আপনার অর্গান ডোনেট করতে পারবেন না। এটা রাষ্ট্রের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। মৃত ব্যক্তির অর্গান ডোনেটের কথা বলা হয় বা উৎসাহিত করা হয় কারণ তিনি আর রাষ্ট্রের কোনো কাজে লাগছেন না। কিন্তু জীবিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই উৎপাদন কমে গেলে রাষ্ট্র ক্ষতির মধ্যে পড়ে তাই অর্গান ডোনেটে যথেষ্ট ঝামেলা খুঁজে পাবেন। অথচ, দেহ টা আপনার, অর্গানটাও আপনার!

ইতালীয় দার্শনিক ‘Roberto Esposito’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীকে আধুনিক রাষ্ট্রের সঙ্গে বা ‘বায়োপলিটিক্যাল’ সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন। সে সময় দল বেধে বেধে বিশেষ বিশেষ মানুষকে হত্যা করা হত। কিন্তু ‘Roberto Esposito’ হিটলারের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেও চূড়ান্ত ‘বায়োপলিটিক্যাল’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছেন।

কারণ হিটলার কিন্তু জীবপ্রেমী ছিলেন। তার প্রেমিকা ছিলো। একটি পোকামাকড় পর্যন্ত তিনি মারতেন না। অথচ, এই হিটলার জার্মানি’র ইহুদীদের গণহত্যা করেছেন। শুধু ইহুদীদের নয়, যারা শারীরিকভাবে দূর্বল তাদেরকেও তিনি সরিয়ে ফেলেছেন। সে সময়, হিটলার কে জার্মানির ‘ডক্টর’ বলা হত। জার্মানি ছিলো একটি দেহ, হিটলার তার ডাক্তার এবং ইহুদী ও দুর্বলরা ছিলো তার জীবাণু।

তাই যাদেরকে হত্যা করা হত তাদেরকে ‘ব্যাকটেরিয়া’ বা ‘জীবাণু’ মনে করা হত। তাই এই গণহত্যায় হিটলারের কিচ্ছু মনে হত না। তিনি নিজেকে প্রাণী প্রেমী বা জীবপ্রেমী মনে করতেন। তাহলে এই ‘বায়োপলিটিক্যাল’ রাষ্ট্র টিকসই হলো না কেন? কারণ, হিটলারের অনুপাত বা অঙ্কে ভুল ছিলো। অনেকটা ১০ জন কে বাঁচাতে তিনি ১০০ জন কে হত্যা করেছেন। যেটা আবার আধুনিক রাষ্ট্র করে না।

আবার রাষ্ট্র তার দেহের কিছু কিছু বিশেষ ব্যক্তি কে ‘Immune’ করে রাখেন। কীভাবে? যেমন ধরুন, আমাদের রাষ্ট্রপতি তিনি তার গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছেন। তাকে রক্ষা করার জন্য একাধিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক রয়েছে। এখন ঐ একই রাস্তা দিয়ে আমি যাচ্ছি। আমার একজন কে হাসপাতালে খুব দ্রুত রক্ত দিতে হবে তানাহলে রোগী বাঁচবে না। কিন্তু ঐ রাস্তা দিয়ে আমি তখনই যেতে পারবো যখন রাষ্ট্রপতি তার কনভয় শেষ করবেন।

এতে করে যদি কেউ মারাও যান তাতে কিন্তু রাষ্ট্রপতি দায় নেবেন না বা অপরাধী হিসেবেও বিবেচিত হবেন না। কারণ, রাষ্ট্র তাকে পূর্বে থেকেই ‘Immune’ করে রেখেছেন। ঠিক যেমনটা কারিনা ভাইরাস (বুঝে নেন) এর টিকা পেয়ে আমরা ভাবি আমাদের দেহ এখন শঙ্কা মুক্ত।

এই একই ধরণের আইন বা নিয়মের মধ্যে নিয়ম আমাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনি যদি ‘Self-Defense’ -এ কাউকে মেরে ফেলেন এতে আপনার কোন শাস্তি হবে না। ‘Homo Sacer, Sovereign Power and Bare Life’ সম্পর্কে জানলে ‘Let Die’ বিষয়টি সম্পর্কে আরো পরিষ্কার হওয়া যাবে।

‘Giorgio Agamben’ এর বই ‘Homo Sacer’ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। ‘Homo Sacer’ বা ‘Bare Life’ হচ্ছে, রোমান আইনের একটি চিত্র: একজন ব্যক্তি যাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কেউ তাকে হত্যা করতে পারে বা পারে না, তবে ধর্মীয় আচারে বলি দেওয়াও উচিত নয়। মানে তিনি রাষ্ট্রের কাছে এতটাই অপবিত্র এবং তার জীবন আর রক্ষিত নয়।

আধুনিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, ক্ষতিকর বা থ্রেট মনে করা এই ব্যক্তি (সাবজক্ট) কে রাষ্ট্র বেঁচে থাকার দায়িত্ব আর নেয় না। বরঞ্চ তাকে যে যেখানে পাবে যদি হত্যা করে তবেও আধুনিক রাষ্ট্রের কিছু যায় বা আসে না। পুলিশ খুঁজে পেলেও তাকে ক্রসফায়ার করে হত্যা করতে পারে। এসবের কোনো ক্ষেত্রে কাউকেই বিচারের আওতায় আনা হবে না। মানে ঐ সাবজেক্ট কে রাষ্ট্র আর নিজের সম্পদ মনে করে না; থ্রেট মনে করে।

এই ‘ব্যতিক্রম’ পাবেন ‘Ideology and Ideological State Apparatuses (Louis Althusser)’ বইটিতে। ‘Giorgio Agamben’ এখানে ফুকো’র সাথে এক তরফা গলা না মিলিয়ে বলেছেন, “এই ধারণা তো অ্যারিস্টটল এর বই ‘Politics’ -এও ছিলো। কিন্তু ফুকো এখানে উৎপাদন ক্ষমতা এবং পুঁজিবাদ নিয়ে যা বলেছেন তা একেবারে নতুন।”

আবার রাষ্ট্রে ‘Police’ কিন্তু ভালো ‘অভিনেতা’ নয় জনগণের জন্য। ‘Police’ শব্দটি ফ্রেঞ্চ ‘Poliss’ শব্দ থেকে এসেছে। এদের কাজ-ই হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত ‘Status-Quo’ ধরে রাখা। প্রয়োজনে কাউকে হত্যা করে বা ক্রসফায়ার করে। কিছু আইন থাকলেও সেসব গলে বেরুবার জায়গাও রাষ্ট্রের করা আছে।

খুব কষ্ট করে এক সমুদ্রকে এক মুঠো জলে আবদ্ধ করার আমার এই ক্ষুদ্র চেষ্টা কতটা সফল হলো জানি না। কিন্তু এই পুরো আর্টিকেলে লিখতে গিয়ে আমি ‘বোধিচিত্ত’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলের জনাব সামজীর আহমেদ এর একটি বক্তিতা ‘বায়োপলিটিক্স: আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ফুকোডিয়ান ব্যাখ্যা’ এর কাছে ঋণী থেকে গেলাম।


ধন্যবাদ

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৫৯

নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: আপনার এই পোস্টের জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম । অবশেষে শেষ পর্ব পড়তে পারলাম । ধন্যবা; এই বিষয় নিয়ে লিখবার জন্য !!

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৮

মি. বিকেল বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। অপেক্ষা করেছেন জেনে ভালো লাগলো।

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
আমি আসলে এইসব বিষয় খুব কম বুঝি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.