নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসুন ঘৃণা করতে শিখি…

১৬ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১০:২৯




‘ঘৃণা’ প্রকাশে দ্বিধায় পড়তে হয় না। ঘৃণা স্ব-ইচ্ছায় মন থেকে উগড়ে দেওয়া যায়। “ঘৃণা করি” – কথাটি বলতে খুব বেশি ভাবতে হয় না, খুব বেশি চিন্তায় পড়ে যেতে হয় না। কারো প্রতি এত এত ঘৃণা থেকে অঝোরে গালি দেওয়া যায়। ওতেও কিছু ভুল হয়েছে বা করেছি বলে মনে হয় না। মনে হয়, আমি লোকটাকে সাচ্চা ঘৃণা করি, পবিত্র ঘৃণা; তাই দু’চারটে গালি দিয়েছি। এতে কি আর এসে যায়!

যাকে ঘৃণা করি তার ব্যাপারে গুজব রটানো কে নিজের অধিকার বলে মনে হয়। মানুষটা যেহেতু এত খারাপ সেহেতু ওর ব্যাপারে দুটো বাড়িয়ে বললে আর কি বা এসে যাবে! এতে ওর সামাজিক মান-মর্যাদা নষ্ট হওয়া জরুরী।

ঘৃণা করা এমন এক নেশা; যা আমাদের এক মোহে আবদ্ধ রাখে, অন্ধ করে দেয়। আমরা তখন ক্রসচেক করে দেখি না যে, যে ঘটনা ঘটেছিলো/ঘটছে তা অদৌ সত্য তো? অবশ্য এই ক্রসচেক করবার মতন আমাদের হাতে সময় না থাকলেও ঘৃণা করবার জন্য সময় নিশ্চয় থাকা উচিত।

একদিন আমার এক বন্ধু আমাকে বলছিলো, “ওমুক কে আমার একদম ভালোলাগে না।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কেন?”
সে বললো, “ওর চেহারা আমার পছন্দ নয়।”

কি অদ্ভুত! সেদিন থেকে আমিও তাকে ঘৃণা করি, কারণ ওর চেহারা আমারও পছন্দের নয়। পুর্বে ভালো করে দেখা হয় নি তো। গালে কীসের যেন দাগ! নিশ্চয় মারামারি করেছে কারো সাথে। পরে অবশ্য জেনেছিলাম যে, সে অ্যাক্সিডেন্ট করেছিলো। এরপর তার ব্যাপারে কিচ্চা-কাহিনী রটিয়েছি, “যে দেখতে এমন, তার পক্ষে সবই সম্ভব।” গায়ের রঙ বলে দিচ্ছে ও কি করতে পারে! ওর পোশাক বলে দেয় ও কেমন, ওর ধর্ম বলে দেয় ওর দ্বারা কি কি করা সম্ভব।

হিন্দু মানেই জাতপাত, মুসলিম মানেই টেরোরিস্ট, খ্রিস্টান মানেই বর্ণবাদ আর বাংলাদেশে বৌদ্ধ মানেই মায়ানমার। এই ধরণের বেশ কিছু সরলীকরণ এর ওপর ভিত্তি করে আমরা একের পর এক দেয়াল তৈরি করে যেতে শুরু করলাম। একসময় কিছু কিছু তো নিখুঁতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েই গেল। নিজের লেখা বই তে, ব্লগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক প্রবন্ধ ছড়িয়ে দেওয়া গেল।

ঘৃণা এখন চূড়ান্ত, যে দু’জন মিলে মিল-মহব্বতের কথা বলতো, দেখলাম, ওরাও বেশ ভয়ে ভয়ে আছে। কেমন জানি আগের মতন কানের কাছে এসে চেঁচামেচি করে না। খুব ‘Liberal’ ছিলো তো; ঠিক হয়েছে। এখন জরাজীর্ণ এবং জড়োসড়ো হয়ে চুপ করে থাকে। মূলধারার মিডিয়াতেও তেমন আসে না অহেতুক জ্ঞান দিতে।

এই মুদ্রার উল্টো পিঠে ‘ভালোবাসা’ নামক একটি বস্তুর উপস্থিতি আছে। কিন্তু ‘ভালোবাসা’ ঐ ঘৃণার মতন সহজ নয়। ভালোবাসতে গেলে অনেক মাপজোকের প্রয়োজন আছে। বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া যাকে তাকে ঘৃণা করা গেলেও ভালোবাসা তো আর যায় না।

আজ মহল এমন যে, ভালোবাসতে ভয় হয়, ‘ভালোবাসি’ বলতে ভয় লাগে। কারণ মানুষ এই ‘Insecurity’ নিয়ে খেলতে খুব পছন্দ করে। ভালোবাসার মধ্যে নাকি ‘Vulnerability’ এর উপস্থিতি থাকে। তাই ‘ভালোবাসি তোমায়’ এর মধ্যে কখন যে ভাইরাস ঢুকে যায় বলা মুশকিল। কিন্তু ঘৃণা নামক আস্ত ভাইরাস নিয়ে আমরা অনেকেই যে ঘুরে বেড়াচ্ছি কোনরুপ অ্যান্টি ভাইরাস এর উপস্থিতি ছাড়াই তা নিয়ে ভাবার অবকাশ না থাকাটাই জরুরী।

আজ ঘৃণা করা সহজ তাই আমিও বেছে বেছে মানুষকে ঘৃণা করা শুরু করেছি। ভালোবাসতে সময় লাগে, বিচার-বিবেচনার প্রয়োজন পড়ে, মানুষকে চিনতে হয়… ওতসবে আমি নেই বাপু। আমি বরং এক ঘৃণার তালিকা তৈরি করেছি। সে তালিকায় পছন্দসই মানুষদের নাম লিখে রাখা। যখন ব্যক্তি জীবনে খারাপ পরিস্থিতিতে হাবুডুবু খাবো তখন ওদের নাম করে করে গালি দেবো; এতে একরকম নিষ্ঠুর স্বস্তি মেলে, কিছু সময়ের জন্য মনটা ফ্রেশ ফ্রেশ লাগে।

আজকের এই দিনে কেউ কাউকে ভালোবাসে নাকি! আর যারা বাসেও ওরা তো একেকটা ‘Emotional Fool’, আধুনিক হতে হলে আপনাকে অবশ্যই ঘৃণা করতে শেখাটা জরুরী। এ কেমন আধুনিকতা! সবাই চারপাশে ভালোবাসার কথা বলছে! আধুনিক হতে হলে ঘৃণা করতে শেখা উচিত, সবার।

ভালোবাসা নামক ‘Insecurity’ নিয়ে আর কতদিন! ভালোবাসা কষ্ট দেয়। আবেগের দুর্যোগ সৃষ্টি করে। ভালোবেসে ভুল হলে চোখে জল আসে। তাই আধুনিক এই দুনিয়ার নতুন শ্লোগান হওয়া উচিত, “সবার তরে ঘৃণা সত্য, ঘৃণার উপরে আর কিছু নাই।”

সেদিন এক টেলিভিশন টকশোতে এক ভদ্রলোক বলছিলনে, “আজকাল বুদ্ধিজীবীদের খুব একটা কথা বলতে শোনা যায় না।” আমি অবশ্য জানিনা যে, ওঁনারা কেন আর কথা বলেন না? চুপ কেন থাকেন? তারপর হঠাৎ মনে পড়লো, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেলে থাকা লেখক কে মেরে ফেলার কথা। বিষয়টি নিয়ে পুনরায় ভাবতে গিয়ে গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে গেল।

এ দেশ থেকে প্রতিবছর হাজারো মেধাবী মানুষ পৃথিবীর বড় বড় প্রজেক্টে কাজ করবার জন্য বাইরে যাচ্ছেন। অথচ আমার দেশের পদ্মা সেতুতে দেশের ইঞ্জিনিয়ারদের ঠাঁই হয় না। এ তো গেল একটি উদাহরণ মাত্র। এতে যে দেশের প্রতি মানুষের ঘৃণা আসে তা একেবারে পবিত্র এবং নিশ্চিত। এভাবে প্রিয়তম/প্রিয়তমা যদি তার বন্ধুর সাথে কিছু সময় আলাপ করে তাকেও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবো। মনে রাখবেন, “ঘৃণা সার্বজনীন, ঘৃণার মধ্যে যে প্রেম আছে তা আর কোথাও নেই।”

কিছু নারীবাদী প্রায় প্রায় বলে থাকেন, “Why should boys have all the fun?”। এভাবে আপনিও বলবেন, “Why should politicians have all the fun?”। তাদের একে অপরকে ঘৃণা করার অধিকার থাকলে আমাদের কেন থাকবে না? হাজারহোক গণতন্ত্রে সবার সমান অধিকার থাকা উচিত। আমরাও রোজ রোজ সকালবেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরকে গালিগালাজ করবো, নিন্দা করবো এবং প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া জানাবো। তবেই গণতন্ত্র টেকসই হবে।

আমার আজকের এই প্রবন্ধ সফল হোক। আমাদের সবার মনে একে অন্যের প্রতি তীব্র ঘৃণার প্রতিফলন ঘটুক। সে কামনায় আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: আয়োজন করে ঘৃণা শিখতে হবে কেন?
মানুষের কর্মকান্ডই মানুষকে আপন করে, দূরে ঠেলে দেয়। ভালোবাসতে বাধ্য করে, ঠিক তেমনি ঘৃণা করতেও বাধ্য করে।

২০ শে জুন, ২০২৩ ভোর ৬:৩৯

মি. বিকেল বলেছেন: কারণ এটি একটি 'স্যাটায়ার'!

২| ১৬ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০০

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: যদিও বলা হয়ে থাকে ঘৃণা কে ভালোবাসা দিয়ে যারা জয় করে তারাই সত্যিকারের মানুষ। কিন্তু আসলেই কি মানুষের পক্ষে ঘৃণা মুক্ত থাকা সম্ভব?

২০ শে জুন, ২০২৩ ভোর ৬:৪০

মি. বিকেল বলেছেন: ঘৃণা মুক্ত থাকা আহ্বান আমি জানাচ্ছি না। আমি শুধু এর পরিমাণ (যা আমাদের মধ্যে বেড়ে গেছে) কমাতে বলেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.